তাফসীরে তাবারী: Tafsir Tabari Bangla

তাফসীরে তাবারী

📚 গ্রন্থ পরিচিতি

তাফসীরে তাবারী — ইসলামী তাফসীর সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য কীর্তি। এর পূর্ণ নাম “জামিউল বায়ান আন তাবিলি আয়িল কুরআন” (আরবি: جامع البيان عن تأويل آي القرآن‎‎), যা বিশ্বব্যাপী “তাফসীর আল-তাবারী” নামে সুপরিচিত। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও ইতিহাসবিদ ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী (রহঃ) রচিত এই তাফসীর গ্রন্থটি প্রাচীন ও প্রামাণ্য ব্যাখ্যার অন্যতম উৎস হিসেবে মুসলিম বিশ্বে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে। মূল গ্রন্থটি আরবি ভাষায় রচিত হলেও পরবর্তীতে ইংরেজি, ফারসি ও বাংলা সহ বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

তাফসীরটি শুধু আয়াত ব্যাখ্যা নয়, বরং এতে কুরআনের ভাষাগত বিশ্লেষণ, প্রেক্ষাপট, হাদীস-নির্ভর ব্যাখ্যা ও সাহাবা-তাবেয়ীনদের মতামত সুনিপুণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তাই এটি শুধু একটি তাফসীর নয়, বরং এক প্রামাণ্য ইসলামি জ্ঞানের বিশ্বকোষ।

📜 ইতিহাস

ইমাম আত-তাবারী (রহঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের তাবারিস্তানের “আমুল” নামক স্থানে এবং মৃত্যুবরণ করেন ৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে। তিনি ছিলেন হাদীস, ফিকহ, ইতিহাস ও কুরআন তাফসীরের অন্যতম ইমাম। তাঁর তাফসীর রচনার উদ্দেশ্য ছিল — কুরআনের আয়াতসমূহকে ব্যাখ্যা করা এমনভাবে যাতে পাঠক শুধু অর্থ নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা ও আল্লাহর বাণীর মর্মার্থ বুঝতে পারেন।

এই তাফসীর রচনায় তিনি সহীহ হাদীস, সাহাবা ও তাবেয়ীনের বর্ণনা, প্রাচীন আরবি ভাষার ব্যাখ্যা ও ব্যাকরণিক বিশ্লেষণ ব্যবহার করেছেন। ফলে এটি হয়ে উঠেছে তাফসীরের ক্ষেত্রে এক মৌলিক ও প্রামাণ্য দলিল, যা পরবর্তী সব মুফাসসিরদের জন্য পথপ্রদর্শক।

📖 গঠন ও বিষয়বস্তু

তাফসীরে তাবারী কুরআনের প্রতিটি আয়াত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। প্রতিটি আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ একত্রে উপস্থাপিত। এতে আলোকপাত করা হয়েছে —

  • প্রতিটি আয়াতের প্রেক্ষাপট (Asbabun Nuzul) ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য।
  • আয়াতের ভাষাগত, ব্যাকরণিক ও ব্যুৎপত্তিগত ব্যাখ্যা।
  • সহীহ হাদীস দ্বারা আয়াতের ব্যাখ্যা প্রমাণ।
  • সাহাবা, তাবেয়ীন ও প্রাচীন মুফাসসিরদের মতামতের তুলনামূলক উপস্থাপন।
  • আখলাক, আইন, ঈমান ও সমাজজীবনের শিক্ষা।

এই পদ্ধতিগত ও গভীর ব্যাখ্যার কারণে এটি “ক্লাসিকাল তাফসীর” হিসেবে মুসলিম পণ্ডিত ও ছাত্রদের কাছে অপরিহার্য একটি গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

📘 বৈশিষ্ট্য

  • সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রামাণ্য তাফসীর গ্রন্থগুলোর একটি।
  • হাদীসভিত্তিক ব্যাখ্যা ও প্রাচীন আরবি উৎস থেকে উদ্ধৃতি।
  • শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স গ্রন্থ।
  • প্রত্যেক আয়াতের ব্যাখ্যার সাথে ব্যাকরণ, ভাষা ও ফিকহি আলোচনা যুক্ত।
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি মাদরাসার পাঠ্যসূচিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স।

🧭 কেন পড়বেন এই তাফসীর?

যারা কুরআনের গভীর অর্থ, প্রেক্ষাপট ও ইতিহাসসমূহ জানতে আগ্রহী — তাদের জন্য তাফসীরে তাবারী অপরিহার্য। এটি বিশেষভাবে মূল্যবান —

  • তাফসীর, হাদীস ও ইসলামি ইতিহাসের গবেষক ও ছাত্রদের জন্য।
  • যারা কুরআনের মূল ব্যাখ্যা প্রাচীন সূত্রে জানতে চান।
  • দাওয়াতি, শিক্ষা বা গবেষণামূলক কাজে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে।

ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহঃ) এই তাফসীর সম্পর্কে বলেন —
“আত-তাবারীর তাফসীর সত্যিই এক অতুলনীয় সৃষ্টি; এ তাফসীরের মতো সংকলিত ব্যাখ্যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।”

📂 পিডিএফ ডাউনলোড লিংক

নিচে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত আবু জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী (রহঃ)-এর তাফসীরে তাবারী এর বাংলা অনুবাদের PDF লিংক দেওয়া হলো।

📕 তাফসীরে তাবারী — ১ম খণ্ড

📗 তাফসীরে তাবারী — ২য় খণ্ড

📘 তাফসীরে তাবারী — ৩য় খণ্ড

📙 তাফসীরে তাবারী — ৪র্থ খণ্ড

📒 তাফসীরে তাবারী — ৫ম খণ্ড

📔 তাফসীরে তাবারী — ৬ষ্ঠ খণ্ড

📙 তাফসীরে তাবারী — ৭ম খণ্ড

📗 তাফসীরে তাবারী — ৮ম খণ্ড

📘 তাফসীরে তাবারী — ৯ম খণ্ড

📚 ব্যবহারিক সুপারিশ

তাফসীরে তাবারী পড়ার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায় হলো ধীরে ধীরে খণ্ড অনুযায়ী অধ্যয়ন করা। প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যা পড়ার সময় কুরআনের অনুবাদ ও সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ পাশাপাশি পড়লে বোঝা আরও গভীর হবে। শিক্ষকরা এটি পাঠ্যসূচির সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, আর গবেষকরা রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃতি দিতে পারেন।

কুরআন বোঝার আগ্রহী পাঠক যদি এ তাফসীরের আলোকে চিন্তা-ভাবনা করেন, তাহলে আল্লাহর বাণী তার জীবনে বাস্তব প্রেরণা হয়ে উঠবে।

🕋 আবু জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-তাবারী রচিত “তাফসীরে তাবারী” — কুরআন ব্যাখ্যার এক অমর ঐতিহ্য
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ
error: Content is protected !!
Scroll to Top