গ্রন্থ পরিচিতঃ ‘তাফসীরে সাঈদী’কে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সুবিশাল জ্ঞান ভাণ্ডারের এক সুবিন্যস্ত নির্যাস বলা যায়। তার এই বিশাল জ্ঞান কোষের সূচনা পর্ব হচ্ছে সূরা আল ফাতেহা। ৫২০ পৃষ্ঠা জুড়ে সূরা আল ফাতেহার যে বিষদ তাফসীর তিনি এখানে বর্ণনা করেছেন সত্যিকার অর্থে তা শুধু তার জন্যেই মানায়। আমাদের সময়ের অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থগুলোর সাথে এর মূল্যায়ন করলে এর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য সহজেই একজন পাঠকের সামনে ভেসে উঠবে। একজন নিষ্ঠাবান পাঠক যখন এই তাফসীরের পাতায় কোরআনের মর্মার্থ খুঁজতে থাকবেন তখন তার মনে হবে বিজ্ঞ মোফাস্সের বুঝি নিজেই তার সামনে বসে তার কাছে কোরআনের দরস পেশ করছেন।
মূল তাফসীরকারকের সাথে তার পাঠকের এ সরাসরি সম্পর্কের কারণেই এ তাফসীরের প্রতিটি বর্ণনাকেই পাঠকের কাছে জীবন্ত মনে হবে। সে কারণেই কোরআনে বর্ণিত দৃশ্যগুলো ও কোরআনে বর্ণিত সে দৃশ্যের চরিত্রগুলোকে এখানে আর ইতিহাসের বিষয় বলে মনে হয় না। ইতিহাসের এ বিষয়গুলোকে অতীতের ঘটনা থেকে একটি চলমান চলচিত্রে উপস্থাপন করার এ দুরূহ কাজটি এখানে অত্যন্ত সুন্দরভাবেই সম্পাদিত হয়েছে। এটা আসলেই একটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। এই দুঃসাধ্য কাজটি সম্পাদনের জন্যে ‘তাফসীরে সাঈদী’ দীর্ঘদিন ধরে এখানকার তাফসীর সাহিত্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রাখবে।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রায় ৪ দশক ধরে কোরআনের চর্চা করছেন। এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের কাছে কোরআনের তাফসীর পেশ করে আসছেন। বাংলাদেশের বাইরে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দূর প্রাচ্যের শত শত শহর বন্দরে লক্ষ লক্ষ মানুষদের সামনে তিনি কোরআনের কথা পেশ করছেন । মনে হয় আজ গোটা পৃথিবীতে এমন একটি জনপদও খুঁজে বের করা যাবে না যেখানে বাংলা ভাষাভাষী মানুষরা তার সুললিত কণ্ঠে কোরআনের তাফসীর শুনেননি, কিংবা তারা তার তাফসীরের কোনো অডিও ভিডিও দেখেননি।
গত চার দশক ধরে তার লক্ষ কোটি ভক্তরা তাফসীর মাহফিলের শুধু অডিও ভিডিও ভিসিডিই দেখে আসছেন। তারা এখন ‘তাফসীরে সাঈদীর’ পাতায় তাকে এক নতুন রূপে দেখতে পাবেন। যে মানুষটির কণ্ঠের সাথে তারা এতদিন ধরে পরিচিত ছিলেন তারা এখন তার তাফসীরের পাতায় পাতায় তার শানিত লেখনীর গভীর আবেদনের সাথেও পরিচিত হতে পারবেন। আমি একথা বিশ্বাস করি যে, তার যাদুময় কণ্ঠের মতো তার লেখনীও একজন পাঠককে কোরআনের প্রেমে আকৃষ্ট করতে পারবে ।
হাজার বছরের আমাদের তাফসীর শাস্ত্র, ‘তাফসীরে তাবারী’ থেকে ‘তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন’-এ এক সুদীর্ঘ পথ। এ পথের সর্বত্রই কোরআনের মহান তাফসীরকারকরা নিজেদের জ্ঞানদীপ্ত যোগ্যতা দ্বারা কোরআনকে মানুষের কাছে পেশ করেছেন। আরব আজম ও পূর্ব পশ্চিমে যেখানেই কোরআনের যে তাফসীরটি প্রকাশিত হয়েছে তার সবকয়টিই ছিল এক একটি নতুন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। এর প্রত্যেকটি তাফসীরের রয়েছে আবার একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। আর তা হচ্ছে সে তাফসীরগুলো সে কালের প্রয়োজন পূরণ করতে পুরোপুরিই সক্ষম হয়েছে। এ কারণেই দেখা যায় কালের আবর্তনের সাথে যুগ ও জগতের প্রয়োজনকে সামনে রেখেই আমাদের তাফসীরকারকরা এগিয়ে গেছেন।
কোরআনকে প্রিয় নবীর হাদীসের আলোকে বুঝার প্রয়োজনে ‘তাফসীরে ইবনে কাছীর’ রয়েছে। ‘ফেকার’ প্রয়োজন পূরণের জন্যে রয়েছে ‘জাওয়ামেউল আহকাম’। কোরআনের তার ভাষা ব্যাকরণের সৌন্দর্যের প্রয়োজনে রয়েছে তাফসীরে কাশশাফ’ ও বায়যাভী’। মূলত এর সবকটিই ছিল যুগের প্রয়োজন। আবার কোরআনকে ইসলামী জীবন বিধানের আলোকে বুঝার জন্যে এসেছে ‘তাফহীমূল কোরআন’ ও ‘তাদাব্বুরে কোরআন’। আধুনিক জীবন জিজ্ঞাসা ও বিজ্ঞানের নবনব আবিষ্কার উদ্ভাবনীর আলোকে সৃষ্ট সমস্যাসমূহের জবাবের জন্যে এসেছে সাইয়েদ কুতুব শহীদের ‘তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন’। আসলে এর প্রতিটি তাফসীরই ছিল আধুনিক, কারণ এগুলো সে যমানায় সমস্যাকে সামনে রেখেই কথা বলেছে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের কালে এসে পৃথিবী অতীতের সব কয়টি সময়ের চাইতে বেশী জটিল হয়ে পড়েছে । আবু জেহেল আবু লাহাবদের শেরকী আচরণকে এ কালের মোশরেকরা বিজ্ঞান ও যুক্তির লেবাস পরিয়ে পেশ করছে, মানবীয় দর্শন ও বিজ্ঞান এদের হাতে পড়ে আজ যেন নিজেই চলার পথই হারিয়ে ফেলেছে। গোটা দুনিয়া জাহানে আজ যখন মানবীয় চিন্তা দর্শনের ভয়াবহ আকাল দেখা দিয়েছে, তখন আল্লাহর বান্দাহদের সামনে আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যাকে পেশ করার জন্যে সাহসী ও যোগ্য বান্দাদের কলম নিয়ে এগিয়ে আসা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
‘আমাদের কাছে ইবনে কাছীর’ আছে, আমাদের কাছে ‘তাফহীমূল কোরআন’ ও ‘ফী যিলালিল কোরআন’ আছে, তাই আর নতুন তাফসীরের প্রয়োজন নেই’-আমি ব্যক্তিগতভবে এমন মতবাদে বিশ্বাস করি না। আল্লাহ তায়ালা এ যমীনে মানুষদের পাঠিয়ে তার উন্নতি ও উৎকর্ষের ধারাকে স্থবির করে রাখেননি, আর রাখেননি বলেই এখানে প্রতিদিন জ্ঞান বিজ্ঞানে ও চিন্তা দর্শনে নতুন নতুন জিনিস এসে জমা হচ্ছে। আমরা যদি আজ আল্লাহর কোরআন দিয়ে এসব নতুন জিনিসের মোকাবেলা করতে না পারি তাহলে সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন আমরাও আল্লাহর কেতাবকে বাইবেলের মতো বাস্তবতা বিবর্জিত একটি সেকেলে গ্রন্থে পরিণত করে ফেলবো।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দেশ জাতির এক যুগ সন্ধিক্ষণে তাফসীর লেখার কাজে হাত দিয়েছেন, এটা আমাদের জন্যে একটি আশা ও আনন্দের সংবাদ, এ কাজটি সম্ভবত তার আরো আগেই করা উচিৎ ছিলো। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে ‘আল কোরআন একাডেমী লন্ডন’ ‘তাফসীর ফী যিলায়িল কোরআন’ এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশনার সময়ই আমি তাকে এমনি একটি মৌলিক তাফসীর রচনা করতে অনুরোধ করেছিলাম, সেই থেকে গত ছয় সাত বছরে আমি তার কাছে অসংখ্যবার এই একই অনুরোধ জানিয়েছি।
এক পর্যায়ে আমি তাকে আরবী কবিতার এই বিখ্যাত পংক্তিটি উল্লেখ করে বলেছি, ‘মান হাফেযা শাইয়ন ফাররা, ওয়া মান কাতাবা শাইয়ান কাররা’ (কেউ যদি কিছু জিনিস মুখস্ত করে রাখে, দেখা যায় কালের আবর্তনে এক সময় তা হারিয়ে যায়, আর কেউ যদি সেই জিনিসটি লিখে রাখে তাহলে তা স্থায়ীভাবে চিরদিনের জন্যে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়)। আমি যখনি এ কথাগুলো তাকে বলতাম তখন তিনি তার চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী মৃদু হেসে নিজের অক্ষমতার কথা বলতেন, কিন্তু তার এ অসম্মতি সত্ত্বেও তার কাছ থেকে আমার এমনি ধরনের একটি কাজের প্রত্যাশা ছিল। আজ গোটা দেশ ও জাতির সাথে আমিও তার কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি তার সীমাহীন ব্যস্ততা সত্ত্বেও
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দেশ জাতির এক যুগ সন্ধিক্ষণে তাফসীর লেখার কাজে হাত দিয়েছেন, এটা আমাদের জন্যে একটি আশা ও আনন্দের সংবাদ, এ কাজটি সম্ভবত তার আরো আগেই করা উচিৎ ছিলো। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে ‘আল কোরআন একাডেমী লন্ডন’ ‘তাফসীর ফী যিলায়িল কোরআন’ এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশনার সময়ই আমি তাকে এমনি একটি মৌলিক তাফসীর রচনা করতে অনুরোধ করেছিলাম, সেই থেকে গত ছয় সাত বছরে আমি তার কাছে অসংখ্যবার এই একই অনুরোধ জানিয়েছি। এক পর্যায়ে আমি তাকে আরবী কবিতার এই বিখ্যাত পংক্তিটি উল্লেখ করে বলেছি, ‘মান হাফেযা শাইয়ন ফাররা, ওয়া মান কাতাবা শাইয়ান কাররা’ (কেউ যদি কিছু জিনিস মুখস্ত করে রাখে, দেখা যায় কালের আবর্তনে এক সময় তা হারিয়ে যায়, আর কেউ যদি সেই জিনিসটি লিখে রাখে তাহলে তা স্থায়ীভাবে চিরদিনের জন্যে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়)।
আমি যখনি এ কথাগুলো তাকে বলতাম তখন তিনি তার চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী মৃদু হেসে নিজের অক্ষমতার কথা বলতেন, কিন্তু তার এ অসম্মতি সত্ত্বেও তার কাছ থেকে আমার এমনি ধরনের একটি কাজের প্রত্যাশা ছিল। আজ গোটা দেশ ও জাতির সাথে আমিও তার কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি তার সীমাহীন ব্যস্ততা সত্ত্বেও আমাদের প্রত্যাশার মৃত্যু হতে দেননি। আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে আমাদের সবার দোয়া ও কামনা যে সূরা ফাতেহার মাধ্যমে আজ বিশাল তাফসীর রচনায় তিনি হাত দিলেন তা অচিরেই সমাপ্তির পর্যায়ে পৌঁছুক, পথ যতোই দীর্ঘ হোক না কেন তার পাথেয় যদি লোভনীয় হয় তাহলে তার দূরত্ব এমনিই কমে আসে।
পাঠকদের অনেকেরই উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোফাসসের মওলানা আবুল কালাম আযাদের বিখ্যাত তাফসীর ‘তরজুমানুল কোরআন-‘এর সাথে পরিচয় থাকার কথা। বিগত শতকের মাঝামাখি সময়ে তিনি এই তাফসীরের ‘উম্বুল কিতাব’ নামে সূরা ফাতেহার তাফসীর প্রকাশ করেছিলেন, ‘উন্মুল কিতাব উর্দু সাহিত্যে কোরআন গবেষণার ক্ষেত্রে এমন একটি যুগের সূচনা করেছিল যার প্রয়োজন মনে হয় সময়ের ব্যবধানে কখনো শেষ হয়ে যাবে না।
এই তাফসীরের ভূমিকা লিখতে গিয়ে আল্লামা সাঈদী এক জায়গায় বলেছেন, তার মুখ থেকে সূরায়ে ফাতেহার এই তাফসীর শুনে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রায় অর্ধশত লোক ইসলাম গ্রহণ করেছেন, যেখানে তার মুখের কথা শুনে অমুসলিমরা মুসলমান হলেন সেখানে তার লিখিত তাফসীর পড়ে আমরা কি খাঁটি মুসলমান হতে পারি না?
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর তাফসীর থেকে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তার এ সাধনা কোরআনের অমূল্য কীর্তিকে কাল থেকে কালান্তরে পৌঁছে দেবে বলে আমরা আশা করি।
টলমল নদীর উচ্ছল রূপ যেমন মাঝিকে তীরের কথা ভুলিয়ে দেয় তেমনি ‘তাফসীরে সাঈদী’ও আমাকে কিছুক্ষণের জন্যে তার অন্যান্য প্রসঙ্গ ভুলিয়ে রেখেছিলো। তাছাড়া তার এ মহান গ্রন্থের ওপর আমি জানি আরো অনেকেই লিখবেন, আমি তো সূচনা করলাম মাত্র। আমি চেয়েছিলাম আমার এ ‘সূচনা’ শুধু সূচনা হয়েই থাক।
আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী কর্তৃক রচিত তাফসীর বিষয়ক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। তাফসীরে সাঈদী আমপারা
২। তাফসীরে সাঈদী সুর আল আসর
৩। তাফসীরে সাঈদী সুরা আল ফাতিহা
৪। তাফসীরে সাঈদী সূরা লূকমান
৫। বিষয় ভিত্তিক তাফসীরুল কোরআন ১ম খণ্ড
৬। বিষয় ভিত্তিক তাফসীরুল কোরআন ২য় খণ্ড
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ