ইমাম বুখারী রহঃ কর্তৃক রচিত ইসলামিক বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আল আদাবুল মুফরাদ
২। আল লু-লু ওয়াল মারজান
৩। জুযউ রফইল ইয়াদাঈন জানেন কি, কি পরিমাণ নেকী হতে আপনি বঞ্চিত হচ্ছেন
৪। জুযউ রফইল ইয়াদায়ন ফিস সালাত
৫। জুযউল কিরআতঃ ইমামের পিছনে পঠনীয় সর্বোত্তম কিরআত
ইমাম বুখারী রহঃ কর্তৃক সংকলিত হাদিস গ্রন্থসমূহ করুন;
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত
১। বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড
২। বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড
৩। বুখারী শরীফ ৩য় খণ্ড
৪। বুখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড
৫। বুখারী শরীফ ৫ম খণ্ড
৬। বুখারী শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড
৭। বুখারী শরীফ ৭ম খণ্ড
৮। বুখারী শরীফ ৮ম খণ্ড
৯। বুখারী শরীফ ৯ম খণ্ড
১০। বুখারী শরীফ ১০ম খণ্ড
তাওহীদ পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত
১। সহীহুল বুখারী ১ম খণ্ড
২। সহীহুল বুখারী ২য় খণ্ড
৩। সহীহুল বুখারী ৩য় খণ্ড
৪। সহীহুল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
৫। সহীহুল বুখারী ৫ম খণ্ড
৬। সহীহুল বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড
আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত
১। সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
২। সহীহ আল বুখারী ২য় খণ্ড
৩। সহীহ আল বুখারী ৩য় খণ্ড
৪। সহীহ আল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
৫। সহীহ আল বুখারী ৫ম খণ্ড
৬। সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড
হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ কর্তৃক প্রকাশিত
১। বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড
২। বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড
৩। বোখারী শরীফ ৩য় খণ্ড
৪। বোখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড
৫। বোখারী শরীফ ৫ম খণ্ড
৬। বোখারী শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড
৭। বোখারী শরীফ ৭ম খণ্ড
লেখক পরিচিতিঃ
প্রাথমিক জীবনঃ ইমাম বুখারী রহঃ ১৩ই শাওয়াল শুক্রবার, ১৯৪ হিজরীতে (৮১০ খ্রিষ্টাব্দ) খোরাসানের বুখারাতে (বর্তমানে উজবেকিস্তানের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম। তার দাদার নাম ইব্রাহিম। তার দাদার সম্পর্কে খুব বেশি জানা না গেলেও তার বাবা ইসমাইল মুসলিম বিশ্বে একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন হাদীসবিদ। তিনি হাদিস শাস্ত্রবিদ আল্লামা হাম্মাদ এবং হযরত ইমাম মালেক এর শাগরিদ ছিলেন। এছাড়াও বিখ্যাত মনীষী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক এর শাগরিদ ছিলেন বলে জানা যায়। সমসাময়িক যুগের আরও অনেক বুজুর্গ আলেমদের কাছ থেকে দ্বীনে ফায়েজের জাহেরি ও বাতেনি ইলম হাসিল করে সুযোগ্য আলেম ও বিজ্ঞ মুহাদ্দিস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইমাম বুখারী শিক্ষা, জ্ঞান ও যোগ্যতা শুধু পিতার দিক থেকেই পাননি বরং মাতার দিক থেকেও অর্জন করেছিলেন। ইমাম বুখারী এর মাতা ছিলেন বিদূষী ও মহীয়সী মহিলা। নেককার মহিলা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। এ সম্পর্কে একটা ঘটনা আছে। বাল্যকালে ইমাম বুখারী এর একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ রোগের প্রভাবে তার দুই চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে যায়। স্নেহময়ই মাতা পুত্রের চোখের আলোর পুনঃপ্রাপ্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন এবং আল্লাহ্ পাকের দরবারে প্রার্থনা করতে থাকেন। এ পর্যায়ে এক রাত্রে স্বপ্নে তিনি হযরত ইব্রাহীম কে তার শিয়রে বসা অবস্থায় দেখতে পেলেন। হযরত ইব্রাহীম আ. তাকে বলেন, তোমার প্রার্থনা আল্লাহ্ পাক কবুল করেছেন। তার দয়ার বরকতে তোমার পুত্র চোখের আলো ফিরে পেয়েছে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে তার পুত্র ইমাম বুখারী বলে উঠলেন, আম্মা! আমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছি। আমার চোখ ভাল হয়ে গেছে। এ ঘটনাটিই প্রমাণ করে ইমাম বুখারী এর মাতা কত বড় মাপের বুজুর্গ মহিলা ছিলেন। ইমাম বুখারী শৈশবেই বাবাকে হারান, ফলে মায়ের কাছে প্রতিপালিত হন। পিতা মারা যাওয়ার সময় প্রচুর ধনসম্পদ রেখে যান। ফলে ইমাম বুখারীকে কোনরূপ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়নি। মাতাই পুত্রের শিক্ষা-দীক্ষার ভার গ্রহণ করেন। ইমাম বুখারী এর বাল্যকাল থেকেই শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। ইমাম বুখারী প্রথমে কোরআন পাঠ শুরু করেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি কুরআন মুখস্থ করেন। ১০ বছর বয়স থেকে তিনি হাদীস মুখস্থ করা শুরু করেন। ১৬ বছর বয়সেই তিনি “আবদুল্লাহ বিন মুবারক” এবং “ওয়াকীর পান্ডুলিপিসমূহ” মুখস্থ করে ফেলেন। মহান আল্লাহ্ পাক তাকে অনন্য সাধারণ স্মরণ শক্তি দান করেছিলেন।
সফরসমূহঃ ষোল বছর বয়সে তিনি মা এবং বড় ভাইয়ের সাথে হজ্জে গমন করেন। হজ্জের পর তিনি মক্কাতে রয়ে গেলেন এবং হিজাযের হাদীসবিশারদদের কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করতে থাকলেন। এ সময় তিনি “কাজায়াস সাহাবা ওয়াত তাবীয়ীন” নামক গ্রণ্থ রচনা করেন। এরপর হাদীস অন্বেষণের জন্য তিনি ইরাক, সিরিয়া ও মিশরসহ বহু অঞ্চলে সফর করেন। একদা ইমাম বুখারি মুহাদ্দিস দাখেলির দরসগাহে যোগ দেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর তিনি হাদীস অন্বেষণের ভ্রমণ শেষ করে নিজ মাতৃভূমি বুখারায় ফিরে আসেন
শৈশব কালঃ শিশুকালেই তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তার অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন। তার জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং আল্লাহর রহমতে ও তার মায়ের দোয়ায় পুনরায় দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান।
স্মৃতি শক্তির প্রখরতাঃ ১৮ বছর বয়সে আবারো তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমণ করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীসের চর্চা শুরু করেন। অতঃপর তিনি এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং এক হাজারেরও অধিক সংখ্যক মুহাদ্দিসের নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য গভীর রাত জেগে তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতেন। তার স্মৃতি শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার কুস্তুলানীর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। আলেমগণ তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, যে কোন কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্ত করে ফেলতে পারতেন। তার জীবনীতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে,একদা ইমাম দাখেলি একটি হাদিসের সনদ বর্ণনা করবার সময় ‘জুবাইর’ এর স্থলে ‘আবু জুবাইর’ বলেছেন। ইমাম বুখারি নম্রস্বরে বললেন- এখানে আবু জুবাইর’ এর স্থলে ‘জুবাইর’ হবে। অতঃপর ইমাম দাখেলি বাড়িতে গিয়ে কিতাব দেখে তার ভুল সংশোধন করেছেন। এর অব্যবহিত পরই দাখেলি তাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি এতদ্ভিন্ন অন্য এক দরসগাহে ও যোগ দিতেন। সেখানে অন্য ছাত্রগন হাদিসগুলো লিখে নিতেন। তিনি তা লিখতেন না। তার সহপাঠীগণ তাকে হাদিস না লিখে রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর দেননি। অতঃপর সহপাঠীগণ তাকে হাদিস লেখার জন্য জোর তাগিদ দিলে তিনি উত্তর দিলেন- “আপনাদের লেখা কপিগুলো নিয়ে আসুন। তারা কপিগুলো নিয়ে আসলে তিনি ধারাবাহিকভাবে তাদের সামনে হাদিসগুলো পাঠ করে শোনান। সেই মজলিসে তাদের লেখা অনুসারে প্রায় পনের হাজার (১৫,০০০) হাদিস মুখস্থ পাঠ করে শোনান। ইমাম বুখারী বলেনঃ আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীছ ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীস মুখস্ত রয়েছে। মুহাদ্দিছ ইবনে খুযায়মা বলেনঃ পৃথিবীতে ইমাম বুখারী অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং হাদীছের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি।
বিভিন্ন দেশ ভ্রমণঃ হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম বুখারী অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সে সময় যে সমস্ত দেশে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ বসবাস করতেন তার প্রায় সবগুলোতেই তিনি ভ্রমণ করেছেন এবং তাদের নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেছেন। খোরাসানের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও তিনি যে সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে মক্কা, মদীনা, ইরাক, হিজাজ, সিরিয়া, মিশর এবং আরও অনেক শহর।
বাগদাদে স্মরণ শক্তির পরীক্ষাঃ তৎকালীন সমগ্র ইসলামী রাজ্যে যখন মুহাদ্দিছ হিসেবে ইমাম বুখারীর কথা ছড়িয়ে পড়ল তখন সেই যুগের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তিনি যখন বাগদাদে আগমণ করলেন তখন চারশত মুহাদ্দিস একত্রিত হয়ে ১০০টি সহীহ হাদীছ নির্বাচন করে তার সনদ ও মতন পাল্টিয়ে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিসের হাতে সোপর্দ করলেন। অতঃপর তার জন্য হাদীসের মজলিস স্থাপন করা হলো। তিনি যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিস ১০টি হাদীস নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি একটি করে সবগুলো হাদীস পাঠ করে শেষ করলেন। প্রতিটি হাদীস পড়া শেষ হলেই ইমাম বুখারী বললেনঃ এ ধরনের কোন হাদীস আমার জানা নেই। এমনিভাবে ১০ জন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ১০০টি হাদীছ তার সামনে পাঠ করলেন। সকল হাদীছের ক্ষেত্রেই তিনি বার বার একই কথা বললেন।
পরিশেষে তিনি সকলকে ডেকে উলটপালট কৃত হাদীসগুলোর প্রত্যেকটি হাদীসকে তার আসল সনদের দিকে ফিরিয়ে দিলেন এবং ঠিক করে দিলেন। হাদীছগুলোর সনদ থেকে কোন রাবীর (হাদিস বর্ণনাকারী ) নাম বাদ পড়েনি এবং মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও ছুটে যায় নি। এমনকি হাদীসগুলো সঠিকভাবে সাজানোতে মুহাদ্দিছগণ তার কোন ভুল-ত্র“টি ধরতে পারেন নি। বলা হয় যে, সমরকন্দে যাওয়ার পরও তাকে একই নিয়মে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসেবে সকলেই তাকে স্বীকৃত প্রদান করলেন।
বুখারী শরীফঃ ইমাম বুখারীর জীবনের শ্রেষ্ঠতম কর্ম হচ্ছে এই হাদীসগ্রন্থের রচনা। তিনি স্বীয় শিক্ষক ইসহাক বিন রাহওয়াইহ থেকে এই গ্রন্থ রচনার প্রেরণা লাভ করেন। একদিন ইসহাক একটি এমন গ্রন্থের আশা প্রকাশ করেন, যাতে লিপিবদ্ধ থাকবে শুধু সহিহ হাদীস। ছাত্রদের মাঝে ইমাম বুখারী তখন এই কঠিন কাজে অগ্রসর হন। ২১৭ হিজরী সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি মক্কার হারাম শরীফে এই গ্রন্থের সংকলন শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৩ হিজরী সনে এর সংকলনের কাজ সমাপ্ত হয়। বুখারী শরীফের সংকলনকালে তিনি সর্বদা রোজা রাখতেন এবং প্রতিটি হাদীস গ্রন্থ সন্নিবেশিত করার আগে গোসল করে দু’ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে মুরাকাবা ও ধ্যানের মাধ্যমে হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন। এই গ্রন্থে তিনি সকল সহিহ হাদীস সংকলন করেননি। বরং সহিহ হাদীসের মাঝে যেগুলো তার নির্ধারিত শর্তে উন্নীত হয়েছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি স্বয়ং বলেন, “আমি জা’মে কিতাবে সহিহ হাদিস ব্যতিত অন্যকোন হাদিস ওল্লেখ করিনি। তবে কলেবর বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক সহিহ হাদিসকে বাদ দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি আমার কিতাবে প্রতিটি হাদিস লেখার পূর্বেই গোসল করেছি এবং দু রাকাআত নামায আদায় করে নিয়েছি। অপর বর্ণনা হতে জানা যায় যে, ইমাম বুখারী তাঁর স্বীয় কিতাবের শিরোনাম সমূহ রাসুলে করিম এর রওজা এবং মসজিদে নববির মধ্যস্থলে বসে লিখেছিলেন এবং প্রত্যেক শিরোনামের জন্য দুরাকায়াত নফল নামাজ আদায় করেছেন। ইমাম বুখারীর প্রায় ৬ লাখ হাদীস মুখস্থ ছিল। বুখারী শরীফের পুরো নাম হলোঃ আল-জামি আল-সাহীহ আল-মুসনাদ মিন উমুরি রাসূলিল্লাহ ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি। বুখারি শরীফ প্রণয়ের স্থানঃ আবুল ফজল মোহাম্মদ বিন তাহেরের বর্ণনা মতে, ইমাম বুখারী তাঁর গ্রন্থখানি বুখারাতে বসে রচনার কাজ শেষ করেছেন। আবার কারো মতে মক্কা মুয়াজ্জামায় আবার কারো মতে বসরাতে। তবে উল্লেখিত সকল বর্ণনা নির্ভুল। কেননা তিনি উল্লেখিত স্থানগুলোর সকল নগরীতে অবস্থান করেছেন। স্বয়ং ইমাম বুখারী বলেছেন, আমি আমার সহিহ বুখারি সঙ্গে নিয়ে বসরা শহরে ৫ বছর অবস্থান করেছি এবং আমার কিতাব প্রণয়ের কাজ শেষ করি। আর প্রতি বছরই হজ্ব পালন করি এবং মক্কা হতে বসরাতে ফিরে আসি। তিনি ৬ লাখ হাদিস হতে যাচাই বাছাই করে সর্বসাকুলে ১৬ বছর নিরলস সাধনা করে এ প্রসিধ্য গ্রন্থখানি প্রণয়ন করেন। এখানে মোট হাদিস আছে সাত হাজার একশত পচাত্তর খানি(৭,১৭৫)। আর পুনরুক্ত ছাড়া আছে চার হাজারের (৪,০০০) মতো। আর কারো মতে, বুখারিতে পুনরুক্ত হাদিস আছে মাত্র একখানি যা রুমালের বর্ণনা।
সহীহ বুখারী সংকলনের কারণঃ ইমাম বুখারীর পূর্বে শুধু সহীহ হাদীস সমূহ একত্রিত করে কেউ কোন গ্রন্থ রচনা করেন নি। সহীহ বুখারী সংকলনের পূর্বে আলেমগণ সহীহ ও যঈফ হাদীছগুলোকে এক সাথেই লিখতেন। কিন্তু ইমাম বুখারীই সর্বপ্রথম যঈফ হাদীছ থেকে সহীহ হাদীছগুলোকে আলাদা করে লেখার কাজে অগ্রসর হন।
তিনি তার বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই হতে এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, এক দিন আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইয়ের মসজিদে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাদীসের এমন একটি গ্রন্থ করতো, যাতে শুধু সহীহ হাদীসগুলোই স্থান পেতো তাহলে খুবই সুন্দর হতো। মজলিসে উপস্থিত সকলেই তার কথা শুনলেও এ কাজে কেউ অগ্রসর হওয়ার সাহস পায় নি। ইসহাকের কথাগুলো ইমাম বুখারীর অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি সেই দিন হতেই এই মহান দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে মনে স্থির করলেন। তার জীবনীতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীরে মাছি বসছে। তিনি এতে কষ্ট পাচ্ছেন। আর ইমাম বুখারী হাতে পাখা নিয়ে তার পবিত্র শরীর থেকে মাছিগুলো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা সেই যুগের একাধিক আলেমের কাছে প্রকাশ করলে সকলেই বললেন যে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছের সাথে যে সমস্ত জাল ও বানোয়াট হাদীস ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে এতে রাসুল কষ্ট পাচ্ছেন । আলেমদের ব্যাখা শুনে শুধু সহীহ হাদীস সম্বলিত একটি কিতাব রচনার প্রতি তার আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়।
সহীহ বুখারী রচনায় বুখারীর সতর্কতাঃ ইমাম বুখারী তার কিতাবে কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলোই বর্ণনা করেছেন। কোন হাদীসকে সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য এবং তা সহীহ বুখারীতে লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি সুস্পষ্ট করে কোন শর্তের কথা উল্লেখ না করলেও আলেমগণ তার কাজের উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত শর্তগুলো বের করেছেন;
১) হাদীসের রাবী (হাদিস বর্ণনাকারী ) তার উপরের রাবীর সমসাময়িক হতে হবে এবং উভয়ের মাঝে সাক্ষাত হওয়া প্রমাণিত হতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষাৎ করা এবং হাদীসগুলো শুনা প্রমাণিত হওয়া জরুরী।
২) রাবী ছিকাহ মানে নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
৩) ন্যায়পরায়ন তথা মানুষের সাথে কথা-বার্তায় ও লেনদেনে সত্যবাদী হতে হবে।
৪) রাবী পূর্ণ ম্মরণশক্তি সম্পন্ন হওয়া।
৫) হাদীছের সনদ মুত্তাসিল হওয়া। অর্থাৎ মাঝখান থেকে কোন রাবী (হাদিস বর্ণনাকারী ) বাদ না পড়া।
কোন হাদীসে কেবল উপরোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলেই ইমাম বুখারী স্বীয় কিতাবে তা লিখে ফেলেন নি। বরং প্রতিটি হাদীস লেখার আগে তিনি গোসল করে দুই রাকআত নফল নামায পড়েছেন এবং ইস্তেখারা (কোন বিষয়ে দ্বিমত হলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার নামাজ) করেছেন। তার অন্তরে যদি হাদীসটি সম্পর্কে কোন প্রকার সন্দেহ জাগতো তাহলে সে হাদীসটি শর্ত মোতাবেক সহীহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সহীহ বুখারীতে লিখতেন না। এইভাবে মসজিদে নববীতে বসে তিনি তা লেখা শুরু করেন এবং একটানা ১৬ বছর এই কাজে দিন রাত পরিশ্রম করেন।
লেখা শেষ করেই তাড়াহুড়া করে তা মানুষের জন্য প্রকাশ করেন নি; বরং কয়েকবার তিনি তাতে পুনঃদৃষ্টি প্রদান করেছেন, ভুল-ত্রুটি সংশোধন করেছেন এবং পরিমার্জিত করেছেন।এভাবে এই পুনঃদৃষ্টি তিনবার করেছেন। সর্বশেষ লিখিত কপিটিই বর্তমানে মুসলিম জাতির নিকট অমূল্য রত্ম হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও বন্ধুগণের নিকট কিতাবটি পেশ করলে তাদের সকলেই তা পছন্দ করেছেন। যারা এই কিতাবটির প্রশংসা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আহমাদ বিন হাম্বাল, আলী ইবনুল মাদীনী, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন এবং আরও অনেকেই। তারা সকলেই এর সকল হাদীসকে সহীহ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন।মুসলিম বিশ্ব ও আলেম সমাজ এই বুখারি শরীফকে আল-কুরআনের পরেই সম্মান করে থাকেন।
আলেমদের মূল্যায়নে সহীহ বুখারীঃ সংক্ষিপ্তভাবে কিতাবটি সহীহ বুখারী হিসাবে প্রসিদ্ধতা অর্জন করলেও এর পূর্ণ নাম হচ্ছে আল জামেউস সহীহহুল মুসনাদু মিন উমরি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি। তবে কারও মতে দীর্ঘ নামটির মধ্যে শব্দের তারতম্য রয়েছে। এই কিতাবে তিনিই সর্বপ্রথম হাদীসসমূহকে আধুনিক পদ্ধতিতে সুবিন্যাস্ত করেন। কিতাবটি রচনার জন্য তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় গমণ করেন। মসজিদে নববীতে বসে একটানা ১৬ বছর কঠোর পরিশ্রম এবং ঐকান্তিক সাধনার ফলশ্র“তিতে সম্পাদিত এই গ্রন্থটি সর্বযুগের সকল আলেমের নিকট সমাদৃত হয়। বিশ্বের সকল মুসলমানদের কাছে পবিত্র আল কুরআনের পরেই সহীহ বুখারী শরীফ সর্বাধিক পবিত্র গ্রন্থ।
এ যাবৎ সহীহ বুখারীর অসংখ্য ব্যাখ্যা গ্রন্থ বের হয়েছে। এই ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লামা হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী কর্তৃক রচিত ফতহুল বারী সর্বশ্রেষ্ট স্থান দখল করে আছে।
এবাদত-বন্দেী ও পরহেজগারীতার কিছু বিবরণঃ হাদিস চর্চায় সদা ব্যস্ত থাকলেও এবাদত বন্দেগীতে তিনি মোটেও পিছিয়ে ছিলেন না। তার জীবনীতে উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি প্রতি বছর রামাযান মাসের প্রতিদিনের বেলায় একবার কুরআন খতম করতেন। আবার তারাবীর নামাযের পর প্রতি তিন রাত্রিতে একবার খতম করতেন। মুহাম্মদ বিন আবু হাতিম আল ওয়াররাক বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত মোতাবেক তিনি শেষ রাতে তের রাকআত তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। এমনকি তার মৃত্যুর কবর থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হয়। লোক দলে দলে তার কবরের মাটি নিতে থাকে। কোনভাবে তা নিবৃত্ত করতে না পেরে কাঁটা দিয়ে ঘিরে তার কবর রক্ষা করা হয়।পরে জনৈক ওলী মানুষের আকিদা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সে ঘ্রাণ বন্ধ করার জন্য দোয়া করেন, ফলে তা আল্লাহর রহমতে বন্ধ হয়ে যায়।
দানশীলতা ও উদারতাঃ ইমাম বুখারী প্রচুর ধনসম্পদের মালিক ছিলেন। মুহাম্মাদ বিন আবু হাতিম বলেনঃ ইমাম বুখারীর কিছু জমি ছিল,এ থেকে তিনি প্রতি বছর সাত লক্ষ দিরহাম ভাড়া পেতেন। এই বিশাল অর্থ থেকে তিনি খুব সামান্যই নিজের ব্যক্তিগত কাজে খরচ করতেন। তিনি খুব সীমিত খাদ্য গ্রহণ করতেন। বেশীর ভাগ সময়েই খাদ্য হিসেবে শসা, তরমুজ ও সবজি গ্রহণ করতেন। সামান্য খরচের পর যে বিশাল অর্থ অবশিষ্ট থাকতো তার সম্পূর্ণটাই তিনি ইলম অর্জনের পথে খরচ করতেন এবং অভাবীদের অভাব পূরণে ব্যয় করতেন। তিনি সব সময় দিনার ও দিরহামের থলে সাথে রাখতেন। মুহাদ্দিসদের মধ্যে যারা অভাবী ছিলেন তাদেরকেও তিনি প্রচুর পরিমাণ দান করতেন।
জীবনীর স্মরণীয় ঘটনাঃ তার জীবনীতে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার একটি থলের ভিতর একহাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে হাদীস অন্বেষণের সফরে বের হলেন। সফর অবস্থায় কোন এক চোর এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখে ফেলে এবং তা চুরি করার জন্য ইমাম বুখারীর পিছনে লাগে। কিন্তু চোর তা চুরি করার সকল প্রকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়। পথিমধ্যে ইমাম বুখারী পানি পথে ভ্রমণের জন্য জাহাজে আরোহণ করলে চোরও তার সাথে যাত্রা শুরু করে। সেখানেও সে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে চোর মুদ্রাগুলো চুরি করার নতুন এক কৌশল অবলম্বন করে। সে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, এই জাহাজে উঠার পর আমার একহাজার স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। মুদ্রাগুলো একটি থলের ভিতর ছিল। সে থলেটির ধরনও বর্ণনা করল, যা সে ইতিপূর্বে ইমামের কাছে দেখেছিল। চিৎকার ও কান্নাকাটির মাধ্যমে চোরটি জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।মাঝি-মাল্লাগণ এক এক করে সকল যাত্রীর পকেট ও শরীর চেক করা শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে ইমাম বুখারী চিন্তা ও হতাশায় পড়ে গেলেন। চোরের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি ভাবলেন এখন যদি আমাকে তল্লাশি করা হয় তাহলে তো আমার কাছে একহাজার স্বর্ণমুদ্র পাওয়া যাবে আর আমিই চোর হিসাবে সাব্যস্ত হবো। আমি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করবে না। আর আমি যদি আজ চোর হিসেবে ধরা পড়ি তাহলে সারা দুনিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়বে যে, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা চুরি করেছে। আমার সারা জীবনের সাধনা ব্যর্থ হবে। আমি যে সমস্ত সহীহ হাদীস সংগ্রহ করেছি, তাও লোকেরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং পবিত্র ইলমে হাদীসের অবমাননা হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ করে রাসূলের হাদীসের মর্যাদ অক্ষুন্ন রাখতে স্বর্ণের থলেটি পানিতে ফেলে দিলেন । এরপর সকলের মাল-পত্র ও শরীর তল্লাশির এক পর্যায়ে ইমাম বুখারীর শরীরও তল্লাশি করা হলো। জাহাজের কারও কাছে কোন থলের ভিতর এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেল না।পরিশেষে জাহাজের লোকেরা চোরকেই মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে সকলকে হয়রানি করার শাস্তি প্রদান করলো । পরে চোর তার সাথে একান্তে মিলিত হয়ে বললঃ জনাব আপনার সাথের এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা আপনি কোথায় রেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমার চক্রান্ত বুঝতে পেরে আমি তা পানিতে ফেলে দিয়েছি।
রচনাবলীঃ ইমাম বুখারী রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। এগুলোর কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা পান্ডুলিপি আকারে সংরক্ষিত রয়েছে। আর কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত গ্রন্থাবলীর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো বুখারী শরীফ। নিচে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম দেয়া হলো;
- কাজায়া আস-সাহাবা ওয়া আত-তাবিয়ীন
- আত-তারীখ আস-সগীর
- আল-আদাব আল-মুফরাদ
- কিতাব আল-জুআফা আস-সগীর
- কিতাব আল-কুনা
- কিতাবু খালকি আফআলিল ইবাদ
- সহীহ আল-বুখারী
- রাফওল ইয়াদাইন ফিস সালাত
- কিরাআত খলফিল ইমাম
- আত-তারিখুল কবির
- আত-তারিখুল ওয়াসাত
- খালকু আফয়ালিল ইবাদ
- আল জামেওল কবির
- আল মুসনাদুল কবির
- কিতাবুল আশরিয়া
- ওসামাস সাহাবা
- কিতাবুল মারসুত
- কিতাবুল বিজদান
শেষ জীবন ও কঠিন পরীক্ষাঃ ইমাম বুখারীর শেষ জীবন খুব সুখ-শান্তিতে অতিবাহিত হয় নি। বুখারার তৎকালীন আমীরের সাথে তার মতবিরোধ হয়েছিল। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসাবে যখন ইমাম বুখারীর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল তখন বুখারার আমীর স্বীয় ইমাম বুখারিকে রাজ দরবারে এসে সন্তানদেরকে সহীহ বুখারী পড়ানোর জন্য প্রস্তাব করলো। ইমাম বুখারী তার মসজিদ ও সাধারণ লোকদেরকে ছেড়ে দিয়ে রাজ দরবারে গিয়ে আলাদাভাবে আমীরের ছেলেদেরকে বুখারী পড়ানোকে ইলমে হাদীসের জন্য বিরাট অবমাননাকর ভেবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি পরিষ্কার বললেন, আমীর যদি সত্যিকার অর্থে ইলমে হাদীসের প্রতি অনুরাগী হন, তাহলে তিনি যেন তার সন্তানদেরকে আমার পাঠ্যস্থান মসজিদে পাঠান । এতে আমীর ইমাম বুখারীর প্রতি রাগান্বিত হয়ে তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলেন এবং বুখারীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার জন্য আমীরের নিজস্ব কিছু আলেম ঠিক করলেন। আমীরের আদেশ এবং ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে তিনি জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করে নিশাপুরে চলে যান। নিশাপুরেও অনুরূপ দুঃখজনক ঘটনা ঘটলে পরিশেষে সমরকন্দের খরতঙ্গ নামক স্থানে চলে যান। বুখারা থেকে বের হওয়ার সময় ইমাম আল্লাহর কাছে এই দুআ করেন যে, হে আল্লাহ্! সে আমাকে যেভাবে অপমান করে বের করে দিলো তুমিও তাকে অনুরূপ লাঞ্ছিত করো। মাত্র এক মাস পার হওয়ার পূর্বেই খুরাসানের আমীর খালেদ বিন আহমাদের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাকে ক্ষমতা ছাড়া করলো। পরবর্তীতে বাগদাদের জেলে থাকা অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে।
মৃত্যুঃ জীবনকালের শেষদিকে একবার বুখারার তৎকালীন শাসনকর্তা “খালিদ বিন আহমাদ যুহলী” হাদীসশাস্ত্রে ইমাম বুখারীর পান্ডিত্য দেখে তাকে দরবারে এসে শাসনকর্তার সন্তানদেরকে হাদীস শেখাতে বলেন। ইমাম বুখারী এটাকে হাদীসের জন্য অবমাননাকর মনে করেন। ফলে উভয়ের মাঝে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। তখন তিনি মাতৃভূমি বুখারা ত্যাগ করে সমরকন্দের খরতঙ্গে চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ২৫৬ হিজরীর, ১লা শাওয়াল মোতাবেক ৩১শে আগস্ট, ৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের শুক্রবার দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন শনিবার যোহরের নামাজের পর খরতঙ্গেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ