মুহম্মদ ইকবাল: Muhammad Iqbal Books

Muhammad Iqbal Books

আল্লামা মুহম্মদ ইকবাল কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আসরারে খূদী
২। ইকবালের নির্বাচিত কবিতা
৩। ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন
৪। রমূয ই বেখূদী
৫। শিকওয়া ও জাবাব-ই-শিকওয়া

লেখক পরিচিতঃ আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল (১৮৭৭-১৯৩৮) ছিলেন একজন বিশিষ্ট কবি, দার্শনিক, এবং রাজনীতিবিদ, যিনি ভারতীয় মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের ধারণা উত্থাপন করেছিলেন। তিনি “শায়ের-এ-মাশরিক” বা “প্রাচ্যের কবি” নামে পরিচিত এবং পাকিস্তানের জাতীয় কবি হিসেবে সম্মানিত। তাঁর চিন্তাধারা ও সাহিত্যিক কর্ম পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং মুসলিম পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইকবালের জীবনী একটি বহুমুখী অধ্যায়, যা তার সাহিত্য, দার্শনিক চিন্তা, এবং রাজনৈতিক অবদানের মাধ্যমে ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষাঃ মুহাম্মদ ইকবাল জন্মগ্রহণ করেন ৯ নভেম্বর ১৮৭৭ সালে, ভারতের পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে। তার পরিবার কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ বংশোদ্ভূত ছিল, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তার পিতা শেখ নূর মুহাম্মদ ছিলেন একজন ধার্মিক ব্যক্তি, যিনি ইসলামের নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন।

ইকবাল তার প্রাথমিক শিক্ষা শিয়ালকোট মিশন স্কুলে সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে মরিসন কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি অধ্যাপক মীর হাসান-এর সান্নিধ্যে আসেন, যিনি তাকে সাহিত্য ও দর্শনের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। তরুণ বয়সেই ইকবাল ফার্সি এবং উর্দু ভাষায় কবিতা লেখা শুরু করেন।

উচ্চ শিক্ষা এবং দার্শনিক উন্নয়নঃ ১৮৯৫ সালে ইকবাল লাহোরের সরকারি কলেজে ভর্তি হন এবং দর্শন, সাহিত্য, এবং আরবি ভাষায় ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯০৫ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান।

ইকবাল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে পড়াশোনা করেন এবং বার-অ্যাট-ল অর্জন করেন। এরপর তিনি জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল “ইরানে মেটাফিজিক্সের উন্নয়ন,” যা তার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি ভিত্তি স্থাপন করে।

সাহিত্যকর্মঃ ইকবাল একজন বহুমুখী কবি ছিলেন, যিনি উর্দু ও ফার্সি ভাষায় গভীর ভাবানুভূতির কবিতা রচনা করেছেন। তার কাব্যিক কীর্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

বাংলা-এ-দারা (The Call of the Caravan Bell): এটি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যা ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে তিনি ইসলামের অতীত গৌরব, সাম্প্রতিক দুর্দশা, এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেন।

জাবুর-এ-আজম: এই ফার্সি কাব্যগ্রন্থে তিনি মানব আত্মার শক্তি এবং তার সীমাহীন সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

রুমুজ-এ-বেখুদি: এখানে তিনি ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেন এবং সমষ্টিগত মুসলিম জাতির আদর্শ তুলে ধরেন।

আসরার-এ-খুদি (Secrets of the Self): এটি তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ, যেখানে তিনি আত্মসচেতনতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার দর্শন ব্যাখ্যা করেছেন।

দর্শনঃ ইকবালের দার্শনিক চিন্তা মূলত ইসলামের আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক পুনর্জাগরণের প্রতি নিবদ্ধ ছিল। তিনি ফ্রিডরিখ নীটশে, ইমানুয়েল কান্ট, এবং বার্গসঁ-এর চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন। তবে তিনি এই দর্শনগুলোকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সাথে মিশিয়ে একটি স্বতন্ত্র দার্শনিক মতবাদ গড়ে তোলেন।

খুদি বা আত্মচেতনতাঃ ইকবাল বিশ্বাস করতেন যে আত্মচেতনা বা খুদি মানবজাতির প্রকৃত শক্তির মূল উৎস। তার মতে, খুদি উন্নত করতে হলে ব্যক্তিকে নিজস্ব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে হবে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

ইজতিহাদ এবং ইসলামি পুনর্জাগরণঃ ইকবাল ইসলামি আইন এবং দর্শনে নতুন চিন্তাধারার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মুসলিম সমাজকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

রাজনৈতিক চিন্তাধারাঃ ইকবাল কেবল একজন দার্শনিক ও কবি ছিলেন না; তিনি একজন সক্রিয় রাজনৈতিক চিন্তাবিদও ছিলেন। ১৯৩০ সালে এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের এক অধিবেশনে তিনি প্রথমবারের মতো একটি আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের ধারণা প্রকাশ করেন। তার ভাষণে তিনি বলেন: “ভারতীয় মুসলমানরা কেবলমাত্র তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রে স্বাধীনতা এবং আত্মপরিচয় রক্ষা করতে পারবে।”

তার এই ধারণা পরবর্তীতে পাকিস্তান সৃষ্টির ভিত্তি স্থাপন করে। যদিও ইকবাল সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেননি, তার চিন্তাধারা এবং দিকনির্দেশনা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে পাকিস্তান আন্দোলনের মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে।

ইসলামি ঐতিহ্যের পুনর্মূল্যায়নঃ ইকবাল তার লেখায় ইসলামের ঐতিহ্যকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তার “The Reconstruction of Religious Thought in Islam” গ্রন্থে তিনি ইসলামের তত্ত্ব, বিশ্বাস, এবং আইনকে আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছেন।

তিনি মনে করতেন যে, মুসলমানদের অতীত গৌরব স্মরণ করার পাশাপাশি বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে একটি নতুন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।

ব্যক্তিগত জীবনঃ ইকবাল তিনবার বিবাহ করেন। তার প্রথম স্ত্রী করিম বিবি ছিলেন শিয়ালকোটের একটি সম্মানিত পরিবারের মেয়ে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সরদার বেগম এবং তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন মুকতার বেগম। ইকবালের ব্যক্তিগত জীবন কিছুটা জটিল ছিল, তবে তিনি তার সন্তানদের জন্য গভীর ভালোবাসা ও আদর্শ রেখে গেছেন।

শেষ জীবন এবং মৃত্যুঃ ইকবালের শেষ জীবনে তিনি অর্থনৈতিক সমস্যা এবং অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ১৯৩৮ সালের ২১ এপ্রিল লাহোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লাহোরের বাদশাহী মসজিদের পাশের এলাকায় দাফন করা হয়।

উত্তরাধিকার এবং প্রভাবঃ ইকবালের চিন্তাধারা এবং সাহিত্যকর্ম কেবল পাকিস্তানেই নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করেছে। তার কবিতা ও দর্শন আধুনিক যুগে মুসলিম সমাজের চেতনা এবং ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ইকবাল দিবস, ৯ নভেম্বর, পাকিস্তানে জাতীয়ভাবে উদযাপিত হয়।

তার সাহিত্য, দর্শন এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আজও মানবজাতিকে প্রেরণা জোগায় এবং মুসলিম সমাজের উন্নয়নের পথে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top