আকীদা বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় প্রশ্নোত্তর – আব্দুর রহমান ইবন নাসীর
২। অত্যাবশ্যকীয় পাঠ সমূহ – আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায
৩। অধিকাংশ লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সত্বেও মুশরিক – খলীলুর রহমান বিন ফযলুর রহমান
৪। অন্তর বিধ্বংসী বিষয় – মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
৫। অন্তরের রোগ – সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
৬। অন্ধ অনুসরণ – মোঃ মতিয়ার রহমান
৭। আকীকা এবং এ সংক্রান্ত কিছু বিধান – আলী হাসান তৈয়ব
৮। আকীদা ইসলামিয়াহ – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
৯। আকীদা সংক্রান্ত দশটি মাসআলা যা না জানলেই নয় – আবনাউত তাওহীদ
১০। আকীদাহ সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাহ – মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
১১। আকীদার কিছু অধ্যায় – আব্দুল আযীয ইবন মারযুক
১২। আকীদার মানদণ্ডে তাবীজ – আলী বিন নুফাই আল উলইয়ানী
১৩। আকীদাহ বিষয়ক দুইশতাধিক প্রশ্নোত্তর – হাফেয বিন আহমাদ আল হাকামী
১৪। আক্বীদা ওয়াসেত্বিয়া – আহমাদ বিন আব্দুল হালীম ইবনে তাইমিয়াহ
১৫। ইখলাস – আব্দুল্লাহ আল মামুন আল আযহারী
১৬। ইখলাস কেন ও কিভাবে – গবেষণা পরিষদ আল মুনতাদা আল ইসলামী
১৭। ইখলাস মুক্তির উপায় – ফায়সাল বিন আলি আল বাদানী
১৮। ইসলামী আকীদা – ইমাম গাযযালী রহঃ
১৯। ইসলামী আকীদা – ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
২০। ইসলামী আকীদা ও মানবপ্রকৃতি – ইকবাল হোছেন মাছুম
২১। ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়াল – মুহাম্মদ জামীল যাইনু
২২। ইসলামী আকীদাহ – মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনু
২৩। ইসলামের মৌলিক আকীদা ও বিধান – ড. জামাল আল বাদাবী
২৪। ইসলামের মৌলিক নীতিমালা – মুহাম্মদ বিন সুলায়মান তামীমী
২৫। ইসলামের মৌলিক বিষয় এবং গুরুত্বপূর্ণ হাদীস নির্ণয়ের সহজতম উপায় – মোঃ মতিয়ার রহমান
২৬। একগুচ্ছা মুক্তাদানাঃ দ্বীনে ইসলামীর সৌন্দর্য – আবদুর রহমান ইবন নাসের ইবন সাদী
২৭। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তাক্বলীদ – শরীফুল ইসলাম বিন যয়নুল আবেদীন
২৮। কুরআন ও হাদীসের আলোকে ইসলামী আকীদা – এ এন এম সিরাজুল ইসলাম
২৯। কুরআন হাদীসের আলোকে সহজ আকীদা – ড.আহমাদ ইবন আব্দুর রহমান আল কাযী
৩০। কুরআন-সুন্নাহর আলকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা – সালেহ আল উসাইমিন
৩১। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা – ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
৩২। প্রশ্নোত্তরে আকীদার মানদণ্ডে মুসলিম – মুহাম্মদ নাজমুল বিন আমানত
৩৩। প্রশ্নোত্তরে ইসলামি আকীদা – আ. ন. ম. রশিদ আহমাদ
৩৪ । মৃত্যুর সময় ও কারণ পূর্ব নির্ধারিত তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা – ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান
৩৫। সঠিক আকীদা বিশ্বাস ও যা এর পরিপন্থী – আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায
আকীদা পরিচিতিঃ ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস বিষয়ক প্রসিদ্ধতম শব্দ বা পরিভাষা হলো ‘আকিদা’। একজন মুসলিমের প্রকৃত অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয় এই আকিদা বা বিশ্বাস। হিজরি চতুর্থ শতকের আগে এ শব্দ বা পরিভাষাটির প্রয়োগ এতোটা প্রসিদ্ধ ছিলো না। চতুর্থ হিজরি শতক পর থেকেই মূলত এ পরিভাষাটির প্রচলন-প্রসিদ্ধি ঘটে। একজন মুমিন বা পরিশুদ্ধ একজন মুসলিমের পরলৌকিক ও ইহলৌকিক জীবনের সফলতা বা কামিয়াবির সাথে এই শব্দ বা পরিভাষাটির সম্পর্ক খুব গভীর। তাই এ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান অর্জন করার গুরুত্ব অপরীসীম।
আকিদার শাব্দিক পরিচয়ঃ আকিদা শব্দটি একটি আরবি শব্দ। ‘আক্দুন’ মূলধাতু থেকে গৃহীত বা উৎপন্ন। এর শাব্দিক অর্থ বন্ধন করা, গিরা দেওয়া, চুক্তি করা বা শক্ত হওয়া ইত্যাদি। আরবী ভাষাবিদ ইবনু ফারিস এই শব্দের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আইন, ক্বাফ ও দাল- ধাতুটির মূল অর্থ একটিই। আর তা হলো- দৃঢ়করণ, দৃঢ়ভাবে বন্ধন, ধারণ বা নির্ভর করা। শব্দটি যত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা সবই এই অর্থ থেকে গৃহীত।
আকিদার পারিভাষিক পরিচয়ঃ আকিদার পারিভাষিক সংজ্ঞা বর্ণনা করতে গিয়ে আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-ফাইউমী (রহ.) তার রচিত আল মিসবাহুল মুনীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মানুষ ধর্ম হিসেবে যা গ্রহণ করে তাকেই আকিদা বলা হয়।
ইসলামি পরিভাষায় আকিদা বলা হয়- নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সেই বিশ্বাসের পরিপালন করা। সুতরাং ইসলামি আকিদা বলতে এমন কিছু বিষয়ের ওপর বিশ্বাস করাকে বুঝায় যার কারণে ঐ ব্যক্তিকে মুমিন বিবেচিত করা হয়।
আকিদার শব্দের পারিভাষিক প্রচলন-ইতিহাসঃ ‘ধর্মবিশ্বাস’ বুঝাতে আকিদা শব্দের ব্যবহার পরবর্তী যুগে ব্যাপক হলেও প্রাচীন আরবী ভাষার এর ব্যবহার খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। ‘বিশ্বাস’ বা ‘ধর্মবিশ্বাস’ অর্থে ‘আকিদা’ ও ‘ইতিকাদ’ শব্দের ব্যবহার কোরআন ও হাদিসেও দেখা যায় না। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে বা তাঁর পূর্বের যুগে আরবি ভাষায় ‘বিশ্বাস’ অর্থে বা অন্য কোনো অর্থে ‘আকিদা’ শব্দের ব্যবহার ছিল বলে জানা যায় না। তবে ‘দৃঢ় হওয়া’ বা ‘জমাট হওয়া’ অর্থে ‘ইতিকাদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
এছাড়া অন্তরের বিশ্বাস অর্থেও ‘ইতিকাদ’ শব্দটির প্রচলন ছিল। প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ইসমাঈল ইবনু হাম্মাদ জাওহারি (৩৯৩ হি) বলেন, “সম্পত্তি বা সম্পদ ‘ইতিকাদ’ করেছে, অর্থাৎ তা অর্জন করেছে বা সঞ্চয় করেছে। কোনো কিছু ‘ইতিকাদ’ হয়েছে অর্থ শক্ত, কঠিন বা জমাটবদ্ধ হয়েছে। অন্তর দিয়ে অমুক বিষয় ইতিকাদ করেছে। তার কোনো মাকুদ নেই অর্থাৎ তার মতামতের স্থিরিতা বা দৃঢ়তা নেই।” [আহমদ ইবনু হাম্বাল (২৪১হি), আল-মুসনাদ, কাইরো, মিশর, মুআসসাসাতু কুরতুবাহ ও দারুল মাআরিফ, ১৯৫]
কোরআন-হাদিসে কোথাও আকিদা শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা যায় না। ‘ইতিকাদ’ শব্দটি দু একটি হাদিসে ব্যবহৃত হয়েছে, তবে ‘বিশ্বাস’ অর্থে নয়, বরং সম্পদ, পতাকা ইত্যাদি দ্রব্য দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, বন্ধন করা বা গ্রহণ করা অর্থে। দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনো কোনো ইমাম ও আলিমের কথায় ‘ইতিকাদ’ বা ‘আকিদা’শব্দ সুদৃঢ় ধর্ম বিশ্বাস অর্থে ব ̈বহৃত হয়েছে বলে দেখা যায়। পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে ‘আকিদা’ শব্দের ব্যবহার ব্যপকতা লাভ করে। চতুর্থ-পঞ্চম শতকে লিখিত প্রাচীন আরবি অভিধানগুলিতে ‘আকিদা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে বলে দেখতে পাইনি। [ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রচিত কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকিদা]
ইসলামের মৌলিক আকিদা বা ইমানের স্তম্ভসমূহঃ ‘মুমিন’ বা ঈমানদার হিসেবে গণ্য হতে একজন মানুষকে কী কী বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে তা মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া রাসূলের (সা.) সুন্নাহ বা হাদিসেও বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় এগুলিকে ‘আরকানুল ঈমান’ বা ঈমানের স্তম্ভ বলা হয়।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোর মধ্যে কোনো পুণ্য নেই। কিন্তু পুণ্য তার যে বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহর প্রতি, পরকালের প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি, কিতাবসমূহে ও নবীগণের প্রতি এবং ধন-সম্পদের প্রতি মনের টান থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন-অনাথ, অভাবগ্রস্ত, পথিক, সাহায্য প্রার্থনাকারীগণকে ও দাসমুক্তির জন্য অর্থ ব্যয় করে, এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করে আর অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য্য ধারণ করে। এরাই প্রকৃত সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকী।’ [সূরাহ বাকারা: ১৭৭]
এখানে আল্লাহ তাআলা জানিয়েছেন যে, শুধু আনুষ্ঠানিকতার নাম ইসলাম নয়, প্রাণহীন আনুষ্ঠানিকতায় কোনো পুণ্য নেই। ইসলাম হলো বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বয়। এখানে আল্লাহ মুমিনের বিশ্বাসের মৌলিক পাঁচটি বিষয় এবং তার মৌলিক কর্ম ও চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ মহান বলেন, ‘রাসূল তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। তারা সকলেই আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য করি না।’ [সূরাহ বাকারা: ২৮৫]
এখানে ঈমানের স্তম্ভগুলির মধ্য থেকে ৪টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আয়াতে ৫টি বিষয়ের উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর ওপর, তাঁর রাসূলের ওপর আর যে গ্রন্থ তাঁর রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তার ওপর এবং যেসব গ্রন্থ তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করো। অতঃপর কেউ আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর গ্রন্থসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতকে অবিশ্বাস করলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।’ [সূরাহ নিসা: ১৩৬]
এভাবে কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে উপরের বিষয়গুলি একত্রে বা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসেও ঈমানের রুকন বা স্তম্ভগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। ঈমানের পরিচয় দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘(ঈমান এই যে,) তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহয়, তাঁর ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে, তাঁর সাক্ষাতে, তাঁর রাসূলগণে; তুমি বিশ্বাস করবে শেষ পুনরুত্থানে এবং তুমি বিশ্বাস করবে তাকদীর বা নির্ধারিত বিষয়সমূহে।’ [সহীহুল বুখারী: ১/২৭, ৪/১৭৩৩; সহীহ মুসলিম: ১/৩৯, ৪০, ৪৭]
হজরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) অন্য এক হাদীসে। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি সেখানে আসলেন। তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ অত্যন্ত ধবধবে সাদা এবং মাথার চুলগুলো অত্যন্ত পরিপাটি ও কাল।..তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ঈমান সম্পর্কে প্রশ্ন করে বলেন, ঈমান কী তা আমাকে বলুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈমান হলো এই যে, তুমি বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহে, তাঁর রাসূলগণে ও শেষ দিবসে (আখিরাতে) এবং বিশ্বাস করবে আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের (ভাগ্যের) ভাল ও মন্দে।’ [সহীহ মুসলিম: ১/৩৫-৩৬]
এভাবে বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, ইসলামের মৌল বিশ্বাস বা ‘আল-আকীদাহ আল ইসলামিয়্যাহ’-র সাতটি মৌলিক স্তম্ভ রয়েছে—
১. আল্লাহর ওপর ঈমান। ২. আল্লাহর ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমান। ৩. আল্লাহর নাযিল করা কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান। ৪. আল্লাহর রাসূলগণের ওপর ঈমান। ৫. পুনরুত্থানের প্রতি ইমান। ৬. কিয়ামত, পরকাল বা আখিরাতের ওপর ঈমান এবং৭. তাকদীর বা আল্লাহর নির্ধারণ ও সিদ্ধান্তের ওপর ঈমান। এ বিষয়গুলোকে আরকানুল ঈমান, অর্থাৎ ঈমানের স্তম্ভসমূহ, ভিত্তিসমূহ বা মূলনীতিসমূহ বলা হয়।
আকিদার গুরুত্বঃ আকিদার গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে এর গুরুত্ব বহনকারী কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো-
১. এক আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসীগণ প্রশান্তচিত্তের অধিকারী, বিপদে-আপদে, তারা শুধু তাঁকেই আহ্বান করে, পক্ষান্তরে বহু-ঈশ্বরবাদীরা বিপদক্ষণে কাকে ডাকবে, এ সিদ্ধান্ত নিতেই কিংকর্তব্য বিমুঢ়।
২. মহান আল্লাহ সর্বোজ্ঞ, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা সুতরাং তিনি সব জানেন, সব দেখেন এবং সব শোনেন। কোনো কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়-এমন বিশ্বাস যিনি করবেন, তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল পাপ হতে মুক্ত থাকতে পারবেন।
৩. নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা জ্ঞান, শ্রবণ, দর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের অতি নিকটবর্তী। তিনি দোআকারীর দোআ কবুল করেন, বিপদগ্রস্তকে বিপদমুক্ত করেন। বিশুদ্ধ ‘আকিদা বিশ্বাস লালনকারীগণ এটি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে সর্বাবস্থায় তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। পক্ষান্তরে একাধিক মাবুদে বিশ্বাসীগণ দোদুল্যমান অবস্থায় অস্থির-অশান্ত মনে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করে। সুতরাং একজন মুমিন মুসলামানের জন্য আকিদা বা বিশ্বাসকে গুরুত্ব প্রদান করা অবশ্যক।
আকিদার উৎসঃ ইসলামি বিশ্বাস বা ‘আল-আকিদাহ আল-ইসলামিয়্যাহ’-এর ভিত্তিগত উৎস কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান। পবিত্র কোরআনে ও সহিহ হাদিসে যা বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে তাই বিশ্বাস করা এবং যেভাবে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে সেভাবেই বিশ্বাস করা ইসলামি আকিদার মূল ভিত্তি। এছাড়া বিশ্বাস বনাম জ্ঞানবিশ্বাস বা ঈমানের ভিত্তি হলো জ্ঞান। কোনো বিষয়ে বিশ্বাস করতে হলে তাকে জানতে হবে। বিশুদ্ধ ঈমান বা বিশ্বাসই যেহেতু দুনিয়া ও আখিরাতে মানবীয় সফলতার মূল চাবিকাঠি সেহেতু ঈমান বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করাই মানব জীবনের সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন, অতএব তুমি জেনে রাখ যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই। [ইবনু আবি আসিম, আবূ বাকর আমর (২৮৭ হি), কিতাবুস সুন্নাহ (বৈরুত, আল-মাকতাব আল-ইসলামী, ৩য় মুদ্রণ, ১৯৯৩] সুতরাং বিশুদ্ধ ঈমান বিষয়ক সঠিক জ্ঞানই মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান।
আকিদার মূল ভিত্তিঃ ইসলামি আকিদার মূল ভিত্তি হলো, আল্লাহ, ফিরিশতাগণ, আসমাসি কিতাবসমূহ, আল্লাহর প্রেরিত নবি-রাসূলগণ, আখিরাত দিবস এবং তাকদিরের ভালো কিংবা মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। এ মর্মে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, বরং ভালো কাজ হলো, যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফিরিশতাগণ, কিতাব ও নবিগণের প্রতি। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭]
তিনি আরো ইরশাদ করেন, রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৫]
আরো ইরশাদ হেয়েছে, আর যে কেউ আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৬]
হজরত জিবরাইলল আলাইহিস সালাম ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বলেন, ঈমান হলো, আল্লাহর উপর ঈমান স্থাপন করা, আল্লাহর ফিরিশতা, আসমানি কিতাবসমূহ, আল্লাহর প্রেরিত নবি-রাসূলগণ, আখিরাত দিবস এবং তাকদিরের ভালো কিংবা মন্দের উপর ঈমান আনয়ন করা। [সহিহ মুসলিম ২/৮]
ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্যঃ ‘আকিদা’ শব্দটি প্রায়ই ঈমান ও তাওহিদের সঙ্গে গুলিয়ে যায়। মূলত অস্বচ্ছ ধারণার ফলে এমনটা হয়। প্রথমত, ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত করে। আর আকিদা দীনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। দ্বিতীয়ত, আকিদার তুলনায় ঈমান আরও ব্যাপক পরিভাষা। আকিদা হলো কিছু ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের নাম। অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়; বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ। একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদা পোষণ। আরেকটি বিষয় হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়। তৃতীয়ত, আকিদা হলো ঈমানের মূলভিত্তি। আকিদা ব্যতীত ঈমানের উপস্থিতি তেমন অসম্ভব, যেমনিভাবে ভিত্তি ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা অসম্ভব।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ