ইসলাম ও বিজ্ঞান পরিচিতি
নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সুখ-সৌভাগ্য অবশ্যই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার পথে চলে। অজ্ঞতা ও পশ্চাদগামিতার পথে কখনও চলতে পারে না। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আনীত ইসলাম ধর্মের ন্যায় অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ নেই যা জ্ঞানীদের মর্যাদা সুউঁচু করেছে, তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে বলেছে, জ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করেছে, বিবেবকে কাজে লাগাতে বলেছে ও চিন্তা-গবেষণা করতে আহবান করেছে। তিনি এক মহা সভ্যতা গড়েছেন, যা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এজন্যই তাঁর আগমনকে জ্ঞান পিপাসু ও জ্ঞানীদের নিকট প্রকৃত জ্ঞানের এক মহাবিপ্লব হিসেবে গণ্য করা হয়।
“তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?”
— সূরা মায়েদাঃ ৫০
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
ইসলাম সর্বপ্রথম অবতীর্ণ সূরাতেই জ্ঞানার্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
“পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।”
— সূরা আলাকঃ ১-৫
এই আয়াতই প্রমাণ করে যে, জ্ঞান অর্জন করা ইসলামের মূল ভিত্তি। দুনিয়া ও আখেরাতের গোপন রহস্য উন্মোচনের চাবিকাঠি জ্ঞান।
কুরআন ও হাদীসে বিজ্ঞানের মর্যাদা
আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির ঘটনা থেকেই আল্লাহ তায়া’লা জ্ঞানের মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন। সূরা বাকারাঃ ৩০-৩৩-এ এই বিস্ময়কর ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। ফেরেশতাদেরকে আদম (আঃ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়া’লা তাঁর জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
“আমি জানি, যা তোমরা জান না। আমি আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম শিখালাম…”
— সূরা বাকারাঃ ৩০-৩৩
কোরআন জ্ঞান অর্জনের পথপ্রদর্শক। প্রতিটি সূরাতেই জ্ঞানের প্রতি আহ্বান রয়েছে। মুমিন পুরুষ ও নারীর মর্যাদা জ্ঞানসম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে আরোহিত হয়েছে।
ইসলামে জ্ঞানের মর্যাদা ও প্রভাব
রাসুল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের পথে চলবে, আল্লাহ তায়া’লা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন। ইলম অন্বেষণকারীর জন্য আসমান ও জমিনের সবাই ইস্তিগফার করতে থাকে…”
— মুসলিম শরীফ
মসজিদগুলো তখন ইলম ও উলামাদের দুর্গে পরিণত হয়েছিল। শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হতো। জ্ঞান ও বিজ্ঞান ইসলামের আত্মা।
আল কোরআনের বৈজ্ঞানিক বিস্ময়
ইলম শব্দটি কোরআনে ৭৭৯ বার এসেছে। পাশাপাশি ইয়াকিন, হেদায়েত, আকল, ফিকির ইত্যাদি শব্দগুলোর মাধ্যমে জ্ঞানের প্রতি প্রবল উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে ইসলাম কখনো অজ্ঞতা প্রচার করেনি, বরং প্রতিটি সূরাতেই বিজ্ঞানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ইসলামের দ্বারা মানবজাতির উন্নয়ন
আল কোরআন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শাস্ত্র নয়, তবে হেদায়েতের কিতাব। আধুনিক বিজ্ঞান যা প্রমাণ করেছে, তা কোরআনের সাথে কখনো বিরোধপূর্ণ নয়। ইসলামের যুগে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও উন্নয়ন ঘটেছিল।
“ইউরোপে পদার্থ বিজ্ঞানের উন্নতি সরাসরি জাবির ইবনে হাইয়ানের অবদান। ইউরোপীয় ভাষায় বিজ্ঞানের অনেক পরিভাষায় এখনও তাঁর ব্যবহৃত পরিভাষাই ব্যবহৃত হয়।”
— ম্যাক্স মাইরহোপ
আল খাওয়ারিজমীর গণিতবিদ্যায় অবদান আজও বহুল পরিচিত। তার গ্রন্থ বহু ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করা হতো।
আধুনিক যুগে ইসলামি বিজ্ঞানীদের অবদান
১৯৯৯ সালে মিশরীয় রাসায়নিক বিজ্ঞানী ফেমটোসেকেন্ড স্পেকট্রোস্কোপি আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয় অতি দ্রুত লেজারের মাধ্যমে। ডঃ আহমাদ জুয়েল অস্বাভাবিক দ্রুত ফটোগ্রাফি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যা আধুনিক বিজ্ঞানে অগ্রগতি এনে দিয়েছে।
ইসলামের পথ: জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথ
ইসলাম অজ্ঞভাবে অনুসরণ বা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসকে নিষিদ্ধ করেছে।
“তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।”
— সূরা আন’আমঃ ১১৬
আল্লাহ তায়া’লা জ্ঞান ও যুক্তির বিপরীতে ভ্রান্ত প্রবৃত্তির অনুসরণ কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করাও ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।
অমুসলিম মনীষীদের উক্তি
“নিঃসন্দেহে ইসলাম – জ্ঞান বিজ্ঞানের ধর্ম- ইহা তার অনুসারীদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞান ও আমলের দ্বারা পাথেয় সংগ্রহ করতে সর্বদা আহবান করে।”
— রবার্ট বায়ের জোসেফ
“মসজিদসমূহ ছিল ইসলামের বিশ্ববিদ্যালয়, জ্ঞান পিপাসু ছাত্রদের দ্বারা ইহা শোরগোলে ভরপুর ছিল।”
— স্ট্যানলি লেন পল
“আল কোরআনে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্পর্কিত ৭৭৪টি আয়াত রয়েছে।”
— মরিস বুকাইলী
“যখন মুসলিম জাহান জ্ঞান অন্বেষণে তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠল, তখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্ররা আরবীতে দক্ষ উলামাদের পাঠদান শুনতে আসত।”
— স্ট্যানলি লেন পল
“আমি বিশ্বাস করি মুহাম্মদ (সা.) মানবজাতির কাছ থেকে কোন শিক্ষকের সাহায্য ছাড়া স্পষ্ট সত্য নিয়ে আগমন করেছিলেন।”
— রিনে জীনো
উপসংহার
ইসলাম মানবজাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথ প্রদর্শন করেছে। নবী (সা.)-এর আগমন থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম বিজ্ঞানীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। ইসলামের শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হওয়া আমাদের দায়িত্ব। বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রজন্ম যেন এই শিক্ষার আলোকে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে, সেই লক্ষ্যে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
📚 ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ক বইসমূহ
ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অভিযোগের জবাব ও বিজ্ঞান — ডা. শাহ্ মুহাম্মদ হেমায়েতউল্লাহ
২। আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে বিবর্তবাদ — শেখ নুর এ আলম
৩। আল কুরআন এক মহাবিশ্ব ময় — ড. মরিস বুকাইল ও ড. কিথ এল. মুর
৪। আল কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান — ড. জাকির নায়েক
৫। আল কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান — মোহাম্মদ ওসমান গণি
৬। আল কুরআন ও মহাবিশ্ব সমন্বিত ধারায় অধ্যয়ন — ড. ত্বাহা জাবির আল আলওয়ানী
৭। আল কুরআন দ্য চ্যালেঞ্জ মহাকাশ — কাজী জাহান মিয়া
৮। আল কুরআনে বিজ্ঞান — ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৯। আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহাকাশ ও বিজ্ঞান — দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
১০। ইসলাম ও বিজ্ঞান — অধ্যাপক গোলাম আযম
১১। ইসলাম ও বিজ্ঞান — প্রফেসর ড. নাজিবুদ্দিন এরবাকান
১২। ইসলাম ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জীবজগত সৃষ্টির রহস্য — মোঃ আব্দুল ওয়াহাব
১৩। ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান — মোঃ ওসমান গণি
১৪। ইসলামে সমাজ বিজ্ঞান — ড. এম মোসলেহ উদ্দিন
১৫। ওহী ও আধুনিক বিজ্ঞান — ওয়াহিদুদ্দিন খান
১৬। কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান — ড. জাকির নায়েক
১৭। কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞানঃ সামঞ্জস্যপূর্ণ না অসামঞ্জস্যপপূর্ণ — ডাঃ জাকির নায়েক
১৮। কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান — ডক্টর মরিস বুকাইলী
১৯। কুরআন ও বাইবেল — ড. জাকির নায়েক
২০। কুরআন সৃষ্টিতত্ত্ব বিগ-ব্যাংগ — মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
২১। কুরআনে বিজ্ঞান — ড. মুহাম্মদ গোলাম মুয়াযযাম
২২। প্রথম মানুষই প্রথম বিজ্ঞানী — খন্দকার আবুল খায়ের
২৩। বাইবেল কুরান ও বিজ্ঞান — ড. মুরিস বুকাইলি
২৪। বিজ্ঞান ও কুরআনে মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর — প্রকাশনায়ঃ ইসলাম হাউস
২৫। বিজ্ঞান ও জীবনবিধান — মুহাম্মদ আব্দুর রহীম
২৬। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দৃষ্টিভঙ্গী ও অনুশীলনে ইসলাময়ন — এম এ কে লদী সম্পাদিত
২৭। বিজ্ঞান সমাজ ধর্ম প্রিন্সিপাল — আবুল কাসেম
২৮। বিজ্ঞানময় কোরআনঃ Al-Quran Is All Science — মুহাম্মদ আবু তালেব
২৯। বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান — মুহাম্মদ নুরুল আমিন
৩০। বিজ্ঞানে মুসলমানদের দান — এম. আকবর আলি
৩১। বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন ও বাইবেল — ড. জাকির নায়েক
৩২। বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা — ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া
৩৩। বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব — মুহাম্মাদ আবদুর রহীম
৩৪। বিবর্তনবাদ কতটুকু গ্রহণ যোগ্য — ইসলামিক অনলাইন মিডিয়া
৩৫। বিশ্বজাগতিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও ইলমুল কালাম — আলি মনসুর
৩৬। বিশ্বসেরা মুসলিম বিজ্ঞানী — মুহাম্মদ নূরুল আমীন
৩৭। বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ দঃ — মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
৩৮। ভূগোল বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান — নাফিস আহমদ
৩৯। মহানবীর সাঃ মিরাজ ও বিজ্ঞান — মোঃ মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা
৪০। মহাশূন্যে সব-ই ঘুরছে — খন্দকার আবুল খায়ের
৪১। মানব সৃষ্টি ইসলাম ও বিজ্ঞানে — মোঃ মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা
৪২। মিরাজ ও বিজ্ঞান — আশরাফ আলী থানবী
৪৩। মিরাজ ও বিজ্ঞান — মোঃ মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা
৪৪। সময়ের বিচিত্র কাহিনী ও মহাকালের অজানা রহস্য — ড. শহীদুল্লাহ মৃধা
৪৫। সাইন্স ফ্রম আল করআন — মুহাম্মদ আবু তালেব
৪৬। সুন্নাত ও বিজ্ঞান — ড. জাকির নায়েক
৪৭। সেরা মুসলিম বিজ্ঞানী — জিলহজ আলী
৪৮। সৃজনশীল ও বৈজ্ঞানিক চিন্তার ব্যবহারঃ একটি ভূমিকা — নুমান বিন আবুল বাশার
৪৯। সৃষ্টিতত্ত্ব ও বিজ্ঞান — মাহমুদুল হাসান নিজামী
৫০। স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার — সাহাদাত হোসেন খান
৫১। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও ইসলাম — ডাঃ মুহাম্মদ গোলাম মুয়াযযাম
৫২। হাদীসের নূর ও আধুনিক বিজ্ঞান — আইয়ুব আলী