গ্রন্থ পরিচিতঃ অত্র গ্রন্থে দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অমিয় বানীর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ সহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পাঠ পর্যালোচনা: “এবং তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ কর এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন । নিশ্চয়ই এর ভেতর নিদর্শন আছে সেই সব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সূরা রুম, আয়াত – ২১)
রসূল স. এর জীবন চরিত আলোচনা করতে গেলে দেখা যায় ‘যৌন-বিজ্ঞান পরিচ্ছেদ’ তাঁর জীবনের এক সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। আমরা ভ্রমবশতই হোক, অজ্ঞতাবশতই হোক অথবা লজ্জাবশতই হোক, তাঁর এ শ্রেষ্ঠ অবদানকে সমাজের কাছে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারি নি, আর এ জন্যই পুরুষ নারীকে- আর নারী পুরুষকে সঠিকভাবে চিনবার সুযোগ পায় নি। তাই পরিবারের মাঝে বিশৃঙ্খলা, জীবনের মাঝে অশান্তি আর পরম সুখের মাঝে অনাবিল দুঃখ ভরে আছে।
মানব জীবনে যৌন চাহিদা ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত কিন্তু যৌনাচারের পন্থা সম্পর্কে রয়েছে অনুশাসন। মানুষের বিবিধ যৌনাচার অনুমোদনযোগ্য কি-না তা দু’টি বিষয় থেকে অনুমানযোগ্য। প্রথমত: যৌনাচারের মূল উদ্দেশ্য বংশবৃদ্ধি এবং দ্বিতীয়ত: নারী ও পুরুষ কেবল রীতিসিদ্ধ উপায়ে বিয়ের মাধ্যমে যৌনাচারের অধিকার অর্জন করে।
যৌবনের ঢেউ যখন শরীরে দোলা দেয় তখন স্বভাবতই নর-নারী উন্মাদ হয়ে উঠে। তাই স্বাভাবিক অথবা অস্বাভাবিক উপায়ে নর-নারী তার যৌন-তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেককে জলাঞ্জলি দিয়ে স্বার্থপর ও উন্মাদ হয়ে অশান্তি, অরাজকতার আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সুচিন্তার অবকাশ থাকে না। কিন্তু- বিবাহ নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তায় যৌন-ক্ষুধা মেটানোর পক্ষে যেমন সহায়ক তেমনি কুচিন্তা, কুকার্য, অরাজকতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ও ব্যভিচারের হাত থেকে রক্ষা করে ধর্মীয় জীবন পালন করার পক্ষেও সহায়ক।
কেননা এতে থাকে নিজের জন্য নির্দিষ্ট এক সাথী-যাকে যখন ইচ্ছা কাছে পাওয়া যায়। সময় অসময়ের প্রশ্ন থাকে না। স্থান, কাল সম্মতি, অসম্মতি, লজ্জা, ভয়, স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক প্রশ্ন এসে বিভ্রান্ত ও বিব্রত হতে হয় না। স্বামী-স্ত্রীর ইচ্ছার ওপরই পরম তৃপ্তিতে যৌনসুখ উপভোগ করা যায়। এ অপূর্ব সুখ দুজনের জীবনে আনে শৃঙ্খলা, ভালোবাসা, প্রেম ও ভক্তি। তবে তার আগে জানতে হবে নর-নারী সৃষ্টি-রহস্য। নারীর সৃষ্টি-রহস্য না জানলে নারীকে বোঝা যায় না। নারীর শারীরিক গঠন, মানসিক অবস্থা, প্রেমের ভঙ্গি পুরুষ হতে কেমন ভিন্ন এ তত্ত্ব জানা যেমন প্রয়োজন, তেমনি পুরুষের আকৃতি, প্রকৃতি. মন-মেজাজ ও কার্যক্ষমতার একটা সঠিক চিত্র নারীদের মনেও ভাসমান থাকা প্রয়োজন। তবেই একে অপরকে জানা ও চেনার মাঝে এক সুখের জীবন রচিত হয়। এই উদ্দেশ্য নিয়েই নারী-পরুষের বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে বক্ষমান গ্রন্থে।
অত্র গ্রন্থটি সিরিজ বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ (দঃ) – এর দ্বিতীয় খন্ড। প্রথম খন্ডে আলোচিত হয়েছে সমাজ বিজ্ঞান ও শারীর বিজ্ঞান নিয়ে। এই খন্ডে যৌনবিজ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনা স্থান পেয়েছে। মোট আটটি অধ্যায়ে গ্রন্থটিকে সাজানো হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে নারী ও পুরুষের দৈহিক পার্থক্য, পুরুষের যৌবন, নারীর যৌবন, বিবাহের প্রয়োজনীয়তা, বিবাহের উপকারিতা, বিবাহের শর্ত ইত্যাদি বিষয়ে। লেখক মূলত প্রত্যেকটি বিষয়কেই যৌনবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশ্লেষন করেছেন।
অপূর্ব সৃষ্টির অপূর্ব স্বাদ গ্রহণ করারই নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সা.। তিনি ঘোষণা করলেন – “লা রহবানিয়াতা ফিল ইসলাম’ অর্থাৎ ইসলামে বৈরাগ্য নেই। সংসার জীবনেই মুক্তি, ভালোবাসার মাঝেই আকর্ষণ, প্রেম ও মায়ার মাঝেই আনন্দ- যা সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করেন, তা-ই তিনি দেখালেন দৈনন্দিন জীবনে। তিনি নিজে বিবাহ করেছেন, প্রেমের বন্ধন শিখিয়েছেন. যৌন-জীবনের টুকিটাকি আলোচনা করে জ্ঞানদান করেছেন এবং অজ্ঞতা ও মূর্খতার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন। কিভাবে করেছেন, কি শিখিয়েছেন – বিবাহ, দাম্পত্য-জীবন ও যৌনমিলন পরিচ্ছেদে তার বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
যুগে যুগে নারীকে নিয়ে যে বিভৎস কান্ড ঘটত, টানা হেচঁড়া করে পথে-ঘাটে নামিয়ে তাদের কিরূপে মান-ইজ্জত নষ্ট করা হতো, ইচ্ছামতো গ্রহণ ও বর্জন করে তাদের কিভাবে সমাজচ্যুত করা হতো এসব ঘটনা কারো জানবার বাকি নই। করুণার নবী হযরত মুহাম্মাদ স. তাদের এমন দুর্দশা দেখে স্থির থাকতে পারলেন না। জলদগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করলেন- “নারীর উপর পুরুষের যেমন অধিকার রয়েছে, পুরুষের উপরও নারীর তদ্রুপ ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে ”। আবার ‘নারীকে পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী’ আখ্যায়িত করে তিনি কিভাবে তাদের সম্মানিত করলেন, পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকারিণী করলেন, স্বামীর সংসারে শান্তিদায়িনী হিসাবে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করে নারী-পুরুষের মধুময় জীবনের ব্যবস্থা করলেন, যুগ যুগের ভ্রান্ত, অলীক ও কুসংস্কারের মাথায় কুঠারাঘাত করে ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ – এমন শান্তির বাণী শোনালেন তার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেছেন।
হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা পরিহার করে কিভাবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নারীকে নিয়ে সংসার-জীবন যাপন করা যায় তার ব্যাখ্যা দান করে মানুষের মাঝে এক প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক স্থাপন করার দৃষ্টান্ত তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আলোচিত হয়েছে রসূল সা. এর বহু বিবাহ ও তার কারণ পরিচ্ছেদে। ইসলামের প্রথম প্রভাত হতেই ঘোরতর ইসলাম বিদ্বেষী ধর্মবেত্তা ও তাদের দালাল কুলাঙ্গাররা চরম শত্রুতাবশতঃ ইসলামের নবী সা. এর ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়। হীনস্বার্থ চরিতার্থের অন্ধ উন্মাদনায় মত্ত হয়ে আমাদের নবী সা. এর ওপর প্রবল আক্রমন চালিয়ে আসছে। যেন ধর্মপ্রান মানুষ তাঁর রেসালাতের ওপর ঈমান আনার থেকে বিরত থাকে এবং মুসলমানগন তাদের ধর্মের ব্যাপারে সন্দেহে নিপতিত হয়। সে সকল কুলাঙ্গারদের কালো থাবা থেকে রক্ষা পায় নি রাসূলুল্লাহ সা. এর মহৎ উদ্দেশিত বহুবিবাহ বিধানটিও। এ ব্যাপারে ইসলাম বিদ্বেষী অনেকেই উচ্চস্বরে বহু কথাই বলেছে। তারা এ বিষয়ে সন্দেহের ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে কোনো কসুর করে নি। লেখক মহোদয় এক এক করে সেগুলো খন্ডন করে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন।
পঞ্চম অধ্যায়ে স্বামী-স্ত্রী দায়িত্ব ও কর্তব্য, দাম্পত্য জীবনে কেন অশান্তি নেমে আসে এবং এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় তা নবী মুহাম্মাদ সা. এর প্রদর্শিত শিক্ষার আলোকে লেখক বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছেন। মূলত দাম্পত্য জীবনে অশান্তি বর্তমান বিশ্বে এক মহামারি আকার ধারন করেছে। দাম্পত্য জীবনে চরম অশান্তির মূলে যে সব কারণ রয়েছে তার মধ্যে অবাধ মেলামেশা অন্যতম । নারী-পুরুষ যৌন-তৃষ্ণা মেটায় দু-দিক থেকে। একটি দৈহিক আর একটি মানসিক । Miss Dorotht Bromely বলেছেন, “ গড়ে বিশ বছর বয়সের ছাত্রদের মধ্যে শতকরা ৭০ জন ও মেয়েদের মধ্যে শতকরা ২৫ জনই যৌন তৃষ্ণা মিটিয়েছে।”
ষষ্ঠ অধ্যায়ে লেখক পর্দা সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করেছেন। পর্দা প্রথা কি ও কেন? – এর বৈজ্ঞানিক যুক্তি কি? এটা না মানার কুফল সমাজে কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে, বিভিন্ন দেশের সামাজিক আচরণ ও ফলাফল দেখে লেখক তার বর্ণনা যেমন দিয়েছেন- তেমনি বিভিন্ন ধর্মের মনীষীদের এবং আল্লাহ-রসুলের নির্দেশিত পথও দেখিয়েছেন।
গ্রন্থের শেষের দিকে ব্যভিচার, ব্যভিচারের কুফল ও তার শাস্তি বিষয়ক তথ্যবহুল আলোচনা স্থান পেয়েছে। নারী-পুরুষের অবৈধ মিলনের নামই ব্যভিচার। ব্যভিচারের শাস্তি কুরআন ও বাইবেলে একইরূপ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহর বিধান ও হযরতের বিধানকে অত্যন্ত ভয় করে। কিন্তু খৃষ্টানেরা যীশুখৃষ্টের অন্য সব উপদেশ কিছুটা মেনে চললেও ব্যভিচার সম্বন্ধে ‘রজম’ করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে। ইউরোপের সাহিত্য সাক্ষ্য দেয় যে, বায়রন, নেপোলিয়ন, ল্যাটিন, শেক্সপিয়ার, মারে, মার্লো, অ্যাঞ্জেলা, বেকন অস্কার ওয়াইল্ডের মতো মহাপন্ডিত! ও কবি –সাহিত্যিকরাও এ ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারে নি।
মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম কর্তৃক রচিত বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ(দঃ) pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ দঃ ১ম খণ্ড
বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ দঃ ২য় খণ্ড
বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ দঃ ৩য় খণ্ড
বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ দঃ ৪র্থ খণ্ড
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ