যাকাত বা ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ক বই: Bengali islamic economics books pdf

ইসলামী অর্থনীতি : নীতি, প্রয়োগ ও প্রাসঙ্গিকতা

প্রস্তাবনা

অনেকে মনে করেন, অর্থনীতি কেবলমাত্র মুনাফা অর্জন ও বাজার নিয়ন্ত্রণের একটি প্রক্রিয়া। তবে ইসলামী অর্থনীতি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশে পরিচালিত। ইসলামী অর্থনীতি ব্যক্তিগত স্বার্থের পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেয়।

“আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন ও সুদকে হারাম করেছেন।”
— কোরআন, সূরা বাকারা : ২৭৫

---

ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি

ইসলামী অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো:

• ন্যায়বিচার: সবার সঙ্গে সমান আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।
• শরীয়াহর অনুসরণ: কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী লেনদেন পরিচালনা।
• সদাচার ও সততা: প্রতারণা ও অসৎ উপার্জন নিষিদ্ধ।
• সমাজকল্যাণ: দারিদ্রতা বিমোচন ও অভাবী মানুষের সহায়তা নিশ্চিতকরণ।

“আমি তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনঃসংযোগ করেন।”
— কোরআন, সূরা বাকারা : ২৯

---

শরীয়াহর প্রয়োগ

শরীয়াহর আইন কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য দিয়ে কার্যকর হয়। বিচার, সম্পদের বণ্টন, ইজারা, মুদারাবা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই শরীয়াহ নির্দেশিকা অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

“জনগণের যাবতীয় ব্যাপার সুসম্পন্ন করা-রাষ্ট্র কায়েম করা দ্বীনের সর্বপ্রধান দায়িত্ব।”
— ইবনে তাইমিয়া, আস-সিয়াসাতুশ শরইয়্যাহ

---

ব্যক্তিগত কল্যাণ ও সামাজিক দায়িত্ব

ইসলামী অর্থনীতি ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সামাজিক কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:

“আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য দেবে এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।”
— কোরআন, সূরা ইসরা : ২৬

নবী করিম (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, ক্ষুধার্ত ব্যক্তি থাকা মহল্লা আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত নয়।

---

সুদ হারামকরণ

ইসলামে সুদের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ সুদ মানুষকে শোষণ করে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:

“হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া যা আছে তা ছেড়ে দাও।”
— কোরআন, সূরা বাকারা : ২৭৯

---

করজে হাসানা ও মানবকল্যাণ

ইসলাম দারিদ্র বিমোচনের জন্য করজে হাসানার ব্যবস্থা রাখে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন:

“কে আছ যে আল্লাহকে উত্তমভাবে ঋণদান করবে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ বহুগুণ বর্ধিত করবেন।”
— কোরআন, সূরা বাকারা : ২৪৫

---

আধুনিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী অর্থনীতি

আজকের বিশ্বে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মূলত পুঁজিবাদ ও পশ্চিমা গণতন্ত্র ভিত্তিক। এসব ব্যবস্থার ফলে নৈতিক অবক্ষয়, দারিদ্রতা ও বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতি ন্যায়ের ভিত্তিতে সাম্য ও সামাজিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে।

“ধনীদের ধন-সম্পদে আছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক।”
— কোরআন, সূরা জারিয়াত : ১৯

---

ইসলামী অর্থনীতির ভবিষ্যত প্রাসঙ্গিকতা

ইসলামী অর্থনীতি একটি জীবনধারা, যা ধর্ম ও নৈতিকতার ভিত্তিতে সমাজ পরিচালনা করে। এটি বৈষম্য হ্রাস করে, দারিদ্র বিমোচন করে এবং সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। খোলাফায়ে রাশেদিন যুগ তার প্রমাণ।

“যে আমার সুন্নাহ অনুসরণ করবে এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের পথ অবলম্বন করবে, সে মুক্তি পাবে।”
— সহিহ হাদিস

---

উপসংহার

ইসলামী অর্থনীতি কেবল তত্ত্ব নয়, বরং বাস্তব জীবনে প্রয়োগের আদর্শ। এটি ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করে, ন্যায়ের ভিত্তিতে সমাজকে পরিচালনা করে। বর্তমান যুগে ইসলামী অর্থনীতি মানবকল্যাণ ও সামাজিক শান্তির জন্য অপরিহার্য বিকল্প হিসেবে বিবেচিত। মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব হলো—আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করে সমাজকে আলোকিত করা।

---