আবুল কালাম আজাদ: Abul Kalam Azad Books

✍️ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী | চিন্তাবিদ | শিক্ষানুরাগী | ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী

প্রস্তাবনা

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (১১ নভেম্বর ১৮৮৮ – ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট নেতা, লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ।
তিনি ছিলেন জাতীয় ঐক্য, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শিক্ষা বিস্তারের অন্যতম অগ্রদূত।
গান্ধীজির অহিংস আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি জীবন উৎসর্গ করেন ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য।
আজাদ কেবল রাজনীতিকই ছিলেন না, বরং এক দূরদর্শী চিন্তাবিদ, যিনি স্বাধীন ভারতের শিক্ষানীতির ভিত্তি স্থাপন করেন।

“শিক্ষা কেবল জীবিকা অর্জনের উপায় নয়, এটি জাতি গঠনের মূলভিত্তি।” – মাওলানা আবুল কালাম আজাদ

প্রারম্ভিক জীবন

১৮৮৮ সালের ১১ নভেম্বর সৌদি আরবের পবিত্র শহর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন আবুল কালাম গোলাম মুহিউদ্দীন আজাদ।
তাঁর পিতা মাওলানা খায়রুদ্দিন ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি আলেম, আর মাতা ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত ধর্মপ্রাণ নারী।
১৮৯০ সালে পরিবারসহ ভারত ফিরে এসে কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ধর্মীয় শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী ছিলেন।
‘আজাদ’ নামটি তিনি নিজেই গ্রহণ করেন, যা অর্থে বোঝায় “স্বাধীন” — ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত এক স্বাধীন মননের প্রতীক।

শিক্ষাজীবন

শৈশব থেকেই তিনি ইসলামি ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও ভাষা শিক্ষায় অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়েছিলেন।
পিতার তত্ত্বাবধানে কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও তাফসির অধ্যয়ন করেন।
পরে আরবি, ফারসি, ইংরেজি, গণিত, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও জ্ঞান অর্জন করেন।
মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি দর্শন, জ্যামিতি ও রাজনীতিতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করেন।
পরবর্তীতে তিনি কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।
এই শিক্ষাই তাঁকে মুক্তচিন্তা ও জাতীয়তাবাদের পথে পরিচালিত করে।

“যে জাতি শিক্ষায় পিছিয়ে থাকে, সে জাতি স্বাধীনতার যোগ্যতা হারায়।” – মাওলানা আজাদ

কর্মজীবন

মাওলানা আজাদ ছিলেন একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ।
তাঁর কলম ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক।

সম্পাদকীয় ও সাংবাদিকতা

তিনি অল্প বয়সেই পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন।
সাপ্তাহিক “আল-হিলাল” ও পরে “আল-বালাগ” পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি মুসলিম যুবসমাজকে জাতীয় চেতনা ও হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বার্তা দেন।
তাঁর লেখনীতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবের আহ্বান ছিল প্রবল ও প্রভাবশালী।
এর ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বহুবার কারারুদ্ধ করে।

রাজনৈতিক ভূমিকা

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে তিনি সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি প্রত্যাখ্যান করেন।
পরবর্তীতে তিনি গান্ধীজির আহ্বানে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং অসহযোগ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন ও স্বরাজ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
১৯২০ সালে রাঁচিতে কারাবাসের পর তিনি আরও দৃঢ়চিত্তে জাতীয় আন্দোলনে যুক্ত হন।
তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং স্বাধীনতার জন্য অক্লান্ত সংগ্রাম করেন।

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অবদান

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মাওলানা আজাদ দেশের শিক্ষানীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন।
তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় “সেন্ট্রাল অ্যাডভাইজরি বোর্ড অফ এডুকেশন”
তিনি ১৪ বছর পর্যন্ত সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালুর দাবি জানান।
তাঁর প্রচেষ্টায় গঠিত হয় আধুনিক ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তি—

  • সঙ্গীত নাটক আকাদেমি (১৯৫৩)
  • সাহিত্য আকাদেমি (১৯৫৪)
  • ললিত কলা আকাদেমি (১৯৫৪)
  • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC)
  • ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT)–এর ধারণা ও প্রতিষ্ঠার মূল কৃতিত্ব তাঁর

তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা হবে ধর্মনিরপেক্ষ, মানবিক ও সমাজকল্যাণমুখী।

“শিক্ষা ও সংস্কৃতি ছাড়া স্বাধীনতা কেবল দেহের মুক্তি, আত্মার নয়।” – আবুল কালাম আজাদ

চিন্তাধারা ও আদর্শ

আজাদের চিন্তার মূলভিত্তি ছিল জাতীয় ঐক্য ও মানবিকতা।
তিনি বিশ্বাস করতেন, ভারতের প্রকৃত শক্তি তার বৈচিত্র্য ও ঐক্যে নিহিত।
ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টির বিরোধিতা করে তিনি বলেছিলেন— “ভারত কোনো ধর্মের দেশ নয়, এটি মানবতার দেশ।”
তাঁর আদর্শে শিক্ষা, ন্যায়, সংস্কৃতি ও শান্তির বার্তা প্রাধান্য পেয়েছে।

সম্মান ও পুরস্কার

মাওলানা আজাদের জীবন ও কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ১৯৯২ সালে মরণোত্তর ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৮৯ সালে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ভারত সরকার গঠন করে “মাওলানা আজাদ শিক্ষা ফাউন্ডেশন”
প্রতি বছর ১১ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করা হয় জাতীয় শিক্ষা দিবস হিসেবে।

“আমার কলম নীরব হতে পারে, কিন্তু আমার চিন্তা কখনো থেমে থাকবে না।” – মাওলানা আজাদ

মৃত্যু

১৯৫৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যু ভারতের বৌদ্ধিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করে।
আজও তাঁর আদর্শ ও অবদান ভারতের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভিত্তি হিসেবে টিকে আছে।

উপসংহার

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম স্থপতি ও শিক্ষাবিদ।
তিনি প্রমাণ করেছিলেন, শিক্ষা ও ঐক্যই একটি জাতির প্রকৃত শক্তি।
তাঁর নেতৃত্ব, চিন্তা ও কর্ম আজও ভারতবর্ষের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতার দিশারি।
তিনি ছিলেন এক সত্যিকারের “আজাদ”— স্বাধীন মন, স্বাধীন চিন্তা ও স্বাধীন চেতনার প্রতীক।

আরও পড়ুন

👉 Ministry of Education (India)
👉 Government of India: Maulana Abul Kalam Azad

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক রচিত pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। জবানবন্দি
২। ভারত স্বাধীন হল

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top