
দোয়া পরিচিতি: আল্লাহর নৈকট্য লাভের শক্তিশালী উপায়
দোয়া হলো একজন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে বড় ইবাদত এবং আল্লাহর নিকট নৈকট্য অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। মানুষ যখন বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখন সে তার দাসত্ব প্রকাশ করে। এ কারণেই কুরআন-হাদিসে দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দোয়ার অর্থ ও সংজ্ঞা
‘দোয়া’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহকে ডাকা, কিছু চাওয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করা। কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সুরা মু’মিন: ৬০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “দোয়া-ই ইবাদত।” (তিরমিজি)
দোয়ার গুরুত্ব
দোয়া হলো মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার কল্যাণ এবং আখেরাতের মুক্তি লাভ করতে পারে। আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া মানুষের কোনো উপায় নেই।
দোয়ার প্রকারভেদ
১. ব্যক্তিগত দোয়া
মানুষ নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। যেমন—রোগমুক্তি, জীবিকার সহজলভ্যতা, বিপদ থেকে রক্ষা ইত্যাদি।
২. সামষ্টিক দোয়া
জুমার নামাজ, ঈদের নামাজ কিংবা বিশেষ সময়ে সম্মিলিতভাবে করা দোয়া মুসলিম ঐক্যের প্রতীক।
৩. নির্দিষ্ট ইবাদতের সঙ্গে দোয়া
সালাত শেষে দোয়া করা, সিয়ামের সময় দোয়া করা, হজ ও ওমরায় দোয়া করা—এসব বিশেষ ইবাদতের অংশ।
দোয়ার আদব
- আল্লাহর প্রশংসা এবং দরূদ পাঠের মাধ্যমে দোয়া শুরু করা
- হৃদয় থেকে বিনয়ের সঙ্গে প্রার্থনা করা
- হালাল জীবিকা গ্রহণ করা
- ধৈর্যের সঙ্গে বারবার দোয়া করা
দোয়া ও ওসিলা
ইসলামে ওসিলা হলো আল্লাহর কাছে নৈকট্য লাভের মাধ্যম। বৈধ ওসিলা তিনটি: সৎকর্ম, দোয়া এবং আল্লাহর নাম-গুণ। তবে কোনো মৃত ব্যক্তি বা অলিকে মাধ্যম ধরা ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
বিস্তারিত জানতে পড়ুন ইসলাম সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য উৎস
দোয়ার সুফল
একজন মুসলমানের জন্য দোয়া হলো শক্তি ও আশা। দোয়ার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে শান্তি আসে, বিপদ থেকে মুক্তি মেলে, আল্লাহর রহমত নাজিল হয়। দোয়া মানুষকে করে তোলে আল্লাহভীরু, ধৈর্যশীল এবং আশাবাদী।
উপসংহার
দোয়া ছাড়া মানুষের মুক্তি নেই। প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াই হলো সফল জীবনের গোপন রহস্য। তাই আসুন, আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য বেশি বেশি দোয়া করি।
📚 দোয়ার বইসমূহ
দোয়ার বই সমূহ ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আইনে রাসুল সাঃ দোআ অধ্যায় – আব্দুর রাযযক বিন ইউসুফ
২। আল কুরআনের দু আ – আবদুস শহীদ নাসিম
৩। আল্লাহর রাসূল সা. দৈনন্দিন জীবনে যে সব যিকির ও দু আ পড়তেন – মুহাম্মদ গোলাম
৪। কুরআন মজীদের দোয়া ও মোনাজাত ইতিহাস দর্শন ফজিলত – মোঃ শহীদুল্লাহ যুবাইর
৫। কুরআন হাদিস ও দু আঃ ৩৬৫ দিনের ডায়েরী – মোঃ রফিকুল ইসলাম
৬। কুরআনের আয়াত দ্বারা মোনাজাত ও ও ১০০ দোয়া – আবু তাহের বর্ধমানী
৭। দু’আ কবুলের শর্ত – মুহাম্মদ মুকাম্মাল হক
৮। দুআ ও যিকির – আব্দুল হামীদ আল মাদানী
৯। দুআ কবুলের গল্পগুলো – রাজিব হাসান
১০। দুআ নিয়ে দুয়ো – উলামায়ে কেরাম
১১। দুআ মুনাজাতঃ কখন কিভাবে – ফায়সাল বিন আলি আল বাদানী
১২। দুআ মুনাজাতে নবী রাসুলের অসীলা দেওয়াঃ একটি পর্যালোচনা – আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
১৩। দৈনন্দিন জীবনে যিকর ও দোয়া – মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
১৪। দৈনন্দিন মাসনুন দোয়া ও মাসআলা মাসায়েল – আই সি এস পাবলিকেশন
১৫। দোআ মোনাজাতঃ কখন ও কিভাবে – ফায়সাল ইবন আলী আল বাদানী
১৬। দোয়া প্রসঙ্গ – আব্দুল্লাহ বিন আবদুর রহমান
১৭। দোয়ায়ে মাছনুন – মোঃ ছাখাওয়াত উল্লাহ
১৮। নামাযের দোআ ও যিকর – পশ্চিম দীরাহ ইসলামী দাওয়াহ সেন্টার
১৯। পবিত্র আল-কুরআনের দু আ – মোঃ আব্দুর রহীম খান
২০। যিয়ারুল কুবুর বা কবর যিয়ারাত — ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ
২১। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সকাল-সন্ধ্যার দু’আ ও যিকর — শায়খ আহমাদুল্লাহ
২২। রাসূলুল্লাহর সাঃ নামায ও জরুরি দোয়া — মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া
২৩। রাসূলুল্লাহর সাঃ মোনাজাত — দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
২৪। রাসূলুল্লাহর সাঃ নামায ও জরুরি দোয়া — মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়া
২৫। রাহে বেলায়াত ও রাসুলুল্লাহর সাঃ যিকির-ওযীফা — ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
২৬। শব্দে শব্দে হিসনুল মুসলিম — সাঈদ ইবনে আলী আল-কাহতানী
২৭। শরীয়াহ মানদণ্ডে মুনাজাত — মুযাফফার বিন মুহসিন
২৮। শুধু আল্লাহর কাছে চাই — মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
২৯। সকাল সন্ধ্যার যিকির সমূহ — ইকবাল হোছেন মাছুম
৩০। সহীহ কিতাবুদ দোআ — মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম
৩১। সহীহ দোআ শিক্ষা — আবদুর রশীদ
৩২। সহীহ নামায ও দুআ শিক্ষা — মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনে ফযল
৩৩। সহীহ মাসনূন ওযীফা — ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
৩৪। হিসনুল মুসলিম — সাইয়্যেদ বিন আলী বিন ওয়াহাফ আল কাহতানী
ওসিলা পরিচিতি: ইসলামে সঠিক ধারণা ও ভুল ব্যাখ্যা
ওসিলা শব্দটি নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তিনটি বৈধ পদ্ধতি আছে—
- ভালো আমল করা
- আল্লাহর কাছে দোয়া করা
- আল্লাহর নাম ও সিফাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করা
ইসলামে ওসিলা কী?
আল্লাহতায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি তাঁর বান্দার খুব কাছেই আছেন। তাই আল্লাহর কাছে পৌঁছতে কোনো ব্যক্তিকে মাধ্যম বা লবিং হিসেবে দাঁড় করানো ইসলামসম্মত নয়। নামাজ, রোজা, হজ্ব, ওমরা, কোরবানি, সাদকা—সবকিছুই আমরা সরাসরি আল্লাহর জন্য করি। এ ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।
ভুল ব্যাখ্যা: ব্যক্তিকে ওসিলা ধরা
অনেকে মনে করেন, কোনো পীর, বুজুর্গ বা বিশেষ ব্যক্তিকে মাধ্যম বানিয়েই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। অথচ ইবনে কাথির, ফতহুল কাদির বা তবারির মতো কোনো নির্ভরযোগ্য তাফসিরে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না। ইসলামে ব্যক্তিকে ওসিলা ধরা একটি ভ্রান্ত ধারণা।
শাফায়াতের সঠিক ধারণা
শাফায়াত বা সুপারিশ বিষয়টিও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। আল্লাহ নিজেই বলেছেন—আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁর কাছে শাফায়াত করতে পারবে না
(সুরা আল-বাকারা: আয়াতুল কুরসি)। অর্থাৎ শাফায়াত নির্ভর করে আল্লাহর অনুমতির ওপর, কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নয়।
মধ্যস্বত্ব ভোগী থেকে সতর্কতা
কোরআনে ইহুদিদের প্রসঙ্গে আল্লাহ সাবধান করেছেন—মধ্যস্বত্ব ভোগীদের মতো হয়ে যেও না। তাই ইসলামে কোনো মৃত বুজুর্গের কাছে দোয়া চাওয়া বা তাদের মাধ্যমে প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। তবে জীবিত আলেম বা ওলির কাছে দোয়া চাওয়া বৈধ, কারণ তারা আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।
ওসিলার আলোকে আমাদের করণীয়
আমরা যারা দ্বীন শিখতে চাই, আমাদের উচিত জ্ঞানী আলেমদের কাছে যাওয়া, দ্বীন শেখা এবং তাঁদের কাছে দোয়া চাওয়া। তবে আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্ক রাখাই মূল শিক্ষা।
উপসংহার
ইসলামে ওসিলা মানে হলো—আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য আমল, দোয়া ও তাঁর নাম ও সিফাতকে অবলম্বন করা। কোনো বুজুর্গ, নবী বা বিশেষ ব্যক্তিকে সরাসরি মাধ্যম বানানো ইসলামের শিক্ষা নয়। তাই ওসিলার সঠিক অর্থ বুঝে আমাদের ইবাদতে মনোযোগী হতে হবে।
রেফারেন্স
- সুরা আল-বাকারা: আয়াতুল কুরসি
- তাফসির সংক্রান্ত ওয়েবসাইট
📚 অসিলা সম্পর্কিত বইসমূহ
১। অলি আওলিয়াদের অসিলা গ্রহণঃ ইসলামী দৃষ্টিকোণ — আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায
২। অসীলা গ্রহণঃ বৈধ ও অবৈধ পন্থা — আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল হামীদ আল আসারী
৩। অসীলার মর্ম ও বিধান — ড. সালিহ বিন সাদ আসসুহাইমী
৪। ইসলামী আদব ও দুআ শিক্ষা — মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
৫। উসীলা গ্রহণঃ বৈধ ও অবৈধ পন্থা — আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল হামীদ আল-আসারী
৬। ওয়াসিলা — এ.কিউ.এম আবদুল হাকীম আল মাদানী
৭। বৈধ অবৈধ অসীলা — আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ আল জুহানী
৮। শাফায়ত ও উসিলা — মুহাম্মদ ইকবাল কিলানী
৯। শাফায়ত কুরআন হাদীসের আলোকে — মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
১০। শাফায়াত মিলবে কি — মাসুদা সুলতানা রুমী
১১। শাফায়ত এবং শাফায়তকারীদের বর্ণনা — ইবরাহীম ইবন আবদিল্লাহ আল হাযেমী