📜 তাফহীমুল কুরআন — সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রচিত যুগান্তকারী আধুনিক তাফসীর
রচয়িতা: সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ)

“তাফহীমুল কুরআন” হলো বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) রচিত একটি সুবিশাল ও যুগান্তকারী কুরআন তাফসীর। এটি উর্দু ভাষায় রচিত এবং পরবর্তীতে বাংলাসহ বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এটি শুধু একটি তাফসীর গ্রন্থ নয়, বরং আধুনিক যুগের প্রেক্ষাপটে কুরআনের গভীর অর্থ, দার্শনিক ব্যাখ্যা ও সমাজ বাস্তবতার এক অনন্য সমন্বয়। এই মহাগ্রন্থটি লেখকের ৩০ বছরের কঠোর অধ্যবসায় ও গবেষণার ফল (১৯৪২ সালে শুরু করে ১৯৭২ সালে সম্পূর্ণ), যা ইসলামী আদর্শ ও আধুনিক চিন্তাধারার সমন্বয়ে এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে।
ইতিহাস, নামকরণ ও প্রণয়ন
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী তাঁর জীবনের এক বিশাল অংশ ব্যয় করেছেন এই তাফসীর রচনায়। তাঁর লক্ষ্য ছিল এমন এক ব্যাখ্যা প্রদান করা, যা মুসলমানদের কাছে কুরআনের ভাবার্থকে জীবন্ত করে তুলবে—শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ নয়, বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের জন্যও প্রযোজ্য নির্দেশনা হিসেবে। “তাফহীমুল কুরআন” নামটি এসেছে আরবি শব্দ ‘তাফহীম’ (تفهيم) থেকে, যার অর্থ হলো “বোঝা, জানা, উপলব্ধি করা।” নামটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে এর উদ্দেশ্য—পাঠক যেন কুরআনের গভীর মর্মার্থ বুঝতে ও তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারেন।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী: “কুরআন শুধু পাঠের জন্য আসেনি, এসেছে এক বিপ্লবী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য।”
তাফসীরের বিষয়বস্তু ও বিন্যাস
তাফহীমুল কুরআন সিরিজটি মোট ১৯টি খণ্ডে বিভক্ত, যেখানে কুরআনের ১১৪টি সূরার অনুবাদ ও তাফসীর ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই সুবিশাল তাফসীরে ঐতিহ্যগত ব্যাখ্যার বাইরে গিয়ে বাস্তব জীবন, রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।
- সূরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও অবতীর্ণ হওয়ার কারণ (শানে নুযূল)।
- আয়াতভিত্তিক অনুবাদ, ভাষাগত ও গভীর বিশ্লেষণ।
- নবী করিম ﷺ এর সুন্নাহ ও সহীহ হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা।
- সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির সাথে কুরআনের সম্পর্কিত দিক।
- আধুনিক মুসলিম সমাজের জন্য শিক্ষণীয় ও প্রয়োগমূলক দিকনির্দেশনা।
তাফসীরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও আধুনিকতা
লেখক বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন যে, তাফহীমুল কুরআন যেন আধুনিক প্রেক্ষাপটে কুরআনের যুক্তিপূর্ণ ও বিশ্লেষণধর্মী ব্যাখ্যা প্রদান করে। এই তাফসীরটি সাধারণ পাঠক থেকে গবেষক—সবাইয়ের জন্য সহজবোধ্য ভাষায় রচিত। আয়াত ব্যাখ্যায় ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও বাস্তব প্রয়োগের সমন্বয় সাধন করা হয়েছে, যা এই গ্রন্থকে এক অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। এর ফলে তরুণ প্রজন্ম, যারা যুক্তি ও আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন জানতে চায়, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী।
উক্তি: “কুরআনের আইন ও সমাজ সংস্কারের দিকনির্দেশনা এই তাফসীরের মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে ওঠে।”
পাঠকগোষ্ঠী ও এর উপযোগিতা
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী তাঁর গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, কুরআনকে শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে না দেখে, জীবনের সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখা উচিত। এই তাফসীরটি বিশেষভাবে উপযোগী:
- তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্রদের জন্য, যারা যুক্তি ও আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন জানতে চান।
- দাওয়াতি কর্মী ও ইসলামিক বক্তাদের জন্য, যারা বিষয়ভিত্তিক ও গভীর ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
- শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য, যারা কুরআনের সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি ও ইতিহাসের প্রভাব নিয়ে কাজ করেন।
লেখক মনে করেন — আধুনিক যুগে কুরআনকে তার বিপ্লবী রূপে বুঝতে এই গ্রন্থটি এক অপরিহার্য দলিল।
কেন পড়বেন এই গ্রন্থটি?
তাফহীমুল কুরআন শুধু একটি তত্ত্বীয় আলোচনা নয়, এটি কুরআনের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা যোগায়।
- কুরআনকে শুধু পাঠ নয়, গভীর মর্মার্থ ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে জীবনে প্রয়োগ করতে।
- কুরআনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা জানতে।
- আধুনিক প্রেক্ষাপটে ইসলামি চিন্তাধারা ও যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা লাভ করতে।
- জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের বাস্তবায়ন বুঝতে।
উপসংহার: “তাফহীমুল কুরআন আধুনিক মুসলিম সমাজের জন্য এক আলোকিত ব্যাখ্যা।”
ব্যবহারিক পরামর্শ ও প্রাপ্তি
এই বইটি সকল গবেষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাধারণ পাঠকের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ব্যক্তিগত পাঠকদের জন্য পরামর্শ হলো—ধাপে ধাপে এগোনো, প্রথমে সূরার প্রস্তাবনা এবং তারপর আয়াতভিত্তিক ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ বুঝে নেওয়া উচিত। শিক্ষক ও বক্তারা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা তৈরিতে এটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রচিত “তাফহীমুল কুরআন” pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে খণ্ডগুলোর নামের উপর ক্লিক করুন।



