ইসলামী দর্শন বিষয়ক বই: Islamic philosophy Books in Bangla pdf

ইসলামী দর্শন বিষয়ক বই

ইসলামী দর্শন পরিচিতি

‘দর্শন’ একটি বাংলা শব্দ। দর্শনের সমার্থক ইংরেজি শব্দ হলো Philosophy. Philosophy শব্দটি গ্রীক শব্দ PhilienSophos থেকে গঠিত। Philien অর্থ ভালোবাসা, অনুরাগ বা তৃষ্ণা; Sophos অর্থ জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তি। অর্থাৎ, দর্শনের প্রাথমিক অর্থ হলো জ্ঞানপ্রেম ও বিদ্যার প্রতি ভালোবাসা।

“Philosophy শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন পিথাগোরাস অথবা সক্রেটিস। তাঁদের যুগে Sophist নামে পরিচিত এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী সমাজে প্রভাব বিস্তার করেছিল।”

ফালসাফা ও হিকমাহ্ শব্দের ব্যবহার

ইসলামী সমাজে Philosophy শব্দটির পরিভাষা প্রধানত দুটিভাবে প্রচলিত হয়েছে:

  • ফালসাফা (فلسفة): যুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির ওপর ভিত্তি করে গঠিত দর্শন।
  • হিকমাহ্ (حکمة): প্রজ্ঞা বা উচ্চতর জ্ঞানের ধারক। বিশেষ করে ইসলামী দর্শনের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত।

“ইবনে সিনা, শেইখ সোহরাওয়ার্দী, মোল্লা সাদরা ও আল্লামা তাবাতাবাঈ প্রভৃতি মুসলিম চিন্তাবিদদের গ্রন্থগুলোতে ‘হিকমাহ্’ শব্দটির ব্যবহার লক্ষণীয়।”

দর্শনের সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিন্যাস

দর্শনের সংজ্ঞা ব্যাপকভাবে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়:

  1. প্রসিদ্ধ অর্থে: সমস্ত বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানকে দর্শন বলা হয়।
  2. অপ্রসিদ্ধ অর্থে: অস্তিত্বের অস্তিত্বগত অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

তাত্ত্বিক দর্শন

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বাস্তবতা নিরূপণ ও পরিচিতি লাভের জন্য তাত্ত্বিক দর্শন অনুসরণ করা হয়। এর তিনটি প্রধান শাখা:

  • প্রকৃতি বিজ্ঞান: পদার্থগত বাস্তবতা ও প্রাকৃতিক বিষয়াদি আলোচনা করা হয়।
  • গণিত: পরিমাণ, রেখা, সংখ্যা ও তলাদি। গাণিতিক বিষয়গুলো অবস্তুগত বাস্তবতায় অবস্থান করে।
  • স্রষ্টাতত্ত্ব (ইলাহিয়াত): অস্তিত্বের মূল উৎস ও বিধান সংক্রান্ত আলোচনার অংশ।

“স্রষ্টাতত্ত্ব হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের দর্শন। কারণ এটি সৃষ্টিজগতের সকল অস্তিত্বগত ভিত্তির মূল আলোচ্য বিষয়।”

ব্যবহারিক দর্শন

ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন পরিচালনার আদর্শ নিরূপণ করে ব্যবহারিক দর্শন। তিনটি ভাগে বিভক্ত:

  • নীতিশাস্ত্র: ব্যক্তি জীবনের নৈতিক আদর্শ নির্ধারণ।
  • পরিবার পরিচালনা সংক্রান্ত বিদ্যা: পরিবারের মধ্যে আদর্শ জীবনযাপনের নিয়মাবলী।
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান: সুষ্ঠু রাষ্ট্র পরিচালনা এবং জনগণের দায়িত্ব নির্ধারণ।

দর্শনের ইতিহাস ও বিবর্তন

প্রাচীনকালে সকল বিদ্যাই দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে যুগের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক বিদ্যা আলাদা শাস্ত্র হিসেবে গড়ে ওঠে।

“প্রাচীন দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রথম বুঝেছিলেন যে, এমন একটি বিদ্যা রয়েছে যা পদার্থ, গণিত, সমাজবিজ্ঞান বা যুক্তিবিদ্যার মধ্যে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই তা আলাদা শাস্ত্র হওয়া উচিত।”

পাশ্চাত্যের দর্শন বনাম ইসলামী দর্শন

পাশ্চাত্যের দার্শনিকদের মতে, বিজ্ঞান নিশ্চিত এবং দর্শন অনিশ্চিত। তারা শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানকেই গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন।

“বিশ্ববাস্তবতার রহস্য উদ্ঘাটনের একমাত্র উপায় দর্শনশাস্ত্র।”

অপরদিকে, ইসলামী দর্শন যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃত বাস্তবতা ও স্রষ্টার অস্তিত্ব নিরূপণ করে।

দর্শন চর্চার প্রয়োজনীয়তা

মানবজাতি প্রাকৃতিক জ্ঞানের পাশাপাশি গভীর অদৃশ্য জগতের রহস্য আবিষ্কারের আকাঙ্ক্ষা রাখে। দর্শন এই কাজের একমাত্র কার্যকরী পদ্ধতি।

“মানুষ জানতে চায় সে কোথা থেকে এসেছে, বর্তমানে কোথায় আছে এবং শেষ পরিণতি কী হবে। এ প্রশ্নের একমাত্র উত্তরের পথ দর্শনশাস্ত্র।”

বিশ্ব ও মানুষের সম্পর্ক, প্রকৃতির উপাদান ও স্রষ্টার অবদান নিরূপণ করতে দর্শনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বিশ্বজগত ও ইন্দ্রিয়শক্তির সীমাবদ্ধতা

বিশ্বের অনেক অস্তিত্ব ইন্দ্রিয় বহির্ভূত। যেমন মানবাত্মা, ঐশীবার্তা, অনন্ত সত্য। এদের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনের একমাত্র উপায় হলো দর্শনশাস্ত্র।

“যখন আমরা অনুভব করি যে, বিশ্বের সব রহস্য ইন্দ্রিয়কেন্দ্রিক নয়, তখন দর্শনশাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।”

স্রষ্টাতত্ত্বের উচ্চতা

অস্তিত্বগত ও মূল্যগত দিক থেকে স্রষ্টাতত্ত্ব দর্শনের শীর্ষে অবস্থান করে।

“ইত্তিহাদে ইলম, আলেম ও মালুম (اتحاد علم و عالم و معلوم): জ্ঞান, জ্ঞানী ও জ্ঞাতব্য বিষয় একত্রে সংঘটিত হয়ে থাকে।”

এর মাধ্যমে আমরা বুঝি যে, জ্ঞানসম্মত মূল্যায়ন ও অস্তিত্বগত অবস্থান উভয় দিক থেকে স্রষ্টাতত্ত্ব সর্বোচ্চ।

উপসংহার

ইসলামী দর্শন শুধু তাত্ত্বিক নয়, বরং জীবনের ব্যবহারিক দিক নির্দেশনার জন্যও অপরিহার্য। মহানবী (সা.)-এর প্রজ্ঞা ও নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা জীবনকে আলোকিত করতে পারি। দর্শনশাস্ত্র মানব জাতির জন্য একটি পথপ্রদর্শক শাস্ত্র, যা আমাদেরকে সত্য ও সৃষ্টির রহস্য আবিষ্কারে সহায়তা করে।

“বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বমোট অস্তিত্বগত জ্ঞান অর্জনের একমাত্র শাস্ত্র দর্শন।”

তাই আমরা অবশ্যই ইসলামী দর্শন চর্চার গুরুত্ব বুঝে এগিয়ে চলতে হবে, যাতে আধুনিক জ্ঞানের সাথে ঐশী ও ঐতিহাসিক জ্ঞানের একত্রীকরণ সম্ভব হয়।


📚 ইসলামী দর্শন বিষয়ক বইসমূহ

ইসলামী দর্শন বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আল-মুকা উচ্চদ্দিমা — ইবনে খালদুন
২। আলোর দীপাধার — ইমাম গাযযালী রহঃ
৩। আল্লামা ইকবালের খুদিতত্ত্ব ও ঐশীজ্ঞান রহস্য — মোস্তাক আহমাদ
৪। ইসলাম ও দর্শন — অধ্যাপক গোলাম আযম
৫। ইসলামী দর্শন ১ম ও ২য় খণ্ড — আল্লামা শিবলী নুমানী
৬। ইসলামে দর্শন চিন্তার পটভূমি — ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান
৭। ইসলামী জীবন দর্শণ — খন্দকার আবুল খায়ের
৮। ইলম গোপনের পরিণতি — খন্দকার আবুল খায়ের
৯। জীবন দর্পণ — আব্দুল হামীদ আল মাদানী
১০। জীবন দর্শন — মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
১১। দর্শন কোষ — সরদার ফজলুল করীম
১২। দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শন — মেজর (অবঃ) এম এ জলিল
১৩। মুসলিম জীবনাদর্শ — আবু তাহের বর্দ্ধমানী
১৪। মুসলিম দর্শনঃ চেতনা ও প্রবাহ — মোঃ আবদুল হালীম
১৫। সৃষ্টি দর্শন — ইমাম গাযযালী রহ:

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top