
ইমাম গাজ্জালী রহঃ কর্তৃক রচিত ইসলামিক বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আখেরাত
২। আজাবের ভয় ও রহমতের আশা
৩। আত্মার আলোকমণি
৪। আলোর দীপাধার
৫। ইসলামী আকীদা
৬। ইসলামে দারিদ্রতা
৭। এহইয়াউ উলুমিদ্দীন
৮। ক্রোধ হিংসা অনিষ্ট ও প্রতিকার
৯। গীবত
১০। জবানের ক্ষতি
১১। দাকায়েকুল আখবার
১২। ধন সম্পদের লোভ ও কৃপণতা
১৩। ভ্রান্তির অপনোদন
১৪। মাকতুবাত
১৫। মাজালিসে গাযযালী
১৬। মিনহাজুল আবেদীন
১৭। মৃত্যু চিন্তা
১৮। রিয়াঃ লোকদেখানোইবাদাত
১৯। রূহ কি এবং কেন
২০। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ
২১। সবর ও শোকর
২২। সিয়াম সাধনা ও শান্তির পথ
২৩। সৃষ্টি দর্শন
২৪। সৌভাগ্যের পরশমণি
✍️ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক | ইসলামি চিন্তাবিদ | তাসাউফ ও ফিকহের মহাগুরু
ইমাম আবু হামিদ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল-গাজ্জালী (রহঃ) (১০৫৮ – ১১১১ খ্রি.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে দার্শনিক, ফকিহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, তাসাউফের পথিকৃৎ এবং সমাজ সংস্কারক। তার চিন্তা ও রচনাবলী শুধু মুসলিম সমাজে নয়, বরং বিশ্বদর্শনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে।
“যে জ্ঞান মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে না, তা প্রকৃত উপকারী জ্ঞান নয়।” – ইমাম গাজ্জালী
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
ইমাম গাজ্জালী ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে খোরাসানের অন্তর্গত তুস শহরের গাজালা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দরিদ্র হলেও ছিলেন ধর্মপ্রাণ এবং সন্তানদের শিক্ষার জন্য ত্যাগী। শৈশবেই তিনি পিতৃহীন হন এবং একজন আলেম বন্ধুর তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্জন শুরু করেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অতি মেধাবী। প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় কোরআন, হাদিস, ফিকহ ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। খ্যাতনামা ফকিহ আহমদ বিন মুহাম্মদ রাযকানী-এর কাছে তিনি ফিকহের প্রাথমিক পাঠ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে নিশাপুরের নিজামিয়া মাদ্রাসা-তে ভর্তি হয়ে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম ইমামুল হারামাইন আবু আল-মা‘আলি আল-জুয়াইনি (রহঃ)-এর শিষ্যত্ব লাভ করেন।
“জ্ঞান কেবল কাগজে নয়, বরং অন্তরে ধারণ করতে হয়।” – ইমাম গাজ্জালী
কর্মজীবন ও তাসাউফে প্রবেশ
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ইমাম গাজ্জালী বাগদাদের বিখ্যাত নিজামিয়া মাদ্রাসা-র অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অত্যন্ত অল্প বয়সেই তিনি শিক্ষকতা, গবেষণা এবং ফতোয়ার ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেন। সুলতান, আমীর-উমরা এবং বিদ্বজ্জনরা তাঁর পরামর্শ নিতেন। যৌবনের শুরুতেই তিনি উপলব্ধি করেন যে, কেবল পুস্তকীয় জ্ঞান যথেষ্ট নয় এবং অন্তরের পরিশুদ্ধি (তাজকিয়ায়ে নফস) ছাড়া প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। তাই তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত সুফি শায়খ আবু আলী ফারমেদী (রহঃ)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
সন্ধান ও আধ্যাত্মিক ভ্রমণ
৪৮৮ হিজরিতে তিনি খ্যাতি ও পদমর্যাদা ত্যাগ করে নির্জন জীবনে প্রবৃত্ত হন। তিনি দামেস্ক, বায়তুল মাকদাস, মক্কা ও মদিনায় দীর্ঘ সময় ইবাদত-বন্দেগীতে কাটান। এ সময় তিনি তিনটি অঙ্গীকার করেন— রাজদরবারে যাবেন না, বাদশাহর কোনো দান গ্রহণ করবেন না এবং বিতর্কে জড়াবেন না।
রচনাবলী
ইমাম গাজ্জালী ছিলেন অতি উর্বর লেখক। তাঁর রচনাবলী ইসলামী জ্ঞানভাণ্ডারের এক অমূল্য সম্পদ।
প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলি:
ফিকাহ;
- ওয়াসীত
- বাসীত
- ওয়াজীয
- বয়ানুল কাওলায়নিলিশ শাফীঈ তা’লীকাতুন ফি-ফুরুইল মযহাব
- খোলাসাতুর রাসাইল
- ইখতিসারুল
- মুখতাসার
- গায়াতুল গাওর
- মজমুআতুল ফতাওয়া
ফিকাহ শাস্ত্রের মুলনীতি;
- তাহসিনুল মাখাজ
- সিফাউল আলীল
- মুন্তাখাল ফি ইলমিল জিদল
- মনখুল
- মুসতাসফা
- মাখায় ফিল খিলাফিয়াত
- মোফাসসালুল খিলফি ফি উসুলিল কিয়াস
মানতিক;
- মিয়ারুল ইলম
- মীযানুল
- আ’মল (ইউরোপে প্রাপ্তব্য)
দর্শন;
- মাকাসিদুল ফালাসিফাহ
- তাহাফুতুল ফালাসিফাহ (ইউরোপে সংরক্ষিত)
ইলমি কালাম;
- আহাতাফুল ফালাসিফাহ
- মুনকিয
- ইলজামুল আওয়াম ইকতিসাদু
- মসতাযহারী ফাযাইহুল ইবাহিয়্যাহ হাকিকাতুর রুহ,কিসতাসুল মুসতাকিম
- কাওলুল জমিল ফি রাদ্দিন আলামান গায়্যারাল ইন্জিল
- মাওয়াহিবুল বাতিনিয়্যাহ
- তাফাররাকাতুম বায়নাল ইসলামি ওয়াল জিন্দিকাহ
- আর রিসাতুল কুদসিয়াহ
আধ্যাত্নিক ও নৈতিক বিষয়;
- ইয়াহইয়াওমুল উলুম
- কিমিয়ায়ে সাআদাত
- আল মাকসুদুল আকসা
- আখলাকুল আবরার
- জওয়াহিরুল কুরআন
- জওয়াহিরুলকুদসি ফী হাকীকাতিন্নাফস
- মিশকাতুল আনওয়ার
- মিনহাজুল আবেদীন
- মিরাজুস সালিকীন
- নাসীহাতুল মূলক
- আয়্যুহাল ওলাদ
- হিদায়াতুল হিদায়াহ
- মিশকাতুল আনওয়ার
- ফী লাতাইফিল আখয়ার
- নিশাপুর অবস্হানকালে
“ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন এমন এক গ্রন্থ, যা ইসলামী জ্ঞানের ভান্ডারকে নতুনভাবে জীবিত করেছে।” – সমকালীন সমালোচনা
চিন্তাধারা ও প্রভাব
ইমাম গাজ্জালী মনে করতেন ইসলাম শুধু শরীয়তের বিধান নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতির পূর্ণাঙ্গ দিশারি। তিনি ফিকহ, দর্শন ও তাসাউফের সমন্বয় ঘটিয়ে ইসলামি জ্ঞানের নবজাগরণ ঘটান। তাঁর চিন্তায় ছিল ভোগ-বিলাসময় জীবন থেকে মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। তাঁর প্রভাব শুধু মুসলিম সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল না; খ্রিস্টান ইউরোপীয় পণ্ডিতদের মধ্যেও তাঁর রচনা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সালাহউদ্দীন আইয়ুবী ও নূরুদ্দীন জঙ্গীর মতো বীর সেনানীরা তাঁর চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলামি সমাজ সংস্কার করেন।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) ইমাম গাজ্জালী তুস শহরে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি কুরআন হাতে রেখে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন বলে বর্ণিত আছে। তাঁর মৃত্যুতে সমকালীন আলেম সমাজ অত্যন্ত শোকাহত হন।
“আলেমরা মারা যান, কিন্তু তাঁদের কলমের আলো যুগ যুগ ধরে মানুষকে পথ দেখায়।”
ইমাম গাজ্জালী ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতিভা। তিনি ফিকহ, তাসাউফ ও দর্শনের সমন্বয়ে মুসলিম সমাজকে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর গ্রন্থসমূহ কেবল ইসলামি বিশ্ব নয়, বরং মানবসভ্যতার ইতিহাসেও এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন
👉 মুহাম্মদ মুফীজুল ইসলাম
👉 মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল আলবানী
সংগ্রহ: বইগুলি আপনার ভালো লাগলে দয়াকরে নিকটবর্তী লাইব্রেরী থেকে ক্রয় করুন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚





