
📘 এহইয়াউ উলুমিদ্দীন — ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) রচিত ধর্মীয় জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন
“এহইয়াউ উলুমিদ্দীন” গ্রন্থটি মহান ইসলামী দার্শনিক ও সুফি চিন্তাবিদ ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) রচিত এক অনন্য কীর্তি, যার বাংলা অর্থ “ধর্মীয় জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন”। ইসলামী ইতিহাসে এই বইটিকে ইসলামী জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার এক সমন্বিত সংকলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)-এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রচিত — যখন তিনি দুনিয়াবি খ্যাতি ও রাজকীয় বিলাসিতা ত্যাগ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নির্জনতা গ্রহণ করেন। **এহইয়াউ উলুমিদ্দীন** কেবল একটি জীবনী গ্রন্থ নয়, বরং এটি ইসলামী আত্মশুদ্ধি, আচরণ ও চিন্তার এক নবজাগরণের প্রতীক, যা প্রায় হাজার বছর ধরে মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথে দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছে।
ড. রাফাত পাশার গ্রন্থের অনুরূপভাবে, এই কিতাবের রচনাশৈলী এবং এর বিশালতা একে এক কালজয়ী মর্যাদা দিয়েছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক ও আধ্যাত্মিক শূন্যতা দূর করে জ্ঞানের বাহ্যিক রূপের সঙ্গে অন্তর্নিহিত আত্মিক রূপের সমন্বয় ঘটানো।
লেখক পরিচিতি: ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
আবু হামিদ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল-গাজ্জালী (১০৫৮-১১১১ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন মধ্যযুগের একজন প্রথিতযশা পারসিক ধর্মতত্ত্ববিদ, আইনজ্ঞ, দার্শনিক এবং সুফি। ইসলামের ইতিহাসে তাঁকে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ বা ‘ইসলামের প্রমাণ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন তিনি উচ্চশিক্ষায়তন ‘নিযামিয়া মাদ্রাসা’-এর অধ্যাপনা ত্যাগ করে আত্মশুদ্ধির পথে নির্জনতা অবলম্বন করেন। এই সময়েই তিনি **‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’** রচনা করেন। তাঁর লেখার মূল বৈশিষ্ট্য হলো—ইসলামী আইন (ফিকহ), ধর্মতত্ত্ব (কালাম) এবং সুফিবাদ (তাসাউফ)-এর মধ্যে একটি সুসমন্বিত সেতুবন্ধন তৈরি করা।
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) বলেছেন: “যে ইবাদত তোমার উপর ফরজ, সেই ইবাদতের জ্ঞান অর্জনও তোমার উপর ফরজ।”
গ্রন্থের মৌলিক কাঠামো ও গঠনশৈলী
পুরো “এহইয়াউ উলুমিদ্দীন” বইটি ইসলামী জীবনের চারটি মৌলিক ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে। এই সুসংগঠিত পদ্ধতি গ্রন্থটিকে একটি সামগ্রিক জীবনবিধান হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এই গ্রন্থের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- প্রতিটি অংশ জীবন ও ধর্মের একটি স্বতন্ত্র দিককে কেন্দ্র করে রচিত।
- জ্ঞানার্জনের গুরুত্বকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে আত্মশুদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
- বাহ্যিক ইবাদতের (যাওয়া-হির) পাশাপাশি তার অন্তর্নিহিত আত্মিক অর্থ (বাতেনী জ্ঞান) উপলব্ধি করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
- ঐতিহাসিক তথ্য ও ঘটনার বর্ণনায় নির্ভুলতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
- কুরআন ও হাদিসের প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্যকে মজবুত করা হয়েছে।
গ্রন্থের চারটি মৌলিক ভাগ
এই চারটি ভাগ পাঠকের আত্মার উন্নতি ও পরিশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করে:
- ১ম ভাগ — ইবাদত ও আখলাক: নামাজ, রোযা, হজ, যাকাত ও তেলাওয়াতের বাহ্যিক নিয়ম এবং তাদের ভেতরের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য।
- ২য় ভাগ — সামাজিক আচরণ: বিয়ে, পরিবার, হালাল উপার্জন ও লেনদেনের নৈতিক দিকসমূহ।
- ৩য় ভাগ — হৃদয়ের রোগসমূহ: অহংকার, হিংসা, রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত), ক্রোধ, লোভ — এই সকল আত্মিক ব্যাধি ও তাদের নিরাময়ের পদ্ধতি।
- ৪র্থ ভাগ — আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ: ভয়, আশা, জিকির, শোকর, তাওয়াক্কুল (নির্ভরতা) এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান।
“নামাজে যে একাগ্রতা নেই, সে নামাজ দেহের কাঠামো মাত্র, তাতে রূহ নেই।” — ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
গ্রন্থের প্রভাব ও আবেদন
**‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’** প্রায় হাজার বছর ধরে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে আসছে। এটি কেবল ফিকহ বা সুফিবাদ সম্পর্কিত বই নয়, বরং এটি ইসলামী আত্মশুদ্ধি, আচরণ ও চিন্তার এক নবজাগরণের প্রতীক। এই গ্রন্থটি বিশেষত সেইসব পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা ইসলামকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে না দেখে, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে দেখতে চান। এই গ্রন্থ থেকে পাঠক জানতে পারেন—ইবাদতকে কীভাবে কেবল দৈহিক আচার হিসেবে না দেখে, আত্মার উন্নতি ও পরিশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখা যায়।
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এই বইয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, ইসলামী জ্ঞান শুধুমাত্র শুকনো তথ্য নয়, বরং এটি জীবন্ত উদাহরণ ও অনুপ্রেরণার উৎস। এই গ্রন্থটি প্রতিটি মুসলিমের ঘরের লাইব্রেরিতে থাকা আবশ্যক।
কেন পড়বেন এই কালজয়ী গ্রন্থটি?
“এহইয়াউ উলুমিদ্দীন” পাঠের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি:
- ইসলামী ফিকহ, সুফিবাদ ও দর্শনের একটি সুসমন্বিত ও প্রামাণিক ধারণা।
- নিজের ইবাদত ও আমলের বাহ্যিক রূপের পাশাপাশি আত্মিক তাৎপর্য উপলব্ধি।
- অহংকার, হিংসা, লোভের মতো হৃদয়ের রোগসমূহ সনাক্ত করতে ও নিরাময়ের পদ্ধতি।
- দুনিয়াবি মোহের ঊর্ধ্বে উঠে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের পথে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশনা।
উক্তি: “ধর্মীয় জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন (এহইয়াউ উলুমিদ্দীন) হৃদয়ের অন্ধকারে আলোর মশাল।” — ইতিহাসবিদদের অভিমত।
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) রচিত এই গ্রন্থটি প্রমাণ করে যে—সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে গেলে আত্মিক পরিশুদ্ধি অপরিহার্য। এটি আমাদেরকে ইসলামের স্বর্ণালী যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অবিচল থাকতে উৎসাহিত করে।
বই ডাউনলোড লিঙ্ক
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) কর্তৃক রচিত ইসলামী বই এহইয়াউ উলুমিদ্দীন pdf ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন:






