ইসলামী সমাজ বিষয়ক বই: Books on Islamic Society

ইসলামী সমাজ বিষয়ক বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অধঃপতনের অতল তলে – আবু তাহের বর্ধমানী
২। অমুসলিম সমাজ বা পরিবারে মানুষের অজানা মু’মিন ও বেহেশতী ব্যাক্তি আছে কিনা – মোঃ মতিয়ার রহমান
৩। আদর্শ সমাজ গঠনে সুরা মাউন এর শিক্ষা – ইমামুদ্দিন বিন আব্দুল বাছীর
৪। আদাবুল মুআশারাতঃ ইসলামের সামজিক বিধান – আশরাফ আলী থানবী
৫। আদবে জিন্দেগী – ইউসুফ ইসলাহি
৬। আধুনিক যন্ত্রপাতির ইসলামি আহকাম– মুহাম্মদ শফী উসমানী
৭। আমাদের মযহাব কি বিভিন্ন ভাগে বিভিক্ত – মুহাম্মদ ইকবাল বিন ফাখরুল
৮। আর্তনাদের অন্তরালে – আবুল হোসেন ভট্টাচার্য
৯। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যাকাতের ভূমিকা – মোঃ এনামুল হক
১০। আলেমগণ নানামতে যেতে হবে নবীর পথে – আবদুল গাফফার
১১। আলেমগণের মধ্যে মতভেদ কারণ এবং আমাদের অবস্থান – মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
১২। আলোকের ঝর্নাধারা – নুরুল মোমেন
১৩। ইছলাহুন মুসলিমীন – আশরাফ আলী থানবী
১৪। ইসলাম ও জাহেলিয়াত – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৫। ইসলাম ও জাহেলিয়াতের চিরন্তন দন্দ – আব্বাস আলী খান
১৬। ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব – সাইয়েদ মাহমুদ শুকরী আলুসী
১৭। ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
১৮। ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী
১৯। ইসলাম ও পাশ্চাত্য সমাজে নারী – ড. মুসতাফা আস সিবায়ী
২০। ইসলাম ও সামজিক সুবিচার – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
২১। ইসলাম ও সামাজিক সুবিচার – সাইয়েদ কুতুব শহীদ
২২। ইসলাম ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী
২৩। ইসলামী অনুষ্ঠানের তাৎপর্য – সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী
২৪। ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা – সাইয়েদ কুতুব শহীদ
২৫। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারীর মর্যাদা – গবেষণা পত্র
২৬। ইসলামী সমাজে নারী – সাইয়েদ জালালুদ্দিন আনসার উমরী
২৭। ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার – মুহাম্মদ আবদুর রহীম
২৮। ইসলামে দারিদ্র বিমোচন – ইউসুফ আল কারযাভী
২৯। ইসলামে দারিদ্রতা – ইমাম গাযযালী রহ.
৩০। ইসলামে দাস বিধি – আব্দুল্লাহ নাসেহ উলওয়ান
৩১। ইসলামে পর্দা – ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
৩২। ইসলামে পোশাকের বিধান – ড. জামাল আল বাদাবী
৩৩। ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা – ড. সালেহ ইবন ফাওযান
৩৪। ইসলামে মসজিদের ভূমিকা – এ এন এম সিরাজুল ইসলাম
৩৫। ইসলামে সমাজ বিজ্ঞান – ড. এম মোসলেহ উদ্দিন
৩৬। ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদ আহরণ ভোগ ব্যবহার ও বিকেন্দ্রিকরণ – ড. মুহাম্মদ ছামিউল হক ফারুকি
৩৭। ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদ বণ্টন – মুহাম্মদ শফী উসমানী
৩৮। ইসলামের সমাজ দর্শন – সদরূদ্দীন ইসলাহী
৩৯। ইসলামের সামজিক আচরণ – হাসান আউব
৪০। ইসলামের সামজিক বিধান – জামাল আল বাদাবী
৪১। ইসলামের সোনালী যুগ – এ কে এম নাজির আহমদ
৪২। ইসলামের স্বর্ণযুগে সামাজিক ন্যায়নীতি – সাইয়েদ কুতুব শহীদ
৪৩। ইসলাহী নেসাব – আশরাফ আলী থানবী
৪৪। ইসলাহুল উম্মাহ পরিচিতি
৪৫। উম্মাহর ঐক্য পথ ও পন্থা – মুহাম্মদ আবদুল মালেক
৪৬। উলামার মতানৈক্য – আব্দুল হামীদ আল মাদানী
৪৭। উলামার মতানৈক্য আমাদের করণীয় – মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
৪৮। একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবন – মোঃ মোশফিকুর রহমান
৪৯। ওলামাদের মতনৈক্যে আমাদের কর্তব্য – মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
৫০। জাহেলিয়াতের যে সব রীতিনীতির বিরোধিতা রাসুল করেছেন – মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব
৫১। দাস প্রথা ও ইসলাম – মুহাম্মদ আবদুর রহীম
৫২। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম – ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৫৩। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ইসলাম – মাওলাই মোস্তাফা বারজাওয়ী
৫৪। ফিতনার নীতিমালা – আব্দুল হামীদ আল ফাইযী
৫৫। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের করণীয় – সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী
৫৬। বিভ্রান্তির বেড়া জালে মুসলিম সমাজ – আব্দুল হামীদ আল ফাইযী
৫৭। বিভ্রান্তির বেড়াজালে মুসলমান – সরকার শাহাবুদ্দীন আহমদ
৫৮। ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনে ইসলামী দিক নির্দেশনা – মুহাম্মদ বিন জামীল যাইন
৫৯। ভিক্ষুক ও ভিক্ষা – হুসাইন বিন সোহরাব
৬০। মাযহাব অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ – ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস
৬১। মাযহাব ও তাকলীদ – সালাফী পাবলিকেশন্স
৬২। মাযহাব কি এবং কেন – মুহম্মদ তাকি উসমানী
৬৩। মাস্তানের জবানবন্দী – জহুরী
৬৪। মুসলিম কি চার মযহাবের কোন একটি অনুসরণ বাধ্য – মুহম্মদ সুলতান আল মাসুমী
৬৫। মুসলিম সমাজে প্রচলিত ১০১ ভুল – আবদুস শহীদ নাসিম
৬৬। মৃত্যু রোগ থেকে শুরু করে মৃত ব্যাক্তি কেন্দ্রিক মৃত্যের যাবতীয় করনীয় ও বর্জন – মুহাম্মদ নাসেরুদ্দিন আলবানী
৬৭। মোবাইল ফোন ব্যবহারঃ বৈধতার সীমা কতটুকু – মূফীজুল ইসলাম আব্দুল আযীয
৬৮। যে কেউ কোন জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে চলবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে – ড. নাসের আবদিল
৬৯। রাসূলের সাঃ যুগে মদিনার সমাজ ১ম খণ্ড — ড. আকরাম জিয়া আল উমরী
৬৯। রাসূলের সাঃ যুগে মদিনার সমাজ ২য় খণ্ড — ড. আকরাম জিয়া আল উমরী
৭০। সত্যের জয় ও আল্লাহর অবাধ্য জাতির করুণ পরিণতি – আব্বাস আলি সরকার
৭১। সভ্যতার উথান পতন ও আলকোরআন – মোঃ সিরাজুল ইসলাম
৭২। সভ্যতার সংকট – ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস
৭৩। সমাজ পরিবর্তনে ইসলামী পদ্ধতি – গবেষণাপত্র
৭৪। সমাজ বিপ্লবের ধারা – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব
৭৫। সমাজ সংগঠন ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী – আব্দুদ্দাইয়ান মুহাম্মদ ইউনুস
৭৬। সমাজ সংস্কারে নারীর ভূমিকা – মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন
৭৭। সাপ্তাহিক ছুটি ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ – ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী
৭৮। সাম্য একমাত্র ইসলামে – মুহাম্মদ আনসার আলী খান
৭৯। হাদীসের আলোকে মানবজীবন ১ম খণ্ড — এ কে এম ইউসুফ
৮০। হাদীসের আলোকে মানবজীবন ২য় খণ্ড — এ কে এম ইউসুফ
৮১। হাদীসের আলোকে মানবজীবন ৩য় ও ৪র্থ খণ্ড — এ কে এম ইউসুফ
৮২। হাদীসের আলোকে সমাজ জীবন – দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী

ইসলামী সমাজ পরিচিতিঃ মানুষ সামাজিক জীব, সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করা মানব প্রকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। তাই আবহমানকাল ধরে মানুষ সমাজবদ্ধভাবে মিলেমিশে বসবাস করছে। ধর্মীয় নীতিমালা, সমাজ বিজ্ঞানী, পন্ডিত ও মনীষীগণ সমাজবদ্ধ জীবন যাপনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে আসছেন। অপরদিকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনও একই মত পোষণ করে। মানব সমাজ সম্পর্কে ইসলামের মূলনীতি হচেছ ‘‘পৃথিবীতে সকল মানুষই সমান, মানুষ হিসেবে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। সকল মানুষ হযরত আদম (আ.)-এর সন্তান এবং আদম (আ.) মাটি হতে সৃষ্টি।

ইসলামী সমাজের ভিত্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন নারী ও একজন পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি। যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পার। অবশ্যই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ যে, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী নীতিপরায়ণ ও আল্লাহভীরু। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সকল মানুষ সমান এবং ভাই ভাই। জাতি, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতার কারণে মানব সমাজকে ইসলাম বিভক্ত করে না। বরং ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ দুটো সমাজে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর একটি ইসলামী সমাজ আর অপরটি হচ্ছে অনৈসলামিক সমাজ।

ধর্মের ভিত্তিতে মানব সমাজ বিভক্ত হলেও মূলত মানব সমাজের উৎপত্তি একই মূল থেকে উৎসারিত। তাই ইসলাম সকল মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে এবং মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে উন্নীত করে। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে ইসলাম জাতি, ধর্ম, ভাষা ও বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের সম্পদেরও নিরাপত্তা বিধান করেছে। কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করাকে ইসলাম অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে।

ইসলাম সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সাম্য মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ প্রদান করে। সামাজিক অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলাকে কঠোর হস্তেদমন করে। সামাজিক অখন্ডতা বজায় রাখার জন্য ইসলাম আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক অক্ষুন্ন ও অটুট রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ের প্রতি ইসলাম বিশেষ নির্দেশ প্রদান করেছে। তাছাড়া সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক ও তাদের অধিকার সম্পর্কে ইসলাম বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছে। মোট কথা মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন যাপনের জন্য যা কিছুই প্রয়োজন ইসলাম সকল বিষয়ের প্রতিই সমান গুরুত্বপ্রদান করেছে।

মানুষ সামাজিকভাবে ইসলামের আদর্শ অনুসরণ করলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে এবং মানুষ সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। ইসলামী সমাজের গুরুত্বআলোচনা করতে পারবেন। মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সামাজিক জীব। একসাথে মিলে মিশে থাকা মানুষের জন্য অপরিহার্য। এ মন্তব্য যেমন সমাজ বিজ্ঞানী ও পন্ডিত-মনীষীদের; তেমনি পবিত্র গ্রন্থ কুরআনও একই মত পোষণ করে। মানব সমাজ সম্পর্কে ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে দুনিয়াতে সমস্তমানুষই এক আদমের সন্তান। আর আদম মাটি হতে সৃষ্টি। ইসলামী সমাজের ভিত্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন ‘হে মানব! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হতে পার।

অবশ্যই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সবকিছুর ব্যাপারে খবর রাখেন।’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩) কাজেই সকল মানুষ সমানভাবে পরস্পর ভাই ভাই। জাতি, অঞ্চল, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতার কারণে মানব সমাজকে ইসলাম বিভক্ত করে না বরং ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ দুটো সমাজে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর একটি ইসলামী সমাজ আর অপরটি অনৈসলামী সমাজ। মানুষ মূলত প্রথমে একই সমাজভুক্ত এবং একই জাতিভুক্ত ছিল। মানুষের জীবনের গতিধারা মৌলিক চাহিদা ও হৃদয়ের অনুভূতি এক ও অভিন্ন। মানুষ পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের অধিবাসী হোক না কেন তাদের সবকিছুতেই যেন একটা মিল ও ঐকতান রয়েছে। তাই পৃথিবীর সকল মানুষই ছিল একটি সমাজভ্ক্তু। কিন্তু তারা নানা জাগতিক মোহে এবং শয়তানের প্ররোচনায় নিজেদেরকে আলাদা আলাদা সম্প্রদায় ও সমাজে বিভক্ত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে নিজ নিজ সমাজ ব্যবস্থা। আর গড়ে তুলেছে মানুষে মানুষে শত্রতা ও সমাজে সমাজে বিভেদ। একথাই আল-কুরআনে এসেছে এভাবে, ‘মানুষ ছিল একই উম্মাত। পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করে।’ (সূরা ইউনুস : ১৯)

ইসলামী সমাজব্যবস্থাঃ সমাজ ব্যবস্থা বলতে বুঝায় কোন বিশেষ রীতি-নীতি, আইন-কানুন ও একটি অবকাঠামো যা দ্বারা সমাজ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। ইসলামী রীতি-নীতি, আইন-কাঠামো ও বিধি-বিধান দ্বারা যে সমাজ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাই ইসলামী সমাজ। অপর কথায় যে সমাজের প্রতিটি মানুষের অধিকার, চাহিদা, দায়-দায়িত্ব ইসলামের অনুশাসন দ্বারা নির্ধারিত হয়, সেটাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা। ইসলামী সমাজে মানুষের সকল কর্মকান্ড শুধুমাত্র আল্লাহর বিধান অনুসারে চলবে। ইসলামী সমাজের প্রত্যেক সদস্যের ঘোষণা নিম্মরূপ হতে হবে, ‘বলুন, আমার নামায, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই
উদ্দেশ্যে’ (সূরা আল-আনআম : ১৬২)।

মহানবী (স.) ইসলামী সমাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য শত্রতা করে, আল্লাহর জন্য দান করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিষেধ করে, সে ব্যক্তি ঈমানে পূর্ণতা লাভ করেছে’ (সহীহ বুখারী)। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্যই ইসলামী সমাজের সকল কর্মকান্ড চলবে আল-কুরআনের ভাষায়, ‘হে আমাদের প্রভু ! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতে কল্যাণ দান কর।’ (সূরা আলবাকারা : ২০১)। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কল্যাণ কামনাই দ্বীনের মূলকথা। একথা তিনি তিনবার বললেন। সাহাবীগণ বললেন, কল্যাণ কামনা কার জন্য? রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর কিতাব, মুসলমানদের নেতা এবং জনসাধারণের জন্য (সহীহ মুসলিম)।

ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ ইসলামী সমাজের অন্যতম উদ্দেশ্য। আল কুরআনের ঘোষণা, ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে মানুষকে ফিরিয়ে রাখবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে’ (সূরা আলে-ইমরান: ১১০)। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের উপর নিকৃষ্টতম লোককে তোমাদের শাসক করে দেবেন। আর সৎ লোকেরা দোয়া করতে থাকবে, কিন্তু তা কবুল করা হবে না’(তাবারানী)।

মানব জীবনকে সার্বিকভাবে সৎ, সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুখময় করার জন্য ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাই একমাত্র সর্বোত্তম আদর্শ ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে। নিম্মে ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল তাওহীদের বিশ্বাসে বলীয়ানঃ ইসলামী সমাজের যাবতীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ। ইসলামী সমাজ তাওহীদের বিশ্বাসে উজ্জীবিত ও বলীয়ান। সকল ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের উৎস একমাত্র আল্লাহকে মেনে নিয়ে সমাজের সমস্তকর্মকান্ড পরিচালিত হয়

রাসূলের নেতৃত্বঃ ইসলামী সমাজ হযরত মুহাম্মদ (স)-কে বিশ্ব নবী এবং দুনিয়ার সর্বশেষ নবী হিসেবে মেনে নেয়। আর সকল কাজে তাঁরই আদর্শ ও নেতৃত্ব মেনে অনুসরণীয় নেতা হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স.) ছাড়া আর কারও নেতৃত্ব ও আদর্শ গ্রহণ করে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন, ‘অবশ্যই রাসূলের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ’(সূরা আল-আহযাব: ২১)। আল-কুরআনে আরও ঘোষিত হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের অনুকরণ কর।’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)

কুরআন ও সুন্নাহ আদর্শের মাপকাঠিঃ ইসলামী সমাজে সকল কাজে কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহর অনুসরণ করা হয়। এ দুয়ের বিপরীত সব কিছুকে বর্জন করা হয়। বিদায় হাজ্জের ভাষণে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুটো বিষয় রেখে যাচ্ছি এগুলোর অনুসরণ করলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর বাণী কুরআন এবং আমার সুন্নাহ।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘রাসূল যা তোমাদের জন্য এনেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেন তা বর্জন কর।’ (সূরা আল-হাশর: ৭)

ঈমান ও আমলের সমন্বয়ঃ ইসলামী সমাজ বিশ্বাস ও কর্ম অর্থাৎ ঈমান ও আমলের সমন্বয়ে গঠিত। এ সমাজ তাওহীদ ও রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করে সে অনুসারে জীবন যাপন করে। বিশ্বাস ও কর্মকে আলাদা করে দেখে না। ইসলামে কর্মই ধর্মের পরিচায়ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, অবশ্যই সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্মকরেছে।’ (সূরা আল-আসর : ১-৩)

বিধি-বিধান আল্লাহ প্রদত্তঃ ইসলামী সমাজে আল্লাহ প্রদত্ত আইন-কানুন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহরই।’ (সূরা আল-আন‘আম: ৫৭)

মানবতার ভিত্তিতে সমাজ গঠনঃ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক সাম্য, অকৃত্রিম ভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্ব মানবতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত উন্নত আদর্শসমাজ ব্যবস্থার ফলে প্রচলিত অন্ধ আভিজাত্যের গৌরব ও বংশ মর্যাদার মূলে কুঠারাঘাত করা হয়। মানুষে মানুষে সকল প্রকার অসাম্য ও ভেদাভেদ দূরীভূত করে মানবতার অত্যুজ্জ্বল আদর্শে ইসলামী সমাজ গঠিত।

ইসলামী সমাজে শ্রেণী বৈষম্যতা নেইঃ ইসলামী সমাজে নিছক জন্মগত, বংশগত কিংবা ভাষাগত বা আঞ্চলিকতার বিচারে কোন মানুষের মর্যাদা ও প্রাধান্য স্বীকার করা হয় না। মহানবী (স.) বলেন, ‘সকল মানুষ সমান। মানুষের মধ্যে উৎকৃষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর প্রতি সর্বাধিক অনুগত এবং মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী।’

ইসলামী সমাজ সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শে উজ্জীবিতঃ ইসলামী সমাজ সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তাওহীদের এই বৈপ্লবিক ঘোষণা মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ চূর্ণ করে এক সমাজ, এক জাতিতে পরিুত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘মানুষ ছিল একই উম্মাত’ (সূরা ইউনুস : ১৯)। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, ‘হে মানব! আমি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি এবং পরে তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে তারাই উত্তম যারা অধিক মুত্তাকী’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩)।

সকলের দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারিতঃ ইসলামী সমাজে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারিত রয়েছে। সমাজের কোন সদস্যই দায়িত্বমুক্ত নয়। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘সাবধান ! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদেরকে আপন দায়িত্ব পালনে জবাবদিহি করতে হবে’ (বুখারী, মুসলিম)।

ন্যায়ের পতাকাবাহীঃ ইসলামী সমাজের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ন্যায়নীতি ভিত্তিক। সামাজিক বা অর্থনৈতিক কোন ব্যাপারেই কেউ কারও ওপর যুলম বা অত্যাচার করতে পারে না। ইসলামী সমাজ তাই ন্যায়ের পতাকাবাহী। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলামী সমাজ।

ইহকাল ও পরকলের সমন্বয়ে গঠিতঃ ইসলামী সমাজ ইহকাল ও পরকালের সমন্বয়ে গঠিত। ইসলামী সমাজ যেমন পার্থিব সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে তেমনিভাবে ইসলামী সমাজ পারলৌকিক কল্যাণের পথও সুগম করে।

ইসলামী সমাজ ব্যাপক ও সার্বজনীনঃ ইসলামী সমাজ অঞ্চল, গোত্র, বর্ণ, ভাষা-নির্বিশেষে একটি ব্যাপক ও সর্বজনীন সমাজ ব্যবস্থার কথা বলে। যারাই ইসলামে বিশ্বাস করেন এবং ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলতে চান তারাই এই সমাজের সদস্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন ‘মানুষ ছিল একই উম্মাত’ (সূরা আল-বাকারা : ২১৩)।

শ্রেষ্ঠ সমাজঃ ইসলামী সমাজ শ্রেষ্ঠসমাজ। এ সমাজ মানবতার কল্যাণকামী। এ সমাজে বিশ্বাসী বান্দাগণ সৃষ্টির সেরা জীব। বিশ্বাসী জাতি শ্রেষ্ঠ জাতি। আল্লাহ বলেন ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)

ইসলামের পূর্ণ বাস্তবায়নঃ ইসলামী সমাজ না হলে, ইসলামের পূর্ণ রূপায়ণ এবং ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই গুরুত্ব অনুধাবন করেই মহানবী (স.) জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় গিয়ে আনসার ও মুহাজিরদের সমন্বয়ে একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেন বরং সেখানে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার এক পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরেন।

ইসলামের সামগ্রিক রূপায়ণেঃ জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের সামগ্রিক বিধি-বিধান রূপায়ণের জন্য ইসলামী সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত। ইসলামী সমাজেই ইসলামের আর্থ-সামাজিক নীতিমালা ও আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব। সামাজিক বন্ধন, পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য পালনেঃ ইসলামী সমাজের সামাজিক বন্ধন অত্যন্তসুদৃঢ়। রাসূল (স.) বলেছেন, ‘মুসলমান একটি দেহের মত।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘মুমিনগণ অট্টালিকা স্বরূপ।’ (সহীহ বুখারী) ইসলামী সমাজে পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আল্লাহর ইবাদাতের মতই বান্দার হক বা অধিকার প্রদানের গুরুত্ব রয়েছে। সমাজে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী সকলের প্রতিই কর্তব্য পালন করতে হয়।

মানব জীবনের অপরিহার্য সংগঠনঃ মানব জীবনের অপরিহার্য সংগঠন হচ্ছে সমাজ। সমাজ ছাড়া মানব জীবন কল্পনা করা যায় না। আল্লাহর বিধান পালন করতে হলে সমাজ অনিবার্য। আল্লাহর নির্দেশ; ‘তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরো এবং বিচিছন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। মহানবী (স.) এ ব্যাপারে বলেন, ‘জামা‘আতকে ভালভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পৃথক হয়ে থেকো না’ (তিরমিযী)। মহানবী (স.) সমাজ জীবনের অপরিহার্য কয়েকটি দিকের প্রতি নির্দেশ করে ঘোষণা করেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি তা হল জামাআতবদ্ধ জীবনযাপন করা, নেতার নির্দেশ শ্রবণ করা, তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, হিজরত করা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা’(তিরমিযী)।

ইসলামী সমাজ থেকে বিচ্যুত হলে সে ঈমান ও ইসলাম থেকেও বিচ্যুত হয়ে যায়। যেমন নবী (স.) বলেন ‘যে ব্যক্তি ইসলামী দল থেকে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে যায়, নিঃসন্দেহে সে যেন ইসলামের জোয়াল তার গলদেশ থেকে নামিয়ে ফেলেছে। মহানবী (স.) বলেন, ‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত (সাহায্য) রয়েছে।’ তাই প্রতিটি মানুষকে আল্লাহর রহমত তথা করুণা লাভের জন্য এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য লাভের আশায় সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে।

সারসংক্ষেপঃ বস্তুত ইসলামী সমাজ একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা। ইসলামী সমাজ মানব সভ্যতার একটি অনিবার্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী সমাজে মানুষ ও মানবতার বিকাশ উন্নয়ন সাধিত হয়। এ সমাজব্যবস্থা তাই মানবতার জন্য অপরিহার্য।

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top