
✍️ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী | জাতীয়তাবাদী নেতা | মানবতাবাদী চিন্তাবিদ
পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাসে এক অনন্য নাম। তিনি ছিলেন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নেতা, গভীর চিন্তাবিদ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। আধুনিক ভারতের ভিত্তি স্থাপনে তাঁর অবদান আজও ইতিহাসে অম্লান।
“জীবনের প্রকৃত শিক্ষা আসে বই থেকে নয়, অভিজ্ঞতা থেকে।” – জওহরলাল নেহেরু
প্রারম্ভিক জীবন
১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর এলাহাবাদের এক সমৃদ্ধ ও শিক্ষিত পরিবারে নেহেরুর জন্ম। তাঁর পিতা মতিলাল নেহেরু ছিলেন ভারতের সুপরিচিত আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা এবং মাতা স্বরূপারানী ছিলেন রক্ষণশীল হলেও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এক গৃহিণী। শৈশব থেকে নেহেরু ছিলেন কৌতূহলী, শান্ত স্বভাবের এবং জ্ঞানপিপাসু। ভারতের শিশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কারণেই তাঁর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর আজ ‘শিশু দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
শিক্ষাজীবন
নেহেরুর শিক্ষা শুরু হয় ব্যক্তিগত ইংরেজ টিউটরের তত্ত্বাবধানে। ১৯০৫ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান। হ্যারো স্কুল, ট্রিনিটি কলেজ (কেমব্রিজ) ও লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স—এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রায় সাত বছর অধ্যয়ন করেন। বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাষ্ট্রনীতি ও দর্শনের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ পরবর্তীতে তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সমৃদ্ধ করে। ১৯১২ সালে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি নিয়ে তিনি ভারতে ফিরে আসেন।
বিবাহ ও পরিবার
ভারতে ফিরে আইনচর্চা শুরু করার কিছুদিন পর তাঁর বিবাহ হয় কমলা নেহেরুর সঙ্গে। ১৯১৭ সালে তাঁদের একমাত্র সন্তান ইন্দিরা নেহেরুর জন্ম। পরবর্তীকালে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দেন।
“পরিবার একজন মানুষের চরিত্র গঠনের প্রথম বিদ্যালয়।” – নেহেরু
রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম
রাজনীতির প্রতি নেহেরুর আগ্রহ থাকলেও তিনি প্রথমদিকে পাশ্চাত্য প্রভাবিত ছিলেন। ১৯১৬ সালে কংগ্রেস অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসে। গান্ধীর সত্যাগ্রহ, অসহযোগ ও স্বদেশী আন্দোলন তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
১৯২০ সালে তিনি কংগ্রেসের সক্রিয় নেতা হন এবং এলাহাবাদ কংগ্রেস কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯২৯ সালের লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হয়ে তিনি ‘পূর্ণ স্বরাজ’-এর ঘোষণা দেন।
১৯৩০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি নয়বার কারাবরণ করেন। জেলে বসেই তিনি রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত আত্মজীবনী ‘An Autobiography’।
“আমার জন্য কারাগার মানে ছিল চিন্তা, শিক্ষা ও আত্মউন্নয়নের নীরব পথ।” – নেহেরু
স্বাধীন ভারতের নেতৃত্ব
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর নেহেরু প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পরিকল্পিত অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেন এবং পাঁচ বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা চালু করেন।
বিজ্ঞান, শিল্প, প্রযুক্তি ও শিক্ষার ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। IIT, AIIMS, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং মহাকাশ গবেষণার ভিত্তি স্থাপনে তাঁর ভুমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৈদেশিক নীতিতে তিনি গ্রহণ করেন ‘জোটনিরপেক্ষতা’, যা বিশ্বশান্তি ও স্বাধীন কূটনৈতিক অবস্থানের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
রচনা ও সাহিত্যচিন্তা
নেহেরু ছিলেন একজন দক্ষ লেখক। তাঁর রচনায় ইতিহাস, রাষ্ট্রনীতি, মানবতাবাদ এবং বিশ্বচিন্তার গভীর বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহঃ
- Letters from a Father to His Daughter
- Glimpses of World History
- An Autobiography
- The Discovery of India
চিন্তাধারা ও উত্তরাধিকার
নেহেরুর চিন্তাধারার কেন্দ্রে ছিল মানবতা, যুক্তিবাদ, আধুনিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। তিনি বিশ্বাস করতেন, বিজ্ঞানমনস্কতা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাঁর স্বপ্ন ছিল শক্তিশালী, শিক্ষিত ও আধুনিক ভারত গঠন।
“মানুষের সত্যিকারের শক্তি তার জ্ঞান, যুক্তি ও মানবিকতায়।” – নেহেরু
মৃত্যু ও মূল্যায়ন
১৯৬৪ সালের ২৭ মে নেহেরুর মৃত্যু ঘটে। তাঁর প্রয়াণে ভারত হারায় এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ককে। তবুও তাঁর চিন্তা, রচনা ও কূটনীতি আজও ভারতের রাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হয়ে আছে।
আরও পড়ুন
👉 আবদুর রহীম
👉 আবদুল মান্নান তালিব
📥 পিডিএফ ডাউনলোড
পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু কর্তৃক রচিত pdf বই ডাউনলোড করতে নিচের বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আত্মচরিত
২। কিশোর ইন্দীরা গান্ধীকে লেখা পন্ডিত জহরলাল নেহরুর চিঠি
৩। দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া
৪। বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গে
৫। ভারত সন্ধানে




