
মুহাম্মদ আবদুল মান্নান: জীবন, কর্ম ও অবদান
✍️ ইসলামি চিন্তাবিদ | শিক্ষক | রাজনীতিবিদ | সমাজসেবক
প্রস্তাবনা
মাওলানা আবদুল মান্নান (৯ মার্চ ১৯৩৫ – …) ছিলেন বাংলাদেশি রাজনীতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম।
তিনি ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় স্থান লাভ করেন।
একদিকে তিনি শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, অন্যদিকে রাজনীতির মাধ্যমে জাতির কল্যাণে ভূমিকা রেখেছেন।
“শিক্ষা, রাজনীতি ও সমাজসেবাকে তিনি একসাথে মেলবন্ধন ঘটিয়ে মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।”
প্রারম্ভিক জীবন
১৯৩৫ সালের ৯ মার্চ চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এম এ মান্নান।
তৎকালীন গ্রামটির নাম ছিল দেবীপুর। শৈশবেই তিনি শিক্ষা ও ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠেন।
শিক্ষাজীবন ও প্রাথমিক কর্মজীবন
তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন।
নিজ গ্রামের ইসলামপুর আলিয়া মাদ্রাসায় তিনি হাদিস বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে তিনি একই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ পদে উন্নীত হন।
শিক্ষাজীবনেই তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বগুণের স্বাক্ষর স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সাংবাদিকতা
মাওলানা মান্নান শুধু শিক্ষক ও রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি সাংবাদিক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক ইনকিলাব-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক জীবন
মাওলানা এম এ মান্নান পাকিস্তান আমল থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তিনি প্রথম জীবনে পাকিস্তান মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।
১৯৬২ সালে ইস্ট পাকিস্তান আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলির পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান এডভাইজরি কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডলজির সদস্য ছিলেন, যার মর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সমতুল্য ছিল।
“পাকিস্তান আমল থেকেই তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা তাঁকে আলাদা মর্যাদায় উন্নীত করেছিল।”
স্বাধীন বাংলাদেশে
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্যে এম এ মান্নানই প্রথম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কুমিল্লা-২৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে চাঁদপুর-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ধর্ম মন্ত্রী এবং পাশাপাশি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
অবদান
মাওলানা মান্নান ছিলেন একজন সক্রিয় সমাজসেবক ও দানবীর।
তিনি শিক্ষা, ধর্ম ও সমাজ উন্নয়নে অসংখ্য অবদান রেখেছেন।
- সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
- মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষকদের জন্য কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেন।
- ১৯৮৭ সালের মহাবন্যার সময় তিনি বিদেশ থেকে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুল ত্রাণ সংগ্রহ করে জনগণের পাশে দাঁড়ান।
- তিনি বহু স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
- ঢাকার গাউছুল আজম জামে মসজিদ তাঁর উদ্যোগে নির্মিত হয়।
- নিজ গ্রামে ইসলামপুর ইসলামি মিশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।
- ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কেরোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রভাব
মাওলানা মান্নান ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও ধর্মীয় চিন্তাবিদ।
তাঁর কর্মকাণ্ড মাদ্রাসা শিক্ষিতদের জন্য রাজনীতিতে পথ খুলে দিয়েছে।
তাঁর উদ্যোগ ও দানশীলতা দেশের শিক্ষা, ধর্ম ও সমাজকল্যাণে অম্লান অবদান রেখে গেছে।
উপসংহার
মাওলানা এম এ মান্নান ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
তিনি শিক্ষক, সম্পাদক, মন্ত্রী ও সমাজসেবক— সব ভূমিকায় সমানভাবে সফল ছিলেন।
জাতির সংকটে তিনি সর্বদা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে স্থায়ী অবদান রেখেছেন।
তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় যে, সত্যিকারের নেতৃত্ব মানেই জনগণের সেবা ও কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা।
আরও পড়ুন
👉 দৈনিক ইনকিলাব
👉 ইসলামিক বই সমাহার
📚 মুহাম্মদ আবদুল মান্নান এর বইসমূহ
মুহাম্মদ আবদুল মান্নান কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আমাদের জাতিসত্তার বিকাশধারা
২। ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা
৩। এসো নামাজ শিখি
৪। মাতাপিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য
৫। শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ও জামালউদ্দীন আফগানী




