গ্রন্থ পরিচিতঃ “মোসাদ (ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ৬০ বছরের সবচেয়ে ভয়ংকর, নিন্দিত, বিতর্কিত ও সংকটাপন্ন মিশনগুলো নিয়ে এই বই)” বিশ্বের ভয়ংকরতম গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। আজ থেকে ষাট বছর আগে ইহুদিদের এই গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশ। এরপর থেকেই সারা বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জগন্যতম অপরাধে লিপ্ত হয় মোসাদ। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো তাদের টার্গেটে পরিণত হয়। মোসাদ তার দেশ ও পশ্চিমা সার্থে সন্ত্রাসী, বিপ্লবী, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়ক, সরকার প্রধানদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা শুরু করে। কখনো গুলি করে, কখনো বিষ প্রয়োগে, কখনো মেয়ে লেলিয়ে ঘটায় হত্যাকা-। আর এসবের নির্দেশদাতা ইসরাইল সরকার প্রধান। মুসলিম দেশগুলোকে কিভাবে পরাভূত করা যায় এটাই মোসাদের অন্যতম লক্ষ। প্রবীণ সাংবাদিক কায়কোবাদ মিলন বইটি অনুবাদ করেছেন। ২০১০ সালে বইটি যখন ইংরেজিতে প্রকাশ পায়। সত্তর সপ্তাহ ধরে এটি ছিল বিশ্বের বেষ্ট সেলার।
ভূমিকাঃ ইহুদিদের ইতিহাস, আরব ভূখণ্ডে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন এবং কার্যকলাপ অন্তহীন জল্পনার বিষয়। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কয়েক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে পরিচিত ভয়ঙ্কর হিসেবে নাম। বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবেও এটি বিবেচিত। সেই মোসাদের নেপথ্যের কাহিনী নিয়ে বই লিখেছেন মিশায়েল বারজোহার এবং নিসিম মিশাল। মোসাদের ষাট বছরের সবচে ভয়ংকর, নিন্দিত, বিতর্কিত ও সংকটাপন্ন মিশনগুলো নিয়ে এই বই। এর প্রতিটি ঘটনাই সত্য ও বাস্তবিক। ইন্টেলিজেন্স যুদ্ধ সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ রয়েছে তাদের কাছে এই বই এক অমূল্য সম্পদ। প্রথমোক্ত লেখক জোহার চারটি ইসরাইল– আরব যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মিশাল টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ইসরাইলের সরকার নিয়ন্ত্রিত টিভির মহাপরিচালক। ২০১০ সালে মোসাদ বইটি যখন প্রথম প্রকাশিত হয় তখন এক নাগাড়ে ৭০ সপ্তাহ বইটি ছিল বিশ্বে বেষ্ট সেলার। এরই মাঝে বেশ কয়েকটি ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে মোসাদ।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইহুদিদের উপস্থিতির কথা জানা যায় আড়াই হাজার বছর আগে। তারা এখনো নামে বেনামে ব্যবসাসহ নানা পেশায় কাজ করছে। বাংলাদেশে কোনো ইহুদি পরিবার রয়েছে এমন তথ্য অজানা। ইতিহাস বলে রেডিও পাকিস্তান ও পাকিস্তান টেলিভিশনে ইংরেজি সংবাদ পাঠক Mordechai Cohen ছিলেন ইহুদি। তিনি থাকতেন রাজশাহীতে। ১৯৬০ সালে তিনি ভারতে চলে যান।
ভারতের ট্রেনে মোসাদ বইয়ের কয়েকটি পাতা পড়ার পর মনে হল বাংলা ভাষার, বিশেষ করে বাংলাদেশের পাঠকের বইটি পড়া উচিত। তাই এই প্রয়াস। আমাদের দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে কয়েক লক্ষ সদস্য রয়েছেন। সত্যিকার গোয়েন্দা কাহিনী ও ইতিহাসের উপাদান জানার আগ্রহ কোটি লোকের। তারা এই বইটি পড়তে যে আগ্রহী হবেন তা হলফ করেই বলা যায়। তাছাড়া কূটনৈতিক এবং গোয়েন্দা পেশা কত ঝুঁকিপূর্ণ তাও উঠে এসেছে বইয়ের পাতায় পাতায়। সত্যিই মানুষ সন্ধানী, সত্যিই মানুষ অ্যাভেঞ্চার প্রিয়। আবিষ্কার থেকে প্রকাশিত আমার লেখা একাত্তরে পরাশক্তির যুদ্ধ বইটি খুব নাম করেছিল। সেই বইয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ- কালের বিভিন্ন দেশের মোস্ট সিকরেট চিঠিগুলা ফাঁস করেছিলাম। আর মোসাদ আরও অনন্য সাধারণ। এমন বই বাংলায় সত্যিই আর হয়নি। ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের নিজস্ব বাসভূমি ইসরায়েল রাষ্ট্র স্থাপনের পর থেকে সারা বিশ্বে এদের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ ও ব্যাংকিং, শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, প্রচারমাধ্যম এবং সামরিক গোয়েন্দা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বিস্ময়করভাবে নজরে আসছে। বিশ্বের তাবৎ পরাশক্তির সঙ্গে রয়েছে এদের গোপন আতাত। ইহুদি ব্যতীত অন্য যে কোনো ধর্মের অনুসারীকেই এরা মনে করে পৌত্তলিক বা বিধর্মী। মুসলমান এবং খ্রিস্টান সম্পর্কে এদের মন্তব্য Gentile, Goi এবং Sheketz। Latin এই শব্দগুলোর অর্থ বিধর্মী, পশুবীর্য ও শুকর। বলতে দ্বিধা নেই যারা এগুলো বলে তাদের আচরণ ও কার্যকলাপ সভ্য সমাজের মানুষের সঙ্গে তুল্য নয়। যে জেরুজালেম বিশ্বের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ও আন্তর্জাতিক নগরিই শুধু ছিলো না যা ছিলো মুসলমান খ্রিস্টান ও ইহুদিদের মহাপবিত্র নগরী সেই নগরি এখন ভয়াবহ আতংকের নগরি। আর এর জন্যে সবচেয়ে দায়ি ইহুদিরা। তবে এ কথাও সত্য ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর তীরে সভ্যতা ইতিহাস এবং তিন হাজার বছরের মহাকাব্যিক জীবনধারায় মিশে আছে বিশ্বের শ্রেষ্ট ধর্ম ও জাতি সমূহের বিজয় গৌরবের কাহিনী।
১৯৭৭ সাল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাদের এজেন্টদের গতানুগতিক ষড়যন্ত্র ও গুপ্তচরবৃত্তির বাইরে একবারে ভিন্ন একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেয়। ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাহেম বিগিন তাদের আদেশ দেন সুদানে আটকে থাকা ইথিওপিয়ান ইহুদি শরনার্থীদের উদ্ধার করে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য।
তিনি বলেন- ‘শরনার্থীদের যেকোনো মূল্যে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসুন এবং অবশ্যই এই ইহুদি ভূমিতে।’ তারই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পনা করা হয় নতুন এক অভিযানের। তবে সেবার পুরোপুরি ভিন্ন কিছুর ছক আঁকে মোসাদ। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকের কথা। আক্রমণ চালাতে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কোনো আগন্তুককে শত্রুভূমিতে পাঠানোর পরিবর্তে, সুদানের দূরবর্তী এক পরিত্যক্ত হলিডে ভিলেজে গুপ্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে মোসাদ। যেখানে কদাচিৎ কিছু দর্শনার্থীর দেখা মিললেও, জনসাধারণের চাপ কম এবং ঘনবসতি নেই। তারপর সেখানে একদল সক্রিয় এজেন্ট মোতায়েন করা হয় শরনার্থীদের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার জন্য। পরবর্তীতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও বিপদসংকুল পরিবেশের মুখোমুখি হয়ে তারা শরনার্থীদের ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করে সমুদ্র ও আকাশপথে ইসরায়েলে প্রেরণ করে। এই বইয়ের লেখক গ্যাড সিমরন সেই অভিযানেরই একজন সদস্য ছিলেন।
বইটি ১৯৯৮ সালে প্রথম হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত হয়। ইংরেজি ভাষায় এর পরিমার্জিত সংস্করণে ‘কীভাবে এই অভিযানের পরিল্পনা করা হয়েছিলো এবং কীভাবে মোসাদ টিম সুদানে তাদের এই অভিযানে সফল হয়’ হাতেকলমে সেসবের রোমাঞ্চকর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে ব্যক্তিগত ঝুঁকি এবং দিনের ঝকমকে আলোয় দর্শনার্থীদের ভয় থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়দের আড়ালেই রাতের বেলা শরনার্থীদের উদ্ধার করার কথা। এছাড়াও বইটিতে অভিযানের শেষদিকে আমেরিকার সংশ্লিষ্টতার কথাও আলোকপাত করা হয়েছে। তুলে আনা হয়েছে হোয়াইট হাউসের অনুমতি সাপেক্ষে ইথিওপিয়ান ইহুদি শরনার্থীদেরকে উদ্ধারে আকাশপথে আমেরিকার সাহায্য করার বিষয়টি এবং সিআইএ এর খার্তুম স্টেশন থেকে মোসাদ কর্মীদের আশ্রয় ও লিবিয়ার গুপ্তচরদের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে সহায়তার কথা। আরো বলা হয়েছে মেইলের মাধ্যমে মোসাদ অফিসারদের অনুপ্রেরণা দেবার প্রসঙ্গেও। সবমিলিয়ে লেখক গ্যাড সিমরন দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণে আদর্শবাদী বীরত্বের গাঁথা বইটিতে সাবলীল ভঙ্গিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন, যা সহজেই পাঠককে মুগ্ধ করবে।
কায়কোবাদ মিলন কর্তৃক রচিত মোসাদ ১ম ও ২য় খণ্ড pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ