যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ: Joeef o Jaal Hadith pdf

Joeef o Jaal Hadith pdf

গ্রন্থ পরিচিতঃ ইসলাম মানুষের জন্য আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ও শাশ্বত জীবন বিধান। এতে মানবকল্যাণে যাবতীয় দিক বর্ণিত হয়েছে। ইসলামী জীবনাদর্শের মূল উৎস ‘অহি’ তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। আল্লাহ তা’আলা নিজেই অহি-কে হেফাযত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন,’নিশ্চয় আমরা যিকর নাযিল করেছি এবং আমরাই তার হেফাযত করব’ (হিজর ১)। এই ঘোষণা পূর্বেকার কোন এলাহী কিতাব সম্পর্কে তিনি দেননি। ফলে সেগুলির কোন অস্তিত্ব এখন পৃথিবীতে নেই। অনেকের ধারণা ‘যিকর’ বলে আল্লাহ কেবল কুরআনের হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন, হাদীছের নেননি। একথা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন, যাতে আপনি লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত বিষয়গুলি তাদের নিকটে ব্যাখ্যা করে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (নাহল-৪৪)।

আর কুরআনের ব্যাখ্যাই হ’ল ‘হাদীছ’। যা রাসূল নিজ ইচ্ছা মোতাবেক বলতেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকটে ‘অহি’ নাযিল হ’ত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘রাসূল তাঁর ইচ্ছামত কিছু বলেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকটে ‘অহি’ নাযিল হত’ (নাজম ৩-৪)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘জেনে রেখ! আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি ও তার ন্যায় আরেকটি বস্তু’ (আবুদাউদ, মিশকাত হা/১৬৩)। সে বস্তুটি নিঃসন্দেহে ‘হাদীছ’, যার অনুসরণ ব্যতীত কেউ মুমিন হতে পারবে না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রভুর শপথ! তারা কখনোই মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়সমূহে তোমাকেই একমাত্র সমাধানকারী হিসাবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালা সম্পর্কে তাদের মনে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ বোধ করবে না এবং অবনত চিত্তে তা গ্রহণ করবে (নিসা ৬৫)।

অনেকের ধারণা কেবল লেখনীর মাধ্যমেই হেফাযত হয়, স্মৃতির মাধ্যমে নয়। তাদের একথা ঠিক নয়। কেননা প্রাচীন পৃথিবীতে যখন কাগজ ছিল না, তখন শিলালিপি ইত্যাদি ছাড়াও প্রধান মাধ্যম ছিল মানুষের ‘স্মৃতি’। জাহেলী যুগে আরবদের স্মৃতিশক্তির প্রখরতা ছিল কিংবদন্তীর মত। যা আজকালকের মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না। শেষ নবীকে আরবে প্রেরণের পিছনে সেটাও অন্যতম কারণ হতে পারে। এরপরেও রাসূলের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ও ব্যবস্থাপনায় ‘কুরআন’ লিপিবদ্ধ ও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। হাদীছ লিখনের কাজও তাঁর নির্দেশে শুরু করা হয়।

যদিও ব্যাপকহারে সবাইকে তিনি এ নির্দেশ দেননি। কেননা তাতে কুরআনের সঙ্গে হাদীছ মিলে যাবার সম্ভাবনা থেকে যেত। রাসূলের মৃত্যুর পরে উক্ত সম্ভাবনা তিরোহিত হবার পর ছাহাবীগণ হাদীছ সংগ্রহ ও সংকলনে মনোনিবেশ করেন। খুলাফায়ে রাশেদীন হাদীছ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। খলীফা ওমর বিন আবদুল আযীয (৯৯-১০১ হিঃ) সর্বপ্রথম ব্যাপকহারে হাদীছ সংগ্রহ, সংকলন ও প্রচার-প্রসারের নিমিত্ত রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করেন ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেন (বুখারী 1/20 ) ।

কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলে খারেজী-শী’আ, কাদারিয়া- মুরজিয়া ইত্যাদি বিদ’আতী ও ভ্রান্ত ফের্কা সমূহের উদ্ভব ঘটলে তাদের মধ্যে নিজেদের দলীয় স্বার্থে হাদীছকে ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা দেয়। ৩৭ হিজরীর পরের যুগে তখনই প্ৰথম হাদীছ বর্ণনাকারীর দলীয় পরিচয় ও স্বভাব-চরিত্র যাচাইয়ের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীণ (৩৩-১১০ হিঃ) বলেন, এ সময় যদি দেখা যেত যে, বর্ণনাকারী ব্যক্তি ‘আহলেসুন্নাত’ দলভুক্ত, তাহলে তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করা হত। আর যদি দেখা যেত বিদআতী দলভুক্ত, তাহলে তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করা হত না (মুকাদ্দামা মুসলিম পৃঃ ১৫)। বলা বাহুল্য, মুসলিম সমাজে প্রচলিত শিরকী আক্বীদা ও বিদআতী রসম-রেওয়াজ সমূহের অধিকাংশেরই মূল উৎস হল জাল ও যঈফ হাদীছ সমূহ।

আল্লাহ পাক মানবজাতির কল্যাণে প্রেরিত স্বীয় ‘যিকর’ তথা সর্বশেষ ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও হাদীছ সমূহকে হেফাযত করার জন্য যুগে যুগে অনন্য প্রতিভাসমূহ সৃষ্টি করেছেন। ছাহাবী ও তাবেঈগণের যুগ শেষে বিষ্ময়কর মেধা ও প্রতিভার অধিকারী ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম প্রমুখ কুতুবে সিত্তার মুহাদ্দিছগণ ছাড়াও যুগে যুগে হাদীছের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য আল্লাহ্ বিশেষ রহমতে তাঁর বাছাইকৃত কিছু বিদ্বান চিরকাল হাদীছের খিদমত করে গিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর অতুলনীয় প্রতিভা মুহাম্মাদ নাছেরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাঁদের অন্যতম। তিনি ছহীহ ও যঈফ হাদীছের উপর পৃথক গ্রন্থসমূহ সংকলন করেছেন। যার প্রতি খণ্ডে ৫০০ যঈফ ও মওযূ হাদীছ সংকলিত হয়েছে। এযাবৎ প্রাপ্ত এর ১৪টি খণ্ডের মধ্যে ১ম খণ্ডের বঙ্গানুবাদ করেছে স্নেহাষ্পদ আকমাল হুসাইন বিন বাদী উয্যামান।

বাংলাভাষী মুসলমানদের জন্য এটা ছিল অতীব জরুরী কাজ। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পাদন করে সে জাতির এক মহান খিদমত আঞ্জাম দিয়েছে। আল্লাহ তার এই খিদমত কবূল করুন। আমরা আশা করব সে বাকী খণ্ডগুলির অনুবাদের কাজও করবে ও আল্লাহর রহমতে তা প্রকাশিত হবে। ইন্‌শাআল্লাহ এ গ্রন্থের মাধ্যমে মানুষ যঈফ ও জাল হাদীছের অপপ্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে হাদীছের অনুসারী হবে।

তার এ অনুবাদ সুন্দর, সাবলীল ও সহজবোধ্য হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে পাঠকদের উপকারে আসবে। গ্রন্থটি সকলের সংগ্রহে রাখার মত। আমি গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি । আমীন!

আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবাণী কর্তৃক রচিত যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।

তাওহীদ পাবলিকেশন্স হইতে প্রকাশিত

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top