
ইতিহাসবিদ আল্লামা গোলাম আহমদ মোর্তজা: জীবন, কর্ম ও অবদান
✍️ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ | বক্তা | গবেষক | লেখক
প্রস্তাবনা
আল্লামা গোলাম আহমদ মোর্তজা (১৯৩৮ – ১৫ এপ্রিল ২০২১) ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, গবেষক ও প্রখ্যাত বক্তা।
তিনি ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করে উপমহাদেশের পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন।
তার গবেষণা ও বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
ইতিহাসের চাপা থাকা তথ্যসমূহ সামনে আনার কারণে তিনি যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন।
“ইতিহাস কখনও চাপা পড়ে থাকে না, সত্য একদিন না একদিন প্রকাশ হবেই।” – আল্লামা গোলাম আহমদ মোর্তজা
প্রারম্ভিক জীবন
১৯৩৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মেমারিতে জন্মগ্রহণ করেন গোলাম আহমদ মোর্তজা।
গ্রামীণ পরিবেশেই তাঁর শৈশব কেটেছে। তিনি ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
শৈশব থেকেই অধ্যবসায় ও মেধার মাধ্যমে তিনি আলাদা হয়ে ওঠেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি ইতিহাস চর্চার প্রতি তাঁর ঝোঁক তৈরি হয়।
পরবর্তীতে তিনি ইতিহাসকে শুধু পেশা হিসেবে নয়, বরং জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।
বক্তা হিসেবে পরিচিতি
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তিনি নিয়মিতভাবে বক্তব্য প্রদান করতেন।
তাঁর ভাষণের বৈশিষ্ট্য ছিল তথ্যসমৃদ্ধ ও স্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন।
একারণে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে “বক্তা সম্রাট” বলা হতো।
তাঁর বক্তৃতায় ইতিহাসের গোপন অধ্যায়গুলো নতুন করে আলোচিত হতো, যা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করত।
গবেষণা ও রচনাবলী
আল্লামা মোর্তজা ইতিহাসকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করেন।
তিনি প্রমাণসহকারে বহু অজানা তথ্য উন্মোচন করেন, যা পূর্ববর্তী ইতিহাসবিদরা উপেক্ষা করেছিলেন।
বিখ্যাত গ্রন্থাবলি
- ইতিহাসের ইতিহাস
- চেপেরাখা ইতিহাস
- বাজেয়াপ্ত ইতিহাস
- পুস্তক সম্রাট
- অনন্য ইতিহাস
তাঁর গ্রন্থগুলোতে তিনি শুধু তথ্য উপস্থাপনই করেননি, বরং ইতিহাসের প্রচলিত ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
বিশেষ করে পলাশীর যুদ্ধ, অন্ধকূপ হত্যাকাণ্ড, আকবরের রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করে তিনি পাঠকমহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
“গোলাম আহমদ মোর্তজার বই পড়লে মনে হয়, ইতিহাসকে নতুন চোখে দেখা দরকার।” – সমালোচক মতামত
বিতর্ক ও সমালোচনা
আল্লামা মোর্তজার রচনাগুলো পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যপুস্তকে প্রচলিত ইতিহাসের বিরোধিতা করেছিল।
তিনি দাবি করেছিলেন, মুসলমানদের নিয়ে প্রচলিত অনেক ইতিহাস বানোয়াট।
এ কারণে ১৯৮১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর একটি গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করে।
তবে তিনি নির্ভীকভাবে ইতিহাসের সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে থাকেন।
তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র, গান্ধীজি, রাজা রামমোহন রায় প্রমুখ ব্যক্তিত্বের গোপন দিকও সামনে আনেন।
এ কারণে তিনি প্রশংসার পাশাপাশি প্রবল সমালোচনারও মুখোমুখি হন।
শিক্ষা ও সমাজসেবা
শুধু ইতিহাসচর্চা নয়, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজের উন্নয়নেও তিনি কাজ করেছেন।
২০০৬ সালে তিনি নিজ জেলা মেমারিতে প্রতিষ্ঠা করেন “মামূন ন্যাশনাল স্কুল”।
পরবর্তীতে পানাগড় ও পাণ্ডুয়ায় শাখা খোলেন।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে পাঠদানের সুযোগ তৈরি করেন।
হাজারো ছাত্র-ছাত্রী এখান থেকে শিক্ষালাভ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
“শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।” – গোলাম আহমদ মোর্তজা
প্রভাব
তিনি দুই বাংলার ইতিহাসপ্রেমী মানুষের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন।
ভারতের বর্তমান ইতিহাসবিদরাও তাঁর গবেষণাকে স্বীকার করেছেন।
তাঁর বক্তব্য, রচনা ও গবেষণা মুসলিম সমাজকে নতুনভাবে ইতিহাস ভাবতে শেখায়।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনা হয়েছিল, তিনি সবসময় সত্যকে সামনে আনাকে নিজের কর্তব্য মনে করতেন।
মৃত্যু
২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল কলকাতার তালতলার জিডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
তিনি ৬ পুত্র, ১ কন্যা এবং অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে যান।
উপসংহার
আল্লামা গোলাম আহমদ মোর্তজা ছিলেন সাহসী ইতিহাসবিদ।
তিনি ইতিহাসকে শুধুমাত্র অতীত বর্ণনা নয়, বরং সত্য প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
তাঁর রচনা ও সমাজসেবামূলক কাজ আজও ইতিহাসপ্রেমী মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।
তাঁর জীবন প্রমাণ করে, সত্য প্রকাশের জন্য বিতর্ককেও আলিঙ্গন করতে হয়।
আরও পড়ুন
👉 মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
👉 ইতিহাসের ইতিহাস উইকিপিডিয়া
📚 গোলাম আহমাদ মোর্তজা এর বইসমূহ
গোলাম আহমাদ মোর্তজা কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। ইতিহাসের ইতিহাস
২। এ এক অন্য ইতিহাস ১ম খণ্ড
৩। এ এক অন্য ইতিহাস ২য় খণ্ড
৪। চেপে রাখা ইতিহাস
৫। বর্জকলম
৬। বাজেয়াপ্ত ইতিহাস



