ঈশ্বরের ডিএনএ প্রজেক্ট: God’s DNA project

ঈশ্বরের ডিএনএ প্রজেক্ট

মানুষ কি পৃথিবীতে স্থিতিশীল? কিংবা যদি প্রশ্ন করি — মানুষ কি পৃথিবীর স্থায়ী বাসিন্দা?
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উত্তর আমাদের সামনে প্রতিদিনই প্রস্ফুটিত — মানুষ পৃথিবীর স্থায়ী সৃষ্টি নয়।

বিষয়টি খানিক আধ্যাত্মিক পর্যায়ে চলে গেলেও, আসলে এটি একেবারেই পার্থিব।
মানুষের বাস্তব জীবনের দিক থেকেও দেখা যায় — মানুষ কখনো স্থায়ী নয়, না শরীরে, না মনে।


মানুষ : এক চিরস্থায়ী যাযাবর

ধরা যাক একজন রিকশাচালকের কথা — যিনি বস্তির ঘিঞ্জি ঘরে বাস করেন।
তিনি কি কখনও মনে করেন, এই অস্থায়ী ঠিকানাই তাঁর চিরদিনের নিবাস?
না, তিনিও স্বপ্ন দেখেন আরও ভালো কোথাও, একটু প্রশস্ত, একটু আরামদায়ক জায়গায় বসবাসের।

ধরা যাক একজন কোটিপতির কথা — গুলশানে যার প্রাসাদোপম বাড়ি, খাগড়াছড়িতে নয়নাভিরাম বাংলো।
গাজীপুরে বিশাল গার্মেন্টস ব্যবসা, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থবিত্তের প্রাচুর্য।
তবু কি তিনি তুষ্ট?
না, তাঁরও স্বপ্ন আছে — জুরিখে একটি স্টুডিও-টাইপ ভিলা বা দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় একটি আধুনিক ফ্ল্যাট।

অর্থাৎ, মানুষ শারীরিকভাবে একটি ঠিকানায় থিতু হলেও, মানসিকভাবে সে চিরকাল ঠিকানাহীন।
তার মন প্রতিনিয়ত নতুন ঠিকানার সন্ধানে থাকে, যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায় দেশ-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে।


প্রাণ : এক অদৃশ্য সত্য

প্রকৃতি মানুষকে তৈরি করেছে তারই এক সৃষ্টিশীল সূত্রে।
তাই প্রকৃতির টানে, প্রকৃতির আহ্বানে সাড়া না দিয়ে মানুষ থাকতে পারে না।
এই আকর্ষণই তাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় — সে অস্থায়ী, পৃথিবীও অস্থায়ী।

এবার প্রশ্ন আসে — মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায়?
ধর্মবিশ্বাসীরা বলবেন — পরকালে বেহেশত বা দোজখে।
অবিশ্বাসীরা বলবেন — দেহ মাটিতে মিশে যায়, সবকিছু শেষ।

কিন্তু এই ‘শেষ’ কথাটিই কি সত্যি শেষ?


অদৃশ্য প্রাণের রহস্য

মানুষের ভেতরে যে প্রাণ, তা সবাই মানে।
কিন্তু যদি বলা হয় — “এই প্রাণটিকে সামনে আনো, দেখাও!” — কেউ পারবে না।
কারণ প্রাণের কোনো কাঠামোগত রূপ নেই।
হৃদপিণ্ড দেখা যায়, কিন্তু প্রাণ দেখা যায় না।
তবু সেটিই মানুষকে জীবিত রাখে।
অর্থাৎ, প্রাণ কাঠামো নয় — এটি এক আত্মিক বা স্পিরিচুয়াল শক্তি।

তাহলে প্রশ্ন হলো, মৃত্যুর পর এই প্রাণের কী হয়?
এটাও কি মাটিতে মিশে যায়?
না কি অদৃশ্য কোনো স্থানে, কোনো সূক্ষ্ম জগতে টিকে থাকে?


বিজ্ঞান ও ঈশ্বরের সংযোগ : DNA তত্ত্ব

বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক যুগে আমরা জানি — DNA-তে আছে এক জীবের সম্পূর্ণ জীবনতথ্য।
এক বিন্দু রক্ত, একটি চুল বা সামান্য থুতু থেকেও বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেন মানুষের পূর্ণ জেনেটিক ব্লুপ্রিন্ট।

এই জ্ঞানের আলোয় যদি আমরা ভাবি — মৃত্যুর পর দেহ মাটিতে মিশে গেলেও,
প্রাণের DNA বা আত্মার ব্লুপ্রিন্ট আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকতেই পারে না কেন?

ছয় হাজার বছর আগে নূহ (আঃ)-এর সময় যে হাঁসটি মারা গিয়েছিল,
তার ডিএনএ আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত।
চার হাজার বছর আগে বনি ইসরাইলের মৃতদের ডিএনএও সংরক্ষিত রয়েছে
বারজাখ” নামের ঐশ্বরিক ল্যাবে — সপ্ত আসমানের ওপরে।

যখন পরকাল সংঘটিত হবে,
আল্লাহ প্রতিটি সংরক্ষিত ডিএনএ-কে বলবেন — “হয়ে যাও!”
আর সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকে পুনর্জীবিত হবে — তাদের নিজ নিজ রূপে।
খাদিজা, মেরি, সীতা, যশোধা — সকলেই।


আল্লাহর ল্যাবের অপরিবর্তনীয় ব্লুপ্রিন্ট

আল্লাহর কাছে প্রতিটি মানুষের ডিএনএ নকশা সংরক্ষিত আছে।
তাঁর ফুৎকারে, সেই ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী পুনর্নির্মাণ হবে সকল প্রাণ।
কারো সৃষ্টিতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি থাকবে না।
তখন প্রত্যেকে পাবে এক অপরিবর্তনীয় চিরস্থায়ী ঠিকানা।

পৃথিবীর সকল ঠিকানাই সাময়িক —
চূড়ান্ত ঠিকানা কেবল তাঁর কাছেই।

🕊️
মাসিক নবধ্বনি, আগস্ট ২০১৭ সংখ্যা থেকে

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

error: Content is protected !!
Scroll to Top