মুহাম্মদ কামারুজ্জামান: Muhammad Kamruzzaman Books

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান: জীবন, কর্ম ও অবদান

✍️ রাজনীতিবিদ | সাংবাদিক | সম্পাদক | ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনানী

প্রস্তাবনা

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান (৪ জুলাই ১৯৫২ – ১১ এপ্রিল ২০১৫) ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অগ্রসেনানী এবং একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক।
তিনি যেমন সংগঠক ও জননেতা ছিলেন, তেমনি ছিলেন ক্ষুরধার লেখক ও সম্পাদক।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠায় তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং সাপ্তাহিক সোনার বাংলা-এর সফল সম্পাদকীয় দায়িত্ব তাঁকে দেশের বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ পরিচিতি এনে দেয়।

“একজন প্রকৃত নেতার দায়িত্ব হলো জনগণকে ন্যায়, সত্য ও আদর্শের পথে পরিচালিত করা।” – মুহাম্মদ কামারুজ্জামান

প্রারম্ভিক জীবন

১৯৫২ সালের ৪ জুলাই শেরপুর জেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মুদিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
পিতা ছিলেন মরহুম ইনসান আলী সরকার এবং মাতা মরহুমা সালেহা খাতুন।
শৈশব থেকেই তিনি মেধাবী, বিনয়ী এবং অমায়িক স্বভাবের জন্য সর্বজনবিদিত ছিলেন।

শিক্ষাজীবন

প্রাথমিক পড়াশোনা করেন কুমরী কালিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
পরবর্তীতে শেরপুর জিকেএম ইন্সটিটিউশনে ভর্তি হয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকার করেন।
১৯৬৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চার বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

কলেজজীবন শুরু করেন জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে, তবে ’৬৯-এর গণআন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মোমেনশাহী নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৪ সালে ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

“শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের জন্য নয়; এটি সমাজ পরিবর্তনের শক্তি।” – কামারুজ্জামান

পারিবারিক জীবন

১৯৭৭ সালে নুরুন্নাহারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তাঁদের ৫ সন্তান – হাসান ইকবাল ওয়ামী, হাসান ইকরাম ওয়ালী, হাসান জামান ওয়াসী, হাসান ইমাম ওয়াফী ও আহমদ হাসান সাফী।

ছাত্র রাজনীতি

স্কুল জীবনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সভাপতি হন।
১৯৭৮-৭৯ সাল পর্যন্ত টানা দু’বার কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় ছাত্রশিবিরকে একটি আদর্শভিত্তিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য।

সাংবাদিকতা

ছাত্রজীবন শেষে সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।
১৯৮০ সালে ঢাকা ডাইজেস্ট-এর নির্বাহী সম্পাদক এবং ১৯৮১ সালে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা-এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।
তাঁর সম্পাদনায় সোনার বাংলা দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক সাপ্তাহিক হয়ে ওঠে।

এছাড়া তিনি নতুন পত্র নামক ম্যাগাজিন এবং দীর্ঘ দশ বছর দৈনিক সংগ্রাম-এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন।
কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৩-৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
চারদলীয় জোটের কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটির শীর্ষ নেতাদের একজন হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

বিদেশ ভ্রমণ

তিনি সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, জাপানসহ বহু দেশে সফর করেছেন।
আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যুব ফোরাম ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

রচনাবলী

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন উর্বর লেখক।
তিনি দেশি-বিদেশি রাজনীতি, গণতন্ত্র, ইসলামী আন্দোলন ও সমকালীন বিষয় নিয়ে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলি

  • আধুনিক যুগে ইসলামী বিপ্লব
  • পশ্চিমা চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম
  • বিশ্ব পরিস্থিতি ও ইসলামী আন্দোলন
  • সংগ্রামী জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম
  • সাঈদ বদিউজ্জামান নুরসী

বিচারিক কার্যক্রম

২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে।
তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছিলেন।

মৃত্যু

২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১০টা ৩১ মিনিটে ফাঁসির মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক আলোচিত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটায়।

“একজন নেতার মৃত্যুতে দেহ শেষ হয়, কিন্তু তার চিন্তা প্রজন্মের মাঝে বেঁচে থাকে।”

উপসংহার

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ।
তিনি ছাত্র আন্দোলন, সাংবাদিকতা ও রাজনীতির মাধ্যমে দেশের চিন্তাজগৎ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
তাঁর জীবন, কর্ম ও রচনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন

👉 উইকিপিডিয়া
👉 ইসলামিক বই সমাহার


📚 মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এর বইসমূহ

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অধ্যাপক গোলাম আযমের সংগ্রামী জীবনী
২। আধুনিক বিশ্বে ইসলাম
৩। আধুনিক বিশ্বে ইসলামী জাগরণ ও মাওলানা মওদূদীর চিন্তাধারার প্রভাব
৪। আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম
৫। আধুনিক যুগে ইসলামী বিপ্লব
৬। ইসলামী নেতৃত্ব
৭। মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top