
‘কয়েকদিন আগে ক্লাশের থার্ড পিরিয়ডে মফিজুর রহমান স্যার এসে আমাকে দাঁড় করালেন। বললেন,- “তুমি ভাগ্যে, আই মিন তাকদিরে বিশ্বাস করো?”
আমি আচমকা অবাক হলাম। আসলে এই আলাপগুলো হলো ধর্মীয় আলাপ। মাইক্রোবায়োলজির একজন শিক্ষক যখন ক্লাশে এসে এসব জিজ্ঞেস করেন, তখন খানিকটা বিব্রত বোধ করাই স্বাভাবিক। স্যার আমার উত্তরের আশায় আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন।
আমি বললাম,- “জ্বি, স্যার। এ্যাজ এ্যা মুসলিম, আমি তাকদিরে বিশ্বাস করি। এটি আমার ঈমানের মূল সাতটি বিষয়ের মধ্যে একটি।”
স্যার বললেন,- “তুমি কি বিশ্বাস করো যে, মানুষ জীবনে যা যা করবে তার সবকিছুই তার জন্মের অনেক অনেক বছর আগে তার তাকদিরে লিখে দেওয়া হয়েছে?”
– “জ্বি স্যার।” – আমি উত্তর দিলাম।
– “বলা হয়, স্রষ্টার ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি ক্ষুদ্র পাতাও নড়েনা, তাই না?”
– “জ্বি স্যার।”
– “ধরো, আজ সকালে আমি একজন লোককে খুন করলাম। এটা কি আমার তাকদিরে পূর্ব নির্ধারিত ছিলো না?”
– “জ্বি, ছিলো।”
স্যার হাসলেন। তারপর বললেন,- “তাহলে সোজা লজিক বলছে, আমি মূলত রোবট মাত্র। আমার কাজগুলো সব স্রষ্টার নির্ধারিত। তাহলে আমি দায়ী কেনো?”
আমি কিছুটা চুপ। স্যার বললেন,- “তুমি নিশ্চয়ই এখন বলবে, স্রষ্টা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন, তাই না?”
– “জ্বি স্যার।”
– “কিন্তু সাজিদ, এটা খুবই লেইম লজিক…”
“ধরো, আমি তোমাকে বাজারের একটা লিস্ট দিলাম। লিস্টে লেখা আছে ঠিক কী কী কিনবে। তুমি গিয়ে সেগুলোই কিনে আনলে। তারপর যদি কেউ বলে, সাজিদ তার ইচ্ছামতো বাজার করেছে — এটা কি সত্যি?”
আমি বললাম,- “নাহ, আপনি মিথ্যা বলেছেন।”
স্যার বললেন,- “ঠিক তাই! তাহলে স্রষ্টাও তো একই কাজ করছেন — তাকদির লিখে দিয়েছেন, আবার বলছেন, তোমরা নিজের ইচ্ছায় করছো।”
যুক্তির পাল্টা যুক্তি
আমি বললাম,- “স্যার, আপনি আমাদের সম্পর্কে ভালো জানেন, তাই না? আপনি কি বলতে পারেন কে ফার্স্ট ক্লাস, কে সেকেন্ড ক্লাস পাবে?”
স্যার তালিকা লিখে দিলেন। আমি বললাম,- “এখন ধরুন আপনার পূর্বানুমান সত্যি হলো। তাহলে কি আপনি লিখেছেন বলেই কেউ ফার্স্ট ক্লাস পেল?”
স্যার বললেন,- “না, আমি লিখেছি কারণ আমি জানতাম ওরা পারবে।”
আমি হাসলাম। বললাম,- “ঠিক সেভাবেই স্রষ্টা জানেন আমরা কে কী করবো। তাই আগে থেকেই তাকদির লিখে রেখেছেন। কিন্তু তিনি লিখেছেন বলেই আমরা করছি — এমনটা নয়।”
“যেমন আপনি আমাদের যোগ্যতা জেনে লিখেছেন, স্রষ্টাও তাঁর সৃষ্টির ভবিষ্যৎ জানেন। তাই তাঁর লিখন আমাদের কাজের কারণ নয়, বরং জ্ঞানের প্রতিফলন।”
স্যার চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন,- “তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার দরকার কী?”
আমি স্যারের হাতে তাঁর দেওয়া কাগজ দেখিয়ে বললাম,- “স্যার, তাহলে আপনি এই কাগজের ভিত্তিতে রেজাল্ট দিয়ে দিন, পরীক্ষা না নিয়েই!”
স্যার বললেন,- “না, তাহলে কেউ বলতে পারে আমি অন্যায় করেছি।”
আমি বললাম,- “ঠিক তাই, স্রষ্টাও তাই পরীক্ষা নিচ্ছেন — যাতে কেউ না বলতে পারে, সুযোগ পেলে আমি ভালো করতাম।”
শেষ প্রশ্ন ও উত্তর
স্যার বললেন,- “যে মানুষ জীবনে খারাপ কাজ বেশি করে, কিন্তু কিছু ভালো কাজও করে — তার কি জান্নাতে যাওয়া উচিত নয়?”
আমি বললাম,- “স্যার, পানি কিভাবে তৈরি হয়?”
– “দুই ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেনের সংমিশ্রণে।”
– “এক ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেন দিলে হবে?”
– “কখনোই না।”
“ঠিক সেভাবেই, এক ভাগ ভালো কাজ আর এক ভাগ মন্দ কাজে জান্নাত পাওয়া যায় না। ভালো কাজের পাল্লা ভারি হতে হবে।”
সেদিন আর কোনো প্রশ্ন স্যার আমাকে করেননি।
লেখকঃ আরিফ আজাদ
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ ❤️