মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানি: Muhammad Shafi Usmani Books

মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানি

আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানি রহ.: জীবন, কর্ম ও অবদান

✍️ গ্র্যান্ড মুফতী | মুফাসসির | ফকীহ | দারুল উলূম করাচির প্রতিষ্ঠাতা

প্রস্তাবনা

আল্লামা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ছিলেন ২০শ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ, ফকীহ ও মুফাসসির। তিনি পাকিস্তানের গ্র্যান্ড মুফতী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন এবং ইসলামী আইন, সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর রচিত তাফসীর মাআরেফুল কুরআন আজো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

“জ্ঞান তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা জাতির দিকনির্দেশনা ও সমাজ সংস্কারে কাজে লাগে।” – মুফতী মুহাম্মাদ শফী

প্রারম্ভিক জীবন

মুফতী শফী রহ. ১৩১৪ হিজরিতে ভারতের একটি সম্ভ্রান্ত ও ধর্মনিষ্ঠ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশধারা ইলম, তাকওয়া ও সমাজসেবার জন্য সুপরিচিত ছিল। ছোটবেলা থেকেই তিনি কুরআন, তাজউইদ ও প্রাথমিক ইসলামি বিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেন। পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ তাঁকে ইলমে দীন অর্জনে অনুপ্রাণিত করে।

শিক্ষাজীবন

তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন এবং সেখানে বিখ্যাত ও প্রজ্ঞাবান আলেমদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর উস্তাদদের মধ্যে ছিলেন—

  • মুহাদ্দিসুল আসর আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ.
  • মুফতীয়ে আজম আজীজুর রহমান রহ.
  • শাইখুল ইসলাম শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ.
  • শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহ.

তাঁর প্রখর মেধা ও পরিশ্রমের কারণে তিনি খুব দ্রুত ইসলামী জ্ঞানে উচ্চতর মর্যাদা অর্জন করেন।

“ইলম হলো সেই আলো, যা মানুষের অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।” – মুফতী শফী

কর্মজীবন

১৩৩৫ হিজরিতে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হওয়ার পর তিনি সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রথমদিকে তিনি নাহু-সরফ, সাহিত্য ও ফিকহ পড়াতেন এবং পরে হাদিস শরীফের দরস প্রদান করেন।

ফতোয়া ও গবেষণা

তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের মুফতী পদে অভিষিক্ত হন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে হাজার হাজার ফতোয়া প্রকাশিত হয়। তাঁর ফতোয়া সমগ্র উপমহাদেশে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

রাজনীতি ও সামাজিক ভূমিকা

মুফতী শফী রহ. পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হলে তিনি সেখানে হিজরত করেন এবং ইসলামী সংবিধান ও আইন প্রণয়নে অগ্রণী অবদান রাখেন। তিনি পাকিস্তানের প্রথম গ্র্যান্ড মুফতী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা

তিনি দারুল উলূম করাচি প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজো ইসলামী শিক্ষা, গবেষণা ও ফতোয়ার অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

রচনাবলী

আল্লামা শফী রহ. ছিলেন একজন উর্বর লেখক। তিনি ফিকহ, তাফসীর, অর্থনীতি ও সামাজিক ইস্যুতে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন।

প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলি

  • তাফসীর মাআরেফুল কুরআন – বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ
  • আহকামুল কুরআন
  • ইমদাদুল মুফতিয়ীন
  • জাওয়াহিরুল ফিকহ
  • আহকামুল হজ্জ
  • আল-ইওয়াকীত ফী আহকামীল মাওয়াকীত
  • মানহাজুল খাইর ফিল হচ্ছি আনিল গাইর
  • মাকামে সাহাবা
  • ইসলামী জবীহা
  • বীমায়ে জিন্দেগী, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইসলাম আওর সোস্যালিজম
  • ইসলামী নেজামমে ইকতেসাদী ইসলাহাত

“তাফসীর মাআরেফুল কুরআন আজো মুসলিম উম্মাহর কাছে আলোকবর্তিকা।” – সমালোচক মতামত

চিন্তাধারা

মুফতী শফী রহ.-এর চিন্তাধারার মূল ভিত্তি ছিল শরীয়াহভিত্তিক জীবন গঠন। তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলাম শুধু ধর্মীয় আচার নয়; বরং রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। তাঁর দাওয়াহ ও রচনায় ইসলামী অর্থনীতি, শিক্ষা সংস্কার এবং সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

অবদান ও প্রভাব

তিনি পাকিস্তানের সংবিধানে ইসলামী ধারার অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দারুল উলূম করাচি আজো আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত। তাঁর ছাত্র ও অনুগামীরা সারা বিশ্বে ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াহ প্রচার করছেন।

মৃত্যু

১৩৯৬ হিজরীর শাওয়াল মাসের ১১ তারিখে মুফতী শফী রহ. ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর ক্ষতি হিসেবে দেখা হয়। তবে তাঁর রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাবলী আজো মুসলিম উম্মাহকে আলোকিত করছে।

“একজন আলেমের দেহ মাটিতে মিশে যায়, কিন্তু তার জ্ঞানের আলো প্রজন্মকে আলোকিত করে রাখে।”

উপসংহার

আল্লামা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ছিলেন একাধারে মুফাসসির, ফকীহ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তাঁর জীবন ছিল জ্ঞানের আলোয় ভরপুর এবং ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে নিবেদিত। তাঁর গ্রন্থাবলী ও প্রতিষ্ঠিত দারুল উলূম করাচি মুসলিম উম্মাহর জন্য চিরকালীন দিকনির্দেশনা হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন

👉 দারুল উলূম করাচি
👉 মুহাম্মাদ তাকী উসমানী


error: Content is protected !!
Scroll to Top