ইমাম ইবনে তাইমিয়া: Imam Ibn Taymiyyah Books

Imam Ibn Taymiyyah Books

ইমাম ইবনে তাইমিয়া কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আক্বীদা ওয়াসেত্বিয়া
২। আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
৩। ইবাদাতের মর্মকথা
৪। কবর যিয়ারত কবরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন
৫। মহা উপদেশ
৬। মুসলিম জাতির প্রতি মহা উপদেশ
৭। মুসলিম নারীর হিজাব ও সালাতের পোষাক
৮। যিয়ারুল কুবুর বা কবর যিয়ারাত
৯। রাফউল মালামঃ ঈমামগণের সমালোচনার জবাব
১০। শরীয়াতি রাষ্ট্রব্যবস্থা
১১। সৎকাজ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ

লেখক পরিচিতিঃ

জন্মঃ ৬৬১ হিজরী সালে রবিউল আউয়াল মাসের দশ তারিখ হাররান নামক এক শহরে ইবনে তাইমিয়া (র)-এর জন্ম হয়। তাঁর সাত বছর বয়সে যখন এ শহরটি তাতারীদের আক্রমণের শিকার হয়, তিনি তখন তাঁর পিতার সাথে জন্মভূমি ত্যাগ করে দামেশকে চলে যান।শিক্ষাঃ প্রথমে নিজের চাচা বিখ্যাত খতীব ও বাগ্মী ফখরুদ্দীন ইবনে তাইমিয়ার কাছে শিক্ষালাভ করেন। অতঃপর হিরান ও বাগদাদের আলেম ও মুহাদ্দিসদের কাছে উচ্চ শিক্ষালাভ করেন। ফিকহে তিনি পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন। এক্ষেত্রে তিনি ইমামের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন বলা যায়। তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও ফিকহে গভীর পাণ্ডিত্য সর্বত্র প্রবাদের ন্যায় প্রচলিত ছিল।

কর্মজীবনঃ তাঁর জ্ঞান,বুদ্ধিমত্তা ও কর্ম-কৌশলের কথা অল্পদিনেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। হাদীসশাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্ব এতই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, জনগণ এই বলে বলাবলি করতো, “ইমাম তাইমিয়া যে হাদীসকে হাদীস বলে জানেনা, তা আদৌ হাদীস নয়”। ইবনে তাইমিয়া সকল সমস্যার সমাধান কুরআনের আয়াতের আলোকে পেশ করতেন। তিনি পূর্ববর্তী যুগের তাফসীরকারকদের কোন ভ্রান্তি থাকলে, তা পরিস্কার ভাষায় তুলে ধরতেন। মাত্র বিশ বছর বয়সে, তিনি এই জ্ঞান বৈদগ্ধ ও দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল গম্ভীর, সরস ও মিষ্ট; ঐতিহাসিক ইবনে কাসীরের মতে “ইবনে তাইমিয়া (র)-এর উপদেশপূর্ণ অপূর্ব ও জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শুনে অনেক বড় বড় পাপী, আল্লাহ্*দ্রোহীও তওবা করে সৎপথের অনুসারী হয়েছে”। শেখ সালেহ তাজুদ্দীন বলেনঃ আমি ইবনে তাইমিয়া (র)-এর অধ্যাপনা কক্ষে রীতিমতো হাযির হতাম। তিনি বন্যার গতিতে ছুটতেন, খরস্রোতা নদীর মত প্রবাহিত হতেন। শ্রোতামন্ডলী চোখ মুদে স্তব্ধ বসে থাকতো। অধ্যাপনা শেষে তাঁকে অধিক গম্ভীর ও ভয়ঙ্কর মনে হতো অথচ তিনি ছাত্রদের সাথে স্নিগ্ধ হাসি ও খোশ মিজাযে কথা বলতেন। অধ্যাপনার সময় তাঁকে মনে হতো, তিনি এক অদৃশ্য জগতে বিচরণ করেছেন এবং পর মুহূর্তে দুনিয়ার বাস্তব জগতে ফিরে এসেছেন। জীবনের অধিকাংশ সময় কারা-প্রকোষ্ঠে অতিবাহিত করলেও তাঁর স্বল্পকালীন শিক্ষকতার যুগে ছাত্রদের সংখ্যা কয়েক হাজারে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর কয়েকজন ছাত্র যারা ছিলেন বিদ্যায়, জ্ঞানে,প্রতিভায়, কর্মদক্ষতায় ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে তৎকালীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। যেমন, আল্লামা ইবনে কাইয়্যেম,আল্লামা যাহবী, হাফিজ ইবনে কাসীর, হাফিজ ইবনে কুদামাহ, কাযী শরফুদ্দীন, শায়খ শরফুদ্দীন প্রমুখ মনীষীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আরবী ভাষায় গ্রীক দর্শনের অনুবাদ শুরু হয় হিজরী দ্বিতীয় শতকে। তখন থেকে মুসলিম সমাজের উপর গ্রীক দর্শনের বস্তুবাদী মর্মবাদের প্রভাব পড়ে। ফলে মানুষ খাঁটি ইসলামী জীবন দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সকল কিছু চিন্তা করতে শুরু করে। আব্বাসীয় রাজত্বের শুরুতে এ যুক্তিবাদী আন্দোলন অন্ধ আবেগের রূপ নেয়। এই মু’তাযিলাবাদ “খালকে কুরআনের” ন্যায় তুমুল ঝগড়ার উৎপত্তি করে। মুতাযিলাবাদ কুরআন পন্থীদেরকে গ্রীক দর্শনের দুর্জয় প্রভাবে পরাজিত করেছিল। “কালাম শাস্ত্র” মুসলিম সমাজকে সূক্ষ্ম মানতিকী আলোচনায় ব্যস্ত রেখে বাস্তব কর্মজগত থেকে একেবারে গাফিল করে দিচ্ছিল।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) মুসলিম দুনিয়াকে এ অবাঞ্ছনীয় অর্থহীন গুমরাহীর পথে ধাবিত হতে দেখে এর বিরুদ্ধে কলম ধারণ করেন। ৬৯৮ হিজরীতে তিনি একটি কিতাব লিখে “মুতাকাল্লেমীন”-এর আকীদা ও ধ্যান-ধারণার তীব্র সমালোচনা করেন এবং একে বাতিল প্রমাণ করে কুরআন ও সুন্নাহর নির্ভেজাল আদর্শকে অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেন। এ গ্রন্থ ভ্রান্ত মতাবলম্বীদের বুকে তীরের আঘাত হানে। এ কিতাবের দ্বারা তিনি চিন্তা জগতে এক নতুন বিপ্লব নিয়ে আসেন। এর কারণেই তাঁর নির্যাতনমূলক জীবনের সূচনা ঘটে।

ইমামের মতবাদ সম্পর্কে মিসরের শাসনকর্তা নাসের শাহের নিকট বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হলে ৭০৫ হিজরীতে তিনি দামেশকের গভর্নরকে স্থানীয় আলিমদের একটি মজলিস ডাকার ও ইমামের মতবাদ পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দেন। একাধিক বৈঠকে ইমামের মতই প্রাধান্য লাভ করে।

সূফীদের নাম ভাঙ্গিয়ে ভন্ডপীর-ফকীর-দরবেশের পেশাধারী একশ্রেণীর লোক যেমন আজকাল অর্থোপার্জন করে এবং তাদের কাছে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমায়, তৎকালেও মুসলিম সমাজ এ ফিত্*নায় কম ভারাক্রান্ত ছিল না। আহ্*মদিয়া ও নিসারিয়া ফকীর সম্প্রদায় দুটির একটি যুক্ত দল ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র)-এর বিরুদ্ধে দামেশকের গভর্নরের কাছে তিক্ত সমালোচনা করলে, তিনি তাঁকে ডেকে পাঠান। ইমাম অকুতভয়ে জবাব দেন, এ ফকীরদের দু’তি দল রয়েছে- (১) একটি পরহিযগারী, সাধুতা, নৈতিকতা ও দারিদ্র্যের কারণে প্রশংসার যোগ্য। তবে এদের অধিকাংশই ভন্ড ফকীর। শিরক, বিদ’আত ও কুফুরী ধারণার পংকিলতায় নিমজ্জিত। ইসলামের মৌল শিক্ষা কুরআন-হাদীসকে পরিত্যাগ করে মিথ্যা ও প্রতারণাকেই জীবনের সম্বল করে নিয়েছে। এরা দুনিয়ার মূর্খ মানুষগুলোকে ধোঁকা দিয়ে নানা প্রকার বিদ’আত, শিরকের জালে জড়িত করে। নিজেদের পকেট ভর্তির জন্য সদাসর্বদা সাধুতার ভান করে থাকে। নিজেদের চারি পাশে এমন এক বিষাক্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে নেয় যে, যারাই তাদের সংস্পর্শে যেতো, তাদের মানসিক গোলামে পরিণত হতো। নিজেদের পকেট উজাড় করে সেই বিদ’আতী ফকীরদের পদমূলে সর্বস্ব ঢেলে দিত।

ইমামকে মিসরে তলবঃ ইমামদের সত্য ভাষণে গভর্নর নিরব থাকলেও অন্যদের পক্ষ থেকে গোপনে তাঁর বিরুদ্ধে ভীষণ চক্রান্ত চলে। নাসরুল্লাহ মুঞ্জী মিসরের রাজন্যবর্গকে ইমামের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। তাঁরা দামেশকের গভর্নরের কাছে লিখে পাঠায় যেন ইমামকে মিসরে পাঠানো হয়। গভর্নর জবাবে বললেনঃ তাঁর সাথে দু’বার আমার সাক্ষাৎ ঘটেছে কিন্তু তাঁর মতবাদে কোন দোষ পাইনি। অবশ্য পরবর্তীতে তাঁর প্রতি নির্দেশ এলো, “ভালো চাওতো শাহী ফরমান অনুযায়ী কাজ করতে দ্বিধা করো না”। গভর্নর মজবূর হয়ে ইমামকে মিসর পাঠান।

৭০৫ হিজরীতে ১২ই রমযান সোমবার ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) দামেশক থেকে বের হলে শহরবাসী তাঁর পেছনে পেছনে তিন মাইল পর্যন্ত গিয়েছিল। বিদায় সম্বর্ধনা আগত অশ্রুসিক্ত নয়নে ইমামের প্রতি তাকিয়ে থাকে।

মিসরে পৌঁছে তিনি কায়রো শহরে শুক্রবার দিন একটি কেল্লার অভ্যন্তরে প্রধান বিচারপতি ও রাজদরবারীদের এক সমাবেশে তাঁর মতামত নির্ভীকচিত্তে বর্ণনা করেন। কিন্তু তারপরও তিনি রেহাই পাননি। অন্য মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে আটক রাখা হয়। ৭০৭ হিজরীতে তিনি মুক্তি পান। অতঃপর তিনি জামেয়াতুল হিকাম-এর মসজিদে জুমার নামায পড়ান এবং প্রায় ৪ ঘন্টা- ‘ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন’- (অর্থাৎ “একমাত্র তোমারই দাসত্ব করি আর একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি”।) আয়াতের তাফসীর বর্ণনা করেন। এভাবে মিসরে কিছু দিন থেকে তিনি তাঁর মতাদর্শ (ইসলাম) প্রচার করতে থাকেন এবং যাবতীয় ভ্রান্ত মতবাদের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করতে লাগলেন। মুহীউদ্দীন ইবনে আরাবীর অদ্বৈতবাদের ভ্রান্তি স্বপ্রমাণ তুলে ধরতে লাগলেন। কিন্তু বিরুদ্ধাবাদীদের জন্যে এটা ছিল অসহ্য। সূফী তাজুদ্দীন সাধারণ মানুষকে সভা-সমিতির মাধ্যমে ক্ষেপিয়ে তুলে তাঁর বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ আনেন এবং সরকারের নিকট তাঁর শাস্তি বিধানের দাবী তোলেন। সরকার তখন তাঁকে প্রথমে নজরবন্দী এবং পরে কারাগারেই আবদ্ধ করে রাখেন। কারা-জীবনেও তিনি বসে থাকেননি। নানান প্রকার অবৈধ খেল-তামাশা ও লক্ষ্যহীন জীবনবোধে লিপ্ত কয়েদীদের মধ্যে তিনি ইসলামের শিক্ষা দান কাজ শুরু করেন। তাদের নামাযী ও চরিত্রবান করে তোলেন। এতে জেলখানার পথহারা মানুষগুলো মনুষ্যত্বের সন্ধান পায়।

কারা প্রকোষ্ঠে ইমাম ইবনে তাইমিয়াঃ শত্রুরা ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র)-এর এ কাজের টের পেয়ে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে আলেকজান্দ্রিয়ার জেলে স্থানান্তর করে। এখানে একটি দুর্গে ১৮ মাস থাকাকালে একাধিকবার তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যাতে মুসলিম জাহানের লোকেরা কেঁদে কেঁদে অস্থির হতো। ৭০৯ হিজরীতে বাদশাহর হুকুমে তিনি মুক্তি পেয়ে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কায়রো রওনা দিলে স্থানীয় জনগন এক বিরাট মিছিল করে তাঁকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে দেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করেন। কায়রোর মাশহাদ-এ তিনি অবস্থান কালে কুরআন-হাদীস ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন।

এ সময় (৭১১ হিঃ) জামে মসজিদে প্রতিপক্ষীয় একদল লোক এসে ইমামের উপর হামলা করে এবং তাঁকে এক নির্জন ঘরে আটক করে নির্মমভাবে প্রহার করে। শহরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর নিকট লোকজন দলে দলে দৌড়ে আসে এবং অভিপ্রায় ব্যক্ত করে যে, হুযূর অনুমতি দিলে গোটা মিশর সহর জ্বালিয়ে দেব। কিন্তু তিনি কোনরূপ প্রতিশোধ না নিয়ে বরং বললেনঃ আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। এরপরও তিনি অনেক দিন মিসরে থেকে পরে বায়তুল মুকাদ্দাস সফর করে স্বদেশ ভূমি দামেশকে ফিরে আসেন। জনগণ আনন্দে মিছিল করে তাঁর আগমন সম্বর্ধনা জানায়।

স্বদেশ ভূমি দামেশকে প্রত্যাবর্তনঃ দামেশকে আসার পর তিনি দীনী শিক্ষা বিস্তার, গ্রন্থ প্রণয়ন ও মানব সেবামূলক কাজে হাত দেন। তাঁর নির্ভীক কর্মতৎপরতা ও স্পষ্ট ভাষণে কায়েমী স্বার্থবাদী কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের গা-জ্বালার সৃষ্টি হয়। তারা আবার সরকারের কাছে অভিযোগ আনলে এ মর্মে সরকারী ফরমান জারী হয় যে, ইবনে তাইমিয়া আর কোন ফতোয়া জারী করতে পারবেন না।

কিন্তু ইমাম বললেন, “ সত্য গোপন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়”। তাঁর পক্ষ থেকে সরকারী ফরমানের এহেন বিরুদ্ধাচরণে ৭২০ হিজরীতে ‘দারুস্* সাদাত’ –এ অনুষ্ঠিত এক অধিবেশনে ইমামকে পুনরায় বন্দী করার সরকারী ফরমান জারী হয়। তখন তিনি পাঁচ মাস আঠার দিন পর্যন্ত দুর্গে বন্দী ছিলেন। এক বছর পর তাঁকে মুক্তি দেয়া হলে তিনি সেই পুরাতন কাজ শুরু করেন। ইমাম জ্ঞান প্রসারের কাজে নিমগ্ন হন। তিনি দেখলেন, বহু বুযুর্গের কবর পূজা হচ্ছে। মকসূদ হাসিলের জন্য হাজার হাজার মানুষ কবরে শায়িত বুযুর্গদের কাছে প্রার্থনা জানাবার জন্যে দলে দলে ছুটে আসছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া ৭২৬ সনে ফতোয়া জারী করলেন যে, “ কবর যিয়ারত করার নিয়তে দূর দেশ সফর করা জায়েয নয়। এ ফতোয়া জারীর পর তাঁর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিরুদ্ধবাদীরা বড় বড় সভা করে তাঁর বিরুদ্ধে আগুন ঝরা বক্তৃতা দেয়। মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলে। কেউ বলে জিহ্বা কেটে দিতে হবে, কেউ বলে চাবুক মারতে হবে। কারও মত হলো যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ করে রাখতে হবে। একদল মিসরের বাদশাহ্*র কাছে দাবী তুলল, তাঁকে যেন কতল করা হয়। পরে সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেফতারকারি পুলিশ তাঁর নিকট গেলে তিনি সহাস্যে তাদের সাথে কারাগারে চলে যান। বাগদাদে এ খবর পৌঁছুলে সেখানকার তদানীন্তন শ্রেষ্ঠ আলিমগণ ইমামের ফতোয়াকে ইসলামের মূল ভাবধারার সাথে সামঞ্জস্যশীল বলে তাঁর প্রতি সমর্থন জানায়। তাঁরা বাদশাহর কাছে দু’খানা চিঠি পাঠান। ঐ সকল চিঠির সারমর্ম হলোঃ ইমাম ইবনে তাইমিয়া যুগশ্রেষ্ঠ শতাব্দীর মুজতাহিদ ইসলামী মিল্লাতের নেতা, পৃথিবীর সাত একলীমের ধনভান্ডারও তাঁর মূল্য দিতে অক্ষম। আশ্চর্যের বিষয় যে, জাতির এ কর্ণধার যেখানে রাজপ্রাসাদের থাকার কথা, তাঁকে রাখা হয়েছে কারাগারে। তাঁর প্রতি ভিত্তিহীন দোষারোপ করা হয়েছে। তাঁকে আশু মুক্তি দেয়া উচিত।

ইরাকীরা ইমামের কারা-নির্যাতনের কথা শুনলে সারা দেশে অন্তর্বেদনার প্রচন্ড আগুন জ্বলে উঠে। আলিমদের সম্মিলিত এক ঘোষণায় বলা হয়, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য সন্দেহাতীতভাবে সত্য। সুতরাং শায়খুল ইসলামকে দীনের খিদমতের জন্য মুক্তি দেয়া হোক। তাতে বিশ্ব-মুসলিমের প্রতি বিরাট অনুগ্রহ করা হবে। বাগদাদের শ্রেষ্ঠ ওলামা-এ-কিরামের এ চিঠি মিসর বাদশাহর দরবার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি কিংবা পৌঁছুলেও তা এমন সময় যে, তখন ইসলামী দুনিয়ার শতাব্দীর এ উজ্জ্বল সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে। ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ মর্দে মুজাহিদ শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া চিরদিনের তরে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) জীবনের শেষ দিনগুলো কারাগারে ইবাদত বন্দেগী, কুরআন তিলাওয়াত ও এর গবেষণাইতেই কাটাতেন। শেষবারে ইমাম দীর্ঘ তিন বছর তিন মাস কালেরও বেশি দিন কারারুদ্ধ ছিলেন। কারাগারের এ নিষ্ঠুর বন্দী জীবনও কেটেছে তাঁর অসংখ্য মৌলিক ও মূল্যবান গ্রন্থ রচনায়।

ইসলামের শিক্ষা আদর্শ থেকে বিচ্যুতির ফলে সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে মুসলমানদের উপর আল্লাহর গযব রূপে তাতারীদের যেই হামলা আসে, তখনও মুসলিম বিশ্বে অসংখ্য আলিম ছিলেন, পীর-মাশায়েখ ছিলেন। কিন্তু আরাম-আয়েশ বাদ দিয়ে এ মহাবিপিওদের মুকাবিলা করা এবং মুসলিম জনতাকে সংগঠিত করার মতো লোক খুব কমই ছিল। উদ্ভাবনী জ্ঞান দিয়ে সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন একমাত্র ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র)। ইসলাম মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবের আহ্বান নিয়ে এসেছে- বাতিলের সাথে মিতালি করে চলার জন্যে নয়, ইমাম ইবনে তাইমিয়া অসহ্য কষ্ট-নির্যাতনের মধ্যদিয়ে তারই প্রমাণ রেখে গেছেন। আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠাকল্পে বাতিলের বিরুদ্ধে লেখা, বক্তৃতা ও প্রয়োজনে অস্ত্রধারণ করেছেন এবং কষ্ট ত্যাগের মধ্যদিয়েও কি করে ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার সংগ্রামী জীবন উন্মুক্ত গ্রন্থতুল্য এরই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ

1 thought on “ইমাম ইবনে তাইমিয়া: Imam Ibn Taymiyyah Books”

Comments are closed.

error: Content is protected !!
Scroll to Top