📚 গ্রন্থ পরিচিতি
মুখতাসারুত তহাবী (তাহাবী শরীফ) — ইসলামি ফিকহ ও হাদীস বিজ্ঞানের একটি বিখ্যাত গ্রন্থ। এটি রচনা করেছেন মহান আলেম ইমাম আবু জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আত-তাহাবী (রহ.)। গ্রন্থটি মূলত হানাফি মাযহাবের ব্যাখ্যামূলক হাদীস সংকলন, যেখানে হাদীস ও ফিকাহর সূক্ষ্ম সম্পর্ক সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই কিতাব ইসলামী আইন, আকীদাহ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অমূল্য অবদান রাখে। এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে পিডিএফ আকারেও পাওয়া যায়।
📜 ইতিহাস ও রচনার প্রেক্ষাপট
ইমাম তহাবী (রহ.) ছিলেন মিশরের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ফকীহ। তিনি এমন এক যুগে বসবাস করতেন, যখন ইসলামী ফিকহে মতপার্থক্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময়ে অনেকেই ভুলভাবে মনে করতেন যে ইমাম আবু হানীফার মাযহাব হাদীসবিরোধী। এই বিভ্রান্তি দূর করতেই তিনি “শরহু মাআনিল আসার” নামের এই গ্রন্থ রচনা করেন, যা পরবর্তীতে সংক্ষেপিত আকারে “মুখতাসারুত তহাবী” নামে পরিচিত হয়। এই বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন যে হানাফি ফিকহ প্রকৃতপক্ষে হাদীসের মর্ম ও উদ্দেশ্যের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
📖 কিতাবের নাম ও অর্থ
মূল গ্রন্থটির নাম “শরহু মাআনিল আসার” — যার অর্থ “হাদীস ও আসারের অর্থের ব্যাখ্যা”। এখানে ‘আসার’ বলতে রাসূলুল্লাহ ﷺ, সাহাবা ও তাবেয়ীদের বাণী বা আমলকে বোঝানো হয়েছে। এটি এমন একটি গ্রন্থ, যেখানে হাদীসের ভাষা, প্রেক্ষাপট ও ফিকহি তাৎপর্য একত্রে আলোচিত হয়েছে। ইসলামী শিক্ষার ছাত্রদের জন্য এটি শুধু একটি হাদীস গ্রন্থ নয়, বরং বিশ্লেষণধর্মী যুক্তির এক অনন্য উদাহরণ।
👤 লেখক পরিচিতি
ইমাম আবু জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সালামা আত-তাহাবী আল-মিশরী (২৩৯-৩২১ হি.) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক, মুফাসসির ও মুহাদ্দিস। তিনি মিশরের আজদি গোত্রভুক্ত এবং ইমাম শাফেয়ীর মাযহাবে শিক্ষালাভ করলেও পরবর্তীতে ইমাম আবু হানীফার মাযহাব গ্রহণ করেন। তার গভীর গবেষণার মাধ্যমে তিনি হাদীস, ফিকহ ও আকীদাহর মধ্যে এক অনন্য সমন্বয় সৃষ্টি করেন। তাঁর লেখনী যুক্তিপূর্ণ, সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত হওয়ায় আজও তা ইসলামী জগতে অমর।
📘 রচনার উদ্দেশ্য ও প্রেরণা
ইমাম তহাবীর মূল উদ্দেশ্য ছিল — হানাফি ফিকহ যে হাদীসসম্মত এবং ইসলামী শরীয়তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা প্রমাণ করা। তিনি আলেমদের পরামর্শে এমন একটি গ্রন্থ রচনা করেন যেখানে প্রত্যেক মাসআলার পেছনে যুক্তি, হাদীস, কুরআনের আয়াত এবং সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য একত্রে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি নিজেই বলেছেন —
“আমি এই গ্রন্থে এমন হাদীসসমূহ সংকলন করেছি যা হুকুম-আহকামের ব্যাখ্যা দেয় এবং মতভেদ দূর করে। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম হাদীসের প্রকৃত অর্থ ও প্রয়োগ সহজে অনুধাবন করতে পারে।”
📜 গ্রন্থের ধরন ও বিন্যাস
মুখতাসারুত তহাবীর গঠনপদ্ধতি ছিল অত্যন্ত অনন্য। প্রতিটি অধ্যায়ে তিনি প্রথমে সংশ্লিষ্ট হাদীস উল্লেখ করেছেন, এরপর সেই হাদীস থেকে ফিকহি হুকুম নির্ণয় করেছেন। তারপর বিভিন্ন ইমামদের মতভেদ তুলে ধরে হানাফি মতের দলীল বিশ্লেষণ করেছেন। প্রয়োজনে বিপরীত মতের হাদীসও উদ্ধৃত করে তার দূর্বলতা বা নাসখ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। শেষাংশে তিনি হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয় (তালফীক) ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।
এভাবে একদিকে হাদীস, অপরদিকে ফিকহ — দুই জ্ঞানধারার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছেন তিনি।
🌿 হাদীস ও ফিকহের সমন্বয়
এই গ্রন্থের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো — হাদীসের সূত্র ও ফিকহি প্রয়োগের যৌথ উপস্থাপন। ইমাম তহাবী দেখিয়েছেন কিভাবে ইসলামী আইনশাস্ত্র হাদীসের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আসমায়ে রিজাল (হাদীস বর্ণনাকারীদের জীবনী), ইলমুল হাদীস এবং ফিকহুল হাদীস — এই তিনটি শাস্ত্রের অনবদ্য মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। ফলে মুখতাসারুত তহাবী শুধু ফিকহি আলোচনা নয়, বরং ইসলামী যুক্তিবিদ্যারও একটি প্রামাণ্য দলিল।
💡 কেন পড়বেন এই গ্রন্থ?
- হাদীস ও ফিকহের মিলনধর্মী ব্যাখ্যা জানতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য।
- হানাফি মাযহাবের হাদীস-সম্মত যুক্তি বোঝার জন্য দারুণ সহায়ক।
- দাওয়াতি বক্তা ও শিক্ষকরা মাসআলা ব্যাখ্যার রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
- ইসলামী আইন বোঝার যৌক্তিক ধারা ও বিশ্লেষণমূলক চিন্তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
📂 পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
নিচে প্রতিটি খণ্ডের PDF লিংক দেওয়া হলো। নামের উপর ক্লিক করে সরাসরি ডাউনলোড করুন —
📚 পাঠের পরামর্শ
এই গ্রন্থটি পাঠের জন্য ধৈর্য ও চিন্তাশীল মন প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা যদি প্রতিটি অধ্যায়ের মূল হাদীস ও ব্যাখ্যা মনোযোগ দিয়ে পড়েন, তবে ইসলামী শরীয়তের মূল দর্শন গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। শিক্ষক ও গবেষকরা এটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি খণ্ড শেষে নোট গ্রহণ করলে হাদীসের যুক্তি ও প্রয়োগ আরও সহজে বুঝে নেওয়া সম্ভব।