
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। কুরআন ব্যাখ্যার মুলনীতি
২। বুস্তানুল মুহাদ্দিসিন
৩। মতবিরোধ পূর্ণ বিষয়ে সঠিক পন্থা অবলম্বনের উপায়
৪। মুসলিম বোন ও পর্দার হুকুম
৫। হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১ম খন্ড
৬। হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খন্ড
✍️ প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ | হাদিসবিশারদ | দার্শনিক | সংস্কারক ও পুনর্জাগরণের অগ্রদূত
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) (১১১৪ হিজরি/১৭০৩ খ্রি. – ২৯ সফর ১১৭৬ হিজরি) ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, চিন্তাবিদ ও সংস্কারক। তিনি হাদিসচর্চার নতুন ধারা প্রবর্তন করেন, শিক্ষা সংস্কারে দিকনির্দেশনা দেন এবং মুসলিম পুনর্জাগরণের বৌদ্ধিক ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর রচনা, দাওয়াহ ও চিন্তাধারা ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও পুরো ইসলামী জগতে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে।
“ইসলামের পূর্ণতা তখনই প্রকাশ পায়, যখন তা মানুষের চিন্তা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলিত হয়।” – শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি
প্রারম্ভিক জীবন
শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ১১১৪ হিজরি (১৭০৩ খ্রি.) দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহ আবদুর রহিম (রহ.) ছিলেন যুগের বিশিষ্ট আলেম ও চিন্তাবিদ। সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীর তাঁকে উলামা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং বিখ্যাত ফাতাওয়ায়ে আলমগিরির সম্পাদনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। পিতার তত্ত্বাবধানে ওয়ালিউল্লাহ কোরআন, হাদিস, ফিকহ, আরবি-ফারসি সাহিত্য, দর্শন ও বিভিন্ন শাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন।
শিক্ষাজীবন
১১৩১ হিজরিতে পিতার ইন্তেকালের পর তিনি মাদরাসায়ে রহিমিয়ায় শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় ১২ বছর তিনি সেখানে পাঠদান করেন এবং বিপুল সংখ্যক ছাত্রকে কোরআন-হাদিসসহ বিভিন্ন ইসলামী বিদ্যায় শিক্ষিত করেন।
মক্কায় গমন ও হাদিসচর্চা
১১৪৩/১১৪৪ হিজরিতে ২৯ বছর বয়সে তিনি হজব্রতের উদ্দেশ্যে মক্কায় যান এবং সেখানে ১১৪৫/১১৪৬ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ সময় মক্কা-মদিনার শীর্ষ মুহাদ্দিসদের নিকট হাদিস অধ্যয়ন করেন। দেশ ফিরে তিনি হাদিসশিক্ষার ব্যাপক প্রচার শুরু করেন এবং উপমহাদেশে হাদিসচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। এজন্য তিনি “মুহাদ্দিসে দেহলভি” উপাধিতে ভূষিত হন।
“হাদিসই ইসলামী জীবনের মেরুদণ্ড; এটিকে অবহেলা করা মানে ইসলামকে অর্ধেকভাবে গ্রহণ করা।” – শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি
দর্শনচর্চা ও চিন্তাধারা
শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ইসলামী দর্শনচর্চায় নতুন ধারা নির্মাণ করেন। তিনি ইমাম গাজালি (রহ.)-এর পথ অনুসরণ করে গ্রিক দর্শন ও ইসলামী আকিদার মধ্যে সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহে ইসলামী বিশ্বাস, বিধান ও জীবনব্যবস্থার সৌন্দর্য অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এই গ্রন্থ ইসলামী জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে এক বিপ্লবী পরিবর্তন আনে।
শিক্ষা সংস্কার
তাঁর সময়ে মাদরাসাগুলোতে কোরআন-হাদিসের তুলনায় দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা বেশি গুরুত্ব পেত। শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) এই ধারা ভেঙে কোরআন-হাদিসকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম প্রবর্তন করেন। তিনি হাদিসের ছয়টি প্রামাণ্য গ্রন্থের শিক্ষাপ্রচার শুরু করেন এবং মাদরাসায়ে রহিমিয়াকে দিল্লি থেকে শাহজাহানাবাদে স্থানান্তর করে স্বাধীন ও স্বনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেন।
বৈপ্লবিক চিন্তাধারা
শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) মুসলিম পুনর্জাগরণের অন্যতম পুরোধা। তিনি সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলন না করলেও তাঁর চিন্তাধারা জাতীয় চেতনা, ন্যায়বিচার ও ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার বৌদ্ধিক ভূমি তৈরি করে দেয়। তাঁর ছাত্র-শিষ্য এবং সন্তানরা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলন ও স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।
সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব
তাঁর চিন্তাধারা দুইভাবে গভীর প্রভাব ফেলে—
- শিক্ষাক্ষেত্রে: দারুল উলুম দেওবন্দসহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইসলামী শিক্ষার পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে: তাঁর উত্তরসূরি শাহ আবদুল আজিজ (রহ.) ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ফতোয়া প্রদান করেন, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের বৌদ্ধিক ভিত তৈরি করে।
রচনাবলী
শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) প্রায় ৪৩টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ
- ফাতহুর রহমান
- ফাউজুল কাবির
- ইজালাতুল খিফা
- আরবাইন
“হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ইসলামের সৌন্দর্য ও যৌক্তিকতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপন করেছে।” – সমালোচক মতামত
মৃত্যু
২৯ সফর ১১৭৬ হিজরিতে শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ইন্তেকাল করেন। তাঁকে শাহজাহানাবাদে দাফন করা হয়। তাঁর সন্তানদের মধ্যে শাহ আবদুল আজিজ (রহ.) পিতার স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর চিন্তাধারা ও আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান।
উপসংহার
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) ইসলামী চিন্তা, হাদিসচর্চা, শিক্ষা সংস্কার, দর্শন ও পুনর্জাগরণের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর প্রবর্তিত চিন্তাধারা আজও মুসলিম সমাজকে পথনির্দেশ করে এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
👉 শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
👉 ইসলামি উপন্যাস
সংগ্রহ: বইগুলি আপনার ভালো লাগলে দয়াকরে নিকটবর্তী লাইব্রেরী থেকে ক্রয় করুন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚





