শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী: Shah Waliullah Dehlawi Books

শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী

শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী (রহ.): জীবন, কর্ম ও অবদান

✍️ প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ | হাদিসবিশারদ | দার্শনিক | সংস্কারক ও পুনর্জাগরণের অগ্রদূত

প্রস্তাবনা

শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) (১১১৪ হিজরি/১৭০৩ খ্রিস্টাব্দ – ২৯ সফর ১১৭৬ হিজরি) ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম, চিন্তাবিদ ও সংস্কারক।
তিনি ছিলেন হাদিসচর্চার নতুন ধারা প্রবর্তক, শিক্ষা সংস্কারের অগ্রদূত এবং মুসলিম পুনর্জাগরণের দিকনির্দেশক।
তাঁর রচনা, দাওয়াহ ও চিন্তাধারা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ইসলামী জ্ঞানচর্চায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।

“ইসলামের পূর্ণতা তখনই প্রকাশ পায়, যখন তা মানুষের চিন্তা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলিত হয়।” – শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি

প্রারম্ভিক জীবন

শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ১১১৪ হিজরি (১৭০৩ খ্রি.) দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা শাহ আবদুর রহিম (রহ.) ছিলেন সমকালের অন্যতম বিশিষ্ট আলেম ও চিন্তাবিদ।
সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীর সর্বোচ্চ উলামা পরিষদে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং বিখ্যাত ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি সম্পাদনার দায়িত্ব দেন।
পিতার কাছেই ওয়ালিউল্লাহ তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। কোরআন ও হাদিসের পাশাপাশি আরবি ও ফারসি সাহিত্য, ব্যাকরণ, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, আইনশাস্ত্র ও অধিবিদ্যা অধ্যয়ন করেন।

শিক্ষাজীবন

১১৩১ হিজরি (১৭১৮ খ্রি.) তাঁর পিতা ইন্তেকাল করলে তিনি মাদরাসায়ে রহিমিয়া-এর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
প্রায় ১২ বছর তিনি সেখানে পাঠদান করেন এবং হাজারো ছাত্রকে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী জ্ঞানে শিক্ষিত করেন।

মক্কায় গমন ও হাদিসচর্চা

১১৪৩/১১৪৪ হিজরিতে, ২৯ বছর বয়সে তিনি হজব্রতের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করেন এবং ১১৪৫/১১৪৬ সাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।
এই সময়ে তিনি মক্কা-মদিনার বিশিষ্ট মুহাদ্দিসদের কাছে হাদিস অধ্যয়ন করেন।
দেশে ফিরে তিনি ইলমে হাদিসের ব্যাপক প্রচার শুরু করেন এবং উপমহাদেশে হাদিসচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।
তাঁর এই অসামান্য অবদানের জন্যই তিনি “মুহাদ্দিসে দেহলভি” উপাধিতে ভূষিত হন।

“হাদিসই ইসলামী জীবনের মেরুদণ্ড; এটিকে অবহেলা করা মানে ইসলামকে অর্ধেকভাবে গ্রহণ করা।” – শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি

দর্শনচর্চা ও চিন্তাধারা

শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ইসলামী দর্শনচর্চায় নতুন ধারা প্রবর্তন করেন।
ইমাম গাজালি (রহ.)-এর পথ অনুসরণ করে তিনি গ্রিক দর্শনের সঙ্গে ইসলামী আকিদার সংঘাত নিরসন করেন।
তবে শুধু প্রতিউত্তরে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ রচনা করে ইসলামী বিশ্বাস, বিধান ও জীবনব্যবস্থার সৌন্দর্য যুক্তিগ্রাহ্যভাবে তুলে ধরেন।
এই গ্রন্থ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক মোড় পরিবর্তন করে।

শিক্ষা সংস্কার

তাঁর সময়ে মাদরাসাগুলোর পাঠক্রমে কোরআন-হাদিসের চেয়ে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) এই ধারা ভেঙে কোরআন-হাদিসভিত্তিক পাঠক্রম চালু করেন।
তিনি উপমহাদেশে হাদিসের ছয়টি প্রামাণ্য গ্রন্থ পাঠদানের প্রচলন করেন এবং নিজের মাদরাসা দিল্লি থেকে শাহজাহানাবাদে স্থানান্তর করে স্বাধীন ও স্বনির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন।

বৈপ্লবিক চিন্তাধারা

শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরণের মহান পুরোধা।
তিনি সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলন না করলেও একটি বৈপ্লবিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছিলেন।
তাঁর মতে ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান।
তাঁর শিক্ষিত সন্তান ও শিষ্যরা পরবর্তী সময়ে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।

সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব

তাঁর চিন্তাধারা দুইভাবে প্রভাব ফেলেছিল—

  1. শিক্ষাক্ষেত্রে: দারুল উলুম দেওবন্দসহ বহু স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইসলামী শিক্ষার পুনর্জাগরণ ঘটায়।
  2. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে: তাঁর উত্তরসূরি শাহ আবদুল আজিজ (রহ.) ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ফতোয়া প্রদান করেন, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা করে।

রচনাবলী

শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) প্রায় ৪৩টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ
  • ফাতহুর রহমান
  • ফাউজুল কাবির
  • ইজালাতুল খিফা
  • আরবাইন

“হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ এমন এক গ্রন্থ, যা ইসলামের সৌন্দর্য ও যৌক্তিকতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপন করেছে।” – সমালোচক মতামত

মৃত্যু

২৯ সফর ১১৭৬ হিজরিতে শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ইন্তেকাল করেন।
তাঁকে শাহজাহানাবাদে দাফন করা হয়।
তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে শাহ আবদুল আজিজ (রহ.) পিতার স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর চিন্তাধারা ও সংস্কার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান।

উপসংহার

শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের এক আলোকবর্তিকা।
তিনি হাদিসচর্চার প্রসার, শিক্ষা সংস্কার, দার্শনিক চিন্তার নবায়ন এবং মুসলিম পুনর্জাগরণের মাধ্যমে উপমহাদেশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন।
তাঁর রচনা ও চিন্তাধারা আজও মুসলিম উম্মাহকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন

👉 Darul Uloom Deoband
👉 ইসলামি উপন্যাস


📚 শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী এর বইসমূহ

শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। কুরআন ব্যাখ্যার মুলনীতি
২। বুস্তানুল মুহাদ্দিসিন
৩। মতবিরোধ পূর্ণ বিষয়ে সঠিক পন্থা অবলম্বনের উপায়
৪। মুসলিম বোন ও পর্দার হুকুম
৫। হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১ম খন্ড
৬। হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খন্ড

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top