সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী: Syed Abul Hasan Ali Nadwi Books

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (আলী মিয়াঁ): জীবন ও কর্ম

✍️ ইসলামি চিন্তাবিদ | লেখক | ঐতিহাসিক | দাঈ

প্রস্তাবনা

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. (৫ ডিসেম্বর ১৯১৩ – ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক, ঐতিহাসিক ও দাঈ।
তাঁর রচিত ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ মুসলিম বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সাধারণ মানুষ তাঁকে স্নেহভরে ডাকতেন “আলী মিয়াঁ” নামে।

“তিনি শুধু একজন লেখক নন, বরং একজন চিন্তাশীল দাঈ, যিনি কলম, কণ্ঠ ও কর্ম দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে নতুন চেতনা ও আত্মপরিচয় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।”

প্রারম্ভিক জীবন

১৯১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আলী নদভী রহ.।
তাঁর পিতা সাইয়েদ আবদুল হাই ও মাতা খায়রুন্নেসা দুজনেই ছিলেন হযরত হাসান (রা.)-এর বংশধর।
শৈশবে তিনি পিতৃহারা হন (১৯২৩ সালে)। এরপর তাঁর বড় ভাই মাওলানা আব্দুল আলী আল হাসানী এবং মা শিক্ষার দায়িত্ব নেন।
পারিবারিক পরিবেশে তিনি ধর্মপ্রাণ, পরিশ্রমী ও আল্লাহভীরু হিসেবে বেড়ে ওঠেন।

শিক্ষাজীবন

প্রথমে মায়ের কাছে কোরআন, উর্দু ও আরবি শিক্ষা লাভ করেন।
১৯২৪ সালে শায়খ খলীল বিন মুহাম্মদ আল আনসারীর কাছে আরবি শেখা শুরু করেন।
১৯২৬ সালে নদওয়াতুল উলামা-তে ভর্তি হন।
১৯২৭ সালে লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৩২ সালে লাহোরে আল্লামা আহমাদ আলী লাহোরীর কাছে কোরআনের পূর্ণাঙ্গ তাফসীর অধ্যয়ন করেন।
এছাড়া দেওবন্দে হুসাইন আহমাদ মাদানীর কাছ থেকে সহীহ বুখারী ও সুনানে তিরমিজী পড়েন।

“আলী মিয়াঁর শিক্ষাজীবন শুধু পাঠ্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং ভ্রমণ, গবেষণা ও আলিমদের সাহচর্য তাঁর জ্ঞানের দিগন্তকে অসীম প্রসারিত করেছিল।”

কর্মজীবন

১৯৩৪ সালে নদওয়াতুল উলামায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তাফসীর, হাদীস, যুক্তিবিদ্যা, আরবি সাহিত্য ও ইতিহাস পড়াতেন।

প্রধান কর্মকাণ্ড

  • ১৯৪৩: দীনী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে আন্জুমানে তা’লীমাতে দীন প্রতিষ্ঠা।
  • ১৯৫১: “পায়ামে ইনসানিয়্যাত” আন্দোলন শুরু।
  • ১৯৫৪: নদওয়াতুল উলামার শিক্ষা বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত।
  • ১৯৬৫: নদওয়াতুল উলামার মহাসচিব নির্বাচিত।
  • ১৯৫৯: ইসলামিক গবেষণা ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা।

তিনি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করে ইসলামী দাওয়াহর কাজ চালিয়ে যান।
১৯৬২ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত রাবেতাতুল ইসলাম সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন।
১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি নির্বাচিত হন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • ১৯৮০: বাদশাহ ফয়সল আন্তর্জাতিক পুরস্কার
  • ১৯৮১: কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট
  • ১৯৯৯: অক্সফোর্ড ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে সুলতান ব্রুনাই অ্যাওয়ার্ড
  • ১৯৯৯: দুবাইয়ে “বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব”

“প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করেননি; বরং অধিকাংশ অর্থ অসহায় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে বিলিয়ে দিয়েছেন।”

রচনাবলী

মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাঁর লেখা প্রবন্ধ মিসরের আল-মানার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তাঁর রচিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫০টিরও বেশি।

প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলি

  • সীরাতে আহমাদ শহীদ
  • মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?
  • কাদিয়ানী ও কাদিয়ানিয়্যাত
  • আরকানে আরবাআ’হ
  • মুরতাজা
  • ক্বাসাসুন নাবিয়্যীন (শিশুতোষ সিরিজ)
  • আল ক্বিরাআতুর রাশিদাহ

বাংলায় অনূদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো, সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস, তালিবে ইলমের জীবনপথের পাথেয়, ঈমান যখন জাগলো, সীরাতে রাসূলে আকরাম (সা.), ইসলাম ও অন্যান্য সংস্কৃতি ইত্যাদি।

চিন্তাধারা ও দাওয়াহ মিশন

আলী নদভীর চিন্তাধারায় প্রধানত তিনটি বিষয় ফুটে ওঠে—

  • দাওয়াহর সর্বজনীনতা: ইসলামকে কেবল মসজিদ ও মাদ্রাসায় সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পৌঁছে দেওয়া।
  • আত্মশুদ্ধি: মাওলানা আবদুল কাদির রায়পুরীর তাযকিয়াহ ভিত্তিক শিক্ষা।
  • মানবকল্যাণ: মুসলিম সমাজের পাশাপাশি অমুসলিমদের প্রতিও ভালোবাসা, মানবিকতা ও দাওয়াহর দৃষ্টিভঙ্গি।

“পশ্চিমা সভ্যতা বাহ্যত উন্নত হলেও আধ্যাত্মিক দিক থেকে দেউলিয়া। ইসলামই পারে মানবতার প্রকৃত মুক্তি এনে দিতে।” — আলী নদভী

প্রভাব

তাঁর প্রভাব ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে আরব বিশ্ব, ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত হয়।
বাংলাদেশেও তাঁর ভ্রমণ ও গ্রন্থ মুসলিম সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে।
“মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?” বইটি মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের চিন্তাধারায় বিপ্লব ঘটায়।
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাঁকে “আধুনিক যুগের মুজাদ্দিদ” হিসেবে অভিহিত করেছে।

মৃত্যু

১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর (২২ রমজান ১৪২০ হিজরি), শুক্রবার জুমার পূর্বে সূরা ইয়াসীনের ১১ নং আয়াত তিলাওয়াত করতে করতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
তাঁকে নিজ জন্মস্থান রায়বেরেলিতেই দাফন করা হয়।

“তাঁর মৃত্যু মুসলিম উম্মাহকে এক অমূল্য রত্ন থেকে বঞ্চিত করেছে। তবে তাঁর রেখে যাওয়া দাওয়াহ, চিন্তা ও রচনাবলী আজও উম্মাহকে আলোকিত করছে।”

উপসংহার

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. ছিলেন আধুনিক যুগের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও দাঈ।
তাঁর জীবন শিক্ষা, সাহিত্য, দাওয়াহ ও মানবকল্যাণের জন্য নিবেদিত ছিল।
তাঁর কলম ও চিন্তাধারা মুসলিম উম্মাহর জন্য যুগের পর যুগ দিকনির্দেশনা হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন

👉 Biography – Syed Abul Hasan Ali Nadwi
👉 সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী


📚 সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী এর বইসমূহ

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ☟ ক্লিক করুন

১। আমার আম্মা
২। আরব জাতি ইসলামের পূর্বে ও পরে
৩। আলোর রাজপথ
৪। আল্লাহর পথের ঠিকানা
৫। ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ
৬। ইসলাম ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি
৭। ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রপথিক
৮। ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত
৯। ঈমান যখন জাগলো
১০। ঈমানদীপ্ত কিশোর কাহিনী
১১। ঈমানের দাবী
১২। ওলী আল্লাহদের মা
১৩। কাদিয়ানী সম্প্রদায় তত্ত্ব ও ইতিহাস
১৪। কাদিয়ানীদের স্বরূপ
১৫। কাবুল থেকে আম্মান
১৬। কারওয়ানে মদিনা
১৭। কারওয়ানে যিন্দেগী
১৮। জীবন পথের পাথেয়
১৯। তাজা ঈমানের ডাক
২০। তারুণ্যের প্রতি হৃদয়ের তপ্ত আহবান
২১। ধর্ম ও কৃষ্টি
২২। নতুন তুফান ও তার প্রতিরোধ
২৩। নতুন দাওয়াত নতুন পয়গাম
২৪। নতুন পৃথিবীর জন্মদিবস
২৫। নবীয়ে রহমত
২৬। নবুয়ত ও আম্বিয়া-ই কিরাম
২৭। নয়া খুন
২৮। নির্বাচিত আরবী সাহিত্য সংকলন
২৯। পশ্চিমা বিশ্বের নামে খোলা চিঠি
৩০। প্রাচ্যের উপহার
৩১। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের করণীয়
৩২। বিধ্বস্ত মানবতা
৩৩। বিশ্ব সভ্যতায় রসূলে আকরাম
৩৪। ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান
৩৫। মধ্যপ্রাচ্যের ডায়েরী
৩৬। মহানবী সাঃ ও সভ্য পৃথিবীর ঋণ স্বীকার
৩৭। মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কি হারালো
৩৮। মুসলিম বিশ্বে ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব
৩৯। রিসালাতে মুহাম্মদী ও বর্তমান পশ্চিমা বিশ্ব
৪০। সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস
৪১। সাত যুবকের গল্প
৪২। সীরাতে রসূল আকরাম (সা.)
৪৩। হজরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহঃ
৪৪। হযরত আলী রা. জীবন ও খেলাফত
৪৫। হযরত মুজাদ্দিদ আলফে ছানী রহ.
৪৬। হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ দেহলবী
৪৭। হায়াতে শায়খুল হাদীছ মাওলানা যাকারিয়া

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top