বেহেশতী জেওর লেখকঃ আশরাফ আলী থানভী

💍 বেহেশতী জেওর — মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এর নারীর জীবনবিধানমূলক সংকলন

রচয়িতা: মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)

বেহেশতী জেওর লেখকঃ আশরাফ আলী থানভী

“বেহেশতী জেওর” (উর্দু: بہشتی زیور) গ্রন্থটি দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামি সমাজে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও উপযোগী ফিকহ, নৈতিকতা ও আচরণবিষয়ক নির্দেশিকা। যদিও বইটির মূল সংকলক ছিলেন আহমদ আলী, তবে এটি প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত ও সুপরিচিত। গ্রন্থটি সাধারণ মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানমূলক নির্দেশিকা, যেখানে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, দৈনন্দিন আমল ও আচরণগত দিকসমূহ সহজ, সরল ও প্রামাণিক উপায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি মুসলিম পারিবারিক জীবনকে শরিয়তের আলোতে ঢেলে সাজানোর জন্য এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রতিটি মুসলিম নারীর জন্য “জান্নাতের গহনা” স্বরূপ, যা তাদের জীবনে ধর্মীয় ও নৈতিক সৌন্দর্য যোগায়।

উদ্দেশ্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

‘বেহেশতী জেওর’ মূলত উর্দু ভাষায় রচিত হয়েছিল মুসলিম মহিলাদের জন্য, যাতে তারা সহজ ভাষায় ইসলামী শরিয়তের মৌলিক বিধান জানতে পারে এবং তা দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে সক্ষম হয়। লেখকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের ধর্মীয় ভুল ধারণা ও কুসংস্কার দূর করে ফিকহী মাসআলাগুলোর বাস্তব প্রয়োগ শেখানো। এই গ্রন্থটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল যখন মুসলিম নারীরা শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। এই বই তাদেরকে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)-এর এই গ্রন্থ ইসলামী সমাজে নৈতিক দিকনির্দেশনা এবং পারিবারিক জীবনের বাস্তব প্রয়োগের জন্য অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি কওমি মহিলা মাদ্রাসায় এই বইটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত।

ঐতিহাসিক মন্তব্য: গ্রন্থটি মুসলিম নারীদের ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব পূরণে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। — বারবারা ডি. মেটকাল্ফ (ইতিহাসবিদ)

গ্রন্থের বিষয়বস্তু ও বিন্যাস

‘বেহেশতী জেওর’ মোট ১১টি খণ্ডে বিভক্ত এবং এতে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্র সম্পর্কিত ফিকহী মাসয়ালা সংকলিত হয়েছে। বাংলা অনুবাদ করেছেন প্রখ্যাত আলেম মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)। এটি এমনভাবে বিন্যস্ত হয়েছে যেন একজন সাধারণ মুসলিম নারী বা পুরুষ ধাপে ধাপে নিজের জীবনের সকল দিক সম্পর্কে শরয়ি জ্ঞান লাভ করতে পারে।

  • ১ম অধ্যায়: মৌলিক বিশ্বাস (ঈমান), সঠিক আকিদা ও ইবাদতের মূলনীতি।
  • ২য় অধ্যায়: ভুল বিশ্বাস, কুসংস্কার ও বিদআত থেকে মুক্ত থাকার নির্দেশনা।
  • ৩য়-৪র্থ অধ্যায়: সালাত, রোযা, জাকাত, কুরবানী, হজ ও ওমরাহ এর বিস্তারিত ফরজ ইবাদত।
  • ৫ম অধ্যায়: বিবাহ, তালাক, ইদ্দাহ, ভরণপোষণ, দুধপান ও পারিবারিক অধিকার সম্পর্কিত ফিকহ।
  • ৬ষ্ঠ অধ্যায়: ব্যবসা-বাণিজ্যের শরয়ি নীতি, হালাল-হারাম, লেনদেন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার।
  • ৭ম অধ্যায়: নৈতিকতা, শিষ্টাচার, অন্তরের সংশোধন (তাসাওউফ) ও আধ্যাত্মিক উন্নতির উপায়।
  • ৮ম অধ্যায়: কেয়ামতের নিদর্শন, আখিরাতের প্রস্তুতি ও পরকালের জীবন সম্পর্কিত আলোচনা।
  • ৯ম-১১শ অধ্যায়: বিশুদ্ধ নারীদের জীবন, স্বাস্থ্য, মাসিক ও নেফাস বিষয়ক নির্দেশনা, দোয়া ও জিকির।

পারিবারিক জীবনের ফিকহ

লেখক বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন যে, পারিবারিক জীবনকে সুখময় ও শরীয়াহসম্মত করতে হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই তাদের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। বিবাহ, তালাক ও ভরণপোষণ সংক্রান্ত ফিকহী মাসআলাগুলো এখানে অত্যন্ত স্পষ্ট ও ব্যবহারিক ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে জটিলতা থেকে মুক্তি দেয়। এই বইতে এমন অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, ইসলামে নারীর অধিকার সুরক্ষিত এবং পারিবারিক কাঠামোতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। তাদের এই জ্ঞান লাভ প্রমাণ করে যে, ইসলাম পারিবারিক জীবনে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান গুরুত্ব দিয়েছে।

বইয়ের মূল সুর: “সঠিক জ্ঞানই হলো জান্নাতের অলংকার, যা নারী-পুরুষের জীবনকে আলোকিত করে।”

নৈতিকতা ও অন্তরের সংশোধন

মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) তাঁর গ্রন্থে শুধুমাত্র ফিকহী মাসআলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; তিনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার ও অন্তরের সংশোধন (তাসাওউফ)-এর উপরও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, একজন মুসলিমের বাহ্যিক আমল তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন তার ভেতর বা অন্তর বিশুদ্ধ থাকে। তিনি হিংসা, অহংকার, লোভের মতো আত্মিক রোগগুলো থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দিয়েছেন। তাদের এই সামগ্রিক দিকনির্দেশনা প্রমাণ করে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা ব্যক্তির আমল ও আখলাক উভয়কেই উন্নত করতে চায়।

লেখক মনে করেন — শরীয়তের বিধান ও আত্মিক পরিশুদ্ধি — এই দুটির সমন্বয়েই একজন মুসলিমের জীবন পূর্ণাঙ্গ হতে পারে। এই বই সেই সমন্বয় সাধনে সাহায্য করে।


কেন পড়বেন এই গ্রন্থটি?

“বেহেশতী জেওর” শুধু একটি বই নয়, এটি দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি বিশ্বস্ত গাইড।

  • দৈনন্দিন ইবাদত ও মুয়ামালাত (লেনদেন) সম্পর্কিত সকল ফিকহী মাসআলা সহজ ভাষায় জানতে।
  • মুসলিম পারিবারিক জীবনে নারী-পুরুষ উভয়ের দায়িত্ব ও অধিকারের সুষম বর্ণনা পেতে।
  • শরীয়াহ ও তাসাওউফ (নৈতিক শিক্ষা)-এর সমন্বয় করে জীবন পরিচালনার নির্দেশনা পেতে।
  • ইসলামী সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা ও কুসংস্কারগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে।

ব্যবহারিক পরামর্শ: “এই বইটি প্রতিটি মুসলিম ঘরের জন্য এক অমূল্য সম্পদ, যা পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ নিশ্চিত করে।”


পাঠকগোষ্ঠী ও উপযোগিতা

এই বইটি বাংলাভাষী মুসলিম সমাজের সকল স্তরের পাঠক, বিশেষ করে নারীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। যারা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়ে ইসলামি বিধান নিয়ে সন্দিহান অথবা কেবল প্রথা মেনে দ্বীন পালন করেন, তাদের জন্য এই গ্রন্থটি চোখ খুলে দেওয়ার মতো। এটি ইসলামি শিক্ষার প্রচার-প্রসারে এক মূল্যবান ভূমিকা পালন করেছে এবং দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের ধর্মীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। এটি পারিবারিক লাইব্রেরির জন্যও এক অপরিহার্য সংযোজন।

মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) কর্তৃক সংকলিত “বেহেশতী জেওর” pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top