নসীম হিজাযী: Naseem Hijazi Books

নসীম হিজাযী

✍️ ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিক | গবেষক | সাংবাদিক | সাহিত্য জগতের কিংবদন্তি

প্রস্তাবনা

নাসিম হিজাযী (আসল নাম: মুহাম্মদ শরীফ, জন্ম: ১৯ মে ১৯১৪ – মৃত্যু: ২ মার্চ ১৯৯৬) ছিলেন উপমহাদেশের সর্বাধিক প্রভাবশালী ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিকদের একজন।
তাঁর রচনায় ইতিহাসের ঘটনাবলি, ইসলামি সভ্যতা ও বীরত্বগাথা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
তিনি উপন্যাসের মাধ্যমে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন, যা শুধু সাহিত্যপ্রেমীদেরই নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করেছে।

“ইতিহাস হলো জাতির আয়না, আর সাহিত্য হলো সেই আয়নাকে মানুষের হৃদয়ে প্রতিফলিত করার শিল্প।” – নাসিম হিজাযী

প্রারম্ভিক জীবন

১৯১৪ সালের ১৯ মে পাকিস্তানের (তৎকালীন ভারতবর্ষ) সোজানপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
তাঁর পিতা চৌধুরী জান মুহাম্মদ ছিলেন খাল ডিপার্টমেন্টের একজন সরকারি কর্মকর্তা।
শৈশবে মা হারানোর কারণে জীবনে দুঃখ ও সংগ্রামের স্বাদ পান।
নিজ গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার পর ১৯৩৮ সালে লাহোরের ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাজীবনেই তিনি সাহিত্যচর্চার প্রতি অনুরাগী হন এবং লিখতে শুরু করেন।

লেখালেখির সূচনা

প্রথম গল্প “শাদের” প্রকাশিত হলে তিনি তখনো নিজের আসল নাম মুহাম্মদ শরীফ ব্যবহার করতেন।
পরে এক শিক্ষকের পরামর্শে তিনি “নাসিম হিজাযী” নাম গ্রহণ করেন।
এই নামেই তিনি হয়ে ওঠেন উপমহাদেশের ঐতিহাসিক উপন্যাস জগতের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব।
তাঁর রচনায় বাস্তববাদ, গবেষণাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইতিহাসের প্রতি গভীর নিষ্ঠা প্রতিফলিত হয়।

“সাহিত্য কেবল কল্পনা নয়; ইতিহাসকে সাহিত্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।” – নাসিম হিজাযী

সাংবাদিকতা ও সাহিত্য

নাসিম হিজাযীর লেখালেখি তাঁর সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিল।
তিনি সত্যবাদিতা ও বাস্তবতার পক্ষে অবস্থান নিতেন। সংবাদপত্রে কাজ করার ফলে ইতিহাস ও সমাজ নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আরো তীক্ষ্ণ হয়েছিল।
এই সাংবাদিকতাই তাঁকে পরবর্তীতে এক শক্তিশালী ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিক হিসেবে গড়ে তোলে।

প্রসিদ্ধ উপন্যাসসমূহ

নাসিম হিজাযীর রচনায় ইসলামি ইতিহাস, মুসলিম বীরদের সংগ্রাম ও সভ্যতার উত্থান-পতনের চিত্র ফুটে উঠেছে।
তাঁর উপন্যাসগুলো বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং উপমহাদেশ ছাড়াও বিশ্বজুড়ে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।

ঐতিহাসিক উপন্যাস

  • দাস্তান-ই-মুজাহিদ – তারিক বিন জিয়াদ, কাতিবা বিন মুসলিম ও মুহাম্মদ বিন কাসিমের বীরত্ব
  • আখরি চাঁদ – মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন ও ষড়যন্ত্রের কাহিনি
  • ইউসুফ বিন তাশফিন – আন্দালুসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত
  • মোয়াজ্জম আলী – সিরাজউদ্দৌলা, আহমদ শাহ আবদালী, হায়দার আলী প্রমুখ ঐতিহাসিক চরিত্র
  • টিপু সুলতান – সাহসী মুসলিম শাসকের সংগ্রাম ও বীরত্ব
  • খাক ও খুন – ভারত ভাগ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার করুণ কাহিনি
  • ক্বাফলা-ই-হিজাজকায়সার-ও-কিসরা – হিজাজ সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত

“দাস্তান-ই-মুজাহিদ কেবল একটি উপন্যাস নয়; বরং এটি মুসলিম তরুণদের জন্য এক প্রেরণার দলিল।” – সমালোচক মতামত

চিন্তাধারা

নাসিম হিজাযীর চিন্তাধারা মূলত ইতিহাসভিত্তিক বাস্তববাদী সাহিত্য রচনায় নিবদ্ধ ছিল।
তিনি বিশ্বাস করতেন, ইতিহাসকে বিকৃত না করে সাহিত্যিকভাবে উপস্থাপন করাই একজন লেখকের দায়িত্ব।
তাঁর প্রতিটি উপন্যাসে গবেষণামূলক দৃষ্টিভঙ্গি, ভৌগোলিক ও সামাজিক বাস্তবতার যথাযথ প্রতিফলন দেখা যায়।

প্রভাব

উপমহাদেশে ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনায় নাসিম হিজাযী এক নতুন ধারার সূচনা করেন।
তাঁর রচনাশৈলী ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ অনেক তরুণ লেখককে প্রভাবিত করেছে।
পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশের সাহিত্যপত্রিকা ও ডাইজেস্টগুলোতে তাঁর উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে পাঠকমহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

মৃত্যু

১৯৯৬ সালের ২ মার্চ নাসিম হিজাযী ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যুতে উপমহাদেশ এক মহান ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিককে হারায়।
তবে তাঁর রচনাসমূহ আজও পাঠকের হৃদয়ে জীবন্ত এবং প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

“যে লেখকের কলম ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে, তার মৃত্যু হলেও তিনি অমর হয়ে থাকেন।”

উপসংহার

নাসিম হিজাযী ছিলেন ইতিহাস ও সাহিত্যের এক অনন্য সেতুবন্ধন।
তাঁর উপন্যাসগুলো প্রমাণ করেছে যে সাহিত্য শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; বরং এটি জাতির অতীতকে জানার, বোঝার ও অনুপ্রাণিত হওয়ার একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
তিনি উপমহাদেশীয় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন এবং বিশ্বমঞ্চে ইসলামি ইতিহাসভিত্তিক সাহিত্যের মর্যাদা বাড়িয়েছেন।

আরও পড়ুন

👉 ইমাম বুখারী রহঃ
👉 আসাদ বিন হাফিজ
নসীম হিজাযী কর্তৃক রচিত ইসলামি উপন্যাস এর pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে↓ নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অপরাজিত
২। আধার রাতের মুসাফির
৩। ইউসুফ বিন তাশফিন
৪। কায়সার ও কিসরা
৫। কিং সাইমন এর রাজত্ব
৬। খুন রাঙা পথ
৭। চুড়ান্ত লড়াই
৮। দাস্তানে মুজাহিদ
৯। ভারত যখন ভাঙলো
১০। ভেঙ্গে গেল তলোয়ার
১১। মরণ জয়ী
১২। মরু সাইমুম
১৩। মানুষ ও দেবতা
১৪। মুহাম্মদ ইবন কাসিম
১৫। রক্তাক্ত ভারত
১৬। লৌহ মানব
১৭। শেষ প্রান্তর
১৮। শেষ বিকেলের কান্না
১৯। সফেদ দ্বীপের রাজকন্যা
২০। সীমান্ত ঈগল
২১। হেজাজের কাফেলা

 

error: Content is protected !!
Scroll to Top