মতিউর রহমান নিজামী: Motiur Rahman Nizami Books

মতিউর রহমান নিজামী

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী: জীবন, কর্ম ও অবদান

✍️ প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ | আলেমে দ্বীন | রাজনৈতিক নেতা | লেখক

প্রস্তাবনা

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (৩১ মার্চ ১৯৪৩ – ১১ মে ২০১৬) ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও রাজনৈতিক নেতা।
তিনি দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিক্ষাজীবনে মেধাবী ছাত্র, ছাত্র আন্দোলনের সাহসী নেতা, জাতীয় সংসদের সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
একইসঙ্গে তিনি ইসলামী আন্দোলন ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবে সমাদৃত ছিলেন।

“একজন নেতার প্রকৃত সাফল্য হলো আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে জাতিকে পথ দেখানো।” – মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষাজীবন

১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মতিউর রহমান নিজামী।
তাঁর পিতা লুৎফর রহমান খান ছিলেন খোদাভীরু ও আত্মমর্যাদাশীল মানুষ।

নিজামী প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে।
পরবর্তীতে বোয়াইলমারী মাদরাসা ও পাবনার শিবপুর ত্বহা সিনিয়র মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন।
১৯৬১ সালে ফাজিল এবং ১৯৬৩ সালে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা থেকে কামিল পরীক্ষায় ফেকাহশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।

ছাত্রজীবনে নেতৃত্ব

শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৬২-৬৬ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে অবিভক্ত পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন।

পারিবারিক জীবন

১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শামসুন্নাহারের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তাঁর স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাঁদের সংসারে চার পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে।

রাজনৈতিক জীবন

মাওলানা নিজামী ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন।
পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মহানগর আমীর, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা

১৯৬৪ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৮২-৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তিনি সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ছাত্রনেতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও প্রতিপক্ষের কাছেও শ্রদ্ধা অর্জন করেন।

জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিত্ব

১৯৯১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের জন্য তিনি সংসদে বিল উত্থাপন করেন, যা পরে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়।
২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে তিনি কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।
তাঁর উদ্যোগে “একটি বাড়ি একটি খামার”, সাভারে চামড়া শিল্প নগরী, শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও কৃষিতে আধুনিকায়নসহ বহু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়।

আন্তর্জাতিক ভূমিকা

তিনি মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরব ছিলেন।
বাবরী মসজিদ, বসনিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন সংকট ও লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি দৃঢ় অবস্থান নেন।
ইংল্যান্ডের চেথম হাউজ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০০৯ সালে রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার তাঁকে বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

লেখক ও চিন্তাবিদ

ব্যস্ত রাজনৈতিক জীবনের মাঝেও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যান।
৬০টিরও বেশি বইয়ের রচয়িতা তিনি।
ইসলামী চিন্তা, রাজনীতি, সমাজ সংস্কার ও গবেষণাধর্মী লেখার মাধ্যমে তিনি পাঠকমহলে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

“আদর্শ ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।” – সমালোচক মতামত

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

মাওলানা নিজামী শুধু রাজনীতিবিদ নন, তিনি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের রুহানি নেতা।
দেশ-বিদেশে তিনি আলেম ও চিন্তাবিদদের নিকট সমাদৃত ছিলেন।
তিনি জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে ইসলামের প্রকৃত মর্মার্থ তুলে ধরেছেন।
মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়ন ও কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি অর্জনে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে আছে।

মৃত্যু

২০১৬ সালের ১১ মে গভীর রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

উপসংহার

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন বহুমুখী ব্যক্তিত্বের অধিকারী – তিনি একাধারে আলেম, চিন্তাবিদ, লেখক ও সংগ্রামী নেতা।
তিনি দেশীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন।
তাঁর জীবন সংগ্রাম, চিন্তাধারা ও রচনাবলী আজও অনেককে অনুপ্রাণিত করছে।

আরও পড়ুন

👉 উইকিপিডিয়ায় প্রবন্ধ
👉 শফীউদ্দীন সরদার


📚 মতিউর রহমান নিজামী এর বইসমূহ

মতিউর রহমান নিজামী কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আল কুরআনের পরিচয়
২। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়
৩। ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ
৪। ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ
৫। ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ
৬। ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন
৭। ইসলামী আন্দোলন সমস্যা ও সম্ভাবনা
৮। এক পরাশক্তির অন্যায় যুদ্ধ আতঙ্কিত করেছে বিশ্বের মানুষকে
৯। কারাগারের স্মৃতি
১০। কুরআনের আলোকে মুমিনের জীবন
১১। দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব
১২। নারী সমাজে দাওয়াত ও সংগঠন সম্প্রসারণের উপায়
১৩। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর জাতীয় সংসদে বক্তৃতামালা
১৪। মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য
১৫। রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কার
১৬। রাজনীতির স্বার্থে ধর্ম বনাম ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি
১৭। রাসূলুল্লাহর সাঃ মক্কার জীবন

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top