মুফতী মনসূরুল হক: Mansurul Haque Books

মুফতী মনসূরুল হক

হযরত শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.: জীবন, কর্ম ও অবদান

✍️ শাইখুল হাদীস | বিদগ্ধ ফকীহ | প্রভাবশালী বক্তা | ইসলামী সাহিত্যের রচয়িতা

প্রস্তাবনা

হযরত শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. বর্তমান সময়ের একজন খ্যাতনামা আলেমে দ্বীন। তাঁর সমগ্র জীবন জ্ঞানার্জন, শিক্ষা প্রদান, দাওয়াহ, তাযকিয়া এবং রচনা কার্যক্রমে পরিপূর্ণভাবে নিয়োজিত। তিনি একাধারে উস্তাদ, মুফাসসির, মুতাকাল্লিম এবং একজন সাহসী দাঈ। শত শত ছাত্র তাঁর হাত ধরে দীনের গভীর জ্ঞান লাভ করেছে এবং সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ প্রচারে নিয়োজিত হয়েছে।

“একজন প্রকৃত আলেমের কাজ শুধু শিক্ষা দেয়া নয়, বরং মানুষের অন্তরে ঈমানের আলো প্রজ্বলিত করা।” – মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা

শৈশব থেকেই তিনি ইসলামি বিদ্যার প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। জামি‘আ কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে ভর্তি হয়ে কিংবদন্তিতুল্য আসাতিযায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে লেখাপড়া শেষ করেন। এখানে তিনি কুরআন, হাদীস, ফিকহ ও উসূল শাস্ত্রে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। পরে হারদুঈর প্রখ্যাত বুযুর্গ হযরত মুহিউসসুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহ. এর কাছে তাযকিয়া ও তাবলীগের বিশেষ দীক্ষা গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি উপলব্ধি করেন, নিজের আমল সংশোধনের পাশাপাশি অন্যদের জীবনেও ইসলামী মূল্যবোধ পৌঁছে দেওয়া একজন আলেমের ফরয দায়িত্ব।

শিক্ষকতা ও দরস প্রদান

শিক্ষাজীবন শেষে তিনি লালবাগ মাদরাসাতেই শিক্ষকতা শুরু করেন। ছাত্রদের জটিল মাসআলা সহজভাবে বোঝানোর দক্ষতার জন্য দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

  • ১৯৮৬ সাল থেকে বুখারী শরীফ ও মিশকাত শরীফের দরস প্রদান শুরু করেন।
  • বর্তমানে জামি‘আ রাহমানিয়ায় নিয়মিতভাবে বুখারী ও মিশকাতের দরস পরিচালনা করছেন।
  • ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন মাদরাসায় বিশেষ আমন্ত্রণে দরস প্রদান করেন।

তাঁর দরসের বৈশিষ্ট্য হলো – স্পষ্ট উপস্থাপনা, ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ, জোরালো স্বর এবং ছাত্রবান্ধব আচরণ। ফলে দুর্বল ছাত্র থেকে শুরু করে মেধাবী ছাত্র – সবাই সমানভাবে উপকৃত হয়।

“তাঁর দরসে ক্লান্তি আসে না; বরং প্রতিটি ছাত্রের হৃদয়ে জ্ঞানের তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে দেয়।” – এক ছাত্রের মন্তব্য

দাওয়াত ও তাযকিয়া

১৯৮৯ সালে হারদুঈ সফরে গিয়ে তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেন যে, দাওয়াত ও তাযকিয়া ছাড়া ইসলামী সমাজ সংস্কার সম্ভব নয়। এরপর থেকে তিনি শুধু শিক্ষা কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং দাওয়াহ ও তাযকিয়ার ময়দানেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। মুসলমানদের ঈমান-আমল সংশোধনে তিনি সর্বদা তৎপর থেকেছেন।

রচনাবলী

হযরত মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. উর্বর লেখক হিসেবেও খ্যাত। তাঁর রচনাগুলোতে সহজ-সরল ভাষা, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং দৃঢ় দলীল-প্রমাণ লক্ষ্য করা যায়।

প্রধান গ্রন্থাবলি

  • কিতাবুল ঈমান
  • ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া
  • ইসলামী যিন্দেগী
  • ‘আমালুস সুন্নাহ
  • তুহফাতুল হাদীস
  • মাযহাব ও তাকলীদ
  • নবীজীর সুন্নাত
  • মাসনূন দু‘আ ও দরূদ
  • জীবনের শেষ দিন
  • তাবলীগ কি ও কেন

এসব গ্রন্থ সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে আলেমদের মাঝেও ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।

চিন্তাধারা ও ব্যক্তিত্ব

মুফতী সাহেব দা.বা. বিশ্বাস করেন, আলেমদের দায়িত্ব হলো ছাত্রদেরকে সহজতম পদ্ধতিতে দ্বীনের জ্ঞান পৌঁছে দেওয়া। এজন্য তিনি সর্বদা ইজতেহাদী মনোভাব নিয়ে দরস উপস্থাপন করেন। তাঁর মতে,

“তালিবে ইলমরা উম্মতের আমানত; তাই তাদের প্রতি সহজতর পদ্ধতিতে ইলম পৌঁছে দেওয়া একজন উস্তাদের ফরয।”

তাঁর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও নির্ভীক বক্তব্য আমির-ফকির নির্বিশেষে সবার হৃদয়ে ঈমানী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

প্রভাব ও অবদান

তাঁর প্রভাব সীমাবদ্ধ নয় শুধু ছাত্রসমাজে; বরং দাওয়াত, তাযকিয়া ও সাহিত্য রচনার মাধ্যমে পুরো সমাজে তিনি ইসলামের আলো পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর রচনাবলী সাধারণ শিক্ষিত মুসলমানদের জন্য দীন বোঝার সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

উপসংহার

হযরত শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. সমকালীন যুগের একজন অনন্য আলেমে দ্বীন। শিক্ষা, দাওয়াত, তাযকিয়া ও রচনার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি প্রমাণ করেছেন, ইখলাস ও মেহনত থাকলে একজন আলেম উম্মতের প্রকৃত দিশারী হতে পারেন। তাঁর দরস, দাওয়াহ ও গ্রন্থাবলি যুগ যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহর জন্য আলোর দিশা হয়ে থাকবে।


error: Content is protected !!
Scroll to Top