কাসেম বিন আবুবাকর: Kasem Bin Abubakar Books

✍️ বাংলাদেশী উপন্যাসিক | গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের কথাশিল্পী | ইসলামকেন্দ্রিক প্রেমকাহিনির রচয়িতা

প্রস্তাবনা

কাশেম বিন আবু বকর একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী উপন্যাসিক, যিনি মূলত ইসলামকেন্দ্রিক গ্রামীণ প্রেমকাহিনি রচনার জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
তার লেখায় গ্রামীণ সমাজ, ধর্মীয় আবহ এবং প্রেমের কাহিনি বারবার উঠে এসেছে।
তিনি একাধারে আলোচিত, সমালোচিত এবং পাঠকপ্রিয়।

“সাহিত্য মানেই মানুষের অন্তরের টানাপোড়েনকে গল্পে রূপ দেওয়া।” – কাশেম বিন আবু বকর

প্রারম্ভিক জীবন

তিনি পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
শৈশব থেকেই সংসারের দায়ভার তাঁর কাঁধে আসে। বাবার বড় সন্তান হওয়ায় অর্থনৈতিক চাপে পড়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি।

শিক্ষাজীবন

কাশেম বিন আবু বকর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলেও আর শেষ করতে পারেননি।
অসচ্ছল পরিবারের দায়িত্ব এবং কর্মজীবনের প্রয়োজনীয়তা তাঁকে লেখাপড়া অসম্পূর্ণ রেখে অন্যদিকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করে।

“অসমাপ্ত শিক্ষাজীবন হলেও বই ছিল আমার প্রকৃত শিক্ষক।” – কাশেম বিন আবু বকর

কর্মজীবন

প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন বই বিক্রেতা।
১৯৭৮ সালে তিনি প্রথম উপন্যাস ফুটন্ত গোলাপ রচনা করেন। তবে প্রকাশক না পাওয়ায় প্রায় এক দশক ধরে এটি প্রকাশিত হতে দেরি হয়।
শেষ পর্যন্ত মাত্র ১০০০ টাকায় বইটির স্বত্ব বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভাগ্য তাঁর পক্ষে দাঁড়ায় – প্রকাশের পরপরই ফুটন্ত গোলাপ বেস্টসেলার হয়ে ওঠে।

সাহিত্যজীবন

এই সাফল্যের পরে তিনি পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মোট ৭২টিরও বেশি উপন্যাস রচনা করেন।
তাঁর উপন্যাসগুলো মূলত গ্রামীণ পটভূমিতে ইসলামকেন্দ্রিক প্রেম, সামাজিক টানাপোড়েন এবং নৈতিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে রচিত।
তার লেখনী পাঠকপ্রিয় হলেও একাডেমিক সাহিত্য মহলে অবহেলিত ছিল।

রচনাবলী

কাশেম বিন আবু বকর ছিলেন অত্যন্ত উর্বর লেখক। তিনি একের পর এক উপন্যাস লিখে বিপুল পাঠককুল তৈরি করেন।

প্রসিদ্ধ উপন্যাসসমূহ

• ফুটন্ত গোলাপ
• আমিও মানুষ
• তুমিও মানুষ
• বিদেশী মেম
• ক্রন্দসী পিয়া
• কি পেলাম
• প্রেমের পরশ
• বিলম্বিত বাসর
• তোমার প্রত্যাশায়
• ভাঙা গড়া
• পাহাড়ী ললনা
• হৃদয়ে আঁকা ছবি
• শেষ উপহার
• কলঙ্কের ফুল
• শহরের মেয়ে
• স্বর্ণ তুমি
• অমর প্রেম
• হঠাৎ দেখা
• বিয়ে বিভ্রাট
• আজরাঈল (আ:) এর কান্না
• বোরকা পড়া সেই মেয়েটি
• প্রেম

“আমার উপন্যাসে শহুরে জৌলুশ নেই, আছে গ্রামের মানুষের সত্যিকারের হাসি-কান্না।” – কাশেম বিন আবু বকর

চিন্তাধারা

তাঁর লেখায় মূলত ধর্মীয় আবহে প্রেম, নৈতিকতা ও সামাজিক বাস্তবতাকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
তিনি বিশ্বাস করতেন, সাহিত্য মানুষের অন্তরে পরিবর্তন আনতে পারে এবং সমাজের অবহেলিত শ্রেণিকে আলোচনায় নিয়ে আসতে পারে।
যদিও তাঁর লেখাকে অনেকেই ‘গদ্য সাহিত্য’ না বলে ‘পপুলার ফিকশন’ আখ্যা দিয়েছেন, তবু গ্রামীণ পাঠকশ্রেণির কাছে তিনি ছিলেন আশার বাতিঘর।

বিতর্ক

বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গন এবং মূলধারার গণমাধ্যমে কাশেম বিন আবু বকর অনেকটা উপেক্ষিত ছিলেন।
শহুরে শিক্ষিত পাঠক সমাজের কাছে তিনি প্রায় অপরিচিত নাম হলেও গ্রামীণ তরুণ মুসলমানদের মধ্যে তাঁর বই ছিল ভীষণ জনপ্রিয়।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি তাঁকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়াহু নিউজ, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ,
মালয়েশিয়ার দ্য স্টার, পাকিস্তানের ডন ও ফ্রান্সের ফ্রান্স ২৪ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে তিনি আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন।

প্রভাব

গ্রামীণ সমাজের পাঠকশ্রেণির কাছে তাঁর উপন্যাসগুলো ছিল বিনোদন ও আত্মপরিচয়ের মাধ্যম।
ধর্মীয় অনুষঙ্গ এবং আবেগঘন প্রেমকাহিনি তাঁকে এক বিশেষ পাঠকগোষ্ঠীর প্রিয় লেখক করে তুলেছিল।
তাঁর প্রভাব শহুরে সাহিত্যিক চর্চায় সীমিত হলেও গ্রামবাংলায় তিনি এক অনন্য সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

উপসংহার

কাশেম বিন আবু বকর ছিলেন বাংলা জনপ্রিয় সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তিনি প্রমাণ করেছেন, সাহিত্যিক স্বীকৃতি না পেলেও পাঠকের ভালোবাসাই একজন লেখকের প্রকৃত অর্জন।
তাঁর উপন্যাসগুলো হয়তো মূলধারার সাহিত্যক্যাননে স্থান পায়নি, তবে গ্রামীণ সমাজে তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আরও পড়ুন

👉 নসীম হিজাযীর বই
👉 অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের বই

---