ইমাম বুখারী রহঃ – জীবন, কর্ম ও অবদান
✍️ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস | লেখক | ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণের অগ্রদূত
প্রারম্ভিক জীবন
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-বুখারী রহঃ ১৯৪ হিজরী, ১৩ শাওয়াল (৮১০ খ্রিষ্টাব্দ) খোরাসানের বুখারায় জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা ছিলেন হাদীসবিদ ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম, যিনি ইমাম মালেক ও আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ- এর শাগরিদ ছিলেন।
শৈশবেই বাবাকে হারান, ফলে মায়ের তত্ত্বাবধানে বড় হন। তাঁর মা ছিলেন বিদূষী ও নেককারা মহিলা।
শৈশবে একবার তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে মায়ের দোয়ার বরকতে পুনরায় দৃষ্টি ফিরে পান।
“আম্মা! আমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছি।” – দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার পর ইমাম বুখারীর উক্তি
শিক্ষাজীবন
শিশুকাল থেকেই ইমাম বুখারী কুরআন মুখস্থ করেন এবং মাত্র দশ বছর বয়সে হাদীস মুখস্থ করা শুরু করেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি “আব্দুল্লাহ বিন মুবারক” ও “ওয়াকী” এর পান্ডুলিপি মুখস্থ করেন।
অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী হিসেবে একবার মাত্র পড়েই তিনি বহু হাদীস মুখস্থ করতে সক্ষম হতেন।
সফরসমূহ
ষোল বছর বয়সে মা ও ভাইয়ের সাথে হজ্জে গমন করেন। এরপর তিনি মক্কা, মদীনা, ইরাক, সিরিয়া, মিশর ও অসংখ্য শহরে সফর করেন।
এই ভ্রমণে তিনি সহস্রাধিক আলেম ও মুহাদ্দিসের কাছ থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন।
মোট ১৬ বছর তিনি হাদীস অন্বেষণে ভ্রমণ চালিয়ে যান।
স্মৃতিশক্তির প্রখরতা
ইমাম বুখারীর স্মৃতি এত প্রখর ছিল যে, তিনি একবার কোনো গ্রন্থে চোখ বুলালেই মুখস্থ করে ফেলতেন।
বাগদাদে ১০০টি হাদীস ভুল সনদসহ তার সামনে পাঠ করা হলে তিনি প্রত্যেকটি হাদীসের আসল সনদ ও মতন ঠিক করে দেন।
এরপর থেকেই তিনি যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসেবে স্বীকৃত হন।
“আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীস ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীস মুখস্থ রয়েছে।” – ইমাম বুখারী রহঃ
সহীহ বুখারী রচনা
ইমাম বুখারীর জীবনের শ্রেষ্ঠতম অবদান হলো সহীহ বুখারী।
তিনি প্রায় ৬ লক্ষ হাদীস থেকে যাচাই-বাছাই করে ৭,১৭৫টি হাদীস (পুনরাবৃত্তসহ) অন্তর্ভুক্ত করেন।
প্রতিটি হাদীস লিপিবদ্ধ করার আগে তিনি গোসল, নামাজ ও ইস্তিখারা করতেন।
এই মহান গ্রন্থটি সংকলনে তাঁর সময় লেগেছিল ১৬ বছর।
“আমি আমার কিতাবে সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কিছু লিপিবদ্ধ করিনি।” – ইমাম বুখারী রহঃ
আলেমদের মূল্যায়ন
ইমাম বুখারীর সহীহ গ্রন্থকে সমসাময়িক সকল আলেম প্রশংসা করেছেন।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন ও আলী ইবনে মাদীনী সহ বহু আলেম তাঁর সহীহ বুখারীকে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেন।
এটি মুসলিম বিশ্বে আল-কুরআনের পরেই সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।
ইবাদত, পরহেজগারী ও দানশীলতা
ইমাম বুখারী রহঃ ইলমে হাদীসে নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগীতেও ছিলেন অগ্রণী।
প্রতি রমজানে দিনে একবার এবং রাতে তারাবীর পর প্রতি তিন রাতে একবার কুরআন খতম করতেন।
তাঁর কবর থেকে সুগন্ধি বের হওয়ার ঘটনাও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
এছাড়া তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও নিজের জন্য অল্প ব্যবহার করতেন এবং অধিকাংশ দান করে দিতেন।
সহীহ বুখারীর প্রভাব
সহীহ বুখারী মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অমূল্য সম্পদ।
বিশ্বের সকল ইসলামী বিদ্বান একমত যে, কুরআনের পর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হলো সহীহ বুখারী।
“যে ঘরে সহীহ বুখারী রয়েছে, সে ঘরে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপস্থিতি রয়েছে।” – আলেমদের মতামত
রচনাবলী
ইমাম বুখারী রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। এগুলোর কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা পান্ডুলিপি আকারে সংরক্ষিত রয়েছে। আর কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার রচিত গ্রন্থাবলীর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো বুখারী শরীফ। নিচে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম দেয়া হলো;
- কাজায়া আস-সাহাবা ওয়া আত-তাবিয়ীন
- আত-তারীখ আস-সগীর
- আল-আদাব আল-মুফরাদ
- কিতাব আল-জুআফা আস-সগীর
- কিতাব আল-কুনা
- কিতাবু খালকি আফআলিল ইবাদ
- সহীহ আল-বুখারী
- রাফওল ইয়াদাইন ফিস সালাত
- কিরাআত খলফিল ইমাম
- আত-তারিখুল কবির
- আত-তারিখুল ওয়াসাত
- খালকু আফয়ালিল ইবাদ
- আল জামেওল কবির
- আল মুসনাদুল কবির
- কিতাবুল আশরিয়া
- ওসামাস সাহাবা
- কিতাবুল মারসুত
- কিতাবুল বিজদান
উপসংহার
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-বুখারী রহঃ ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস।
তাঁর ইলম, পরিশ্রম, স্মৃতিশক্তি ও দাওয়াহ কার্যক্রম মুসলিম উম্মাহকে চিরকাল পথ দেখাবে।
তাঁর সংকলিত সহীহ বুখারী আজও কুরআনের পর সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ইসলামী গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত।
আরও পড়ুন
👉 সহীহ বুখারী (ইংরেজি অনুবাদ)
👉 ইসলামী বই সমাহার
📚 ইমাম বুখারী রহঃ এর বইসমূহ
ইমাম বুখারী রহঃ কর্তৃক রচিত ইসলামিক বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আল আদাবুল মুফরাদ
২। আল লু-লু ওয়াল মারজান
৩। জুযউ রফইল ইয়াদাঈনঃ জানেন কি, কি পরিমাণ নেকী হতে আপনি বঞ্চিত হচ্ছেন
৪। জুযউ রফইল ইয়াদায়ন ফিস সালাত
৫। জুযউল কিরআতঃ ইমামের পিছনে পঠনীয় সর্বোত্তম কিরআত
ইমাম বুখারী রহঃ কর্তৃক সংকলিত হাদিস গ্রন্থসমূহ করুন;
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত
৬। বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড
৭। বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড
৮। বুখারী শরীফ ৩য় খণ্ড
৯। বুখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড
১০। বুখারী শরীফ ৫ম খণ্ড
১১। বুখারী শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড
১২। বুখারী শরীফ ৭ম খণ্ড
১৩। বুখারী শরীফ ৮ম খণ্ড
১৪। বুখারী শরীফ ৯ম খণ্ড
১৫। বুখারী শরীফ ১০ম খণ্ড
তাওহীদ পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত
১৬। সহীহুল বুখারী ১ম খণ্ড
১৭। সহীহুল বুখারী ২য় খণ্ড
১৮। সহীহুল বুখারী ৩য় খণ্ড
১৯। সহীহুল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
২০। সহীহুল বুখারী ৫ম খণ্ড
২১। সহীহুল বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড
আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত
২২। সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
২৩। সহীহ আল বুখারী ২য় খণ্ড
২৪। সহীহ আল বুখারী ৩য় খণ্ড
২৫। সহীহ আল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
২৬। সহীহ আল বুখারী ৫ম খণ্ড
২৭। সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড
হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ কর্তৃক প্রকাশিত
২৮। বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড
২৯। বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড
৩০। বোখারী শরীফ ৩য় খণ্ড
৩১। বোখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড
৩২। বোখারী শরীফ ৫ম খণ্ড
৩৩। বোখারী শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড
৩৪। বোখারী শরীফ ৭ম খণ্ড