
🦅 “বাগদাদের ঈগল” — বিশ্ব রাজনীতির এক রক্তাক্ত অধ্যায় হলো ২০০৩ সালের ইরাক অভিযান। যখন মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটবাহিনী “গণবিধ্বংসী অস্ত্র” খোঁজার অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে, তখন পুরো মুসলিম বিশ্ব অবাক, ক্ষুব্ধ ও অসহায়ভাবে তাকিয়ে ছিল। এম. আর. মাছুম বিল্লাহ তাঁর অনন্য গ্রন্থে সেই অন্ধকার সময়ের ইতিহাসকে নতুন আলোয় উপস্থাপন করেছেন। এটি কেবল একটি যুদ্ধকাহিনি নয় — এটি এক জাতির আত্মমর্যাদার, ত্যাগের ও মুক্তির সংগ্রামের বাস্তব দলিল।
লেখক দেখিয়েছেন, কিভাবে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তির জৌলুসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষও স্বাধীনতার জন্য বুক চিতিয়ে লড়েছে। তাদের সাহস, আত্মত্যাগ, ও আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস পাঠককে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
📜 ইতিহাসের পটভূমি ও বাস্তব প্রেক্ষাপট
২০০৩ সালের ২০শে মার্চ — এক ভয়াবহ দিন, যখন ইরাকের আকাশে আগুনের ফুলকি ঝরছিল। মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী দাবি করেছিল, তারা “গণবিধ্বংসী অস্ত্র” ধ্বংস করতে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল এক সুপরিকল্পিত দখল অভিযান। রাজধানী বাগদাদ মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই পতিত হয়, এবং শুরু হয় এক ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয়।
লেখক এম. আর. মাছুম বিল্লাহ এই ঘটনাগুলিকে শুধুমাত্র সামরিক সংঘর্ষ হিসেবে দেখেননি। তিনি যুদ্ধের পেছনের মনস্তত্ত্ব, কূটনৈতিক চক্রান্ত, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও মানবিক সংকটের গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে ইরাকি জনগণের আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং তাদের অদম্য দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবি।
লেখক তুলে ধরেছেন — “ইরাকের মানুষ হয়তো অস্ত্রশস্ত্রে দুর্বল ছিল, কিন্তু তাদের হৃদয়ে ছিল ঈমানের আগুন। সেই আগুনই একে একে পুড়িয়ে দিয়েছে আক্রমণকারীদের অহংকার।”
📖 গ্রন্থের গঠন ও বৈশিষ্ট্য
“বাগদাদের ঈগল” গ্রন্থটির গঠন ও বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
- **অধ্যায়বিন্যাস:** বইটি দুই খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে ইরাক আক্রমণের প্রেক্ষাপট ও প্রাথমিক প্রতিরোধের কাহিনি, আর দ্বিতীয় খণ্ডে এসেছে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও জাতীয় পুনর্গঠনের সংগ্রাম।
- **বাস্তব সাক্ষ্যনির্ভর বিবরণ:** লেখক যুদ্ধের সময়ের সাংবাদিক প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ও প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে ঘটনাপ্রবাহ নির্মাণ করেছেন।
- **মানবিক দৃষ্টিকোণ:** কেবল যুদ্ধক্ষেত্র নয় — শিশু, নারী, সাধারণ নাগরিকের দুর্ভোগ, ভাঙা ঘর, বিধ্বস্ত হাসপাতাল — সবকিছুই সংবেদনশীলভাবে এসেছে বর্ণনায়।
- **ধর্মীয় ও নৈতিক প্রতিফলন:** লেখক ইসলামের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন যুদ্ধের ন্যায্যতা, আত্মরক্ষার বিধান ও মজলুম জাতির দায়িত্ব।
🧭 কেন পড়বেন ‘বাগদাদের ঈগল’?
যুদ্ধ, ধ্বংস আর মানবতার পতন—এই তিন শব্দই আজকের পৃথিবীর করুণ বাস্তবতা। “বাগদাদের ঈগল” বইটি সেই বাস্তবতার এক সাহসী প্রতিবাদ। লেখক কেবল ইতিহাস বলেননি, তিনি পাঠককে আত্মসমালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন— আমরা কি ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারি? আমরা কি নিপীড়িতের পাশে আছি?
এই বই আপনাকে ভাবতে শেখাবে, কাঁদাতে বাধ্য করবে, আবার অনুপ্রেরণাও জোগাবে। এটি আপনাকে মনে করিয়ে দেবে—
“যে জাতি আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তাকে পৃথিবীর কোনো শক্তিই দমাতে পারে না।”
লেখক এক জায়গায় বলেছেন—
“প্রতিরোধের ডাক কখনও অস্ত্রের শব্দে নয়, অন্তরের ঈমানেই শুরু হয়।”
এই লাইনটি যেন গোটা গ্রন্থের আত্মা।
📚 বইটির পাঠ-অভিজ্ঞতা
পাঠকের জন্য এই বই কেবল তথ্যের উৎস নয়, এক অনন্য আবেগের ভ্রমণ। যখন আপনি পড়বেন—কীভাবে এক শিশু বোমার শব্দে কেঁপে উঠে আবারও বিদ্যালয়ের পথে হাঁটে, কীভাবে এক মা শহীদ পুত্রের মুখে চুমু খেয়ে তাকবির উচ্চারণ করে—তখন আপনার মন ভরে উঠবে অশ্রু ও অনুপ্রেরণায়।
লেখকের ভাষা সহজ, অথচ হৃদয়ে আঘাত হানে। তিনি ইতিহাসের শুষ্কতা ভেঙে গল্পের আবহে মানবিক মূল্যবোধকে জীবন্ত করেছেন। তাই এটি শুধুই ইতিহাস নয়—এটি আত্মমর্যাদা, মানবতা ও ঈমানের এক বোধন।
এম. আর. মাছুম বিল্লাহ রচিত ‘বাগদাদের ঈগল’ PDF বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।






