হাফেজা আসমা খাতুন — জীবন, রাজনীতি ও সমাজসেবায় অবদান
হাফেজা আসমা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত নারী রাজনৈতিক নেতা ও সমাজসেবী। ১৯৯১ সালে ২৩ নং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে তিনি জামায়াতে ইসলামী’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সংসদীয় দায়িত্ব পালন করেন। তার কর্মজীবন নারী উন্নয়ন, শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রসারে নিবেদিত ছিল।
প্রারম্ভিক জীবন ও ধর্মীয় শিক্ষা
আসমা খাতুন ছিলেন একজন হাফেজা — কোরআনের বর্ণিত শিক্ষা ও তত্বে দক্ষ। ধর্মীয় শিক্ষাকে কেন্দ্র করে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে নারী শিক্ষার প্রসার ও পারিবারিক মূল্যবোধ জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছেন। ধর্ম ও সমাজচেতনার সমন্বয়ে তার ভাবধারা জীবনব্যাপী পরিলক্ষিত।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সংসদীয় জীবন
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩ নং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংসদীয় কমিটি ও আলোচনা সভায় নারী কল্যাণ, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সংসদী পর্যায়ে তার লক্ষ্য ছিল নীতি প্রণয়নে নারী দিকনির্দেশনার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
“নারী শিক্ষা ও আত্মবিশ্বাসই সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। জীবনের প্রতিটি স্তরে নারীকে স্বনির্ভর ও সম্মানজনক জীবন দেয়াই আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল।”
— হাফেজা আসমা খাতুন (উক্তি, স্মরণোক্তি)
মহিলা বিভাগের নেতৃত্ব ও কাজ
জামায়াতে ইসলামী’র মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে আসমা খাতুন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সংগঠন গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রশিক্ষণ কর্মশালা, শিক্ষা ক্যাম্প ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালিয়ে নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কাজ করেছেন। স্থানীয় স্তরে তার কাজের ছোঁয়া বহু নারীর জীবন পরিবর্তন করেছে।
সমাজসেবা ও শিক্ষা উদ্যোগ
তার সমাজসেবা কার্যক্রমের মধ্যে অসচ্ছল নারীদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা, পরিবারের ভেতরে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করা, এবং যুবতীদের নৈতিক ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এসব উদ্যোগে তিনি স্থানীয় সমাজকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে গেছেন।
রূপান্তর ও স্মরণ
বার্ধক্যজনিত কারণে ২০ জানুয়ারি ২০২৫ সালে ইন্তেকালকালে হাফেজা আসমা খাতুনকে বহু শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করা হয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোতে তার মৃত্যুতে শোকসভা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর জীবন ও কাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে।
উপসংহার
হাফেজা আসমা খাতুন একটি ধারাবাহিক ও নিবেদিত জীবন যাপন করেছেন—রাজনীতি, ধর্মীয় শিক্ষা ও সমাজসেবার মাধ্যমে তিনি নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। তার নেতৃত্ত্ব ও মূল্যবোধ অনেকে অনুসরণ করে চলবে এবং তা আগামী দিনের নারী নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখবে।