✍️ রাজনৈতিক নেতা | সমাজসেবী | হাফেজা | নারী শিক্ষার অগ্রদূতহাফেজা আসমা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত নারী রাজনৈতিক নেতা, সমাজসেবী এবং ধর্মীয় মূল্যবোধভিত্তিক নারী উন্নয়ন আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক। তিনি ১৯৯১ সালে ২৩ নং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চা, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সমাজ গঠনে নিবেদিত মনোভাব তাঁকে দেশের নারীদের কাছে এক অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে।
“নারীকে দ্বীনি শিক্ষা, সাহস ও মর্যাদার আলোতে দাঁড় করানোই সমাজ উন্নয়নের প্রথম ধাপ।” – হাফেজা আসমা খাতুন
প্রারম্ভিক জীবন ও ধর্মীয় শিক্ষা
আসমা খাতুন শৈশব থেকেই ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন এবং অল্প বয়সেই সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। হাফেজা হিসেবে তিনি কোরআনের শিক্ষা, তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা এবং নৈতিক জ্ঞানের ওপর দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলেন। তাঁর পরিবার ছিল ধর্মচর্চা, নীতি-নৈতিকতা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ। এই পরিবেশই তার ভবিষ্যৎ চিন্তা, কর্মধারা ও নেতৃত্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
রাজনৈতিক জীবন ও সংসদীয় দায়িত্ব
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর আসমা খাতুন নারী শিক্ষা, পরিবার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং নৈতিক মূল্যবোধভিত্তিক নীতিনির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সংসদীয় কমিটিগুলোতে অংশগ্রহণ করে নারী উন্নয়নকে রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সংযুক্ত করার প্রয়াস চালান। তাঁর বক্তব্য, উপস্থাপনা এবং যুক্তিগুলো ছিল শালীনতা, প্রজ্ঞা ও বাস্তবতাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিপূর্ণ।
তার মতে, একজন শিক্ষিত ও সচেতন নারী পুরো পরিবার এবং সমাজকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই তিনি সংসদে নারীর শিক্ষা, দাম্পত্য মূল্যবোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তা জোরদারে নীতিগত যুক্তি তুলে ধরতেন।
মহিলা বিভাগের নেতৃত্ব ও সংগঠন নির্মাণ
জামায়াতে ইসলামী মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে আসমা খাতুন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠন গঠন, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালনা করেন। তিনি নারীদের আত্মমর্যাদা, নেতৃত্বগুণ, চরিত্র গঠন এবং সামাজিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দিতেন। তাঁর নেতৃত্বে অসংখ্য নারী রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে সমাজ পরিবর্তনের অংশ হয়ে ওঠে।
“নারীর মাঝে যদি ইমান, জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা থাকে—তাহলে পুরো জাতি সঠিক পথে অগ্রসর হয়।”
সমাজসেবা, শিক্ষা ও মানবিক কর্মকাণ্ড
দীর্ঘ সময় ধরে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে অসচ্ছল নারীদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম, নৈতিক প্রশিক্ষণ, পরিবার উন্নয়ন কর্মসূচি এবং যুবতীদের দ্বীনি-নৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সমাজসেবামূলক উদ্যোগগুলো সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে।
স্বামী-সন্তান, পরিবার এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, মানবিকতা এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে তিনি যে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, তা আজও অনেকে অনুসরণ করেন।
মৃত্যু ও সমাজের প্রতিক্রিয়া
২০ জানুয়ারি ২০২৫ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করে। স্মরণসভা, আলোচনা অনুষ্ঠান এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি সভায় তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন ও ত্যাগকে সম্মান জানানো হয়। তিনি যে মূল্যবোধ, নেতৃত্বগুণ ও সমাজসেবার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা আগামী প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।
সাহিত্য রচনা ও গবেষণা
হাফেজা আসমা খাতুন শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি ছিলেন একজন মননশীল লেখিকা। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোতে শিশু শিক্ষা, দাওয়াত, নারী উন্নয়ন, পারিবারিক জীবন, পবিত্র মক্কা-মদীনার সফরনামা এবং ইসলামভিত্তিক গবেষণার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পায়। তাঁর লেখায় সহজ ভাষা, বাস্তব জীবনধারা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের গভীরতা পাঠকের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলে।
📥 বই ডাউনলোড
হাফেজা আসমা খাতুন কর্তৃক রচিত ইসলামী pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আপনার শিশুকে কি শিক্ষা দিবেন
২। কাবার পথে রাসুল সা. এর দেশে
৩। দাওয়াতে দীনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
৪। নারী মুক্তি আন্দোলন ও ইসলাম
সংগ্রহ: বইগুলি আপনার ভালো লাগলে দয়া করে নিকটবর্তী লাইব্রেরি থেকে ক্রয় করুন।
আবার ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ।





