আবু তাহের মিসবাহ: Abu Taher Misbah Books

আবু তাহের মিসবাহ

আবু তাহের মিসবাহ: জীবন, কর্ম ও উত্তরাধিকার

✍️ সমকালীন ইসলামি চিন্তাবিদ | লেখক | শিক্ষা সংস্কারক

প্রস্তাবনা

বাংলাদেশের ইসলামি শিক্ষা ও সাহিত্যে নতুন ধারা প্রবর্তনে অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন
আবু তাহের মিসবাহ (১৯৫৬–২০২০)।
তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষা-আন্দোলন, পাঠ্যপুস্তক রচনা, অনুবাদ, সম্পাদনা এবং বাংলা সাহিত্যে ইসলামি মূল্যবোধ প্রচারে কাজ করেছেন।
তিনি শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না; বরং একাধারে গবেষক, চিন্তাবিদ ও সংস্কারক, যিনি প্রজন্মকে নতুন চিন্তা ও জ্ঞানচর্চার দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন।

“আবু তাহের মিসবাহ ছিলেন এমন এক আলোকবর্তিকা, যিনি শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং নতুন প্রজন্মের জন্য চিন্তা ও শিক্ষা সংস্কারের দরজা উন্মুক্ত করেছিলেন।”

প্রারম্ভিক জীবন

১৯৫৬ সালের ৬ মার্চ আবু তাহের মিসবাহ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মিছবাহুল হক।
যদিও তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল কুমিল্লায়, তবে শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকায়।
ধর্মপ্রাণ পরিবারের পরিবেশে বেড়ে ওঠা মিসবাহ শৈশবকাল থেকেই ইসলামি শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন।

শিক্ষাজীবন

শিক্ষাজীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হয় জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে।
পরবর্তীতে তিনি জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়ায় অধ্যয়ন করেন।
১৯৭৭ সালে **আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া** থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন করেন।
এই পর্যায়ে তিনি কেবল পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং ইসলামি সাহিত্য, আরবি ভাষা, ফিকহ ও তাফসীর বিষয়ে গভীর গবেষণা চালান।

কর্মজীবন

মিসবাহের কর্মজীবন শুরু হয় জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় শিক্ষকতার মাধ্যমে।
এরপর প্রায় ২৫ বছর তিনি জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়ায় শিক্ষকতা করেন।
এ সময়ে তিনি মাদানি নেসাব প্রণয়নের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন।
১৯৯২ সালে **আবদুল হাই পাহাড়পুরী**র তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত **মাদরাসাতুল মদিনা** তাঁর জীবনকর্মে নতুন মোড় আনে। এখান থেকেই মাদানি নেসাব বাস্তবায়িত হতে শুরু করে।

“মাদানি নেসাব শুধু একটি পাঠ্যক্রম নয়, বরং এটি ছিল প্রজন্মকে সহজ ও প্রায়োগিক শিক্ষার মাধ্যমে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করার বিপ্লবী চিন্তা।”

শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন

শিক্ষকতা করার পাশাপাশি তিনি হাতে লেখা আরবি পত্রিকা ইকরা প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কারের সূচনা করেন।
তাঁর লক্ষ্য ছিল ইসলামি শিক্ষাকে আরও সহজবোধ্য ও প্রয়োগযোগ্য করা।
এই চিন্তার বাস্তব রূপ পায় মাদরাসাতুল মদিনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
তিনি মনে করতেন ইসলামি শিক্ষায় শুধু ফিকহ ও তাফসীর নয়, বরং সাহিত্যিক ও সৃজনশীল দিকও অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি।
ফলস্বরূপ তিনি বহু পাঠ্যবই রচনা করেন, যা আজও দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় পড়ানো হয়।

রচনাবলী

আবু তাহের মিসবাহের রচনাবলী বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়। তিনি একাধারে পাঠ্যবই রচয়িতা, সাহিত্যিক, অনুবাদক ও সম্পাদক ছিলেন।

  • পাঠ্যবই: এসো আরবী শিখি, এসো কোরআন শিখি, এসো ফিকহ শিখি, ইসলামকে জানতে হলে, ইলাল আরাবীয়াহ ইত্যাদি।
  • বাংলা সাহিত্য: বায়তুল্লাহর মুসাফির, বাইতুল্লাহর ছায়ায়, দরদী মালীর কথা শোনো, এসো কলম মেরামত করি, তাফসীরুল কুরআনিল কারীম ইত্যাদি।
  • অনুবাদ: কবুল করুন আপনার আমানত, তোমাকে ভালবাসি হে নবী, মুসলিম উম্মাহর পতনে : বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?, কাসাসুন নাবিয়্যিন ইত্যাদি।
  • অভিধান: আল মানার (বাংলা-আরবি)।
  • সম্পাদনা: তাইসিরুল ফিকহিল মুয়াসসার, পুষ্পসমগ্র, শিশু আকীদা সিরিজ (১–১০), শিশু সীরাত সিরিজ (১–১০) ইত্যাদি।

চিন্তাধারা

আবু তাহের মিসবাহ বিশ্বাস করতেন ইসলামি শিক্ষা কেবল জ্ঞানার্জনের জন্য নয়, বরং তা শিক্ষার্থীর জীবনে প্রয়োগযোগ্য হওয়া জরুরি।
তাঁর রচিত বইগুলোতে জটিল বিষয়গুলো সহজ ভাষায় উপস্থাপিত হয়েছে, যাতে সাধারণ পাঠকও সহজে উপকৃত হতে পারে।

“ইসলামি শিক্ষা কেবল জ্ঞানার্জনের জন্য নয়, বরং তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য করে তোলার জন্য।” – আবু তাহের মিসবাহ

প্রভাব

মিসবাহের প্রবর্তিত মাদানি নেসাব বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।
অসংখ্য মাদরাসা এই পাঠ্যক্রম গ্রহণ করে।
তাঁর সাহিত্যকর্ম ও অনুবাদ সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামি জ্ঞানকে সহজে পৌঁছে দিয়েছে।
বাংলাদেশের ইসলামি সাহিত্যাঙ্গনে তাঁর অবদান অমূল্য।
তিনি প্রমাণ করেছেন, ইসলামি শিক্ষা শুধু মাদরাসার দেয়ালে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা পুরো সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

উপসংহার

আবু তাহের মিসবাহ ছিলেন প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা ও সাহিত্যকে গড়ে তোলার এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
তাঁর জীবনকর্ম আজকের প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।
তিনি যেমন একজন আলেম ছিলেন, তেমনি একজন চিন্তাবিদ ও সংস্কারকও ছিলেন।

আরও পড়ুন

👉 ইসলামী সাহিত্য
👉 উ শিরোনামের বই


error: Content is protected !!
Scroll to Top