আব্বাস আলী খান: Abbas Ali Khan Books

আব্বাস আলী খান
আব্বাস আলী খান কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।

১। আলেমে দ্বীন সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী
২। ইসলাম ও জাহেলিয়াতের চিরন্তন দন্দ
৩। ইসলামী বিপ্লব একটি পরিপূর্ণ নৈতিক বিপ্লব
৪। ঈমানের দাবী
৫। একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
৬। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস
৭। বাংলার মুসলমানের ইতিহাস ১ম ও ২য় খন্ড
৮। বিকালের আসর
৯। বিশ্বের মনিষীদের দৃষ্টিতে মাওলানা মওদূদী ১ম খন্ড
১০। মাওলানা মওদুদী একটি জীবন একটি ইতিহাস
১১। মাওলানা মওদুদীর বহুমুখী অবদান
১২। মৃত্যু যবানীকার ওপারে

✍️ শিক্ষক | রাজনীতিবিদ | লেখক | ইসলামী আন্দোলনের দিশারী

আব্বাস আলী খান (১৯১৪ – ১৯৯৯) ছিলেন একজন আদর্শবাদী শিক্ষক, চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ ও ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি। তাঁর দীর্ঘ জীবন বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে রেখেছে গভীর প্রভাব। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়—সব যুগেই তিনি ছিলেন নীতিনিষ্ঠ, সততা ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। সমাজ পরিবর্তন, ইসলামী মূল্যবোধের প্রচার এবং শিক্ষার বিস্তারে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য।

“আব্বাস আলী খানের জীবন ছিল আলোর প্রদীপ, যা ইসলামী আন্দোলনের অন্ধকার পথকে উজ্জ্বল করেছিল।”

প্রারম্ভিক জীবন ও জন্মপরিচয়

১৯১৪ সালের ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহের এক সোমবার জয়পুরহাট জেলার প্রখ্যাত খান পরিবারে জন্ম নেন আব্বাস আলী খান। তাঁদের পরিবার মূলত পাঠান বংশোদ্ভূত, যাঁরা আফগানিস্তান থেকে এ অঞ্চলে এসে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিলেন। দাদা সুবিদ আলী খানের স্নেহ ও যত্নে তাঁর শৈশব কেটেছে অত্যন্ত ধর্মীয় পরিবেশে। পারিবারিক আচার-অনুশাসন তাঁর ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষাজীবন

ছোটবেলা থেকেই তাঁর শিক্ষার ভিত্তি গড়ে ওঠে ধর্মীয় পরিবেশে। অল্প বয়সেই আযান ও বিভিন্ন দোয়া মুখস্থ করে ফেলেন। বাড়ির মৌলভী সাহেবের কাছে শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ শেষে স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির নিউ স্কিম মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করে কৃতিত্বের সাথে বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৩০ সালে মেট্রিক, ১৯৩২ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৩৫ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ সম্পন্ন করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজে বি.টি. কোর্স শুরু করলেও সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের কারণে তিনি সেই পাঠ শেষ করতে পারেননি।

“শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জন নয়; এটি আদর্শ, চরিত্র ও দায়িত্ববোধ গঠনের মাধ্যম।”

কর্মজীবন

আব্বাস আলী খানের কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময় ও সংগ্রামী। বিএ পাসের পর তিনি রংপুরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে সরকারি দপ্তরেও কাজ করেন, তবে কঠোর নৈতিকতা আর মুক্তচিন্তার কারণে একাধিক চাকরি তিনি স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেন। পাকিস্তান আমলে এ কে ফজলুল হকের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন তাঁর কর্মজীবনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। শেষ পর্যন্ত তিনি শিক্ষকতা, সাহিত্যচর্চা ও ইসলামী আন্দোলনকে জীবনের প্রধান অঙ্গ হিসেবে বেছে নেন।

জামায়াতে যোগদান

১৯৫৪ সালে গোলাম আযমের একটি বক্তব্য তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৫৫ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং এক বছর পর রুকন হিসেবে মনোনীত হন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর নেতৃত্বগুণ ও সংগঠনী দক্ষতা সকলের নজর কাড়ে। এর ফলেই তিনি রাজশাহী বিভাগের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পান।

রাজনৈতিক জীবন ও জাতীয় পরিষদ

১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের শাসনামলে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরিষদে তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ছিল মুসলিম পারিবারিক আইন বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপন ও তা পাশ করানো। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজব্যবস্থার মূল কাঠামোকে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত হতে হবে।

“পারিবারিক আইনকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সংরক্ষণ করা ছিল আমার নৈতিক দায়িত্ব।” — আব্বাস আলী খান

কারাবন্দী জীবন

স্বাধীনতার পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি একাধিকবার কারাবন্দী হন। ১৯৭২ সালে গ্রেফতার হয়ে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কারাগারে থাকেন। এই সময়েই তিনি রচনা করেন প্রভাবশালী দুটি গ্রন্থ—‘স্মৃতী সাগরে ঢেউ’ এবং ‘মৃত্যু যবনিকার ওপারে’। তাঁর লেখনীতে প্রতিফলিত হয় গভীর আধ্যাত্মিকতা, আত্মসমালোচনা এবং মূল্যবোধপূর্ণ জীবনদর্শন।

চিন্তাধারা ও প্রভাব

ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি মনে করতেন, সমাজ পরিবর্তনে প্রয়োজন নৈতিকভাবে দৃঢ়, আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত ও দায়িত্বশীল মানুষ। তাঁর বক্তৃতা, লেখা এবং সংগঠন পরিচালনার দক্ষতা বহু তরুণকে ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছে।

রচনাবলী

তার মৌলিক ও অনুবাদসহ প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ত্রিশটির বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ইতিহাস, ইসলাম, সমাজচিন্তা, অর্থনীতি ও আত্মজীবনীমূলক রচনা।

জীবনের শেষ প্রান্ত

জীবনের শেষ বয়স পর্যন্ত তিনি ইসলামী আন্দোলনের কাজে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি নায়েবে আমীর ও ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুন

👉 মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
👉 উইকিপিডিয়া জীবনী

সংগ্রহ: বইগুলি আপনার ভালো লাগলে দয়াকরে নিকটবর্তী লাইব্রেরী থেকে ক্রয় করুন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚

error: Content is protected !!
Scroll to Top