আব্বাস আলী খান: Abbas Ali Khan Books

আব্বাস আলী খান

আব্বাস আলী খান: জীবন, কর্ম ও অবদান

✍️ শিক্ষক | রাজনীতিবিদ | লেখক | ইসলামী আন্দোলনের দিশারী

প্রস্তাবনা

আব্বাস আলী খান (১৯১৪ – ১৯৯৯) ছিলেন একাধারে শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, লেখক ও ইসলামী আন্দোলনের অকৃত্রিম দিশারী।
তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও আদর্শিক দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময় পর্যন্ত তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতি, শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।

“আব্বাস আলী খানের জীবন ছিল আলোর প্রদীপ, যা ইসলামী আন্দোলনের অন্ধকার পথকে উজ্জ্বল করেছিল।”

প্রারম্ভিক জীবন ও জন্মপরিচয়

১৯১৪ সালের ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহের সোমবার জয়পুরহাট জেলার খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আব্বাস আলী খান।
তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন পাঠান, যারা আফগানিস্তান থেকে এদেশে এসে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
দাদা সুবিদ আলী খান প্রিয় দৌহিত্রের নাম রাখেন আব্বাস আলী খান।
শৈশব কাটে দাদার স্নেহ, ভালোবাসায় ও পারিবারিক ধর্মীয় আবহে।

শিক্ষাজীবন

ছোটবেলা থেকেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ধর্মীয় আবহে। অক্ষর জ্ঞানের আগেই তিনি আযান মুখস্থ করেছিলেন।
বাড়ির মৌলভী সাহেবের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হন।
পরে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির নিউ স্কিম মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন এবং কৃতিত্বের সাথে বৃত্তি অর্জন করেন।

১৯৩০ সালে তিনি মেট্রিক, ১৯৩২ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৩৫ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে ডিস্টিংশন সহ বিএ পাস করেন।
পরবর্তীতে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজে বি.টি. পড়াশোনা শুরু করলেও সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের কারণে তা শেষ করতে পারেননি।

“আব্বাস আলী খান বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃত শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা হতে হবে চরিত্র ও আদর্শ গঠনের মাধ্যম।”

কর্মজীবন

তাঁর কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। প্রথমে শিক্ষকতা, পরে সরকারি চাকরি, আবার লেখালেখি ও রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
কারমাইকেল কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর রংপুরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
পরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি করলেও ধর্মীয় মূল্যবোধ ও স্বাধীনচেতা মানসিকতার কারণে একাধিক চাকরি ছেড়ে দেন।

পাকিস্তান আমলে তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
তবে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতা ও ইসলামী আন্দোলনেই তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেন।

জামায়াতে যোগদান

১৯৫৪ সালের ডিসেম্বরে গোলাম আযমের বক্তব্য শুনে জামায়াতে ইসলামীতে আকৃষ্ট হন।
১৯৫৫ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে যোগ দেন এবং ১৯৫৬ সালে রুকন হন।
অল্প সময়েই তাঁর যোগ্যতা ও নেতৃত্বের কারণে তিনি রাজশাহী বিভাগের আমীর নিযুক্ত হন।

রাজনৈতিক জীবন ও জাতীয় পরিষদ

১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের আমলে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল কুখ্যাত মুসলিম পারিবারিক আইন বাতিলের জন্য পরিষদে বিল উত্থাপন ও তা পাশ করানো।

“পারিবারিক আইনকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সংরক্ষণ করা আমার জীবনের অন্যতম সাফল্য।” — আব্বাস আলী খান

কারাবন্দী জীবন

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তিনি দীর্ঘ কারাজীবন অতিবাহিত করেন।
১৯৭২ সালে গ্রেফতার হয়ে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কারাগারে থাকেন।
কারাগারে তিনি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্মৃতী সাগরে ঢেউ’‘মৃত্যু যবনিকার ওপারে’ রচনা করেন।

চিন্তাধারা ও প্রভাব

আব্বাস আলী খানের চিন্তাধারার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।
তিনি বিশ্বাস করতেন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের হতে হবে নৈতিকভাবে দৃঢ়, আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।

রচনাবলী

তাঁর মৌলিক ও অনুবাদ মিলিয়ে প্রায় ত্রিশটিরও বেশি গ্রন্থ রয়েছে।

প্রসিদ্ধ মৌলিক গ্রন্থ

  • বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস
  • জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস
  • মাওলানা মওদূদী : একটি জীবন একটি ইতিহাস
  • ইসলাম ও জাহেলিয়াতের চিরন্তন দ্বন্দ্ব
  • কোরআনের আলো
  • স্মৃতী সাগরে ঢেউ
  • মৃত্যু যবনিকার ওপারে

অনুবাদ গ্রন্থসমূহ

  • পর্দা ও ইসলাম
  • সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং
  • ইসলামী অর্থনীতি
  • জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের ভিত্তি

জীবনের শেষ প্রান্ত

জীবনের শেষ পর্যায়েও তিনি ইসলামী আন্দোলনের কাজে নিরলস শ্রম দিয়ে গেছেন।
১৯৮৯ সালে তাঁর নেতৃত্বেই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি নায়েবে আমীর ও ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যুতে দেশ এক নিবেদিতপ্রাণ নেতা ও আলেমকে হারায়।

“তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাকো এবং চিরন্তন জীবন কাটানোর জন্য এখানে প্রবেশ কর।” — সূরা জুমার ৭৩-৭৪

উপসংহার

আব্বাস আলী খান ছিলেন এক অমর দৃষ্টান্ত, যিনি শিক্ষা, রাজনীতি, সাহিত্য ও ইসলামী আন্দোলনে তাঁর অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
তাঁর সংগ্রামী জীবন আমাদেরকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে আদর্শের প্রতি অটল থেকে সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হয়।

আরও পড়ুন

👉 মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
👉 উইকিপিডিয়া জীবনী


📚 আব্বাস আলী খান এর বইসমূহ

আব্বাস আলী খান কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আলেমে দ্বীন সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী
২। ইসলাম ও জাহেলিয়াতের চিরন্তন দন্দ
৩। ইসলামী বিপ্লব একটি পরিপূর্ণ নৈতিক বিপ্লব
৪। ঈমানের দাবী
৫। একটি আদর্শবাদী দলের পতনের কারণঃ তার থেকে বাঁচার উপায়
৬। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস
৭। বাংলার মুসলমানের ইতিহাস ১ম ও ২য় খন্ড
৮। বিকালের আসর
৯। বিশ্বের মনিষীদের দৃষ্টিতে মাওলানা মওদূদী ১ম খন্ড
১০। মাওলানা মওদুদী একটি জীবন একটি ইতিহাস
১১। মাওলানা মওদুদীর বহুমুখী অবদান
১২। মৃত্যু যবানীকার ওপারে

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top