
✍️ প্রখ্যাত সাংবাদিক | লেখক | কলামিস্ট | সমাজচিন্তক
সালেহ উদ্দীন আহমদ জহুরী (৩১ অক্টোবর ১৯৩৮ – ৭ এপ্রিল ২০০৫) ছিলেন বাংলাদেশি সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট। তিনি শুধু সংবাদ পরিবেশনেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সমাজের অসংগতি, কুসংস্কার এবং অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছেন। ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থা নিয়ে তাঁর লেখনী একদিকে যেমন চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি পাঠকসমাজকে জাগ্রত করেছে।
“সাংবাদিকের দায়িত্ব কেবল খবর পরিবেশন নয়, বরং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ভীক কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা।”
– সালেহ উদ্দিন আহমদ জহুরী
প্রারম্ভিক জীবন:
১৯৩৮ সালের ৩১ অক্টোবর সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসূল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সালেহ উদ্দিন আহমদ। তাঁর পিতা ছিলেন আরমান আলী এবং মাতা সুফিয়া খানম। শৈশব থেকেই তিনি নৈতিক মূল্যবোধ ও জ্ঞানচর্চার পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। পরে জীবনের একটি বড় অংশ তিনি ঢাকার মধুবাগ এলাকার নিলয় মঞ্জিলে বসবাস করেন, যেখান থেকে তিনি দীর্ঘ কর্মজীবন পরিচালনা করেন।
শিক্ষাজীবন:
তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অগ্রসর হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর আগ্রহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা তাঁকে একদিকে লেখক, অন্যদিকে একজন সফল সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তোলে।
“শিক্ষা মানুষের চিন্তাকে প্রসারিত করে এবং তাকে সমাজের পরিবর্তনের হাতিয়ার বানায়।”
– সালেহ উদ্দিন আহমদ জহুরী
সাংবাদিকতা ও কর্মজীবন:
জহুরীর সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ পত্রিকায়। এরপর তিনি ধাপে ধাপে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
প্রথম লেখালেখি:
১৯৬০ সালে সাপ্তাহিক ‘জাহানে নও’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি নিয়মিতভাবে ইসলাম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সমাজের অসংগতি নিয়ে লিখতে থাকেন।
সম্পাদকীয় কাজ:
তিনি দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে নিম্নলিখিত প্রকাশনাগুলোতে কাজ করেছেন:
- সাপ্তাহিক জাহানে নও
- মাসিক মদীনা
- সাপ্তাহিক বাংলার ডাক
- দৈনিক আল মুজাদ্দিদ
- কিশোর কণ্ঠ (সহকারী সম্পাদক)
- দৈনিক সংগ্রাম (সহকারী সম্পাদক)
এছাড়া তিনি সাপ্তাহিক মুসলিম জাহানসহ একাধিক ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করেছেন।
রচনাবলী:
সালেহ উদ্দিন আহমদ জহুরী শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, বরং একজন গবেষণাধর্মী লেখকও ছিলেন। তিনি সমাজের কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি এবং তথ্য বিকৃতির বিরুদ্ধে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর লেখনীতে ধর্মীয় চেতনা যেমন প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, তেমনি সামাজিক বাস্তবতাও ফুটে উঠেছে।
প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলি:
- অপসংস্কৃতির বিভীষিকা (১-৩)
- জহুরীর জাম্বিল (১-২)
- ধূম্রজালে মৌলবাদ
- ক্রীতদাসের মত যাদের জীবন
- খবরের খবর
- স্বজন যখন দুশমন হয়
- শব্দ সংস্কৃতির ছোবল
- তথ্য সন্ত্রাস
- তিরিশ লাখের তেলেসমাত
- মাস্তানদের জবানবন্দি
- প্রেস্টিজ কনসার্ণড
“সালেহ উদ্দিন জহুরীর লেখনীতে আমরা যেমন সমাজ সমালোচনা পাই, তেমনি পাই সত্য অনুসন্ধানের নির্ভীক প্রয়াস।”
– সমালোচক মতামত
চিন্তাধারা:
জহুরীর চিন্তাধারার কেন্দ্রে ছিল ইসলামি আদর্শ, নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সাংবাদিকতা শুধু সংবাদ পরিবেশন নয়, বরং একটি আন্দোলন, যা সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাঁর লেখনীতে ইসলামি মূল্যবোধ, সামাজিক সংস্কার এবং মানবিকতার সমন্বয় দেখা যায়।
প্রভাব:
বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় সালেহ উদ্দিন জহুরীর অবদান ছিল অনন্য। তিনি তরুণ প্রজন্মকে সাহসী ও ন্যায়ভিত্তিক লেখালেখির অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁর কলাম, প্রবন্ধ ও গ্রন্থসমূহ এখনো সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চার জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
“একজন সাংবাদিকের আসল শক্তি তার কলমে; সেই কলম দিয়ে জহুরী সমাজের অন্ধকার দূর করার চেষ্টা করেছেন।”
মৃত্যু:
২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল এই খ্যাতিমান সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশি সাংবাদিকতার জন্য এক বিরাট ক্ষতি ছিল। আজও তাঁর লেখনী, চিন্তাধারা এবং রচনাবলী পাঠক ও সাংবাদিকদের মাঝে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
উপসংহার:
সালেহ উদ্দিন আহমদ জহুরী ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, লেখক ও সমাজচিন্তক। তাঁর লেখনীতে সমাজের অসংগতি, অপসংস্কৃতি ও তথ্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, কলমের শক্তি দিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনা যায়। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যাঙ্গনে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন
👉 দৈনিক সংগ্রাম
👉 ইসলামিক বই সমাহার
📚 সালেহ উদ্দীন আহমদ জহুরী জহুরী কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অপসংস্কৃতির বিভীষিকা
২। জহুরীর জাম্বিল ৩য় খন্ড
৩। তিরিশ লাখের তেলেসমাত
৪। ধুম্রজালে মৌলবাদ
৫। মাস্তানের জবানবন্দী
৬। স্বজন যখন দুশমন হয়






