অধ্যাপক গোলাম আযম: Prof. Ghulam Azam Books

অধ্যাপক গোলাম আযম
Prof. Ghulam Azam Books

গোলাম আযম : জীবন, কর্ম ও উত্তরাধিকার

প্রস্তাবনা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গোলাম আযম একটি বহুল আলোচিত নাম। তিনি ছিলেন একদিকে ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর আমীর। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি রাজনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা ও ইসলামী চিন্তাধারার প্রচারে কাটিয়েছেন। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা উপেক্ষা করা যায় না।

“আমি বিশ্বাস করি, ইসলামের মূলনীতির আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলাই মানুষের জন্য কল্যাণকর।”
— গোলাম আযম


প্রারম্ভিক জীবন

গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা গোলাম কবির ছিলেন একজন ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং মাতা সৈয়দা আশরাফুন্নিসা ছিলেন শিক্ষিত ও ধর্মপ্রাণ নারী। পারিবারিক পরিবেশে তিনি শৈশব থেকেই ইসলামী শিক্ষা ও নৈতিকতার শিক্ষা পান। শৈশবে গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা তাঁর চরিত্রে দৃঢ়তা ও সরলতার ছাপ ফেলেছিল।


শিক্ষাজীবন

গোলাম আযম প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরগাঁও গ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে। পরে ঢাকায় চলে আসেন এবং সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন।

তিনি ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমএ) সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি অসাধারণ নেতৃত্বের পরিচয় দেন এবং দ্রুতই সমসাময়িক ছাত্র রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

“শিক্ষা মানুষকে শুধু আলোকিত করে না, বরং তাকে সমাজ পরিবর্তনের উপযুক্ত হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলে।”
— গোলাম আযম


ছাত্র রাজনীতি ও ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে গোলাম আযম ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন।

ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৭ সালে ডাকসুর জিএস পদে থাকাকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। এজন্য তাঁকে বহুবার গ্রেফতার হতে হয় এবং সরকারি চাকরি থেকেও বঞ্চিত হতে হয়।

“রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে কোনো আপস করা যায় না। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের আত্মার ভাষা।”
— গোলাম আযম, ভাষা আন্দোলনের সময়


কর্মজীবন

শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫০ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি তাবলীগ জামায়াতের কর্মকাণ্ডের সাথেও যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৫২-১৯৫৪ পর্যন্ত রংপুরের আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি তমদ্দুন মজলিসের সঙ্গেও কাজ করেন।

১৯৫৪ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে দলীয় কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অর্জন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতের সেক্রেটারি, পরে সহকারী সেক্রেটারি এবং অবশেষে ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি একই পদে ছিলেন। স্বাধীনতার পরও তিনি দীর্ঘকাল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত দলের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


রচনাবলী ও বৌদ্ধিক অবদান

গোলাম আযম শুধু রাজনীতিক নন, বরং একজন লেখক ও চিন্তাবিদ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ইসলাম, রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে বহু প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন। তাঁর লেখনীতে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, নৈতিকতা ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান স্থান পেয়েছে।

“মুসলমানদের মুক্তি নিহিত রয়েছে আল্লাহর বাণী ও রাসূলের (সা.) সুন্নাহ মেনে চলার ভেতরে।”
— গোলাম আযম


চিন্তাধারা

গোলাম আযমের চিন্তাধারার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা। তিনি মনে করতেন, রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকে ইসলামের নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে সাজানো দরকার। এজন্য তিনি মওদুদীর চিন্তাধারা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন।

তিনি পশ্চিমা ভাবধারা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে সমালোচনা করতেন এবং মনে করতেন, ইসলামের আলোকে সমাজ সংস্কারই মানবতার মুক্তির একমাত্র উপায়।


প্রভাব ও উত্তরাধিকার

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গোলাম আযমের ভূমিকা বিতর্কিত হলেও প্রভাবশালী। তিনি একদিকে ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, অন্যদিকে স্বাধীনতার সময় তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

তবুও ইসলামী রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্ব, লেখনী এবং সাংগঠনিক দক্ষতা প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর অনুসারীরা তাঁকে জামায়াতে ইসলামীর তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে দেখেন। অন্যদিকে সমালোচকেরা তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের কর্মকাণ্ডের কারণে দোষারোপ করেন।

“গোলাম আযম ছিলেন একাধারে নেতা, চিন্তাবিদ ও সংগঠক। তাঁকে ঘিরে বিতর্ক থাকলেও ইসলামী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।”
— সমকালীন এক গবেষক


মৃত্যু

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পর ২৩ অক্টোবর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ রাতে গোলাম আযম ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।


উপসংহার

গোলাম আযম ছিলেন এক জটিল ও বহুমাত্রিক চরিত্র। তাঁর জীবন যেমন ভাষা আন্দোলনের মতো জাতীয় সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত, তেমনি স্বাধীনতার সময়কার ভূমিকার কারণে তিনি সমালোচিতও। তবে তিনি ছিলেন নিরলস রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষাবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় যে রাজনীতি, চিন্তাধারা ও নেতৃত্ব—সবকিছুই সময় ও পরিস্থিতির আলোকে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা পায়।


📚 অধ্যাপক গোলাম আযম এর বইসমূহ

অধ্যাপক গোলাম আযমের pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।

১। অমুসলিম নাগরিক ও জামায়াতে ইসলামী
২। আদম সৃষ্টির হাকিকত
৩। আদর্শ রুকন
৪। আধুনিক পরিবেশে ইসলাম
৫। আযানের মাধ্যেমে কাদেরকে নামাযে ডাকা হয়
৬। আল্লাহ তায়ালার সাথে মানুষের সম্পর্ক
৭। আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন
৮। আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি
৯। আল্লাহর দুয়ারে ধরণা
১০। আসুন আল্লাহর সৈনিক হই
১১। ইকামাতে দ্বীন
১২। ইসলাম ও গনতন্ত্র
১৩। ইসলাম ও দর্শন
১৪। ইসলাম ও বিজ্ঞান
১৫। ইসলামী আন্দোলনঃ কর্মীদের ৭ দফা
১৬। ইসলামী আন্দোলন সাফল্য ও বিভ্রান্তি
১৭। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রাথমিক পুঁজি
১৮। ইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলন
১৯। ইসলামী ঐক্যমঞ্চ চাই
২০। ইসলামী সভ্যতা বনাম পাশ্চাত্ত্য সভ্যতা
২১। ইসলামের পুনরুজ্জীবনে মাওলানা মওদুদীর অবদান
২২। ইসলামের সহজ পরিচয়
২৩। একজন মানুষঃ যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে অত্যাবশ্যক
২৪। কর্মীদের ৭দফা
২৫। কিশোর মনে ভাবনা জাগে
২৬। কুরআন বুঝা সহজ
২৭। কুরআনে ঘোষিত মুসলিম শাসকদের ৪ দফা কর্মসূচি
২৮। খাঁটি মুমিন হতে হলে তাগুতের পাক্কা কাফির হতে হবে
২৯। খাঁটি মুমিনের সহীহ জযবা
৩০। চিন্তাধারা
৩১। জাতীয় সংসদে রাজনৈতিক দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি
৩২। জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি
৩৩। জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য
৩৪। জীবন্ত নামাজ
৩৫। তাওহীদ শিরক ও তিন তাসবীহর হাকীকত
৩৬। তাকবীর তাওয়াক্কুল সবর
৩৭। দীন ইসলামের শিক্ষাদানে বুনিয়াদী গলদ
৩৮। দ্বীন ইসলামের ১৫ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক ধারণা
৩৯। দেশ গড়ার ডাক
৪০। ধর্ম নিরপক্ষ মতবাদ
৪১। নবী জীবনের আদর্শ
৪২। নাফস রূহ কালব
৪৩। পলাশী থেকে বাংলাদেশ
৪৪। পরিপূর্ণ জীবনবিধান হিসেবে ইসলামের সহজ পরিচয়
৪৫। প্রশান্তচিত্ত মুমিনের ভাবনা
৪৬। প্রশ্নোত্তর
৪৭। বাইয়াতের হাকীকত
৪৮। বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী
৪৯। বাংলাদেশী বনাম বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ
৫০। বাংলাদেশে ইসলামী ঐক্য প্রচেষ্টার ইতিহাস
৫১। বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটনাবহুল ৭৫ সালঃ আগস্ট ও নভেম্বর বিপ্লব
৫২। বাংলাদেশের জনগণের নিকট ১৫ আগস্ট কি শেখ মুজিব কি জাতির পিতা
৫৩। বিয়ে তালাক ফারায়েয
৫৪। বিশেষ আবেদন
৫৫। মনটাকে কাজ দিন
৫৬। মযবুত ঈমান
৫৭। মযবুত ঈমান সহীহ ইলম নেক আমল
৫৮। মসজিদের ইমামদের মর্যাদা ও দায়িত্ব
৫৯। মাওলানা মওদূদীকে (র) যেমন দেখেছি
৬০। মানবজাতির স্রষ্টা যিনি, বিধানদাতাও একমাত্র তিনি
৬১। মুমিনের জেলখানা
৬২। মুমিনের প্রথম কাজ
৬৩। মুসলিম নেতাদের এ দশা কেন প্রতিকারই বা কি
৬৪। মুসলিম মা বোনদের ভাবনার বিষয়
৬৫। মুহতারাম আলেমসমাজ ও দ্বীনদারদের খেদমতে জরুরী প্রশ্ন
৬৬। যুক্তির কষ্টিপাথরে জন্মনিয়ন্ত্রণ
৬৭। রাজনৈতিক দলের সংস্কার
৬৮। রাষ্ট্রক্ষমতার উত্থান পতনে আল্লাহ তায়ালার ভূমিকা
৬৯। রাসূলগণকে আল্লাহ তায়ালা কি দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন
৭০। রুকনিয়াতের আসল চেতনা
৭১। রুকনিয়াতের দায়িত্ব ও মর্যাদা
৭২। শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামী রূপরেখা
৭৩। শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান
৭৪। শেখ হাসিনার দুঃ শাসনের ৫ বছর
৭৫। ষ্টাডী সার্কেল
৭৬। সৎ লোকের এতো অভাব কেন
৭৭। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚

1 thought on “অধ্যাপক গোলাম আযম: Prof. Ghulam Azam Books”

  1. Khadimul Islam

    সার্বিক কল্যাণ কামনা করি। ধন্যবাদের ভাষা নেই। খুবই সুন্দর সংগ্রহ। অত‍্যন্ত উপকৃত হলাম। শুকরিয়া।

Comments are closed.

error: Content is protected !!
Scroll to Top