এ জেড এম শামসুল আলম: A Z M Shamsul Alam Books

✍️ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ | প্রশাসক | ইসলামী চিন্তাবিদ | শিক্ষাবিদ

প্রস্তাবনা

এ. জেড. এম. শামসুল আলম (জন্ম: ১৯৩৭, কুমিল্লা) বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল অর্থনীতিবিদ, প্রশাসক ও ইসলামি চিন্তাবিদ। তাঁর বহুমাত্রিক কর্মজীবন সরকারি প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, শিক্ষা ও ইসলামী অর্থনীতির ক্ষেত্রে গভীর অবদান রেখেছে। তিনি ছিলেন একাধারে প্রাজ্ঞ আমলা, শিক্ষানুরাগী ও ইসলামী সমাজব্যবস্থার একজন দৃঢ় বিশ্বাসী।

“প্রশাসন তখনই সফল, যখন তা ন্যায়, জ্ঞান ও সততার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।” – এ. জেড. এম. শামসুল আলম

প্রারম্ভিক জীবন

১৯৩৭ সালে কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার আদ্রা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এ. জেড. এম. শামসুল আলম। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল গফুর চৌধুরী ছিলেন একজন সৎ, নীতিবান ও সমাজপ্রেমী মানুষ। ছোটবেলা থেকেই তিনি অধ্যবসায়, মেধা ও নৈতিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

শিক্ষাজীবন

তিনি ১৯৫২ সালে পূর্ববাংলা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন।
এরপর তিনি ১৯৫৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ (অনার্স) ও ১৯৫৮ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চশিক্ষার ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম কলেজ থেকে M.A. in Development Economics ডিগ্রি লাভ করেন।

“শিক্ষা শুধু ডিগ্রি নয়, এটি চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নের চাবিকাঠি।” – এ. জেড. এম. শামসুল আলম

কর্মজীবন

এ. জেড. এম. শামসুল আলম ছিলেন একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক ও শিক্ষাবিদ।

শিক্ষা ও প্রারম্ভিক পেশা

সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পূর্বে ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। তাঁর পাণ্ডিত্য ও আন্তরিকতা ছাত্রসমাজের মধ্যে গভীর শ্রদ্ধার জন্ম দেয়।

প্রশাসনিক কর্মজীবন

১৯৬৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এসডিও, এডিসি, উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব এবং সচিব পর্যায়ে প্রায় ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সততা ও দক্ষতার কারণে তিনি সর্বস্তরে সম্মানিত ছিলেন।

শিক্ষা ও গবেষণা পরামর্শদাতা

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকতা ও নৈতিকতার সমন্বয় সাধনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

আন্তর্জাতিক অবদান

তিনি বিশ্বের বহু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য সম্মেলনসমূহ

  • খাদ্য ও কৃষি সম্মেলন (FAO), রোম – ১৯৭৭
  • বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন, ম্যানিলা, ফিলিপাইন – ১৯৭৭
  • আন্তর্জাতিক মুসলিম শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্মেলন, ঢাকা – ১৯৮০
  • তৃতীয় বিশ্বের ইসলামিক সম্মেলন, ঢাকা – ১৯৮১
  • আন্তর্জাতিক কুরআন সম্মেলন, ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়া – ১৯৮১
  • ইসলামে মানবাধিকার সম্মেলন, জেদ্দা – ১৯৮১
  • ‘সর্বজনীন ইসলাম’-এর উপর আন্তর্জাতিক সেমিনার, শ্রীলংকা – ১৯৮২
  • ইরাকে অনুষ্ঠিত রেভ্যুলেশনারি সেলিব্রেশন আন্তর্জাতিক সম্মেলন – ১৯৮১

এই সব সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ বাংলাদেশের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেছিল।

শিক্ষা সফর ও আন্তর্জাতিক পরিদর্শন

জনাব শামসুল আলম শিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে প্রায় ৪২টি দেশ সফর করেন।

  • ১৯৯৫-৯৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি প্রকল্প পরিদর্শন।
  • ১৯৯০ সালে BPATC প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় (মিশর) সফর।
  • ইরান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, জর্ডান, মরক্কো ও তিউনিসিয়ায় শিক্ষা সফর।
  • ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, ব্রাইটন, কেমব্রিজ, হেনলি, ও বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন।
  • ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন।

“শিক্ষা সফর দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে, অভিজ্ঞতা দেয় এবং নীতি প্রণয়নে নতুন আলোকপাত করে।” – এ. জেড. এম. শামসুল আলম

সংগঠন ও সমাজসেবা

তিনি ইসলামী একাডেমী, বাংলা একাডেমী, নজরুল একাডেমী, আবুজর গিফারী (রা.) সোসাইটি, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইসলামিক লাইব্রেরি এসোসিয়েশন ও মসজিদ সোসাইটির আজীবন সদস্য ছিলেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইসলামী অর্থনীতি ও উন্নয়ন চিন্তা

ইসলামী অর্থনীতি, ইনস্যুরেন্স ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার আধুনিক প্রয়োগে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি বিশ্বকোষ প্রকল্প, ইমাম প্রশিক্ষণ প্রকল্প, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মসজিদ পাঠাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন।
তাঁর উদ্যোগে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

উপসংহার

এ. জেড. এম. শামসুল আলম ছিলেন একাধারে চিন্তাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও প্রশাসক, যিনি জ্ঞান, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর শিক্ষা, কর্ম ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

“যে ব্যক্তি নীতিকে জীবনের মূল ভিত্তি বানায়, সে-ই সমাজে স্থায়ী প্রভাব রেখে যায়।”


📚 এ জেড এম শামসুল আলম এর বইসমূহ

এ জেড এম শামসুল আলম কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আফগানিস্তান ও তালিবান
২। ক্রীতদাস থেকে সাহবী
৩। ছোটদের ইসলাম
৪। ছোটদের মহানবী
৫। তাবলীগ ও ফযিলত
৬। মহানবী ও শীশু
৭। মুসলিম সঙ্গীত চর্চার সোনালী ইতিহাস
৮। হযরত আলির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক চিঠি

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top