
আলী তানতাবী কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
১। হে আমার ছেলে
২। হে আমার মুসলিম ভাই
৩। হে আমার মেয়ে
✍️ প্রখ্যাত আরব মনীষী | লেখক | বিচারপতি | দাওয়াতি আন্দোলনের অগ্রদূত
শায়েখ আলী বিন মুস্তফা আত-তানতাবী (১৯০৯ – ১৯৯১) ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী আরব চিন্তাবিদ, লেখক ও দাওয়াতি নেতা। তিনি শুধু কলম ও যবানের মাধ্যমে সত্যের প্রচার করেননি, বরং মুসলিম সমাজে চিন্তার নবজাগরণে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। সাহিত্য, ইতিহাস, ইসলামি আইন ও সামাজিক সংস্কার বিষয়ে তাঁর অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়।
“সত্যের পক্ষে আপসহীন থাকা-ই একজন আলেমের প্রকৃত সৌন্দর্য।” – আলী তানতাবী
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
১৯০৯ সালে সিরিয়ার দামেস্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন আলী তানতাবী। তাঁর পিতা শায়েখ মুস্তফা তানতাবী ছিলেন নামকরা আলেম এবং দামেস্কে ফতোয়া প্রদানের দায়িত্ব পালন করতেন। মাত্র ষোলো বছর বয়সে পিতার ইন্তেকালের পর মা ও পাঁচ ভাইবোনকে নিয়ে সংসারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে আসে। শৈশবে তিনি কুরআন, আরবি সাহিত্য ও ইসলামি আইনশাস্ত্রে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে ইসলামী চিন্তাকে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি শুরু করেন।
কর্মজীবন, সাংবাদিকতা ও নেতৃত্ব
ড. আলী তানতাবীর কর্মজীবন বহুমুখী ছিল। **শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা:** ১৯৩১ সালে শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। একইসাথে তিনি আল আইয়াম পত্রিকা সম্পাদনা করতেন, যা সত্যভাষণের কারণে তৎকালীন সরকার বন্ধ করে দেয়। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি সিরিয়ায় শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি ইরাকের বাগদাদের এক কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং সেখানে অবস্থানকালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “বাগদাদ: মুশাহাদাত ওয়া যিকরিয়াত” রচনা করেন। **সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা:** সিরিয়া ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকাকালীন তিনি নির্ভীক কণ্ঠে ফরাসিদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। ন্যায়ের পক্ষে তাঁর আপসহীন অবস্থানের কারণে তাঁকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। **বিচারক হিসেবে দায়িত্ব:** শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি দীর্ঘ সময় বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিচারক হিসেবেও তাঁর সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সাহসী সিদ্ধান্ত তাঁকে জনগণের কাছে বিশেষভাবে প্রিয় করে তোলে। **সৌদি আরবে অধ্যাপনা:** ১৯৬৩ সালে তিনি সৌদি আরব যান এবং পরবর্তীতে ইবনে সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
সাহিত্যকর্ম ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলি
আল্লাহ তাঁকে অসাধারণ লেখনী শক্তি দান করেছিলেন। তাঁর অধিকাংশ লেখা প্রথমে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতো এবং পরে গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়। তাঁর রচনায় ইসলামের চেতনা, ইতিহাসের শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারের দিকনির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
- আবু বকর সিদ্দিকিন (১৯৩৫)
- আখরারু উমর (১৯৫৯)
- আ’লামুত তারিখ (১৯৬০)
- বাগদাদঃ মুশাহাদাত ওয়া যিকরিয়াত (১৯৬০)
- তারিফ আম বিথিনীল ইসলাম (১৯৭০)
- আল জামেউল উমাবি ফি দিমাশক (১৯৬০)
- হেকায়াত মিনাত তারিখ (১৯৬০)
- রিজাল মিনাত তারিখ (১৯৫৮)
- সুওয়ার ওয়া খাওয়াতির (১৯৫৮)
- ফি সাবিলিল ইসলাহ (১৯৫৯)
- কাসাস মিনাত তারিখ (১৯৫৭)
- কাসাস মিনাল হায়াত (১৯৫৯)
- মাআন নাস (১৯৬০)
- মাকালাত ফি কালিমাত (১৯৫৯)
- মিন হাদিসিন নাফস (১৯৬০)
- হুতাফুল মাজদি (১৯৬০)
“ড. আলী তানতাবীর লেখনীগুলো একদিকে ইতিহাসের আয়না, অন্যদিকে সমাজ সংস্কারের পথনির্দেশনা।” – সমালোচক মতামত
চিন্তাধারা ও প্রভাব
ড. তানতাবীর চিন্তাধারায় সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সামাজিক সংস্কার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি ইসলামকে শুধুমাত্র ইবাদত নয়, বরং জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর কলম তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্বশীল, সত্যনিষ্ঠ ও সমাজ সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ড. আলী তানতাবীর প্রভাব আরব বিশ্বের সীমা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিস্তৃত হয়। তাঁর বইগুলো আজও আরব দেশসমূহে ব্যাপকভাবে পাঠ করা হয়। তিনি ইতিহাস, সাহিত্য ও ইসলামি আইনকে সহজ ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় উপস্থাপন করায় সাধারণ মানুষও তাঁর রচনায় আকৃষ্ট হয়েছেন।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
১৯৯১ সালের ১৪ রমজান, শুক্রবার, জেদ্দার বাদশাহ ফাহাদ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরদিন মসজিদুল হারামে জানাযা শেষে তাঁকে মক্কাতুল মুকাররমার কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যু আরব ও মুসলিম বিশ্বে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছিল। ড. আলী তানতাবী ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি শিক্ষা, সাহিত্য, দাওয়াত ও বিচারকার্যে অমর অবদান রেখে গেছেন। তাঁর জীবন কেবল ব্যক্তিগত সফলতার ইতিহাস নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর জাগরণের আহ্বান। তাঁর রচনাবলী ও চিন্তাধারা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সত্য, ন্যায় ও ইসলামের পথে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন
👉 মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের বই
👉 বর্ণমালা অনুসারে বইয়ের তালিকা
সংগ্রহ: বইগুলি আপনার ভালো লাগলে দয়াকরে নিকটবর্তী লাইব্রেরী থেকে ক্রয় করুন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚




