ড. আবদুল্লাহ আযযাম: Dr. Abdullah Azzam Books

✍️ প্রখ্যাত মুজাহিদ | আলেম | শিক্ষক | দাওয়াহ ও জিহাদের অগ্রদূত

প্রস্তাবনা

ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (১৯৪১ – ১৯৮৯) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, আলেম, শিক্ষক ও জিহাদের অগ্রদূত।
ফিলিস্তিনের মুক্তি এবং আফগান জিহাদে তাঁর অবদান তাঁকে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
তিনি দাওয়াহ, শিক্ষা এবং জিহাদের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আত্মচেতনা জাগিয়ে তুলেছিলেন।

“মুসলিম উম্মাহর সম্মান ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ হলো আল্লাহর পথে জিহাদ।” – শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম

প্রারম্ভিক জীবন

শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম ফিলিস্তিনের জেনিন প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন গম্ভীর, নিষ্ঠাবান এবং চিন্তাশীল কিশোর। অল্প বয়সেই দাওয়াহ কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং ইসলামী চেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা শুরু করেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তাঁর অসাধারণ মেধা ও নৈতিক চরিত্র দেখে শিক্ষকরা বিস্মিত হন।
শিক্ষকেরা বিশ্বাস করতেন, তিনি একদিন ইসলামের খেদমতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

শিক্ষাজীবন

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সফলতার সাথে শেষ করার পর তিনি এগ্রিকালচার কাদরী কলেজ-এ ভর্তি হয়ে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
পরে দক্ষিণ জর্দানের আদ্দির গ্রামে শিক্ষকতা শুরু করলেও তাঁর জ্ঞানপিপাসু মন স্থির থাকেনি।
তিনি দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬৬ সালে শরিয়াহতে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর ১৯৭১ সালে মিসরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী আইন-এ মাস্টার্স এবং উসূলুল ফিকহ-এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

“শিক্ষা শুধু ডিগ্রি অর্জনের জন্য নয়, বরং উম্মাহর দায়িত্ব পালনের শক্তি অর্জনের জন্য।” – শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম

কর্মজীবন

শিক্ষকতা

ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি সৌদি আরবের বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
পরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
তাঁর লেকচার ও গবেষণা তরুণদের মাঝে ইসলামী চেতনা জাগিয়ে তোলে।

দাওয়াহ ও নেতৃত্ব

আযযাম তরুণদের ইসলামী চেতনা, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের শিক্ষা দিতেন।
তিনি ইসলামী আন্দোলন ও জিহাদে অংশগ্রহণকে মুসলিমদের ঈমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে তুলে ধরতেন।
বিশেষ করে আফগান জিহাদে তাঁর অবদান বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করে।

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

আযযামের জীবনে ধর্মানুরাগ, আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা ও সংযম বিশেষভাবে প্রতিফলিত ছিল।
তিনি নিয়মিত সিয়াম পালন করতেন, বিশেষ করে দাউদ (আ.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী একদিন রোজা রেখে একদিন বিরত থাকতেন।
তিনি তরুণদের প্রতিভা জাগ্রত করতে উৎসাহ দিতেন এবং তাদের ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত করতেন।

অপবাদ ও ধৈর্য

পেশোয়ারে কিছু লোক তাঁকে অপবাদ দিলেও তিনি ধৈর্য ধারণ করতেন।
তাঁদের জন্য উপহার পাঠাতেন, কখনো কটু বাক্যে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না।
অবশেষে বিরোধীরাই তাঁর চারিত্রিক মহত্ত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

আফগান জিহাদে ভূমিকা

১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জিহাদে শাইখ আযযাম ছিলেন প্রধান সংগঠক ও নেতা।
তিনি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে মুজাহিদদের একত্রিত করে আফগানিস্তানে পাঠাতেন।
তাঁর দাওয়াহ ও বক্তৃতা লাখো তরুণকে জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।

শাহাদাত

১৯৮৯ সালের ২৪ নভেম্বর, শুক্রবার, জুমার নামাযে যাওয়ার পথে তাঁর গাড়ির নিচে বোমা বিস্ফোরিত হয়।
তিনি তাঁর দুই পুত্র ইবরাহীম ও মুহাম্মাদসহ শাহাদাত লাভ করেন।
বিস্ফোরণের পর তাঁর দেহ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়, যা মানুষকে অভিভূত করে।

“আল্লাহর পথে রক্ত ঝরানোই শহীদের সর্বোচ্চ সম্মান।”

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

শাইখ আযযামের শাহাদাত মুসলিম উম্মাহকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
তিনি আফগান জিহাদে বিশ্ব মুসলিমদের একত্রিত করার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা আজও ইতিহাসে অমর।
তাঁর লেখনী, দাওয়াহ ও আত্মত্যাগ তরুণ প্রজন্মকে ইসলামের পথে দৃঢ় থাকতে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে।

উপসংহার

শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম ছিলেন আধুনিক যুগের অন্যতম মহান মুজাহিদ, আলেম ও দাওয়াহ নেতা।
তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন আলেম শুধু শিক্ষার মঞ্চেই নয়, বরং কর্মক্ষেত্রেও ইসলামের প্রকৃত বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন।
তাঁর শাহাদাত মুসলিম বিশ্বের জন্য এক অমূল্য ত্যাগ, যা যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকবে।

আরও পড়ুন

👉 মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
👉 ইসলামি বইয়ের তালিকা


error: Content is protected !!
Scroll to Top