আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায: Abdul Aziz Bin Abdullah Bin Baz Books

আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায

শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায : জীবন, কর্ম ও উত্তরাধিকার

✍️ প্রখ্যাত ইসলামি আলেম | গ্র্যান্ড মুফতী | ফকীহ | মুহাদ্দিস

প্রস্তাবনা

শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (২২ নভেম্বর ১৯১০ – ১৩ মে ১৯৯৯) ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাবিদ, ফকীহ ও মুহাদ্দিস।
তিনি সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী হিসেবে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করেন। বিচারক, শিক্ষক ও দাওয়াহ কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব মুসলিম সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
তাঁর ফতোয়া, বক্তৃতা ও রচনাবলী ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে।

“ইলম ও আমল—দুইয়ের সমন্বয়েই প্রকৃত হেদায়েত।” – শাইখ বিন বায (রহ.)

প্রারম্ভিক জীবন

১৯১০ সালের ২২ নভেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায।
তাঁর পরিবার ছিল ইসলামি মূল্যবোধে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত।
শৈশব থেকেই কুরআন-হাদিস শিক্ষায় গভীর আগ্রহী ছিলেন।
কৈশোরে চোখের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং বিশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান।
তবে দৃষ্টিহীনতা তাঁর জ্ঞানার্জনের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি; বরং তিনি অসাধারণ স্মৃতিশক্তির কারণে বিশ্বখ্যাত আলেমে পরিণত হন।

শিক্ষাজীবন

অল্প বয়সেই তিনি কুরআন হিফজ সম্পন্ন করেন এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা অর্জন করেন।
রিয়াদের খ্যাতনামা আলেমদের নিকট হাদিস, ফিকহ, তাফসির ও আকীদাহ শাস্ত্রে জ্ঞান আহরণ করেন।
তিনি সাহিহ বুখারী, মুসলিম, এবং কুতুবুস সিত্তাহ সহ প্রাচীন ইসলামি গ্রন্থের উপর বহুবার দারস সম্পন্ন করেন।

“শিক্ষা শুধু বই পড়ার নাম নয়, বরং সত্যকে উপলব্ধি করে জীবনে বাস্তবায়নের নাম।” – শাইখ বিন বায

কর্মজীবন

বিচারক হিসেবে

মাত্র ২৭ বছর বয়সে আল-খারজ এলাকায় বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।
চৌদ্দ বছর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে দাওয়াহ ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

শিক্ষক ও প্রশাসক

পরে রিয়াদ শরীয়াহ কলেজে শিক্ষকতা করেন।
১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর এবং পরে চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

গ্র্যান্ড মুফতী

১৯৭৫ সালে তিনি সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী নিযুক্ত হন।
একইসঙ্গে ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বোর্ডের প্রধান হিসেবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এই সময়ে তাঁর জারি করা অসংখ্য ফতোয়া বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজে প্রভাব বিস্তার করে।

রচনাবলী

শাইখ বিন বায বহু গ্রন্থ ও ফতোয়া সংকলনের রচয়িতা। তাঁর রচনাবলী ইসলামী আকীদাহ, ফিকহ, তাফসির ও সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সমৃদ্ধ।

প্রসিদ্ধ গ্রন্থাবলি

  • সঠিক আকীদাহ ও তার পরিপন্থী বিষয়সমূহ
  • আল্লাহর দিকে আহ্বানের ফযীলত
  • বিদআতের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা
  • হজ্জ, উমরা ও জিয়ারত সম্পর্কিত বিধান
  • জাতীয়তাবাদের ক্ষতি
  • মজমু‘ আল-ফাতাওয়া (সংকলন)

“শাস্ত্রের আলো ছাড়া কোনো দিশা নেই।” – শাইখ বিন বায

চিন্তাধারা

শাইখ বিন বায সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহকে সর্বোচ্চ মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
তিনি সালাফে সালেহীনদের পথ অনুসরণের উপর জোর দিয়েছেন।
বিদআতের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান ও শরীয়াহর বাস্তব প্রয়োগে দৃঢ় আহ্বান তাঁকে বিশেষভাবে আলোচিত করেছে।

প্রভাব

তাঁর ফতোয়া ও রচনাবলী আরব বিশ্বের বাইরেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে।
হাজারো আলেম, মুফতী ও গবেষক তাঁর ছাত্র বা অনুসারী ছিলেন।
যদিও কিছু কঠোর মতামতের কারণে সমালোচিত হয়েছেন, তবুও তিনি মুসলিম উম্মাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম হিসেবে স্বীকৃত।

ইন্তেকাল

১৯৯৯ সালের ১৩ মে সৌদি আরবের তায়েফ শহরে তিনি ইন্তেকাল করেন।
মক্কায় কাবা শরিফ প্রাঙ্গণে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
তাঁর মৃত্যু বিশ্ব মুসলিম সমাজের জন্য এক বিরাট ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

“একজন আলেমের উত্তরাধিকার তার বই, ফতোয়া এবং ছাত্রদের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।” – সমসাময়িক আলেম

উপসংহার

শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ.) ছিলেন একাধারে শিক্ষক, বিচারক, মুফতী ও দাওয়াহ নেতা।
তাঁর জীবন ইসলামী জ্ঞানের প্রতি অটল নিষ্ঠা, দাওয়াহ কার্যক্রমে নিবেদন এবং শরীয়াহ বাস্তবায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তাঁর রচনাবলী ও ফতোয়া আজও বিশ্ব মুসলিম সমাজে প্রভাব বিস্তার করছে এবং প্রজন্মকে আলোকিত করছে।

আরও পড়ুন

👉 শাইখ বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
👉 মুহাম্মাদ তাকী উসমানী


📚 আব্দুল আজিজ ইবনে বায এর বইসমূহ

আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায কর্তৃক রচিত ইসলামী pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।

১। অত্যাবশ্যকীয় পাঠ সমূহ
২। অলি আওলিয়াদের অসিলা গ্রহণঃ ইসলামী দৃষ্টিকোণ
৩। আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন এবং এর পরিপন্থী বিষয় বর্জনের অপরিহার্যতা
৪। আল্লাহর দিকে আহবান ও দাঈর গুণাবলী
৫। ইসলাম ও বাস্তবতার আলোকে আরব জাতীয়তাবাদ
৬। ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ
৭। ইসলামী হিজাব বা পর্দা
৮। কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
৯। জাদুকর্ম জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম সম্পর্কে ইসলামী বিধান
১০। জানাযার কিছু বিধান
১১। নবী করীম সাঃ এর নামায আদায়ের পদ্ধতি
১২। নামায ও পবিত্রতা সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ প্রবন্ধ
১৩। নামায পড়ার পদ্ধতি
১৪। নিজ দেশের লোকদের সাথে রোযা রাখবে, না চাঁদ দেখা যে কোনো দেশের সাথে
১৫। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ অত্যাবশ্যক
১৬। পর্দা
১৭। পর্দা ও বেপর্দার বিধান
১৮। বিদআত ও এর মন্দ প্রভাব
১৯। বিদআত থেকে সাবধান
২০। মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দারসের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধান
২১। যাকাত ও সাওম বিষয়ক দুটি পুস্তিকা
২২। বিরোধিতার মোকাবিলায় ইসলামের কর্তনীতি
২৩। রাসূল সাঃ এর উপর আমলের আবশ্যকতা আর তার অস্বীকারকারীর কাফের হওয়া
২৪। রাসূল সাঃ এর সালাত আদায় পদ্ধতি
২৫। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
২৬। শাবানের পনেরতম রজনী উদযাপন শরীয়তের দৃষ্টিভংগি
২৭। সঠিক আকীদা বিশ্বাস ও যা এর পরিপন্থী
২৮। সালাত ও পবিত্রতা সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ প্রবন্ধ
২৯। সুন্নাতে রাসুল আঁকড়ে ধরা এবং বিদাত থেকে দুরে থাকা অপরিহার্য
৩০। হজ্জ উমরাহ ও যিয়ারত

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top