📚 গ্রন্থ পরিচিতি
সহীহ বুখারী — ইসলামী জ্ঞানভান্ডারের এক অমূল্য সংকলন, যা মহান মুহাদ্দিস ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-বুখারী (রহ.) রচিত। এই গ্রন্থের পূর্ণ নাম “আল-জামি’ আস-সহীহ আল-মুসনাদ আল-মুখতাসার মিন উমুর রাসূলিল্লাহ ﷺ ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি”। ইসলামী বিশ্বে এটি হাদীস সংকলনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রামাণ্য ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতে, এটি কুতুবুস সিত্তা (ছয়টি প্রধান হাদীস গ্রন্থ)-এর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। কোরআনের পর ইসলামী শরিয়তের দ্বিতীয় ভিত্তি হিসেবেও এটি স্বীকৃত।
📜 ইতিহাস
ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর শিক্ষক ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ (রহ.)-এর অনুপ্রেরণায় এই মহান গ্রন্থ রচনা শুরু করেন। শিক্ষক একবার বলেছিলেন, “ইচ্ছা করি, কেউ যদি শুধুমাত্র সহীহ হাদীসসমূহ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ লিখে।” তখনই ইমাম বুখারীর হৃদয়ে এই কাজের তীব্র অনুপ্রেরণা জাগে।
তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে, ২১৭ হিজরীতে মক্কা শরীফে হাদীস সংকলনের কাজ শুরু করেন এবং ১৬ বছর পর ২৩৩ হিজরীতে তা সম্পন্ন করেন। সংকলনের প্রতিটি ধাপে তিনি অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেন — প্রতিটি হাদীস লেখার আগে গোসল করতেন, দুই রাকাআত নামাজ আদায় করতেন এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন যেন ভুল কিছু সংযোজিত না হয়।
ইতিহাসে বর্ণিত আছে, তিনি একেকটি অধ্যায়ের শিরোনাম নির্ধারণের পূর্বে রসূল ﷺ-এর কবর ও মসজিদে নববীতে বসে ইস্তেখারা করতেন। এভাবেই জন্ম নেয় ইতিহাসের সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য হাদীস সংকলন — সহীহ বুখারী।
📖 গঠন ও বিষয়বস্তু
সহীহ বুখারী কিতাবে প্রায় ৭,৫৬৩টি হাদীস রয়েছে (দ্বিরুক্তিসহ), এবং প্রায় ২,২৩০টি হাদীস একবার করে বর্ণিত। ইমাম বুখারী (রহ.) প্রায় ৬ লক্ষ হাদীস মুখস্থ করেছিলেন, সেখান থেকে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র সহীহ হাদীসগুলোই সংকলিত করেন।
গ্রন্থটি ইসলামী শরীয়তের মূল শাখাগুলোর ওপর ভিত্তি করে অধ্যায়ে বিভক্ত— যেমন:
- ঈমান, নামাজ, যাকাত, রোযা, হজ, জিহাদ ইত্যাদি।
- ব্যবসা-বাণিজ্য, নৈতিকতা, পারিবারিক সম্পর্ক, ন্যায়বিচার ও সমাজব্যবস্থা।
- নবী করিম ﷺ-এর জীবন ও আচরণ (সীরাহ)।
প্রতিটি অধ্যায়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে সংশ্লিষ্ট হাদীসসমূহ সংকলিত হয়েছে, যা শুধু ধর্মীয় নয় বরং সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানেও অনন্য।
📘 বৈশিষ্ট্য
- সহীহ হাদীস যাচাইয়ের সর্বোচ্চ মানদণ্ডে রচিত।
- প্রতিটি হাদীসের বর্ণনাশৃঙ্খলা (ইসনাদ) বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য।
- প্রতিটি অধ্যায়ে বিষয়ভিত্তিক শিরোনাম (তারাজিমুল আবওয়াব) যুক্ত — যা ইমাম বুখারীর গভীর ফিকহী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।
- হাদীসের পাশাপাশি এর প্রয়োগিক দিক নির্দেশনা বিদ্যমান।
- শিক্ষার্থী, গবেষক ও সাধারণ পাঠক — সবার জন্যই উপযোগী একটি ইসলামি পাঠ্যগ্রন্থ।
🧭 ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও বিশ্লেষণ
সহীহ বুখারী রচনার পর থেকে এর ওপর অসংখ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ (শরহ) লেখা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- ফাতহুল বারী — ইবনে হাজার আসকালানী
- উমদাতুল ক্বারী — ইমাম বদরুদ্দীন আল-আইনী
- ইরশাদুস সারী — আল্লামা কাসতালানী
- আল-কাওয়াকিব আল-দারারী — আল-কিরমানী
- ফয়জুল বারী — আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী
উর্দুভাষায়ও বহু ব্যাখ্যা রচিত হয়েছে যেমন—
- ইন’আমুল বারী — মুফতি তাকি উসমানী
- নে’মাতুল বারী — গোলাম রসূল সাঈদী
- কাশফুল বারী — ইদরীস কাসেমী
- নাসরুল বারী — উসমান গনি
📂 পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
সহীহ বুখারীর বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত PDF খণ্ডগুলো নিচে দেওয়া হলো। নামের উপর ক্লিক করে সরাসরি পড়তে বা ডাউনলোড করতে পারেন —
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত
📕 বুখারী শরীফ ১ম খণ্ড
📘 বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড
📗 বুখারী শরীফ ৩য় খণ্ড
📙 বুখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড
📕 বুখারী শরীফ ৫ম খণ্ড
📗 বুখারী শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড
📘 বুখারী শরীফ ৭ম খণ্ড
📕 বুখারী শরীফ ৮ম খণ্ড
📗 বুখারী শরীফ ৯ম খণ্ড
📙 বুখারী শরীফ ১০ম খণ্ড
তাওহীদ পাবলিকেশন্স প্রকাশিত
📕 সহীহুল বুখারী ১ম খণ্ড
📘 সহীহুল বুখারী ২য় খণ্ড
📗 সহীহুল বুখারী ৩য় খণ্ড
📙 সহীহুল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
📕 সহীহুল বুখারী ৫ম খণ্ড
📘 সহীহুল বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড
আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত
📕 সহীহ আল বুখারী ১ম খণ্ড
📘 সহীহ আল বুখারী ২য় খণ্ড
📗 সহীহ আল বুখারী ৩য় খণ্ড
📙 সহীহ আল বুখারী ৪র্থ খণ্ড
📕 সহীহ আল বুখারী ৫ম খণ্ড
📘 সহীহ আল বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড
হামিদিয়া লাইব্রেরী প্রকাশিত
📕 বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড
📘 বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড
📗 বোখারী শরীফ ৩য় খণ্ড
📙 বোখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড
📕 বোখারী শরীফ ৫ম খণ্ড
📘 বোখারী শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড
📗 বোখারী শরীফ ৭ম খণ্ড
📚 ব্যবহারিক সুপারিশ
সহীহ বুখারী পাঠের ক্ষেত্রে প্রথমে ইসলামিক বিশ্বাস (আকীদাহ) ও নামাজ সম্পর্কিত অধ্যায় থেকে শুরু করা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষক বা আলেমদের তত্ত্বাবধানে অধ্যয়ন করলে হাদীসের গভীর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ সহজে অনুধাবন করা যায়। ব্যক্তিগত পাঠকরা নোট গ্রহণ করে প্রতিটি অধ্যায়ের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে হাদীসচর্চা হবে আরও অর্থবহ।