
✨ “সুনানু ইবনে মাজাহ” গ্রন্থটি — সংকলক ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মাজাহ আল-কাযভিনী (রহঃ) কর্তৃক রচিত, যা কুতুবুস সিত্তা তথা ছয়টি সর্বাধিক প্রামাণ্য হাদীস গ্রন্থের মধ্যে ষষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃত। ইমাম ইবনে মাজাহ (২০৯ হিঃ – ২৭৩ হিঃ) কঠোর পরিশ্রম, নিরলস গবেষণা এবং বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে লক্ষাধিক হাদীস যাচাই-বাছাই করে এই কিতাবটি সংকলন করেন। তাঁর সংকলিত হাদীসসমূহ সহজ, প্রাঞ্জল এবং ফিকহী বিন্যাসে সুসজ্জিত হওয়ায় এটি হাদীস শিক্ষার্থীদের জন্য পথপ্রদর্শক এবং আলেম সমাজের গবেষণার একটি মৌলিক উৎস হিসেবে বিবেচিত।
সংকলনের ইতিহাস ও অনন্য মর্যাদা
ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ) বহু দূর দেশ ভ্রমণ করে হাদীস সংগ্রহ করেন। তিনি প্রায় লক্ষাধিক হাদীস থেকে যাচাই-বাছাই করে সর্বমোট প্রায় **৪,৩৪১টি** হাদীস এই গ্রন্থে সংযোজন করেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো **১,৩৩৯টি** হাদীস, যা বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসাঈ — এই অন্য পাঁচটি প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থে এককভাবে পাওয়া যায় না। সংকলনের কাজ শেষ করে তিনি তাঁর উস্তাদ ইমাম আবু যুর‘আ আর-রাযীর নিকট কিতাবটি পেশ করেন। বিশদ পর্যালোচনার পর তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন, তা এই কিতাবের মর্যাদা ও বৈজ্ঞানিক মানকে প্রকাশ করে:
ইমাম আবু যুর‘আ আর-রাযী (রহঃ) বলেন: “আমি মনে করি, যদি এই কিতাব (সুনানু ইবনে মাজাহ) মানুষের হাতে পৌঁছে যায়, তবে অন্যান্য অনেক সংকলন অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে।”
গঠন ও বিষয়বস্তুর বিন্যাস
সুনানু ইবনে মাজাহ গ্রন্থটি মূলত **৩২টি অধ্যায়** এবং **প্রায় ১৫০০ পরিচ্ছেদ** নিয়ে রচিত। ফিকহি বিন্যাসের কারণে এই গ্রন্থটি একটি ‘সুনান’ (বিধিবিধান সম্পর্কিত হাদীস সংকলন) হিসেবে সুপরিচিত।
- বিষয়ভিত্তিক বিন্যাস: প্রতিটি অধ্যায়ে ফিকহ, আকীদা (বিশ্বাস), আদব (শিষ্টাচার), ইবাদত, লেনদেন, সমাজ ও শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত হাদীস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
- ভূমিকায় বিশেষ গুরুত্ব: গ্রন্থের ভূমিকায় তাওহীদ, সুন্নাহর মর্যাদা, ইলমে হাদীসের গুরুত্ব এবং দ্বীনের মৌলিক নীতিমালা বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
- রেফারেন্সের সুবিধা: প্রতিটি অধ্যায় বিষয়ভিত্তিকভাবে সুসজ্জিত হওয়ায় পাঠক সহজে প্রয়োজনীয় হাদীস খুঁজে বের করতে পারেন।
কুতুবুস সিত্তাহ’য় সুনানু ইবনে মাজাহ’র অবস্থান
বিদ্বানদের সর্বসম্মত অভিমতে সুনানু ইবনে মাজাহ **কুতুবুস সিত্তার ষষ্ঠ গ্রন্থ** হিসেবে স্বীকৃত।
- ঐতিহাসিক স্বীকৃতি: হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, ইবনু কাছীর এবং ইবনুল আছীর-সহ বহু পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় আলেম একে ষষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
- তুলনামূলক বিশ্লেষণ: ফিকহী দিক থেকে শক্তিশালীভাবে বিন্যস্ত হওয়ায় ফিকহবিদগণ এটিকে অন্য সুনান গ্রন্থগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন: “এটি উত্তম কিতাব, বহু দুষ্প্রাপ্য হাদীস এতে অন্তর্ভুক্ত।”
হাদীসের মান ও ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্য
যদিও সুনানু ইবনে মাজাহ’তে অন্য কিতাবগুলোর তুলনায় সামান্য কিছু *যঈফ ও মাওযূ* (দুর্বল ও জাল) হাদীস বিদ্যমান রয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে এর বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব অমলিন। ইমাম ইবনে মাজাহ দুর্বল হাদীসগুলোও অন্তর্ভুক্ত করেছেন যেন মুহাদ্দিস ও শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সনদের সমালোচনা ও হাদীস যাচাইয়ের কৌশল শিখতে পারেন।
- একক হাদীস: অন্য পাঁচটি কিতাবে অনুপস্থিত প্রায় ১,৩০০টি হাদীসের অন্তর্ভুক্তি একে গবেষণার জন্য এক অপরিহার্য ভান্ডার করেছে।
- শিক্ষণমূলক: সংক্ষিপ্ত অথচ গবেষণাধর্মী ভাষা এটিকে ফিকহ ও হাদীস শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পাঠ্য কিতাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
কেন পড়বেন এই গ্রন্থটি?
যারা হাদীসের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াহ ও ফিকহি মাসআলা জানতে চান, তাদের জন্য এই গ্রন্থটি অত্যন্ত উপযোগী।
- কুতুবুস সিত্তার একটি মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে হাদীসের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে।
- ইমাম ইবনে মাজাহর ফিকহী দৃষ্টিভঙ্গি এবং হাদীস সংকলন পদ্ধতি অনুধাবন করতে।
- বিশেষত, অন্য সহীহ গ্রন্থে অনুপস্থিত দুর্লভ হাদীসসমূহ জানতে।
পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
“সুনানু ইবনে মাজাহ” pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে খণ্ডের নামের উপর ক্লিক করুন।
আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত
তাওহীদ পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত
- তাহকীক সুনানু ইবনে মাজাহ ১ম খণ্ড
- তাহকীক সুনানু ইবনে মাজাহ ২য় খণ্ড
- তাহকীক সুনানু ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড
শায়খ আলবানি একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত





