
আবুল হোসেন ভট্টাচার্য কর্তৃক রচিত ইসলামী pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম
২। আমি কেন খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করলাম না
৩। আর্তনাদের অন্তরালে
৪। ইতিহাস কথা কয়
৫। দীন ধর্ম রিলিজিয়ন
৬। বিড়াল বিভ্রাট
৭। মূর্তিপূজার গোড়ার কথা
✍️ ইসলামের একজন অকুতোভয় দাঈ | চিন্তাবিদ | লেখক | সমাজসেবক
মরহুম আবুল হোসেন ভট্টাচার্য (১৯১৬ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩) ছিলেন এমন একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব যিনি হিন্দুধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করে আজীবন ইসলামের প্রচার, গবেষণা ও মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি কেবল একজন দাঈই নন — ছিলেন একজন চিন্তাবিদ, সমাজসংস্কারক, লেখক এবং নও-মুসলিমদের পুনর্বাসন আন্দোলনের অগ্রপথিক। সত্যের অনুসন্ধান তাঁকে ইসলামের পথে নিয়ে আসে এবং সেই পথেই তিনি সমাজে সেবার অমোঘ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
“যে সত্যের সন্ধান করে, আল্লাহ তাকে নিজেই সেই সত্যের পথে পরিচালিত করেন।” – আবুল হোসেন ভট্টাচার্য
আবুল হোসেন ভট্টাচার্যের জীবন ছিল সংগ্রাম, অধ্যবসায় এবং সত্যের অনুসন্ধানের এক দুর্লভ উদাহরণ। ধর্মীয় ও সামাজিক প্রশ্নের গভীরে প্রবেশ করার প্রবণতা তাঁকে শৈশব থেকেই বিশেষভাবে আলাদা করে তুলেছিল। ইসলাম গ্রহণের পর যে আত্মিক পরিবর্তন তিনি অনুভব করেছিলেন, তা তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজকে নতুন দিশা দেয়। তাঁর রচনায় ইসলামের সত্য, যুক্তি ও সৌন্দর্যের এক অনন্য প্রকাশ ঘটে, যা বহু মানুষকে প্রভাবিত করেছে।
প্রারম্ভিক জীবন ও ইসলাম গ্রহণ
১৯১৬ সালে ফরিদপুর জেলার (বর্তমান শরীয়তপুর) গোসাইরহাট উপজেলার দাসের জঙ্গল গ্রামে এক পুরোহিত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেন সুদর্শন ভট্টাচার্য। তাঁর পিতা শশীকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন একজন সম্মানিত পুরোহিত। ছোটবেলা থেকেই ধর্মচর্চা, দর্শন, শাস্ত্র অধ্যয়ন ও নীতিবোধের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল প্রবল। গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সঙ্গে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। **ইসলাম গ্রহণ:** মাত্র ২১ বছর বয়সে, ১৯৩৭ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নাম নেন আবুল হোসেন। একজন মুসলিম শিক্ষকের একটি বাক্য তাঁর অন্তরে গভীর আলোড়ন তোলে – “কর্তা অনেক হলে গোলমাল বাধে; সারা জাহানের কর্তা একজনই।” এই উপলব্ধিই তাঁকে তাওহিদের সন্ধানে নিয়ে যায়।
শিক্ষা, আত্মগঠন ও কর্মজীবন
ইসলাম গ্রহণের পর তিনি রংপুরের মহিমাগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি আরবি, তাফসির, হাদিস ও ফিকহ অধ্যয়নে গভীর মনোযোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আকরম খাঁ, মাওলানা আহসান উল্লাহ, মাওলানা মনিরুজ্জামান আরওয়ারী প্রমুখের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। **কর্মজীবন:** ১৯৪৬ সালে তিনি মালদহ জেলায় সাব-ডিভিশনাল পাবলিসিটি অফিসার হিসেবে সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। দেশ ভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং বাংলাদেশ কৃষিতথ্য সংস্থায় জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ ২৮ বছর সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি সম্পূর্ণভাবে দাওয়াহ, সমাজসেবা ও লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
ইসলাম প্রচার সমিতি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
১৯৬৮ সালে ঢাকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “ইসলাম প্রচার সমিতি”— যা ছিল নও-মুসলিমদের সামাজিক, মানসিক ও ধর্মীয় পুনর্বাসনে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সমিতির মূল উদ্দেশ্য ছিল—
- নও-মুসলিমদের পুনর্বাসন ও মানসিক সহায়তা প্রদান
- অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া
- খ্রিস্টান মিশনারিদের ভ্রান্ত প্রচারণার জবাব প্রদান
- দেশব্যাপী সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা
**আন্তর্জাতিক দাওয়াহ ও স্বীকৃতি:** ১৯৭৮ সালে তিনি রাবিতা আল-আলম আল-ইসলামির আমন্ত্রণে হজ পালন করার সুযোগ লাভ করেন। তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৮৪ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ তাঁকে মরণোত্তর ইফা পুরস্কারে ভূষিত করে।
রচনাবলী ও সাহিত্যকীর্তি
তিনি ছিলেন একজন মননশীল লেখক। প্রায় ২০টিরও বেশি বইয়ে তিনি ইসলাম, তুলনামূলক ধর্ম এবং সমাজসংস্কারের বিষয়গুলো স্পষ্ট যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে—
- বিশ্বনবীর বিশ্বসংস্কার
- রোযাতত্ত্ব
- মরুর ফুল
- আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম
- আমি কেন খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলাম না
- একটি সুগভীর চক্রান্ত ও মুসলিম সমাজ
- কারবালার শিক্ষা
- উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে
- নবী দিবস
- ইতিহাস কথা কয়
- আর্তনাদের অন্তরালে
- শেষ নিবেদন
- দীন ধর্ম রিলিজিয়ন
- এপ্রিল-ফুলের বেড়াজালে মুসলমান সমাজ
- কোরবানীর মর্মবাণী
- ঠাকুরমার স্বর্গযাত্রা
- বিড়াল বিভ্রাট
- মূর্তিপূজার গোড়া কথা
“তাঁর প্রতিটি রচনা ছিল বিশ্বাস, যুক্তি ও প্রজ্ঞার অনন্য সংমিশ্রণ।” – সমালোচক মতামত
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার তিনি ইন্তেকাল করেন। ঢাকার বায়তুল মুকাররমে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে নও-মুসলিম সমাজ হারায় এক মহান পথপ্রদর্শককে। তাঁর জীবন ছিল সত্য, মানবতা ও ইসলামের দাওয়াহর এক উজ্জ্বল দলিল। তাঁর কর্ম আজও বহু মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান জানায়। ইসলাম প্রচার সমিতির মাধ্যমে তিনি যে বীজ বপন করেছিলেন, তা আজও সমাজে আলো ছড়াচ্ছে।
উপসংহার
মরহুম আবুল হোসেন ভট্টাচার্য ছিলেন অন্তরের সত্য অনুসন্ধানী, যিনি ধর্মীয় বিভ্রান্তির অন্ধকারে এক দীপশিখা হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর রচনা, চিন্তা ও দাওয়াহর প্রচেষ্টা চিরকাল মুসলিম বিশ্বে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
“তিনি চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর কলম আজও ইসলামের দাওয়াত বয়ে নিয়ে চলেছে।”
আরও পড়ুন
👉 আহমাদ মুসা জিবরিল
👉 ইউসুফ ইসলাহি
সংগ্রহ: বইগুলি আপনার ভালো লাগলে দয়াকরে নিকটবর্তী লাইব্রেরী থেকে ক্রয় করুন।
আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚





