শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান: Shah Muhammad habibur Rahman Books

✍️ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ | শিক্ষাবিদ | ইসলামী অর্থনীতি চিন্তাবিদ | শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার পথিকৃৎ

প্রস্তাবনা

অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান ছিলেন দেশ-বিদেশে পরিচিত একজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার অগ্রদূত।
তিনি বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতির বিকাশে যে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অবদান রেখেছেন, তা এক প্রজন্মের চিন্তাজগতে অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট, ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্চ ব্যুরোসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি ইসলামী অর্থনীতির প্রয়োগ ও নৈতিক অর্থব্যবস্থার ধারণাকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন।

“অর্থনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল মুনাফা নয়; মানবকল্যাণ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা।” – অধ্যাপক হাবীবুর রহমান

প্রারম্ভিক জীবন

শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমানের জন্ম খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার আমাদি জায়গিরমহলে।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ও অধ্যবসায়ী। বাগেরহাটের পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
রাজশাহীর মতিহার আমবাগানের নীরব পরিবেশে তিনি উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে দেন এবং সেখানেই পরবর্তী জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন।
নিজ গ্রামের প্রতি গভীর টান থাকা সত্ত্বেও তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে গবেষণা, পাঠদান ও সমাজসেবায় নিবেদিত ছিলেন।

শিক্ষাজীবন ও একাডেমিক জীবন

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
অধ্যাপনা জীবনের শুরু পিসি কলেজে হলেও অল্প কিছুদিন পরই তিনি যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে।
৩৭ বছরের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তিনি ছিলেন মেধাবী, নিরহঙ্কার ও প্রচারবিমুখ এক অধ্যাপক।
ছাত্রদের কাছে তিনি ছিলেন পরম শ্রদ্ধার “হাবীব স্যার”— যিনি কঠোর বিশ্লেষণধর্মী পাঠদানের পাশাপাশি নৈতিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেন।

“শিক্ষক সেই, যিনি জ্ঞান দেন না শুধু— চিন্তা করার সাহস জাগান।” – অধ্যাপক হাবীবুর রহমান

ইসলামী অর্থনীতি ও চিন্তাধারা

অধ্যাপক হাবীবুর রহমান বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম প্রবক্তা।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে ইসলামী অর্থব্যবস্থা মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও সমাজকল্যাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি।
ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্চ ব্যুরো এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকে তিনি ইসলামী ব্যাংকিং, জাকাত ও দারিদ্র্য বিমোচন বিষয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন।

গবেষণা ও সেমিনার অবদান

১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে আয়োজিত দুটি জাতীয় সেমিনারে তিনি উপস্থাপন করেন আলোচিত প্রবন্ধ—
“ইসলামী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য প্রয়োগ এবং বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে এর ভূমিকা”
এবং
“ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি ও বাংলাদেশে এর প্রয়োগ সম্ভাব্যতা”
এই প্রবন্ধগুলোতে তিনি ইসলামী অর্থনীতিকে বাস্তব প্রয়োগের রূপরেখায় ব্যাখ্যা করে চিন্তাশীল মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
এরও আগে আশির দশকে তাঁর রচিত “ইসলামী অর্থনীতিতে আয় ও সম্পদ বণ্টন” প্রবন্ধ নতুন দৃষ্টিভঙ্গির দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।
তিনি দেখিয়েছেন, ইসলামী নীতির আলোকে সম্পদের সুষম বণ্টন সামাজিক স্থিতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কতটা কার্যকর হতে পারে।

জাকাত ও উন্নয়ন ভাবনা

নব্বইয়ের দশকে তাঁর প্রবন্ধ “অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের ভূমিকা”
এবং ১৯৯৮ সালে ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্চ ব্যুরো আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপিত
“Role of Zakat in Poverty Alleviation”
বাংলাদেশে জাকাতভিত্তিক উন্নয়ন উদ্যোগের নীতিগত ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়।
তার গবেষণা ও চিন্তাভাবনা পরবর্তীকালে অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে জাকাতভিত্তিক সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করেছে।

শিক্ষা ভাবনা ও সাহিত্যকর্ম

অধ্যাপক হাবীবুর রহমান শুধুমাত্র অর্থনীতিবিদ নন, তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও চিন্তাশীল লেখক।
২০০১ সালে তাঁর প্রবন্ধ “আমরা কি পড়তে চাই, কি পড়ছি, কি পড়াচ্ছি” এবং ২০০৩ সালে “নৈতিক অবক্ষয়রোধে ইসলামী শিক্ষার ভূমিকা”
বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কার চিন্তায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
তিনি বিশ্বাস করতেন, ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষা ও মূল্যবোধভিত্তিক সমাজই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে পারে।
তাঁর লেখায় কখনো পক্ষপাত বা সংকীর্ণতা দেখা যায়নি; বরং উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য।

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর ছাত্ররা আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তাঁর গবেষণাপত্র, সেমিনার প্রবন্ধ ও প্রাজ্ঞ দিকনির্দেশনা ইসলামী অর্থনীতি চর্চার ক্ষেত্রে এক অবিনাশী দিকনির্দেশনা হয়ে আছে।
তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ অর্থনীতি, সৎ ব্যবসা ও শিক্ষায় স্বচ্ছতার এক প্রতীক।
তাঁর জীবন প্রমাণ করে, নীতিনিষ্ঠ থেকে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব।

মৃত্যু

২০২৩ সালের ৬ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
দেশ-বিদেশে অসংখ্য ছাত্র, সহকর্মী ও অনুরাগী তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত হন।
তাঁর জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ইসলামী চিন্তাজগতে এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।

“একজন অর্থনীতিবিদের প্রকৃত উত্তরাধিকার তার গবেষণা নয়— তার ন্যায়নিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি।”

উপসংহার

অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান ছিলেন জ্ঞান, নীতি ও মানবিকতার এক অনন্য প্রতিমূর্তি।
তিনি যেমন ইসলামী অর্থনীতিকে বাস্তব প্রয়োগে রূপ দিতে চেয়েছেন, তেমনি ন্যায়বোধ ও স্বচ্ছতার শিক্ষা দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি কর্মে।
তাঁর গবেষণা, লেখনী ও আদর্শ আজও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে এবং করবে অনন্তকাল।

আরও পড়ুন

👉 Islamic Economics Research Bureau
👉 ইসলামিক বই সমাহার
শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান কর্তৃক রচিত ইসলামিক pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
১। অর্থনীতিতে রাসুল (সা)-এর দশ দফা
২। ইসলামী অর্থনীতি নির্বাচিত প্রবন্ধ
৩। ইসলামী ব্যাংকিং বৈশিষ্ট্য ও কর্ম পদ্ধতি
৪। ইসলামের অর্থনৈতিক বিপ্লব
৫। মাল্টি লেবেল মার্কেটিং প্রসঙ্গ
৬। সুদ
৭। সুদঃ এক ভয়াবহ অভিশাপ পরিত্রাণের উপায়

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top