মুহাম্মাদ আবদুর রহীম: Muhammad Abdur Rahim Books

মুহাম্মাদ আবদুর রহীম
Muhammad Abdur Rahim Books

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম: জীবন, কর্ম ও উত্তরাধিকার

✍️ প্রখ্যাত ইসলামি পণ্ডিত | সাহিত্যিক | রাজনীতিবিদ | সমাজ সংস্কারক

প্রস্তাবনা

বাংলাদেশের ইসলামি সাহিত্য ও চিন্তাজগতে অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (১৯১৮–১৯৮৭)।
তিনি শুধু একজন লেখকই নন, বরং বাংলাভাষার মাধ্যমে ইসলামি জ্ঞানকে জনপ্রিয় ও সহজবোধ্য করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

“বাংলা ভাষাকে ইসলামি সাহিত্য সমৃদ্ধির বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আবদুর রহীম প্রমাণ করেছিলেন, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা কেবল আরবি বা উর্দু ভাষায় সীমাবদ্ধ থাকার প্রয়োজন নেই।”

প্রারম্ভিক জীবন

১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আবদুর রহীম।
তাঁর পিতা হাজি খবিরউদ্দিন এবং মাতা আকলিমুন্নেসা ছিলেন ধর্মপ্রাণ ও সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষ।
১২ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। শৈশব থেকেই তিনি মেধাবী ও অধ্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
গ্রামের মক্তব ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়।

শিক্ষাজীবন

শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয় শর্ষিনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে।
১৯৩৮ সালে তিনি আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৪০ সালে ফাজিল এবং ১৯৪২ সালে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন, যা পরবর্তীতে তাঁকে বিশ্বমানের ইসলামি সাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করতে সহায়তা করে।

“একজন প্রকৃত আলেম কেবল জ্ঞান সঞ্চয় করেন না, বরং সেই জ্ঞানকে মানুষের জন্য প্রয়োগযোগ্য করে তোলেন।” – মাওলানা আবদুর রহীম

কর্মজীবন ও সাহিত্যিক অবদান

আবদুর রহীম মূলত সাহিত্য ও গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অবদান রাখেন।
বাংলা ভাষায় ইসলামি সাহিত্য সমৃদ্ধ করতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা ছিল ১২০টিরও বেশি।

মৌলিক রচনা

  • কালেমা তাইয়েবা
  • ইসলামী অর্থনীতি
  • ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা

এসব গ্রন্থে তিনি শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, বরং আধুনিক সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।

অনুবাদ কার্যক্রম

তিনি সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী ও ইউসূফ আল-কারযাভীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিন্তাবিদদের গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।
এর ফলে বাংলাদেশে ইসলামি আন্দোলনের তাত্ত্বিক ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।
বাংলা ভাষায় ইসলামি পরিভাষার প্রবর্তনে তাঁর অবদান অসাধারণ। তিনি দেখিয়েছেন বাংলা ভাষাও ইসলামি দর্শন ও গবেষণার বাহন হতে পারে।

রাজনৈতিক জীবন

আবদুর রহীম ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর রচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ১৯৪৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিখিল ভারত সম্মেলনে যোগ দেন এবং সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হন।
তিনি ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচিত হন এবং ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন। পরে ১৯৭৪ সালে দেশে ফিরে এসে নতুনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
পরে তিনি জামায়াত থেকে সরে এসে **ইসলামী ঐক্য আন্দোলন** এবং ১৯৮৭ সালে **ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন** প্রতিষ্ঠায় যুক্ত হন।

“রাজনীতি ছিল তাঁর কাছে ক্ষমতার লক্ষ্য নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করার একটি মাধ্যম।”

ইসলামি আন্দোলনে ভূমিকা

আবদুর রহীম বাংলার ইসলামি আন্দোলনের অন্যতম স্থপতি।
তিনি বিশ্বাস করতেন, ইসলামকে শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এজন্য তিনি সারাজীবন জনগণকে সংগঠিত করতে সচেষ্ট ছিলেন।
বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির বিকাশে তাঁর অবদান গভীরভাবে স্মরণীয়। তিনি নতুন প্রজন্মকে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন এবং দেখিয়েছেন ইসলামই সমাজ সংস্কারের মূল শক্তি।

চিন্তাধারা

মাওলানা আবদুর রহীমের চিন্তাধারা কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক হলেও আধুনিক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ইসলামের প্রয়োগযোগ্যতা ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বাংলা ভাষাকে ইসলামি সাহিত্যচর্চার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন।

“ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা; এটি কেবল নামাজ-রোজায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও সংস্কৃতির প্রতিটি স্তরে এর প্রয়োগ থাকা প্রয়োজন।” – মাওলানা আবদুর রহীম

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

বাংলা ভাষায় ইসলামি সাহিত্যচর্চার পথিকৃৎ হিসেবে আবদুর রহীম প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছেন।
তাঁর রচনাবলী ও অনুবাদ এখনও ইসলামি শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্যবান সম্পদ।
বাংলাদেশে ইসলামি আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি এক অপরিহার্য নাম।
সাহিত্য, শিক্ষা ও রাজনীতিতে তাঁর অবদান তাঁকে সমকালীন আলেমদের মধ্যে অনন্য স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে।

মৃত্যু

১৯৮৭ সালের ১ অক্টোবর ঢাকায় আবদুর রহীম ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একজন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও সাহিত্যিককে হারায়।
তবে তাঁর জীবন ও কর্ম আজও গবেষক, শিক্ষার্থী এবং ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

উপসংহার

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম ছিলেন একাধারে ইসলামি সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ ও সংস্কারক।
তাঁর রচনাবলী ও আন্দোলন বাংলাদেশের ইসলামি ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় রচনা করেছে।
তিনি প্রমাণ করেছেন, ইসলাম কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।
তাঁর জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন

👉 ইসলামি সাহিত্য
👉 এ শিরোনামের বই


📚 মাওলানা আব্দুর রহিম এর বই pdf সমূহ

মাওলানা আবদুর রহীম pdf বই ডাউনলোড করতে নিচে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।

১। অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম
২। আল কুরআনে নব্যুয়াত ও রিসালাত
৩। আল কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার
৪। আল কুরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ
৫। আল কুরআনের আলোকে শিরক ও তওহীদ
৬। আল্লাহর হক বান্দার হক
৭। আসহাবে কাহাফের কিস্‌সা
৮। ইসলামী রাজনীতির ভূমিকা
৯। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য
১০। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব
১১। ইসলামী শরীয়াতের উৎস
১২। ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার
১৩। ইসলামের অর্থনীতি
১৪। ইসলামে জিহাদ
১৫। কালেমা ত্যাইয়েবা
১৬। খেলাফতে রাশেদা
১৭। গণতন্ত্র নয় পূর্ণাঙ্গ বিপ্লব
১৮। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও শুরায়ী নিজাম
১৯। তাওহীদের ত্বত্ত্বকথা
২০। দাস প্রথা ও ইসলাম
২১। নারী
২২। নারী ও আধুনিক চিন্তাধারা
২৩। পরিবার ও পারিবারিক জীবন
২৪। পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি
২৫। প্রচলিত রাজনীতি নয় জিহাদই কাম্য
২৬। বিজ্ঞান ও জীবনবিধান
২৭। বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব
২৮। মহাসত্যের সন্ধানে
২৯। যাকাত
৩০। রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত
৩১। শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি
৩২। সুন্নাত ও বিদয়াত
৩৩। হাদীস সংকলনের ইতিহাস

আবার ভিজিট করবেন !!! ধন্যবাদ 💚
error: Content is protected !!
Scroll to Top